রেবতীভূষণ ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রেবতীভূষণ ঘোষ
জন্ম(১৯২১-০৯-০৫)৫ সেপ্টেম্বর ১৯২১[১]
মৃত্যু৩০ ডিসেম্বর ২০০৭(2007-12-30) (বয়স ৮৬)
বালি পশ্চিমবঙ্গ
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
পেশাকার্টুনিস্ট
পরিচিতির কারণকার্টুন
দাম্পত্য সঙ্গীসুষমা ঘোষ
সন্তান
পিতা-মাতাযতীন্দ্রমোহন ঘোষ (পিতা)
বিরাজমোহিনী দেবী (মাতা)

রেবতীভূষণ ঘোষ (ইংরেজি: Rebatibhusan Ghosh) (৫ সেপ্টেম্বর ১৯২১ ৩০ ডিসেম্বর ২০০৭) একজন খ্যাতনামা বাঙালি কার্টুনিস্ট ও ছড়াকার। [২] ভারতের প্রথম অ্যামিনেশন ফিল্ম মিচকে-পটাশ-এর চরিত্রাঙ্কন করেছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

রেবতীভূষণের জন্ম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বালিতে। পিতা যতীন্দ্রমোহন ঘোষ ও মাতা বিরাজমোহিনী দেবী। রেবতীভূষণ জন্মভিটা থেকে কিছুটা দূরে বেলুড়ে বসবাস করতেন। তার ডাক না ছিল রতনমণি। পরে তিনি অনেক কার্টুনচিত্রে "রতন" নামটি ব্যবহারও করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তার ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল। তার প্রাথমিক পড়াশোনা বালি ব্যারাকপুর মিডিল ইংলিশ স্কুলে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন রিভার্স টমসন স্কুল থেকে। উত্তরপাড়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়ে ভর্তি হন কলকাতার রিপন কলেজে তথা বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে । সংস্কৃতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই তিনি নিজে নিজেই চর্চা করেছেন। 'সচিত্র শিশির' পত্রিকায় বিনয়কৃষ্ণ বসুর আঁকা কার্টুন দেখে উৎসাহিত হন। [২] রিপন কলেজের ম্যাগাজিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিন নায়ক - হিটলার, মুসোলিনি ও স্টালিনকে নিয়ে তার প্রথম কার্টুনটি 'ত্র্যহস্পর্শ' নামে ছাপা হয়েছিল। কলেজ পত্রিকায় প্রথম এই কার্টুন ছাপা হলেও তখনকার বহুল প্রচারিত সাময়িক পত্রিকা ‘সচিত্র ভারত’ এর প্রথম পাতায় তার কার্টুনের আত্মপ্রকাশ ঘটল ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। কার্টুনটির নাম ছিল ‘স্বরাজ সাধন’ — শোষিত মানুষের উপর শোষক ধনবানের চিরন্তন পীড়ন। রেবতীভূষণ কার্টুনের পাশাপাশি পেন্টিং ও ড্রয়িংও করতেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

