ব্লাড ব্যাঙ্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একজন রক্তদাতা হাসপাতালের "ব্লাড ব্যাংক", রারোটোঙ্গা, ১৯৬৫-তে অবদান রাখছেন

রক্তদানে সংগৃহীত  রক্ত পরবর্তীতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যেখানে সংরক্ষণ করা হয় তাকে ব্লাড ব্যাঙ্ক বলা হয়।  আর্থিক প্রতিষ্ঠান 'ব্যাঙ্ক' যেমন সংগৃহীত অর্থ বা সঞ্চয় উপভোক্তাদের বিনিয়োগে প্রদান করে,  সেই রকম ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তপ্রদানকারী মানুষের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ  করে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করার পর মান ও ধরন অনুযায়ী সংরক্ষণ করে ও মুমূর্ষু রোগীকে প্রদান (রক্ত সঞ্চারণ) করে। "ব্লাড ব্যাঙ্ক" নামটি অবশ্য শিকাগোর কুক কাউন্টি হাসপাতালের চিকিৎসক বার্নার্ড ফ্যান্টাসের দেওয়া। সাধারণত ব্লাড ব্যাঙ্ক কোন একটি হাসপাতালের সাথে যুক্ত থেকে রক্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, পরীক্ষা, পৃথকীকরণ ও সঠিক তাপমাত্রায় স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কাজগুলি করে থাকে।[১]

রক্ত সঞ্চারণের প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

বর্তমানে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি  রক্ত ​​সংগ্রহ করে রক্তের  বিভিন্ন উপাদানগুলিতে আলাদা করে  ফেলে যাতে রোগীর প্রয়োজন  অনুযায়ী সবচেয়ে  কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন বহন করে, প্লেটলেটগুলি রক্ত ​​জমাট বাঁধতে সহায়তা করে এবং প্লাজমায় নির্দিষ্ট প্রোটিন রয়েছে যা জমাট এবং নিরাময়ের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রক্তের  উপাদান অনুযায়ী প্রয়োজন ভিত্তিক প্রকারভেদ গুলি হল-

  • পুরো রক্ত (ডাব্লউবি)  - সরাসরি কোন মানব দেহ হতে  আলাদা না করে সঞ্চারণ করা হয়।.
  • লোহিত রক্তকণিকা সমৃদ্ধ বা প্যাকড কোষ সমৃদ্ধ রক্ত যা কিনা অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক, রক্তাল্পতা বা আয়রন ঘাটতিযুক্ত রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই প্রকার রক্ত মোটামুটি ১.০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে - ৬. ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন  সংরক্ষণ করা যায়।
  • লোহিত রক্তকণিকা সমৃদ্ধ বা প্যাকড কোষ সমৃদ্ধ রক্ত যা কিনা অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক, রক্তাল্পতা বা আয়রন ঘাটতিযুক্ত রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই প্রকার রক্ত মোটামুটি ১.০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে - ৬. ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন  সংরক্ষণ করা যায়।
  • প্লাজমা বা রক্তরস সমৃদ্ধ যা কিনা লিভারের সমস্যায়, গুরুতর সংক্রমণে অথবা গুরু তর অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেই প্রকার সদ্য সংগৃহীত রক্ত হিমায়িত অবস্থায় -২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ১২ মাস সংরক্ষণ করা চলে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীনকাল হতেই মানুষ রক্তের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। তারা লক্ষ্য করেছেন, যে মানব শরীরের রক্তের অভাব, রক্তাল্পতা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেয়। তাই বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘকালের প্রচেষ্টা হয়েছে বিশ্বব্যাপী।

  • ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হার্ভে কর্তৃক মানবদেহে সঠিক রক্ত সংবহনের ধারণা( শিরাপথে হৃৎপিণ্ডে আসা এবং হৃৎপিণ্ড হতে ধমনী পথে বিভিন্ন অংশে সঞ্চালনের)প্রদানের পরই রক্তদানের ও রক্ত সঞ্চারণের প্রক্রিয়া উদ্ভূত হয়।
  • ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রক্তদান সংগঠিত হয়।
  • ১৭৯৫ সালে প্রথম মানব রক্ত সঞ্চালনের পরীক্ষা করেন ডা ফিলিপ সিঙ্গ ফিজিক।
  • ১৮১৮ সালে লন্ডনে মানব রক্ত ক্ষরণের চিকিৎসা করেন ডা জেমস ক্লন্ডেল।
  • ১৯০১ - ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে নোবেলজয়ী অস্টীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার রক্তে এন্টিজেন নামক এক ধরনের প্রোটিনের অবস্থান নিশ্চিত করায় মানব রক্তের গ্রুপ 'এ','বি' এবং 'ও' (প্রথমে 'সি',পরে 'ও'তে পরিবর্তিত হয় ) আবিষ্কৃত হয়।
  • ১৯০২ রক্তের চতুর্থ গ্রুপ 'এবি' আবিষ্কৃত হয়। কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের সাথে কাজ করা দুজন শিক্ষার্থী চতুর্থ মানব রক্তের গ্রুপ - 'এবি' আবিষ্কার করেছিলেন। এই দুজন হলেন এ ভ্যান ডেকাস্টেলো এবং এ.স্টুরলি। এই চারটি রক্তের গ্রুপ একত্রে 'এবিও' রক্তের শ্রেণী বিন্যাস পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত হয়।
  • ১৯১৪ সালের ২৭ শে মার্চ প্রথম নন-ডাইরেক্ট রক্ত-সঞ্চারণ-রক্ত জমাট বাঁধার আগে তরলীকৃত অবস্থায় বেলজিয়ামের চিকিৎসক আলবার্ট হাস্টিনের তত্ত্বাবধানে প্রথম স্থানান্তর সরাসরি রক্ত-দাতা থেকে রক্ত-গ্রহীতাকে দেওয়া হয়েছিল।[২]
  • ১৯২৬ ব্রিটিশ রেড ক্রস বিশ্বের প্রথম মানব রক্ত ​​সংবহন পরিষেবা চালু করেছিল।
  • ১৯৩২ রাশিয়ার লেনিনগ্রাড হাসপাতালে প্রথম রক্তের ডিপো (পরে'ব্লাড ব্যাঙ্ক' নামে পরিচিত) চালু হয়েছিল।
  • ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময় ফেডেরিক দুরান জর্দেকে স্পেনীয় রিপাবলিকান সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় আহত সৈনিকদের এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রথম ব্লাড ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
  • ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই মার্চ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর কুক কাউন্টি হাসপাতালের তৎকালীন ঔষধবিজ্ঞানচিকিৎসা বিভাগের পরিচালক বার্নার্ড ফ্যান্টাস প্রথম হাসপাতালে "ব্লাড ব্যাঙ্ক" প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই নামটি তারই দেওয়া।
  • ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে আহত সৈনিকদের সাহায্যে প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান শুরু হয়। দেশের প্রথম ব্লাড ব্যাঙ্কটি কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথ এ স্থাপিত হয়। পরে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে এটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ডেফিনিশন অব ব্লাড ব্যাঙ্ক (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৭ 
  2. Gordon, Murray B. (১৯৪০)। "Effect of External Temperature on Sedimentation Rate of Red Blood Corpuscles"। Journal of the American Medical Association114 (16)। ডিওআই:10.1001/jama.1940.02810160078030 

কক্সবাজার ব্লাড ডোনেটিং ক্লাব ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে