সাইবেরিয়ার ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইয়ারম্যাকের সাইবেরিয়া বিজয়, ভ্যাসিলি সুরিকভ দ্বারা অঙ্কিত

সাইবেরিয়ার প্রাথমিক ইতিহাস উরাল পর্বতমালার পশ্চিমে অবস্থিত স্কিথিয়ানদের পরিশীলিত যাযাবর সভ্যতার (পাজিরিক) দ্বারা এবং উরালের পূর্ব দিকে অবস্থিত জিওনগনু (নোইন-উলা) দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। এই উভয় অংশই খ্রিস্টীয় যুগের আগে থেকেই বিকাশ লাভ করেছিল। সাইবেরিয়ার স্তেপভূমী অঞ্চল নানান যাযাবর গোষ্ঠীর উত্তরসূরীগণ দখল করেছিল। যেমন খিতান জনগোষ্ঠী সহ[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিভিন্ন তুর্কি জনগোষ্ঠী এবং মোঙ্গল সাম্রাজ্যমধ্যযুগের শেষের দিকে তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম বাইকাল হ্রদের দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়েছিল।

রাশিয়ান সাম্রাজ্যে সাইবেরিয়া প্রধানত একটি কৃষি প্রধান প্রদেশ হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিল। সরকার এটিকে নির্বাসনের স্থান হিসাবেও ব্যবহার করেছিল। অন্যান্যদের সাথে আভাকুম, দস্তয়েভ্‌স্কি এবং ডিসেমব্রিস্টদের এই অঞ্চলের শিবিরে কাজ করার জন্য পাঠানো হত। উনিশ শতকে শিল্পায়ণের স্বার্থে এখানে ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। এটি সাইবেরিয়ান খনিজ সম্পদের বিশাল মজুদ ভান্ডার আবিষ্কার করতে ও শোষণ করতে সহায়তা করেছিল।

প্রাকইতিহাস এবং প্রাচীনত্ব[সম্পাদনা]

আলতাই পর্বতমালার মাউন্ট বেলুখা

জিনগত বংশানুক্রম-এর ক্ষেত্র অনুসারে সাইবেরিয়ায় ৪৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম মানুষ বসবাস শুরু করে এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ইউরোপ এবং আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ছিল জাপান এর প্রাগৈতিহাসিক জোমন জনগোষ্ঠী য়াঁরা হলেন আধুনিক আইনুদের পূর্বপুরুষ। [১][২][৩] ভ্যাসিলি র‌্যাডলভ এর মতে মধ্য সাইবেরিয়ার আদি বাসিন্দাদের মধ্যে ছিলেন ইয়েনিসেইয়ান যাঁরা পরবর্তীকালের ইউরালীয় এবং তুর্কি-ভাষীদের থেকে আলাদা ভাষায় কথা বলতেন। কেট জনগোষ্ঠীকে এখানের প্রথম দিকের অভিবাসীদের শেষ অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অভিবাসীরা ২০,০০০ বছরেরও বেশি আগে বেরিং ল্যান্ড সেতু পেরিয়ে উত্তর আমেরিকাতে এসেছিলেন বলে অনুমান করা হয়।

সমস্ত সাইবেরিয়ান হ্রদের তীর ল্যাকাস্ট্রিন পর্বে অবক্ষেপে ভরে যায় যার প্রচুর পরিমাণে অবশেষ নিওলিথিক যুগ অবধিও অবশিষ্ট ছিল। [৪] এখানে প্রাপ্ত অগণিত কুরগান (সমাধিস্তূপ), চুল্লি এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে একটি ঘন জনবসতির সাক্ষ্য দেয়। মধ্য এশিয়ায় পাওয়া প্রাচীনতম নিদর্শণের কয়েকটি সাইবেরিয়া থেকেই উদ্ভূত। [৫]

