সুলক্ষণা পণ্ডিত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুলক্ষ্মণা পণ্ডিত
জন্মনামসুলক্ষণা প্রতাপ নারায়ণ পণ্ডিত
উপনামসুলক্ষ্মণা পণ্ডিত
জন্ম (1954-07-12) ১২ জুলাই ১৯৫৪ (বয়স ৬৯)
রায়গড়, ছত্তিসগড়, ভারত
ধরনপ্লেব্যাক গাওয়া, অভিনয় শিল্পী
পেশাগায়ক, অভিনেত্রী
কার্যকাল১৯৬৭–১৯৯৬ (গাওয়া)
১৯৭৫–১৯৮৮ (অভিনয়)

সুলক্ষণা প্রতাপ নারায়ণ পণ্ডিত একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী এবং বলিউডের প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় মহিলা। তাঁর ভাইদ্বয় হলেন সঙ্গীত রচয়িতা জুটি যতীন – ললিত এবং তার ছোট বোন বিজয়িতা পণ্ডিত যিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র লাভ স্টোরি দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর চাচা হলেন দক্ষ শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী পণ্ডিত জসরাজ। ১৯৭৫ সালে তিনি তাঁর "তু হাই সাগর হ্যায়, তুই হাই কিনারা" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

নায়িকা হিসাবে সুলক্ষণার কর্মজীবন ১৯৭০ এর দশক এবং ৮০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত বিস্তৃত। একজন শীর্ষস্থানীয় মহিলা হিসাবে তিনি জিতেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না, ঋষি কাপুর, রাজ বাবর এবং রাকেশ রোশনের সাথে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনয় জীবন ১৯৭৫ সালে সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে সাসপেন্স থ্রিলার উল্জান দিয়ে শুরু হয়েছিল।

পরিণীতা উপন্যাস অবলম্বনে অনিল গাঙ্গুলি পরিচালিত সংকোচ (১৯৭৬) চলচ্চিত্রে তিনি ললিতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার কয়েকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে উল্জান, হেরা ফেরি, আপনাপন, সঙ্কোচ, খান্দান, বাগদাদের চোর, চেহর পে চেহরা, ধর্ম কান্ত এবং ওয়াক্ত কি দিওয়ার।

তিনি ১৯৭৮ সালে একটি বাংলা চলচ্চিত্র বান্দি তে অভিনয় করেছিলেন, যেখানে তিনি উত্তম কুমারের বিপরীতে জুটি বেঁধেছিলেন।

সুলক্ষণার অভিনয়ের পাশাপাশি একটি গানের কর্মজীবনও ছিল। তিনি ১৯৬৭ সালে ‘তাকদীর’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সাথে জনপ্রিয় সংগীত "সাত সমুদ্র পার সে" গেয়ে শিশু গায়িকা হিসাবে তাঁর গানের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি হেমন্ত কুমার এবং কিশোর কুমারের মতো খ্যাতিমান সংগীতশিল্পীদের সাথে রেকর্ড করেছিলেন। তিনি হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, ওড়িয়া এবং গুজরাটি ভাষায় গেয়েছেন। তার জনপ্রিয় কয়েকটি গান নিচে চলচ্চিত্রের তালিকা বিভাগে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

১৯৮০ সালে তিনি জাজবাত (এইচএমভি) নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন, যাতে তিনি গজল উপস্থাপন করেন।

তিনি লতা মঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, শৈলেন্দ্র সিং, যেসুদাস, মহেন্দ্র কাপুর এবং উদিত নারায়ণের মতো সুদক্ষ মার্জিত গায়কদের সাথে দ্বৈত সঙ্গীত গেয়েছেন। তিনি শঙ্কর জয়কিশন, লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল, কল্যাণজি আনন্দজি, কানু রায়, বাপ্পি লাহিড়ী, উষা খান্না, রাজেশ রোশন, খৈয়াম, রাজকমল এবং আরও প্রমুখ সংগীত পরিচালকের অধীনে গান গেয়েছেন।

