প্রভাংশুশেখর পাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রভাংশুশেখর পাল
জন্ম১৯১৩
মৃত্যু২ জুন ২০০৭
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রভাংশুশেখর পাল ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে হত্যার জন্য যে দুজন যুবক আক্রমণ চালান তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।[১]

শৈশব ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

প্রভাংশুশেখর ১৯২৭ সালে চোদ্দবছর বয়সে পড়াশোনার জন্য মেদিনীপুরে তাঁর মামার বাড়ী আসেন এবং সেখানে হিন্দুস্কুলে ভর্তি হন। তাঁর পিতার নাম আশুতোষ পাল পেশায় তিনি ডাক্তার ও গবেষক ছিলেন পেশার খাতিরে তিনি উড়িষ্যায় থাকতেন। প্রভাংশুশেখর পড়াশোনা চলাকালীন মেদিনীপুর শাখার বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে দুবার হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রভাংশুশেখর ও প্রদ্যোতকুমার ভট্টাচার্য কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।[২]

রবার্ট ডগলাস হত্যা[সম্পাদনা]

প্রভাংশুশেখর ১৯৩২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর তার মা বাবা কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছে খবর আসে ৩০ শে এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস মেদিনীপুর জেলা বোর্ডের মিটিংয়ে সভাপতি হিসাবে হাজির থাকবেন। আগেরদিন তিনি মেদিনীপুরে চলে আসেন, মামাদের বললেন একটা জরুরি কাজ এসেছে। তিরিশ তারিখ সকালে বিপ্লবী সুরপতিবাবু সঙ্গে দেখা করে ৩৮ বোরের দুটো রিভলবার সাথে কুড়িটা বুলেট হাতে তুলে দিলেন। চারটে বাজতেই দুজনেই ছদ্মবেশে রেডি, প্রদ্যোতের চোখে চশমা, সিঁথিটা অন্য দিকে কাটা এবং প্রভাংশুশেখরের মোটা গোঁফ, মালকোঁচা মারা ধুতি। গুটিগুটি পায়ে পৌঁছে গেলেন জেলা বোর্ড অফিসে। অনেক বলা কওয়ার পরেও গেটের সিপাহীরা ঢুকতে দিলো না। অগত্যা পেছন দিকের পাঁচিল টপকে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রহরীরা কিছু বোঝার আগেই দুজন তীব্র গতিতে একেবারে ডগলাসের পিছনে গুলি ছুড়লেন।[৩]

তারপর দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন দুই বিপ্লবী। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালাতে থাকেন প্রভাংশুশেখর পাল। কিন্তু প্রদ্যোৎ পারেননি তাঁর রিভলভার বিগড়ে যায়। প্রদ্যোৎ এর পিছনে পুলিশ তাড়া করে তিনি ছুটতে শুরু করেন।[৪] ঘুরে বার কয়েক ফায়ার করার চেষ্টা করেন প্রদ্যোৎ কিন্তু গুলি বেরোয়নি। কাছের এক পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রদ্যোৎ কোনওমতে বেরিয়ে ফের পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয় অমর লজের কাছে রাস্তার উপর ছিটকে পড়েন পুলিশ ঘিরে ফেলে। পুলিশের নজরের বাইরে চলে আসেন প্রভাংশুশেখর প্রথমেই টান মেরে ফেলেদেন গোঁফ জোড়া, নাড়াজোল রাজবাড়ির পাশের দিঘিতে ফেলেদেন পায়ের জুতো। তারপর রাস্তার নির্জন কালভার্টের নীচে লুকিয়ে ফেলেন রিভলবার ও কার্তুজ। নিশ্চিন্ত মনে হাঁটতে হাঁটতে মামারবাড়ি পৌঁছে যায়। রাত আটটা নাগাদ মামা অমল বসু বাড়ি ফিরে জানান ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাসকে দুই তরুণ গুলি করেছে । একজন ধরা পড়লেও অন্যজন ফেরার। ভাগ্নের মুখ দেখে কিছুটা আঁচ করার পরদিন তাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা ১১ মে পুলিশ কলকাতায় গেপ্তার করল। পরদিনই তাকে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হল। মজার কথা ঐ দিন মিটিংয়ে হাজির জেলা বোর্ডের কোন সদস্যই তাকে সনাক্ত করতে পারেনি। ফলে হাজার চেষ্টা করেও পুলিশ তাকে ডগলাস হত্যা মামলায় জড়াতে পারলেন না। বেকসুর খালাস পেয়ে কলকাতায় চলে যান।[২][৫][৬]

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

ডগলাসের পর কালেক্টর হয়ে এলেন বার্জ সাহেব। বার্জ সাহেবকে ধরাধাম থেকে বিদায় নেবার পরিকল্পনাতে প্রভাংশুশেখর সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কলকাতা থেকে খড়গপুর রেল ইয়ার্ডে বসে মিটিং করে হাতিয়ার যোগান দেন। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ সালে অনাথ ও মৃগেনের হাতে খুন হন বার্জ সাহেব। সাতদিন পর এবারও পুলিশ তাঁকে ধরে। পুলিশ তাঁকে মারধর থেকে সুচ ফোটানো কিছুই বাদ যায়নি। শেষ তাঁকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত বিসিএলএ ধারায় প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দী করে রাখে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বি.কম পাশ করেন এবং হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে নেতাজির অন্তর্ধানের পর সারা বাংলা জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় যেহেতু তিনি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য ছিলেন তাঁর উপর অত্যাচার চালায় এবং কলকাতার বাড়িতে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অকৃতদার মানুষটি হোমিওপ্যাথি করে সংসার চালাতেন এবং সহায় সম্বলহীন প্রাক্তন বিপ্লবীদের জন্য কলকাতার বীরেশ গুহ রোডে বিপ্লবী নিকেতন তিনি তৈরি করেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের নিরলস এই যোদ্ধাকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মান জানায়। ২০০৭ সালের ২রা জুন তিনি পরলোক গমন করেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, মে ২০২১, পৃষ্ঠা ৪০৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "প্রভাংশু জেলাশাসক ডগলাসের পিঠে পরপর পাঁচটি গুলি করার পর ডগলাস সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন"banglaamarpran.in। ২০২০-০৮-১৩। ২০২১-০৫-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৪ 
  3. "...মা তোমার প্রদ্যোৎ কি কখনও মরতে পারে ?"ইটিভি ভারত। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৪ 
  4. শতাব্দীর আলোকে দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ। দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ জন্মশতবর্ষপূর্তি স্বারক গ্রন্থ কমিটি। ১৯৮২। 
  5. চক্রবর্তী, চন্দন। "সেই সব স্বপ্ন"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৪ 
  6. ভৌমিক, অরিন্দম। "মেদিনীপুর জেলার প্রাচীনতম সার্বজনীন দুর্গোৎসব"midnapore.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৪