স্নাতক হওয়ার পর রেবতীভূষণ বার্মা শেল কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং এর মধ্যে তার পিতৃবিয়োগ ঘটে যায়। কিন্তু ভারতীয় শিল্পের পাঠ নেওয়ার জন্য ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বালি থেকে সাইকেলে বরাহনগরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নতুন ঠিকানা 'গুপ্তনিবাস'-এ যাতায়াত শুরু করেন। চিত্রকলার নানান বিষয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পাঠ নেন দীর্ঘ নয় বৎসর। অবশ্য এর মধ্যেই ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম ব্যঙ্গপ্রতিকৃতি 'ল্যাংচা মিত্র'। ওদের ইংরাজী পত্রিকা 'হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড'-এ আঁকতে থাকেন রাজনৈতিক কার্টুন। এরপর আনন্দবাজার পত্রিকাদেশ পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে তার ব্যঙ্গচিত্র ও অলংকরণ। ১৯৪৭-৪৮ খ্রিস্টাব্দে 'সত্যযুগ' পত্রিকায় ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। ১৯৫০ এর দশকে যুগান্তর পত্রিকায় আঁকেন ছড়া ও কার্টুন সহ "ব্যঙ্গ বৈঠক"। এই সময়েই বাংলা প্রকাশনার অলংকরণের জগতে শৈল চক্রবর্তী ও রাজনৈতিক কার্টুন জগতে পিসিয়েল তথা প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী স্বমহিমায় কাজ করে চলেছেন। কিন্তু রেবতীভূষণ নিজস্ব শৈলীতে এঁকে চলেছেন মাতৃভূমি, অচলপত্র, যষ্টিমধু, শনিবারের চিঠি, উল্টোরথ, দৈনিক বসুমতী, যুগান্তর, সত্যযুগ, কৃষক, জলসা, বসুধরা, বেতার জগৎ, সিনেমা জগৎ, অমৃত, শারদীয়া যুগান্তর, শারদীয়া আনন্দবাজার, নবকল্লোল, ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় এবং নিজগুণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ইতোমধ্যে বার্মা শেলের চাকরি ছেড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় তার সে চাকরি চলে যায়। তারপর তিনি পেশাদার শিল্পী হয়ে ওঠেন এবং শৈল চক্রবর্তীর মতোই তিনি ফ্রিলান্সিং করতে থাকেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদাকে কমিক্সে রূপ দেবার ব্যাপারে অগ্রগণ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট ও ‘শংকরস্ উইকলি’-র সম্পাদক কেশব শঙ্কর পিল্লাই এর আহ্বানে দিল্লি চলে যান। দিল্লিতে পিল্লাই প্রতিষ্ঠিত চিলড্রেনস বুক ট্রাস্ট কার্যালয়ে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সিনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে কাজ করেন। সিবিটি প্রকাশিত ছোটদের জ্ঞান বিজ্ঞান ও সাহিত্যের নানা বইয়ের অলঙ্করণ-এ রয়েছে তার তুলির স্পর্শ়। এছাড়াও দিল্লিতে ন্যাশনাল হেরাল্ড, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পাইওনিয়ার, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দিল্লি স্টেটসম্যান পত্রিকায় কার্টুন এঁকেছেন তিনি। বাংলা অ্যানিমেশানের এর ক্ষেত্রেও রেবতীভূষণের বিশেষ অবদান আছে। তিনিই প্রথম নিউ থিয়েটার্সএর চলচ্চিত্রের প্রযোজক বি এন সরকারের অনুরোধে বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম অ্যানিমেশান ছবি ‘মিচকে পটাশ’এর চরিত্রায়ণ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কিত অ্যানিমেশন ছবি ‘কুইন অ্যানোফিলিস’ও তিনি নির্মাণ করেন। তিনি তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে যা ব্যক্ত করেছেন তা হল -

«শিল্পের যা কিছু সবই আমায় আকৃষ্ট করে ---- তা শুধু কার্টুন নয়। আমি নানা ছবি এঁকেছি বিশেষতঃ প্রকৃতিকে উপলব্ধি করে। ভাস্কর্যেও হাত মকশো করেছি। সব মিলিয়ে আর্টিস্ট হবার চেষ্টা করেছি।»

ছবি আঁকার পাশাপাশি প্রকৃতি প্রেমিক রেবতীভূষণ ছড়া লেখা, গান বাজনা, সাঁতারেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। প্রবীণ বয়সে গঙ্গায় ডাইভ দিয়ে স্নান করতেন বলে, এলাকায় 'ডাইভ দাদু' নামে পরিচিত হন। "ছড়ানো বই" হল তার রচিত ছড়ার সংকলন।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

খ্যাতনামা কার্টুনিস্ট রেবতীভূষণ ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

২০২১ খ্রিস্টাব্দে রেবতীভূষণের জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতার লালমাটি প্রকাশন ২৭শে ডিসেম্বর শিল্পীর আঁকা কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র, গ্রন্থ-অলঙ্করণ,স্কেচ,পোর্টেট আর আত্মকথন নিয়ে প্রকাশ করে রেবতীভূষণ: শিল্পী ও কার্টুনিস্ট। [৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বাঙালি লেখকের তালিকা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২২ 
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৫৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. "কার্টুনে একাই ১০০ - কলকাতার কড়চা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