সহজাত প্রতিরক্ষা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মানবদেহে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জন্ম থেকে কার্যকর থাকে, অমরা হতে প্রাপ্ত ও আজীবন উপস্থিত থাকে, তাকে সহজাত প্রতিরক্ষা বলে (Innate Immunity)।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

এটি মানবদেহের প্রতিরক্ষার প্রথম স্তর। এটি জীবাণুর উদ্দেশ্যে শারীরিক, রাসায়নিক ও কোষীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো বহিরাগত ক্ষতিকর জীবাণুকে প্রতিরোধ করা যেন তা শরীরের ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে৷ যদি প্রবেশ করে ফেলে তবে অর্জিত প্রতিরক্ষা কার্যকর হয়। সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জীবাণুর প্রতি অতিদ্রুত ও তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়। এর সময়কাল ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। [১] এটি কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ করে না। বরং সমগ্র বহিরাগত জীবাণুকেই আক্রমণ করে। কয়েকটি গোত্রের প্যাটার্ন রিকগনিশন রিসেপ্টর ও লিউসিন সমৃদ্ধ টোলসদৃশ রিসেপ্টর সহজাত প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এন্টি মাইক্রোবিয়াল (জীবাণু বিরোধী) কিছু পেপটাইড এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। [২] এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি বিষয় হলোঃ দেহের বাহ্যিক প্রতিবন্ধক, জৈবরাসায়নিক প্রতিবন্ধক, ফ্যাগোসাইটোসিস প্রতিবন্ধক ও প্রদাহ।

প্রতিরক্ষায় ভূমিকা[সম্পাদনা]

ভার্টিব্রাটা প্রাণিদের মধ্যে ত্বক এবং অন্যান্য বাহ্যিকতলীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেহকে নিরাপত্তা দান করে সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ উদ্দেশ্যে শরীরের ভৌত-রাসায়নিক প্রতিবন্ধকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

ত্বকের ভূমিকা : ত্বক শরীরের সর্ববৃহৎ অঙ্গ। ত্বক যথেষ্ট এসিডিক এবং ঘামগ্রন্থি ও স্বেদগ্রন্থি থেকে এন্টিবায়োটিক উৎপন্ন করে। এছাড়াও ত্বক পানিরোধী, কেরাটিনময় ও সাধারণত অভেদ্য। যার কারনে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেদ করে কোনো জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। এটি প্যাথোজেন (জীবাণু) ও অভ্যন্তরীণ শরীরের ভেতরে বাঁধা হিসেবে কাজ করে।

অশ্রু, মিউকাস ও লালার ভূমিকা: মানুষের নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদি খোলা অঙ্গ দ্বারা সহজেই যে কোনো জীবাণু শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম। এজন্য অশ্রু, লালা ও মিউকাস এমন একধরনের এনজাইম বহন করে যা বহু ব্যাক্টেরিয়া জীবাণুর কোষপ্রাচীর ধ্বংস করে দেয়। এরপরে এই জীবাণুগুলো মিউকাসে আটকে যায় ও এভাবে জীবাণুটি মারা যায়। শরীরের কিছু বিশেষ অঙ্গ মিউকাস তৈরি করে দেহের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখে। অশ্রুর মাধ্যমে চোখের জীবাণু দেহ থেকে নির্গত হয়।

সিলিয়া : দেহের সকল প্রবেশ পথ মিউকাস ঝিল্লিতে বেষ্টিত থাকে। মিউকাস ঝিল্লির অনেক অংশ আন্দোলনরত সিলিয়ায় (চুলের মত সরু অঙ্গাণু) আবৃত থাকে। এক্ষেত্রে বহিরাগত কণা এ ঝিল্লির আঠালো মিউকাসে আটকে যায়। ফলে হাঁচি, কাশির অনূভুতি হয় ও এর মাধ্যমে জীবাণু বাইরে বের হয়ে যায়। কিংবা পাকস্থলিতে পৌঁছে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের প্রভাবে মারা যায়।

পাকস্থলির এসিড : খাদ্য ও পানির সাহায্যে কিংবা অন্য কোনোভাবে পাকস্থলিতে জীবাণু পৌঁছালে সেই জীবাণু পাকস্থলিতে জমা হয়। পাকস্থলির এসিড এই জীবাণুকে মেরে ফেলে। এর মধ্যে প্রধান এসিড হলো হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও প্রোটিওলাইটিক এনজাইম।

রেচনতন্ত্র : মূত্র প্রবাহের ফলে মূত্রাশয় এলাকার সকল জীবাণু রেচনতন্ত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। রেচনতন্ত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা প্রচন্ড এসিডিক ও আঠালো হয়। ফলে আঠালো জায়গায় জীবাণু আটকে যায় ও ফ্যাগোসাইটগুলো পরে এদেরকে গ্রাস করে।

উপকারী ব্যাক্টেরিয়া : ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ছাড়াও কিছু উপকারী ব্যাক্টেরিয়া থাকে যারা মানুষের শরীরের উপকার করে। এসব ব্যাক্টেরিয়ার কারণে অন্য কোনো ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয়। মানুষের মুখ ও অন্ত্রে এমন সব ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় ও অবস্থান করে।

এসবের পাশাপাশি সহজাত মারণ কোষ, প্রদাহ, কমপ্লিমেন্ট (যা ২০ ধরনের প্লাজমা প্রোটিনে নির্মিত), ইন্টারফেরন ম্যাক্রোফেজ, নিউট্রোফিল, ডেনড্রাইট কোষ, বেসোফিল, মাস্ট কোষ ও ইউসিনোফিলও সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখে। [৩]

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৩ ধরনের হতে পারে। এটি সাধারণ হয় একেক প্রজাতি, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবিশেষে শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারনে। যেমনঃ

ক. প্রজাতিগত প্রতিরক্ষাঃ এক্ষেত্রে কোনো জীবাণুর আক্রমণ নির্দিষ্ট প্রজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যান্য প্রজাতিতে বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য এর দরুন সেই জীবাণু নির্দিষ্ট প্রজাতি ব্যতীত অন্য প্রজাতিকে আক্রমণ করে না। যেমনঃ ম্যালেরিয়ার পরজীবি শুধু মানুষ ও মশকীতে পরজীবি৷

খ. গোষ্ঠীগত প্রতিরক্ষাঃ কোনো বিশেষ জীবাণু দ্বারা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আক্রান্ত হয়৷ কিন্তু অন্যান্য গোষ্ঠী সেই জীবাণুকে সহজের প্রতিরোধ করতে পারে। যেমনঃ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ সাদা চামড়ার মানুষ থেকে বেশি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়।

গ. ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষাঃ কোনো ব্যক্তির নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারনে কিছু জীবাণু সেই দেহে আক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়। [৪][৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The Innate vs. Adaptive Immune Response
  2. Innate Immune System
  3. The body's first line of defense
  4. Immunity & its types
  5. উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান ২য় পত্র