মেটিস (প্রাকৃতিক উপগ্রহ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেটিস
গ্যালিলিও মহাকাশযান কর্তৃক গৃহীত মেটিসের ছবি
আবিষ্কার
আবিষ্কারকস্টিফেন সিনট
আবিষ্কারের তারিখমার্চ ৪, ১৯৭৯
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য
অনুসূর২৭৯৭৪ কিমি[ক]
অপসূর২৮০২৬ কিমি[ক]
কক্ষপথের গড়
ব্যাসার্ধ
২৮০০০ কিমি (1.792 RJ)[১][২]
উৎকেন্দ্রিকতা০.০০০২[১][২]
কক্ষীয় পর্যায়কাল০.২৯৪৭৮০ d (7 h, 4.5 min)[১][২]
গড় কক্ষীয় দ্রুতি31.501 km/s[ক]
নতি0.06° (to Jupiter's equator)[১][২]
যার উপগ্রহ বৃহস্পতি
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
মাত্রাসমূহ60 × 40 × 34 km³[৩]
গড় ব্যাসার্ধ২১.৫±২.০ কিমি[৩]
আয়তন≈ ৪২৭০০ কিমি
ভর৩.৬×১০১৬ kg[ক]
গড় ঘনত্ব০.৮৬ গ্রাম/সেমি³ (assumed)
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ০.০০৫ m/s2 (0.0005 g)[ক]
মুক্তি বেগ0.012 km/s[ক]
ঘূর্ণনকালsynchronous
অক্ষীয় ঢালশূন্য[৩]
প্রতিফলন অনুপাত০.০৬১±০.০০৩[৪]
তাপমাত্রা≈ ১২৩ ক্যালভিন
২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে 'নিউ হরাইজন মহাকাশযান' দ্বারা চিত্রিত বৃহস্পতি গ্রহের প্রধান বলয়ের প্রান্তে মেটিস প্রদক্ষিণ করছে

মেটিস (/ˈmtəs/; গ্রিক: Μήτις), বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ। এটি জুপিটার XVI নামেও পরিচিত। বৃহস্পতি গ্রহের নিকটমত উপগ্রহগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ কর্তৃক গৃহীত আলোকচিত্রের মাধ্যমে মেটিসের উপস্থিতির কথা সর্বপ্রথম জানা যায়। গ্রিক পুরাণের দেবী মেটিসের নাম অনুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের প্রথমার্ধে এবং ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যালিলিও মহাকাশযান মেটিসের ভূপৃষ্ঠের নিকট থেকে কিছু আলোকচিত্র গ্রহণ করে, যার ফলে মেটিস সম্পর্কে আরো তথ্য জানা সম্ভব হয়।

জোয়ারের আকর্ষণের কারণে মেটিস বৃহস্পতির সাথে আবদ্ধ। এই আকর্ষণের কারণে উপগ্রহটির আকারও অপ্রতিসম। এটির একপাশের ব্যাস অন্য আরেক পাশের ব্যাসের প্রায় দ্বিগুণ। এটি বৃহস্পতির দুইটি উপগ্রহের অন্যতম, যা বৃহস্পতি গ্রহের একদিন সময়ের আগেই কক্ষপথ পরিভ্রমণ সম্পূর্ণ করে। অন্য গ্রহটি অ্যাড্রাসটি। মেটিস বৃহস্পতির মূল রিঙ বরাবর প্রদক্ষিণ করে। বৃহস্পতির রিঙগুলোর গঠনকারী উপাদানের মধ্যে এটি অন্যতম।

আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ[সম্পাদনা]

১৯৭৯ সালে মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী স্টিফেন সিনট ভয়েজার ১ কর্তৃক গৃহীত আলোকচিত্রের মাধ্যমে মেটিস আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের পরপরই জ্যোতির্বিদ্যার নিয়মানুসারে উপগ্রহটির নাম S/1979 J 3 রাখা হয়।[৫][৬] ১৯৮৩ সালে পৌরাণিক চরিত্রের নাম অনুসারে এটির নামকরণ করা হয়। মেটিস ছিল গ্রিক দেবতা জিউসের প্রথম তিতান[৭] ভয়েজার ১-এর আলোকচিত্রে মেটিসকে কেবল একটি বিন্দু হিসেবে দেখা গিয়েছিলো। তাই সে অবধি মেটিস সম্পর্কে খুব সীমিত তথ্য জানা যায়। পরবর্তীতে গ্যালিলিও মহাকাশযানের মাধ্যমে মেটিসের ভূপৃষ্ঠের বিস্তর তথ্য জানা সম্ভব হয়।

ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ[সম্পাদনা]

মেটিসের বাহ্যিক আকার অপ্রতিসম। এক পৃষ্ঠ থেকে এটির আরেক পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য ৬০x৪০x৩৪ কিলোমিটার। বৃহস্পতির নিকটতম চারটি উপগ্রহের মধ্যে আকারের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম।[৩] এটির ভূপৃষ্ঠের আয়তন ৫,৮০০ থেকে ১১,৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। মেটিসের গঠনকারী উপাদান সম্পর্কে এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হয় এর গড় ঘনত্ব বৃহস্পতির তৃতীয় উপগ্রহ অ্যামালথী-এর মতই। মেটিসের ভর প্রায় ৩.৬×১০১৬ কেজি। ঘনত্ব থেকে ধারণা করা হয় এর গঠনকারী উপাদান বরফ, যার ছিদ্রতা ১০-১৫%।[৮]

মেটিসের পৃষ্ঠ অনেক বেশি গর্তময় এবং লালচে রঙের। উপগ্রহটির বড় ও ছোট অংশের মাঝে উল্লেখযোগ্য অপ্রতিসমতা লক্ষণীয়: এর বৃহৎ অংশের উজ্জ্বলতা ছোট অংশের তুলনায় প্রায় ১.৩ গুন বেশি। বৃহৎ অংশের স্পন্দন ও বেগের কারণে অপ্রতিসমতার উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই অংশের পৃষ্ঠে উজ্জ্বল এক ধরনের পদার্থের উপস্থিতি দেখা যায়।[৪]

কক্ষপথ[সম্পাদনা]

বৃহস্পতির নিকটতম চারটি ক্ষুদ্র উপগ্রহের মধ্যে মেটিসের অবস্থান সবচেয়ে কাছে। জুপিটার গ্রহ থেকে প্রায় ১২৮,০০০ কিলোমিটার দূরত্বে বৃহস্পতির মূল রিঙে মেটিস প্রদক্ষিণ করে। বৃহস্পতির বিষুবরেখা থেকে মেটিসের নতি এবং কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা খুব সামান্য।[১][২] জোয়ারের আকর্ষণের কারণে মেটিসের কক্ষপথের দীর্ঘতম অংশ বৃহস্পতির দিকে কিছুটা হেলানো।[২][৩] মেটিসের প্রদক্ষিণের দিক বৃহস্পতির প্রদক্ষিণের অনুরূপ। জোয়ারের কারণে উপগ্রহটির কক্ষপথে অপ্রতিসমতা তৈরি হয়েছে। যদি অ্যামালথী উপগ্রহের কক্ষপথের সমান ঘনত্ব মেটিসের কক্ষপথের হয়, তবে সেটি রোশ সীমার মধ্যে পড়বে। কিন্তু যেহেতু মেটিসের কক্ষপথ বিকৃত নয়, তাই তা রোশ সীমার ভিতরে না হলেও খুব কাছাকাছি হবে।[২]

মেটিসের কক্ষপথ বৃহস্পতির খুব নিকটে হওয়ায় মেটিস থেকে বৃহস্পতিকে অতি বৃহৎ দেখায়। যেকোন মুহূর্তে মেটিস থেকে বৃহস্পতি গ্রহের ৩১% দেখা যায়। বৃহস্পতির উপগ্রহগুলোর মধ্যে মেটিসের গতি সবচেয়ে বেশি। এর বেগ ৩১.৫ কিমি/সেকেন্ড।

বৃহস্পতির রিঙের সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

বৃহস্পতির মূল রিঙের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০০ কিমি দৈর্ঘ্য জুড়ে মেটিসের কক্ষপথের অবস্থান। রিঙে প্রায় ৫০০ কিমি শূন্যস্থান রেখে মেটিস প্রদক্ষিণ করে। ধারণা করা হয় এই শূন্যস্থানের সাথে মেটিসের সম্পর্ক রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে এসম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। বৃহস্পতির মূল রিঙে মেটিস প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা নিঃসৃত করে।[৯] এই ধূলিকণা মেটিসের পৃষ্ঠ থেকে সৃষ্টি হয় এবং তা উল্কাপিন্ডের প্রভাবে পৃষ্ঠ থেকে রিঙে ছড়িয়ে পড়ে। ঘনত্ব কম হওয়ায় অনেক সময় এই ধূলিকণা বৃহস্পতির রিঙের বাহিরে মহাশূণ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Calculated on the basis of other parameters.

উদ্ধৃতির উৎসসমূহ

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]