কৃষ্ণপক্ষ (উপন্যাস)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কৃষ্ণপক্ষ
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
প্রচ্ছদ শিল্পীধ্রুব এষ
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
বিষয়প্রেম, বিরহ
ধরনপ্রেম
পটভূমিঢাকা
প্রকাশিতফেব্রুয়ারি, ১৯৯২
প্রকাশকসুবর্ণ প্রকাশনা
মিডিয়া ধরনশক্ত মলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৮৪
আইএসবিএন৯৮৪ ৭০২৯৭ ০০০৯ ৯ {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ উপসর্গ

কৃষ্ণপক্ষ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং নাট্য বরেণ্য ব্যক্তিত্ব হুমায়ূন আহমেদের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে। এই গ্রন্থের প্রকাশক আহমেদ মাহফুজুল হক। এর স্বত্বাধিকারী লেখকের স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ। এর প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন ধ্রুব এষ। এটি বাংলাদেশের জনব্যস্ত নগরী ঢাকা শহরের দুই অতি সাধারণ তরুণ তরুণীর মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসার এক অনন্যসাধারণ গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে।

কাহিনী সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

এই উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায়, উপন্যাসের প্রধাণ চরিত্র অরু রিকশা নিয়ে মুহিবের সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু তার কাছে একটা ছেড়া ২০ টাকার নোট বাদে আর কোনো টাকা ছিলোনা।অরু যখন রিকশাভাড়া দিতে পারছেনা, তখন মুহিবকে দেখা যায় একটা কটকটে হলুদ রঙের সিল্কের পাঞ্জাবি পরে লম্বা লম্বা পায়ে ছুটে আসছে। পাঞ্জাবির রঙ দেখে অরুর মেজাজ অনেক খারাপ হয়। সেখান থেকে তারা খিলগাঁও কাজী অফিসে যায় বিয়ে করতে।অরু বাসাতে কিছু বলেছে কিনা এই কথা জানতে চাইলে অরু বলে সে একটা চিঠি লিখে এসেছে।রাত দশটা নাগাদ সবাই জেনে যাবে। অরু আর মুহিব বিয়ে করে মুহিবের বন্ধু বজলুর বাসাতে যায়।বজলুর বাসাতে মুহিব আরুকে জানায়, তাকে ঘণ্টা খানিকের জন্য বাইরে যেতে হবে কারন মুহিবের দুলাভাই তাকে দেখা করতে বলেছেন। এ পর্যায়ে পাঠক মুহিবের পরিবার সম্পর্কে ধারণা পায়। মুহিবের একমাত্র বোন জেবা বাদে তার আর কেউ নেই। সে থাকে তার বোন ও দুলাভাই শফিকুর রহমান সাহেবের সাথে। তার দুলাভাই তাকে চাকর শ্রেণীর সমতূল্য মনে করেন এবং সে অনুযায়ী তার সাথে ব্যবহার করেন। সেদিন সন্ধ্যায় মুহিবকে ডেকে তিনি অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখেন। রাত দশটায় তিনি মুহিবকে ডেকে বলেন তার একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। সেই সুবাদে তাকে পরেরদিন চট্টগ্রাম যেতে হবে। অফিস থেকে একটা গাড়ী যাবে, মুহিব চাইলে সে গাড়িতেই যেতে পারে। মুহিব রাত এগারোটায় অরুর কাছে ফিরে এসে জানতে পারে তার বন্ধুর স্ত্রী বজলুর সাথে ঝগড়া করে তার ভাইয়ের বাসাতে চলে গেছে আর একটূ পরে বজলুও বাসা থেকে চলে গেছে। বাসাতে শুধু অরু আর মুহিব।আনন্দ,হাসাহাসি, গল্প করতে করতে অরু জানালো যে মুহিবের হলুদ পাঞ্জাবিটা পোড়াতে চায়। কিন্তু সেটা আর হয়না। অরু শাড়ি পালটে এসে দেখে মুহিব ঘুমিয়ে পড়েছে। অরু ঠিক করে, সে সারারাত আজ জেগে কাটাবে। তার মনে হয়, তার মত সুখী মেয়ে আর কেউ নেই। অন্যদিকে জেবা তার ভাইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। এতে তার স্বামী বেশ বিরক্ত হন। কিন্তু জেবা তার প্রিয় ভাইয়ের জন্য চাবি হাতে বসে থাকে। আজ মুহিব তার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল। কিন্তু তিনি দিতে পারেননি। তাই তার মন খারাপ হয়ে যায়। পরেরদিন সকালে মুহিব চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যাওয়ার আগে সে ফোনে তার বোনকে তার বিয়ের খবর দেয়। আর অরু তার বাসাতে ফিরে আসে। অরুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি জামিল সাহেব অত্যন্ত গম্ভীর মানুষ। তাদের সাথে অরুর বড় বোন মীরু ও তার ছেলে থাকে।মীরুর স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। অরুর সাথে তার বাবা আবরার সাহেবের বিয়ে ঠিক করেছেন। এ বিষয়ে তিনি অরুর কোনো মতামত জানতে চাননি। বাড়িতে এসে অরু জানতে পারে মীরু তার চিঠি পায়নি। সে চিঠিটা লুকিয়ে ফেলে। সে ঠিক করে, আবরার সাহেবকে একটা চিঠি লিখবে, যেখানে মুহিবের কথা সে খুলে বলবে। কিন্তু তার বদলে সে মুহিবকে চিঠি লিখতে বসে আর ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মাঝে অরু স্বপ্ন দেখে, মুহিবের জন্য পাঞ্জাবি বানানোর সময় তার হাতে সূচ ফুটে। আর রক্তে মুহিবের পাঞ্জাবি মেখে যায়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে মুহিবদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। এতে আর কারোর তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও মুহিবের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে। তাকে দ্রুত হাস্পাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়। মুহিব কোমায় চলে যায়। জেবা শোকে পাথর হয়ে যান। তিনি বজলুকে বলেন, অরুকে খবর দিতে। বাসাতে ফিরে জেবা তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে্ন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সংসার জীবনে তিনি তার স্বামীকে ভালোবাসতে পারেননি।তার সাথে আর তার ভাইয়ের সাথে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বলে জেবা বাসা থেকে বের হয়ে যান। হাসপাতালে পৌছে তিনি অরুকে খবর দেন। অরু ছুটে আসে। মুহিবের কাছে বসে সে বারবার আকুতি জানাতে থাকে তার কাছে ফিরে আসার জন্য।কিন্তু মুহিবকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। প্রায় পচিশ বছর পরে অরু আর আবরার সাহেবের বড় মেয়ের বিয়ের দিন অরুর জীবনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে।তার জামাই একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে, যা তার মেয়ে পুড়িয়ে ফেলে। অরু আর আবরার সাহেব একসাথে বসে থাকেন। অরুর চোখ জলে ভরে যায়। কিন্তু তিনি কাঁদেন না। আজ তাঁর মেয়ের বিয়ে। এমন শুভ দিনে কাঁদতে নেই।