১৯৮৬ সালে সুলক্ষণা লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে "ভারতীয় সংগীত উৎসব" কনসার্ট উদ্‌যাপন উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠানে  বিখ্যাত সংগীত পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত পিয়ারেলাল এবং গায়ক মনহর, শাব্বির কুমার, নীতিন মুকেশ এবং অনুরাধা পাডুয়ালের সাথে সংগীত পরিবেশন করেন।

তাঁর কণ্ঠ সর্বশেষ শোনা যায় খমোশি দি মিউজিকাল (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের "সাগর কিনারে ভী দো দিল" গানে, গানটির সংগীতায়োজনে ছিলেন তার ভাই যতীন ও ললিত।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

সুলক্ষণা হরিয়ানা রাজ্যের হিসার (বর্তমানে ফতেহাবাদ) জেলার পিলিমান্ডোরি গ্রামের এক সংগীত পরিবার থেকে এসেছেন। বিখ্যাত ধ্রুপদী কণ্ঠশিল্পী ও কিংবদন্তি পণ্ডিত জসরাজ হলেন তার চাচা। তিনি নয় বছর বয়সে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন। তাঁর বড় ভাই মন্ধির পণ্ডিত (যিনি এর আগে ১৯৮০-এর দশকে যতীন পণ্ডিতের সাথে দুজনে মন্দির-যতীন যৌথ সঙ্গীত রচয়িতা ছিলেন) মুম্বাইয়ে তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিলেন; মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের মতো কিংবদন্তিদের সাথে তাদের অনেক লাইভ কনসার্টের মাধ্যমে সুলক্ষণা শীর্ষস্থানীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তারা মঞ্চে পারফর্ম করেন এবং গান গেয়েছেন।

তার তিন ভাই (মন্ধির, যতীন ও ললিত পণ্ডিত) এবং তিন বোন (প্রযাত মায়া অ্যান্ডারসন, প্রয়াত সন্ধ্যা সিংহ এবং বিজয়িতা পণ্ডিত) রয়েছে। তার বাবা প্রতাপ নারায়ণ পণ্ডিত একজন দক্ষ ধ্রুপদী কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। তাঁর ভাতিজা যশ পণ্ডিত একজন ভারতীয় টেলিভিশন অভিনেতা। ভাইঝি শ্রদ্ধা পণ্ডিত এবং শ্বেতা পণ্ডিত নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। তার চাচাত ভাই হেমলতা নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী।

সুলক্ষণা কখও বিয়ে করেননি। অভিনেতা সঞ্জীব কুমার তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন,[১] কারণ অভিনেত্রী হেমা মালিনী তার প্রেমের প্রতিদান না দেওয়ায় পরে তিনি আর কখনও মর্মপীড়া কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

তিনি কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি কঠিন সময়ে পড়েন। ২০০২ সালে তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্টে কোনও আসবাবপত্র ছাড়াই বাস করতেন এবং এটির গুরুতর মেরামতের প্রয়োজন হয়েছিল।[২] তিনি বাধ্য হয়ে তা বিক্রি করার জন্য রেখেছিলেন। বেশ কয়েক মাস ধরে এটি বাজারে বিক্রির জন্য ছিল, অবশেষে তার প্রাক্তন পরিচালক জিতেন্দ্র ফ্লাট কেনার জন্য তার শ্যালককে রাজি করিয়ে তাকে উদ্ধার করতে আসেন। বিক্রয়লব্দ টাকা দিয়ে তিনি তার ঋণ পরিশোধ করতে এবং দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে সক্ষম হন।[৩] তাঁর বোন বিজয় পণ্ডিত এবং দেবর সংগীত রচয়িতা আদেশ শ্রীবাস্তব তাঁর বাড়ি বিক্রি করে দেয়; এখন তিনি তাদের সাথে থাকেন।[৪] আদেশ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তিনি সুলক্ষণার জন্য একটি ভক্তিমূলক অ্যালবাম রচনা করছেন, তবে মৃত্যুর আগে তিনি (আদেশ) তা করে যেতে ব্যর্থ হন।[৫] স্নানের ঘরে পড়ে গিয়ে তিনি তার নিতম্বের হাড় ভেঙে ফেলেছিলেন। চারটি অস্ত্রোপচারের পরেও তিনি সঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না এবং ব্যথানাশক ঔষধের উপর নির্ভরশীল। তিনি নিজেকে তাঁর বোনের বাড়ির একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন এবং তাঁর দেখাশোনা করার জন্য পুরো সময়ের গার্হস্থ্য সহায়তা রয়েছে।[৬]

