জুনকো ফুরুতা হত্যাকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জুনকো ফুরুতা
古田 順子
জন্ম(১৯৭১-০১-১৮)১৮ জানুয়ারি ১৯৭১[১][২][৩]
মৃত্যু৪ জানুয়ারি ১৯৮৯(1989-01-04) (বয়স ১৭)
মৃত্যুর কারণমানসিক আঘাত[৪]
মৃতদেহ আবিস্কারকোটো শহর, টোকিও, জাপান
পেশাউচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী
পরিচিতির কারণনির্যাতন এবং হত্যার শিকার

জুনকো ফুরুতা ছিল একজন জাপানিজ উচ্চ মাধমিক শিক্ষার্থী, যাকে ১৯৮০'র দশকের শেষের দিকে অপহরণ করে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল। তার হত্যা মামলাটিকে বলা হত "concrete-encased high school girl murder case" (女子高生コンクリート詰め殺人事件), খুনীরা ফুরুতার মৃতদেহটি একটি কনক্রিটের ড্রামে ২০৮ লিটার কনক্রিটের মাঝে চাপা দিয়ে রেখেছিলো বলেই কেসটির এমন নামকরণ। ১৯৮৮ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এই নির্যাতনটি চালিয়েছিল মূলত ৪ জন কিশোর- হিরোশি মিয়ানো, জো ওগুরা, শিনজি মিনাতো এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবে।

এই অপরাধটি যুদ্ধের পরে "কিশোর অপরাধের সবচেয়ে জঘন্য মামলা" বলে মনে করা হত।[৫]

পটভূমি[সম্পাদনা]

ফুরুতার জন্ম হয়েছিল সায়াতামা প্রদেশের মিসাতোতে। সে তার বাবা-মা, তার বড় ভাই এবং ছোট ভাইয়ের সাথে থাকত। কিশোর বয়সে, সে ইয়াসিও-মিনামি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিল এবং 1988 সালের অক্টোবর থেকে স্কুল পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের ছাঁচকারখানাতে খণ্ডকালীন কাজ করেছে। সে যে স্নাতক পর্যায়ে পড়ার পরিকল্পনা সফল করতে অর্থ জোগাড়ের জন্যই সে এই খণ্ডকালীন কাজ করত।[৬] ফুরুতা একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি খুচরা বিক্রেতার চাকরিও নিয়েছিল, যেখানে সে স্নাতক শেষে কাজ করার পরিকল্পনা করেছিল।[৫] উচ্চ বিদ্যালয়ে ফুরুতার ভাল নম্বর প্রাপ্তি এবং খুব কম অনুপস্থিতির কারণে সহপাঠিরা তাকে খুব পছন্দ করত।

অপরাধীরা ছিল চার কিশোর বালক: হিরোশি মিয়ানো (১৮ বছর বয়স), জো ওগুরা (১৭ বছর বয়স), শিনজি মিনাতো (১৬ বছর বয়স) এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবে (১৭ বছর বয়স) যাদেরকে যথাক্রমে আদালতের নথিতে "এ", "বি", "সি" এবং "ডি" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। অপরাধের সময় তারা মিনাতোর বাড়ির দ্বিতীয় তলটিকে একটি আড্ডাখানা হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং এর আগে তারা মানি ব্যাগ ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত ছিল।[৭][৮]

অপরাধ[সম্পাদনা]