ইয়েনিসেইয়ানদের পরে এখানে এসেছিলেন উত্তর উরাল অঞ্চল থেকে ইউরালিক সামোয়েড জনজাতি। কিছু উত্তরাধিকৃত সংস্কৃতি সেলকআপ, সায়ন অঞ্চলে অবশিষ্ট থেকে যায়। লোহা তাদের কাছে অজানা ছিল। তবে তারা ব্রোঞ্জ, রৌপ্য এবং স্বর্ণ-কাজে দক্ষতা অর্জন করেছিল। তাদের ব্রোঞ্জ অলঙ্কার এবং সরঞ্জাম প্রায়ই পালিশ করা হত যা তাদের যথেষ্ট শৈল্পিক রুচি প্রকাশ করে। [৪] তারা বিস্তীর্ণ উর্বর অঞ্চলে তাদের কৃষিকাজে সহায়তা করার জন্য সেচব্যবস্থা পরিচালনা করত।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাইবেরিয়ার অ্যান্দ্রোনোভো সংস্কৃতি-তে ইন্দো-ইরানি প্রভাব হতে পারে খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০-১০০০০ অবধি। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম. থেকে তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে ইন্দো-ইরানি স্কিথিয়ান প্রভাবে আলতাই অঞ্চলে (পাজিরিক সংস্কৃতির) উন্নতি লাভ করে। পরবর্তীকালের সমস্ত স্তেপ সাম্রাজ্যে সেগুলির একটি মুখ্য প্রভাব ছিল।

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমদিকে সিল্ক রোড দিয়ে বাণিজ্য চলত এবং সাইবেরিয়ায় সিল্ক আমদানি ও বাণিজ্য করা হত। [৬]

"মিনুসিনস্ক স্টেপ", ভ্যাসিলি সুরিকভ এর চিত্রকর্ম

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে জিওনগনু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ফলে এখানে ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যার আগমন শুরু হয় এবং অনেকে সম্ভবত বিশাল মধ্য সাইবেরিয়ান মালভূমি এর উত্তর সীমানায় চালিত হত। তুরস্কের লোকেরা যেমন ইয়েনিসেই কির্ঘিজ সায়ান অঞ্চলে ইতিমধ্যেই বসবাস করত। বিভিন্ন তুর্কি উপজাতি যেমন খাকা এবং উইঘুর তাদের পূর্ববর্তী স্থান থেকে উত্তর-পশ্চিমে পাড়ি দিয়ে এসে ইউগ্রিকদের বশীভূত করে।

এই নতুন আক্রমণকারীরা একইভাবে তাদের থাকার জায়গায় অসংখ্য চিহ্ন ফেলে রেখে আসে এবং তাদের অবশেষ থেকে দুটি পৃথক সময় সহজেই আলাদা করা যেতে পারে। তারা লোহার সাথে পরিচিত ছিল এবং তাদের অধীনস্থ প্রজাদের থেকে ব্রোঞ্জের ঢালাই শিল্পটি শিখে নিয়ে তাকে তারা কেবল সাজসজ্জার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করত। [৪] তারা এই কাজের শিল্পকলার পরিমার্জনও করে। তাদের মৃৎশিল্প আরও শৈল্পিক এবং ব্রোঞ্জ যুগ এর চেয়ে উচ্চ মানের ছিল। তাদের অলঙ্কার সেন্ট পিটার্সবার্গ এর হার্মিটেজ যাদুঘর-এর সংগ্রহে রাখা আছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Jomon Culture and the peopling of the Japanese archipelago: advancements in the fields of morphometrics and ancient DNA"ResearchGate (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৮ 
  2. Schmidt, Seguchi (৩১ আগস্ট ২০১৩)। "Jōmon culture and the peopling of the Japanese archipelago" (পিডিএফ) 
  3. Tokunaga, Katsushi; Ohashi, Jun; Bannai, Makoto; Juji, Takeo (সেপ্টেম্বর ২০০১)। "Genetic link between Asians and native Americans: evidence from HLA genes and haplotypes"। Human Immunology62 (9): 1001–1008। ডিওআই:10.1016/S0198-8859(01)00301-9পিএমআইডি 11543902 
  4.  One or more of the preceding sentences একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনেKropotkin, Peter; Bealby, John Thomas (১৯১১)। "Siberia"। চিসাম, হিউ। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ24 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 10–18। 
  5. The New Encyclopædia Britannica, Page 724, by Philip W. Goetz, Encyclopædia Britannica, Inc, 1991
  6. "Silk Road, North China"The Megalithic Portal 


বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]