সুলক্ষণা জনসমক্ষে বিরল ভাবে উপস্থিত হয়ে সম্প্রতি জুলাই ২০১৭ সালে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের রেডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেখানে তিনি আর জে বিজয় আকেলার কাছে তার অভিনয় ও গানের কেরিয়ার সম্পর্কে বলেছেন।

চলচ্চিত্রের তালিকা[সম্পাদনা]

গায়ক হিসাবে[সম্পাদনা]

বছর চলচ্চিত্র গান সহ-গায়ক
১৯৭১ দোর কা রাহি "বেকারার-এ-দিল তু গায়ে জা" কিশোর কুমার
১৯৭৫ চলতে চলতে "সপ্নন কা রাজা কই" শৈলেন্দ্র সিং
উলজান "আজ পেয়ারে পেয়ারে সে লাগতে" কিশোর কুমার
সঙ্কল্প "তু হি সাগর হ্যায় তুই হাই কিনারা"
১৯৭৬ সঙ্কোচ "বন্ধি রে কাহে প্রীত"
১৯৭৭ আপনাপন "সোম্বর কো হুম মিলে" কিশোর কুমার
১৯৭৮ এক বাপ ছে বেটে "ঘাদি মিলন কি আয়ে ... আয়ে তু চুট্টি লেকার" মোহাম্মদ রফি
১৯৭৯ গৃহ প্রবেশ "বলি সুরিলি বলিয়ান"
১৯৭৯ সাওয়ান কো আনে দো "কাজরে কি বাতি" যেসুদাস
১৯৭৯ গরম খুন "পরদেশিয়া তেরে দেস মেইন" মোহাম্মদ রফি
১৯৮০ থোডিসি বেওয়াফাই "মৌসাম মৌসাম লাভলী মৌসাম" আনোয়ার হোসেন
১৯৮০ স্পর্শ "খালি পিয়ালা ধুন্ধলা দর্পণ"
১৯৮১ আহিস্তা আহিস্তা "মন তেরি নজর"
১৯৮১ সাজন কি সাহেলি "জিসকে লিয়ে সব কো ছোদা" মোহাম্মদ রফি

অভিনেত্রী হিসাবে[সম্পাদনা]

বছর চলচ্চিত্র চরিত্র/ভূমিকা মন্তব্য
১৯৭৫ উলজান করুণা
১৯৭৫ সঙ্কল্প পূজারণ
১৯৭৫ রাজা রানী
১৯৭৫ সালাখেন গুড্ডি/সীমা
১৯৭৬ হেরা ফেরি আশা
১৯৭৬ শঙ্কর শম্ভু শালু
১৯৭৬ বুন্দল বাজ নিশা শর্মা
১৯৭৭ আপনপন রাধিকা
১৯৭৭ কসম খুন কি রাধা
১৯৭৭ থিফ অব বাগদাদ শেহজাদি রুখসানা
১৯৭৮ বান্দি রাজকুমারী রাধা সুজন সিং
১৯৭৮ ফানসি ছায়া
১৯৭৮ অমর শক্তি রাজকুমারী সুনিতা
১৯৭৯ খান্দান উষা
১৯৮০ গঙ্গা আউর সুরজ সরিতা
১৯৮০ গরম খুন রমা
১৯৮১ চেহরে পে চেড়া দিনা
১৯৮০১ রাজ সীমা
১৯৮২ ধরম কান্ত চন্দ
১৯৮২ দিল হাই দিল মে এন.এ
১৯৮২ ওয়াক্ত কি দিওয়ার প্রিয়া
১৯৮৫ কালা সুরজ করুণা
১৯৮৭ গোরা রূপা
১৯৮৭ মদদগাড় সুনিতা
১৯৮৮ দো ওয়াক্ত কি রোটি গঙ্গা

পুরস্কার[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]