১৯৮৮ সালের ২৫ নভেম্বর, মিয়ানো এবং মিনাতো স্থানীয় মহিলাদের ছিনতাই এবং ধর্ষণ করার উদ্দেশে মিসাতোর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।[৭] রাত সাড়ে আটটায় তারা দেখল যে ফুরুতা তার চাকরীতে এক শিফট শেষ করার পর তার বাইকে চেপে বাসায় যাচ্ছিল। মিয়ানোর নির্দেশে মিনাতো তার সাইকেল থেকে ফুরুতাকে লাথি মারে এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কাকতালীয়ভাবে আক্রমণ প্রত্যক্ষ করার ভান করে মিয়ানো ফুরুতার কাছে গিয়ে তার বাড়িতে নিরাপদে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। ফুরুতা, এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, কারণ সে জানত না যে মিয়ানো তাকে নিকটবর্তী একটি গুদামে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মিয়ানো ইয়াকুজার (একটি স্থানীয় অপরাধ চক্র) সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করবে। সে তাকে প্রথমে গুদামে ধর্ষণ করে এবং পরে পাশের হোটেলে আবারও ধর্ষণ করে সেই সাথে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। হোটেল থেকে মিয়ানো মিনাতো এবং তার অন্যান্য বন্ধুরা, জো ওগুরা এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবেকে ডেকেছিল এবং তাদের কাছে ধর্ষণের বিষয়ে বড়াই করে। ওগুরা আরো বেশি লোকেদেরকে যৌন নির্যাতনের সুযোগ দিতে মিয়ানোকে তাকে (ফুরুতাকে) বন্দী করে রাখতে বলেছিল বলে জানা গেছে। এই গ্রুপটির গণধর্ষণের নজির ছিল এবং সম্প্রতি অন্য একটি মেয়েকে অপহরণ করে এবং ধর্ষণ করে, যাকে তারা পরে ছেড়ে দেয়।

ভোর ৩ টা নাগাদ মিয়ানো ফুরুতাকে কাছের পার্কে নিয়ে যায়, যেখানে মিনাতো, ওগুরা এবং ওয়াতানাবে অপেক্ষা করছিল।[৭] তারা তার ব্যাকপ্যাকের একটি নোটবুক থেকে তার বাড়ির ঠিকানা জেনে নেয় এবং তাকে জানায় যে সে (ফুরুতা) কোথায় থাকে তা তারা জানে আর সে যদি পালানোর কোন চেষ্টা করে তবে ইয়াকুজার সদস্যরা তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করবে। ঐ চারটি ছেলে তাকে জোর করে তাকে আদাচি প্রদেশের আইয়াস জেলার একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেছিল। মিনাতোর বাবা-মা'র মালিকানাধীন এই বাড়িটি শীঘ্রই তাদের নিয়মিত গ্রুপ আড্ডায় পরিণত হয়েছিল।[৯]

২৭ নভেম্বরে, ফুরুতার বাবা-মা তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তদন্ত যেন আর না আগায় তাই অপহরণকারীরা ফুরুতাকে বাধ্য করে তার মাকে ফোন করে বলতে যে সে পালিয়ে গেছে আর তার কিছু বন্ধুর সাথে নিরাপদেই আছে।[১০] তারা ফুরুতাকে দিয়ে পুলিশি তদন্ত বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। যখন মিনাতোর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন, তখন ফুরুতা তার প্রেমিকা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। যখন তারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে মিনাতোর বাবা-মা তাদের পুলিশে খবর দেবে না তখন তারা এই অভিনয় বাদ দিল।[৯] মিনাতোর পরিবার জানিয়েছিল যে তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কারণ তারা মিয়ানোর ইয়াকুজার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি জানত এবং পাল্টা প্রতিশোধের ভয় করত কারণ তাদের নিজেদের ছেলেও তাদের প্রতি ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছিল। মিনাতোর ভাইও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন, তবে তা প্রতিরোধের জন্য কিছুই করেননি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

গ্রুপটি মিনাতোদের বাড়িতে ৪০ দিন ধরে ফুরুতাকে বন্দী করে রেখেছিল, সেখানে তারা বারবার তাকে মারধর, ধর্ষণ ও নির্যাতন করে।[৭] তাদের বক্তব্য অনুসারে, চারজন তার যৌনাঙ্গের লোম কামাত আর নগ্ন অবস্থায় গানের তালে তালে নাচতে এবং তাদের সামনে হস্তমৈথুন করতে বাধ্য করত। সেই সাথে মাঝরাতে ছোট পোশাক পরিয়ে তাকে বারান্দায় রেখে দিত। তারা তার যোনি এবং মলদ্বারে দিয়াশলাই, ধাতব রড ও বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস ঢুকিয়ে দিত এবং একবারে একাধিক সিগারেট সেবন করতে, রঙয়ে মেশানোর থিনার পান করতে আর প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল, দুধ ও জল পান করতে বাধ্য করত। একটি ঘটনায় মিয়ানানো বারবার ফুরুতার হাত ও পায়ে দিয়াশলাইয়ের আগুন দিয়ে পোড়াতে লাগল। ডিসেম্বরের শেষে, খুব অল্প পরিমাণ খাবার, যা শেষ পর্যন্ত কেবল দুধে গিয়ে ঠেকেছিল, খাওয়ানোর পরে ফুরুতা মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার গুরুতর জখম এবং সংক্রামিত পোড়ার কারণে, সে নিচের টয়লেটে যেতে পারত না এবং চরম দুর্বল অবস্থায় মিনাতোর ঘরের মেঝেতে আবদ্ধ হয়ে থাকত।

১৯৮৯ সালের ৪ জানুয়ারী, মাহজংয়ের একটি খেলায় হেরে মিয়ানানো ফুরুতার উপর তার রাগ মেটানোর সিদ্ধান্ত নিল। ওরা তাকে লাথি মারল, ঘুষি মারল, একটি মোমবাতি জ্বালালো এবং তার মুখের উপর গরম মোম ঢালল, দুটি চোখের পাতায় দুটি ছোট মোমবাতি রাখল এবং তাকে নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করল। তাকে লাথি মারার পরে, সে একটি স্টেরিও ইউনিটে পড়ল এবং ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল।[৭] যেহেতু তার মারাত্মকভাবে রক্তপাত হচ্ছিল এবং তার সংক্রামিত পোড়া থেকে পুঁজ বেরোচ্ছিল, তাই চারটি ছেলে তাদের হাত প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢেকে নিল, যাতে তার পুঁজ তাদের হাতে না লাগে। তারা তাকে মারধর করতে থাকে এবং লোহার অনুশীলনের বলটি বেশ কয়েকবার তার পেটে ফেলে দেয়। তারা তার উরু, বাহু, মুখ এবং পাকস্থলিতে দিয়াশলাইয়ের জ্বালানি ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফুরুতা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। জানা যায় এই আক্রমণ দু'ঘণ্টা ধরে চলেছিল। ফুরুতা শেষ পর্যন্ত তার প্রতি হওয়া নির্যাতনের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।

তার মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার পার হওয়ার আগেই, মিনাতোর ভাই তাকে ফোন করে বলে ফুরুতা মনে হয় মারা গেছে। হত্যার জন্য দণ্ডিত হওয়ার ভয়ে এই গ্রুপটি ফুরুতার দেহটি কম্বলে জড়িয়ে দেয় এবং তাকে ট্র্যাভেল ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। তারপরে তারা তার দেহটিকে ৫৫০ গ্যালন (২০৮ লিটার) ড্রামে রেখে ভেজা কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে। রাত ৮ টা নাগাদ তারা ড্রামটি টোকিওর কোটোতে সিমেন্টের ট্রাকে ফেলে দেয়।[১১]

১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে অপহরণ করা ১৯ বছর বয়সী মহিলাকে গণধর্ষণ করার অপরাধে ১৯৮৯ সালের ২৩ শে জানুয়ারি মিয়ানো ও ওগুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ শে মার্চ, দু'জন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিলেন, কারণ তাদের ঠিকানায় মহিলাদের অন্তর্বাস পাওয়া গিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন মিয়ানোর মনে হয়েছিল ফুরুতার হত্যায় তার সম্পৃক্ততার কথা একজন পুলিশ অফিসার জেনে গেছেন। হয়তো জো ওগুরা ফুরুতার বিরুদ্ধে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে- এই ভেবে মিয়ানো পুলিশকে বলেছিল যে ফুরুতার লাশ কোথায় পাওয়া যাবে। পুলিশ প্রথমে এই স্বীকারোক্তিতে হতবাক হয়েছিল, কারণ তারা ফুরুতার অপহরণের নয় দিন আগে ঘটে যাওয়া এক অন্য মহিলা এবং তার সাত বছরের ছেলের হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিল। আজও যেই মামলাটি অমীমাংসিত রয়েছে।

পরদিন পুলিশ ফুরুতার দেহযুক্ত ড্রামটি পায়। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৯৮৯ সালের ১ এপ্রিল, জে ওগুরা ভিন্ন একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় এবং পরবর্তীতে ফুরুতার হত্যার জন্য তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ওয়াতানাবে, মিনাতো এবং মিনাতোর ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফুরুতার উপর নির্যাতনে অংশ নেওয়া আরও বেশ কয়েকজন সহযোগী আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত হয় যাদের মধ্যে ছিল তেতসুও নাকামুরা এবং কোইচি ইহারা, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছিল কারণ ভুক্তভোগীর শরীরে তাদের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছিল।[৭]

প্রসিকিউশন[সম্পাদনা]

তাদের অপরাধের নির্মমতার পরেও তাদের পরিচয় আদালত কর্তৃক গোপন রাখা হয়েছিল কারণ তারা সবাই অপরাধের সময় কিশোর হিসাবে দেখা হয়েছিল।শুকান বুনশুন (週刊 文 春) ম্যাগাজিনের সাংবাদিকরা অবশ্য তাদের পরিচয় আবিষ্কার করেছিল এবং পরে তা প্রকাশ করেছিল।[১০] তারা বলেছিল যে, অপরাধের তীব্রতা বিবেচনায় অভিযুক্তরা নাম গোপন রাখার অধিকার পাওয়ার যোগ্য নন। চারটি ছেলেকেই হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত না করে "শারীরিক আঘাত যা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়' এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

১৯৯০ সালের জুলাইয়ে একটি নিম্ন আদালত এই অপরাধের কথিত নেতা হিরোশি মিয়ানোকে ১৭ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করে।[৭][১১] সে তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে কিন্তু টোকিও হাইকোর্টের বিচারক রিউজি ইয়ানাসে তাকে অতিরিক্ত তিন বছরের (মোট ২০ বছরের) কারাদন্ডে দণ্ডিত করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আগে জাপানে দেওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাজা হল এই ২০ বছরের কারাদণ্ড। হত্যার সময় মিয়ানোর বয়স ছিল ১৮ বছর। তার মা তার পরিবারের বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ানি আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ মিলিয়ন ইয়েন (৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।[১২]

মিয়ানো ২০০৪ শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়াানো জালিয়াতির জন্য আবারও গ্রেপ্তার হয়। পরে অপর্যাপ্ত প্রমাণের কারণে ঐ মাসেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নবুহারু মিনাতো, যিনি মূলত চার থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন, আপিলের সময় বিচারক রিউজি ইয়ানাসে তাকে পুনরায় পাঁচ থেকে নয় বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করেছিলেন।[৭][১১] হত্যার সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। মিনাতোর বাবা-মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। ফুরুতার বাবা-মা তাদের মেয়ের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ঘোষিত এমন শাস্তি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি নবুহাহারু মিনাতোর বাবা-মা, যাদের বাড়িতে অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা করেন এবং জয়লাভ করেন।[১৩] মিনাতোর মুক্তির পরে সে তার মায়ের সাথে চলে যায়। সেই থেকে তাকে আর কোন কাজে দেখা যায়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০১৮ সালে ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ধাতব রড দিয়ে পেটানো এবং ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করার অপরাধে মিনাতোকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[১৪][১৫]

ইয়াসুশি ওয়াতানাবে, যাকে প্রথমে তিন থেকে চার বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল, তাকে উচ্চ আদালত থেকে সাজা বাড়িয়ে পাঁচ থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।[৭][১১] হত্যার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর।

