বেনারসি শাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বারাণসী (বেনারস) থেকে তৈরি সিল্ক এবং সোনার কিংখাবযুক্ত রেশমের সুতার বেনারসি শাড়ি

বেনারসি শাড়ি হল প্রাচীন ভারতীয় একটি শহর বেনারস বা বারাণসীতে তৈরি একপ্রকার শাড়ি। শাড়িগুলো ভারতের সেরা শাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম যা সোনা এবং রূপার কিংখাব বা জরি, সূক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সূচিকর্মের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। শাড়িগুলো সূক্ষ্ম রেশম তন্তুর তৈরি এবং জটিল নকশায় সজ্জিত ও নকশাকাটার কারণে তুলনামূলকভাবে ভারী ওজনের হয়ে থাকে।

হস্তশিল্পজাত বেনারসি রেশমের শাড়ি তৈরি করছেন একজন ব্যক্তি

জড়ানো ফুল ও পাতাযুক্ত নকশা, কলকাবেল, পাড়ের বাইরের অংশে ঝাল্লর নামে ওপর দিকে ওঠা পাতার একটি ঝাড় এই শাড়ির অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সোনার কাজ, ঘন বুনন, পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশা, ধাতব চাক্ষুষ প্রভাব (ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস), আঁচল এবং জালি কাজ।[১]

ভারতে প্রায়শই এই শাড়ি কনের বিয়েতে সাজসজ্জার অংশ বলে বিবেচিত।[২][৩]

নকশা এবং বিন্যাসের জটিলতার উপর নির্ভর করে একটি বেনারসি শাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ হতে ১৫ দিন থেকে এক মাস এবং কখনও কখনও ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বেনারসি শাড়ি বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিধান করা হয়, যেমন- মহিলাদের বিয়েতে অংশ নেওয়ার সময়। এটিকে মহিলাদের সেরা গহনাগুলোর পরিপূরক হিসাবে ভাবা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সোনার কিংখাবসহ ঐতিহ্যবাহী একটি বেনারসি শাড়ি

রাল্ফ ফিচ (১৫৮৩-৯১) বেনারসকে সুতি বস্ত্র শিল্পের একটি সমৃদ্ধ ক্ষেত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বেনারসের কিংখাব (ব্রোকেড) এবং জরি টেক্সটাইলের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯ শতকে। ১৬০৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় গুজরাত থেকে রেশম তাঁতিদের স্থানান্তরিত হওয়ার পরে, সম্ভবত সতেরো শতকে বেনারসে রেশম কিংখাব বুনন শুরু হয়েছিল এবং আঠারো ও উনিশ শতকের সময় উৎকৃষ্টতার সাথে বিকশিত হয়েছিল। মোঘল আমলে চৌদ্দ শতকের দিকে স্বর্ণ ও রৌপ্য সুতোর ব্যবহার করে জটিল নকশার সাথে কিংখাব বুনন বেনারসের বিশেষত্ব হয়ে ওঠে। [৪][৫]

গোরক্ষপুর, চান্দৌলি, ভাদোহি, জৌনপুর এবং আজমগড় জেলাকে ঘিরে এই অঞ্চলের হস্ত ও তাঁত রেশম শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ১.২ মিলিয়ন লোকের কুটির শিল্পের হাত ধরে ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির কাজ করা হয়। [৬]

গত কয়েক বছরে এখায়া, তিলফি বেনারসসহ বারাণসী ভিত্তিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো বেনারসি শাড়ি পুনরুদ্ধার করে এবং তা সরাসরি মূলধারার গ্রাহকদের কাছে নিয়ে আসে। [৭][৮]

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই)[সম্পাদনা]

সিল্কের তাঁত, বারাণসী

বছরের পর বছর ধরে, দ্রুত হারে এবং সস্তা ব্যয়ে উৎপাদনশীল যান্ত্রিক ইউনিটগুলোর কাছ থেকে প্রতিযোগিতার কারণে বেনারসী রেশম তাঁত শিল্পটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে চলেছে, প্রতিযোগিতার আরেকটি উৎস হল সস্তা সিল্কের তৈরি বিকল্প কৃত্রিম শাড়ি। [৯]

২০০৯ সালে, দু'বছরের অপেক্ষার পরে, উত্তর প্রদেশের তাঁত সমিতিগুলো 'বেনারস কিংখাব ও শাড়ির' জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) অধিকার অর্জন করেছে। ভৌগোলিক নির্দেশক হচ্ছে কোনো সামগ্ৰীর ব্যবহার করা বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নিৰ্দিষ্ট সামগ্ৰীর ভৌগোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নিৰ্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্ৰী নিৰ্দিষ্ট গুণগত মানদণ্ড বা নিৰ্দিষ্ট প্ৰস্তুত প্ৰণালী অথবা বিশেষত্ব নিশ্চিত করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Different Types of Sarees from North India, South India and East India"Indiamarks (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২২ 
  2. Saree saga: Draped for elegance, growth too The Economic Times, 5 Apr 2009.
  3. The religious route The Times of India, 3 April 2003.
  4. "Banarasi Sari – Banarasi Saree, Banarsi Silk Sarees India"lifestyle.iloveindia.com। ২০১৭-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২২ 
  5. The rise and fall of Benarasi silk trade Rediff.com, Geetanjal Krishna in Benares, 21 April 2007.
  6. Banarasi silk sarees get copyright cover ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-০৮-২৯ তারিখে The Times of India, Binay Singh, TNN 18 September 2009.
  7. eShe (২০১৮-০৮-২৩)। "These Designers Are Changing the Way We Wear Banarasi Weaves"eShe (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬ 
  8. "Add A Little Bit Of Banaras To Your Wedding Trousseau With Tilfi"Home (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬ 
  9. Varanasi weavers, prisoners of faith Times of India, MAHESH DAGA, TNN 8 February 2002.

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • বেনারস ব্রোকেডস, আনন্দ কৃষ্ণ, বিজয় কৃষ্ণ, অল ইন্ডিয়া হস্তশিল্প বোর্ড, সংস্করণ: অজিত মুখোপাধ্যায়। কারুশিল্প যাদুঘর, ১৯৬৬।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]