এই অপরাধে জো ওগুরার ভূমিকার জন্য সে ১৯৯৯ সালের আগস্টে মুক্তি পাওয়ার আগে আট বছর একটি কিশোর কারাগারে বন্দী ছিল। হত্যার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। বলা হয় যে তার মুক্তির পরে ফুরুতার অপহরণ, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ে সে গর্ব করত।[৯] ২০০৪ সালের জুলাইয়ে তার বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে এমন সন্দেহে তাকাতোশি ইসোনো নামে তার পরিচিত এক ব্যক্তির উপর হামলা করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওগুরা ইসনোকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামায়, তাকে মারধর করে এবং তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তার ট্রাকে ওঠায়। ওগুরা গাড়ি চালিয়ে তাকে আদাচি থেকে Misato তে তার মায়ের মদের বারে নিয়ে যায়। অভিযোগ অনুসারে, ওগুরা সেখানে তাকে চার ঘন্টার ধরে মারধর করে। এই সময়, ওগুরা বারবার লোকটিকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল, তাকে বলছিল যে, সে আগেও হত্যা করেছে এবং কীভাবে সেখান থেকে পালানো যায় তা সে জানে। ইসোনোর উপর হামলার অপরাধে তাকে সাত বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল এবং এরপরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয় যে, ওগুরার মা ফুরুতার সমাধি ভাঙচুর করেছিল এই বলে যে সে (ফুরুতা) তার ছেলের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।[১৬] আরও জানা গেছে যে ওগুরা তার পিতার সঞ্চিত অর্থ, যা ফুরুতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান করার কথা ছিল, তা বিলাসবহুল পণ্য ক্রয় এবং ভোগের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দিয়েছিল।

বলা হয়ে থাকে যে[কার মতে?] সংঘটিত অপরাধের এই ৪ জনকে খুব হালকা শাস্তিই দেয়া হয়েছিল এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ আইনের দ্বারা তাদের রক্ষা করা হয়েছিল।

শাস্তি ঘোষণার সময় বিচারক মন্তব্য করেছিলেন যে "ভীষণ গুরুতর ও নৃশংস সহিংসতা" ভুক্তভোগীর উপর সংগঠিত হয়েছে এবং মাত্র ১৭ বছর বয়সে জুনকো ফুরুতাকে এত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে যে অবশ্যই [তার] আত্মা এখনো যন্ত্রণায় কাৎরাচ্ছে।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নৃশংস ধর্ষণ ও নির্যাতনের এই বিবরণ শুনে গ্যালারিতে থাকা এক দর্শক অজ্ঞান হয়ে পড়েন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ফুরুতার মাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, যেজন্য তার মানসিক রোগের চিকিৎসা দরকার পড়ে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পরিণতি[সম্পাদনা]

১৯৮৮ সালের ২ এপ্রিল জুনকো ফুরুতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। ফুরুতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে তার এক বন্ধুর বক্তব্য:

Jun-chan, welcome back. I have never imagined that we would see you again in this way. You must have been in so much pain… so much suffering… The happi we all made for the school festival looked really good on you. We will never forget you. I have heard that the headmaster has presented you with a graduation certificate. So we graduated together – all of us. Jun-chan, there is no more pain, no more suffering. Please rest in peace…

ফুরুতার ভবিতব্য নিয়োগকর্তা তার পিতামাতাকে একটি ইউনিফর্ম উপহার দিয়েছিলেন, যেই ইউনিফর্মটি হয়তো ফুরুতা পরত। ইউনিফর্মটি রাখা হয়েছিল একটি কাসকিটে (এক ধরনের কৌটা)। ফুরুতার স্নাতকের জন্য তার স্কুলের অধ্যক্ষ তাকে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ডিপ্লোমা উপহার দেয়, যা তার পিতামাতার হাতে তুলে দেয়া হয়। ফুরুতার দেহ যেখানে পাওয়া গেছিল তার আশপাশের জায়গার উন্নয়ন সাধন করা হয় এবং সেখানে ওয়াকাসু নামে একটি পার্ক স্থাপন করা হয়।[১৭]

অন্তত তিনটি বই আছে এই অপরাধটি নিয়ে।[১৮] এই ঘটনাটি নিয়ে ১৯৯৫ সালে Joshikōsei konkurīto-zume satsujin-jiken [ja] (女子高生コンクリート詰め殺人事件) নামে একটি এক্সপ্লয়টেশন ফিল্ম তৈরি হয়, যার পরিচালক ছিলেন Katsuya Matsumura. ইউজিন কিতাগাওয়া (পরে যিনি Yuzu নামের একটি সঙ্গীত দলের সদস্য হয়েছিলেন) এই সিনেমায় মূল অপরাধীর ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং মাই সাসাকি ফুরুতার চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৯][২০][২১] ২০০৪ সালে নির্মিত 'Concrete' সিনেমা এবং ১৭-সাই নামের কমিক্সও এই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • চ্যাশায়ার, কানেটিকাট, হোম ইনভেশন মার্ডার্স
  • নাগোয়া আবেগ হত্যা
  • হ্যালো কিটি খুন
  • জেমস বালগার খুন
  • পাই হিশিয়াও-ইয়েন হত্যার ঘটনা
  • গ্লোরি চৌ এবং মুন সিউর খুন
  • সিলভিয়া লাইকেন্সের খুন
  • রেইনা মেরোকুয়েনের খুন
  • সুজান ক্যাপার খুন
  • গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজের খুন

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  4. 「週刊アサヒ芸能」১৯৮৯-০৪-২০, পৃষ্ঠা ১৭৪
  5. "古田順子の生い立ちや両親の現在~飯島愛コンクリート事件関与のデマも総まとめ"NewSee (জাপানি ভাষায়)। ২০১৯-১২-১০। ২০২১-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০১ 
  6. "古田順子の両親の現在や生い立ち!女子高生コンクリート事件の被害者まとめ"MATOMEDIA [マトメディア]|芸能エンタメ・ニュースまとめ (জাপানি ভাষায়)। ২০২০-০১-০৪। ২০২১-০১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৪ 
  7. "Full text of the Tokyo High Court's ruling on the Junko Furuta case" (Japanese ভাষায়)। Tokyo High Court। ১২ জুলাই ১৯৯১। ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  8. Tanihara, Keisuke; Kojima, Satoru (১ জুলাই ২০০৫)। "The Media Naming of Adult Criminals with Juvenile Criminal Records: The 1989 Concrete-Packing Murder Case and 2004 Assault Case (Part 1)"Bunkyo University, Faculty of Information and Communications: 331–344। 
  9. Yumi, Wijers-Hasegawa (জুলাই ২৯, ২০০৪)। "Man who killed as child back in court"The Japan Times। মার্চ ৮, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৭, ২০২১ 
  10. Hawkins, Kristal (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৩)। "Japanese Horror Story: The Torture of Junko Furuta"Crime Library। ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১৫ 
  11. "Rapist, Murderer Given 20-Year Sentence". The Daily Yomiuri. Sunday the 13th of July 1991. Page 2. Retrieved from LexisNexis on 29 September 2009.
  12. "Chilling Details About The Murder of Junko Furuta AKA The Concrete-Encased High School Girl Murder"Ranker (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "Jo Kamisaku Today"। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  14. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  15. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 
  16. "神作譲(小倉譲)の現在は?【再犯】三郷市逮捕監禁致傷事件まとめ! | 素敵女子の暮らしのバイブルJelly[ジェリー]"jelly-media.jp (জাপানি ভাষায়)। ২০২০-০৭-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২০ 
  17. "JKコンクリート詰め41日間もまわされ続けた畜生事イ牛の全て。犯人達の現在がヤバすぎ・・・ ※実写化 動画あり※"サンサーラ速報 (জাপানি ভাষায়)। ২০১৭-১০-১৯। ২০১৯-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২০ 
  18. 渥美饒兒『十七歳、悪の履歴書-女子高生コンクリート詰め殺人事件』作品社、2003年。আইএসবিএন ৪৮৭৮৯৩৫৭২৩.

    門野晴子『女子高生コンクリート詰め殺人事件―彼女のくやしさがわかりますか?』おんな通信社編、社会評論社、1990年。

    佐瀬稔『うちの子が、なぜ!―女子高生コンクリート詰め殺人事件』草思社、1990年。 আইএসবিএন ৪৭৯৪২০৩৯০X.
  19. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Joshikôsei konkuriito-dume satsujin-jiken (ইংরেজি)
  20. "Filme mit Beteiligung von Yujin Kitagawa" (জার্মান ভাষায়)। ২০০৯-০৬-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-০৯ 
  21. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১ 

 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]