চরিত্র[সম্পাদনা]

  • অরুণা চৌধুরী, ডাকনাম অরু
  • মুহিব
  • বজলু – মুহিবের বন্ধু
  • রওশন আরা – বজলুর স্ত্রী
  • শফিকুর রহমান - মুহিবের দুলাভাই, জেনারেল ম্যানেজার, ইস্ট এশিয়াটিক লিমিটেড
  • জেবা – মুহিবের বড় বোন
  • প্রিয়দর্শিনী, সারা – শফিকুর ও জেবার মেয়ে
  • জামিল সাহেব – অরুর বাবা, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি
  • রাহেলা – অরুর মা
  • মীরু – অরুর বড় বোন
  • আবরার সাহেব – অরুর স্বামী, ডাক্তার
  • রুচিরা – অরু ও আবরারের বড় মেয়ে
  • কান্তা – অরু ও আবরারের মেঝ মেয়ে

চলচ্চিত্র[সম্পাদনা]

কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ২০১৬ সালে একই নামে (কৃষ্ণপক্ষ) একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেন বরেণ্য অভিনেত্রী, গায়িকা, পরিচালক, স্থপতি ও লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত চলচ্চিত্র, যা প্রযোজনা করেছেন ফরিদুর রেজা সাগর। এই চলচ্চিত্রে মুহিব চরিত্রে অভিনয় করেন রিয়াজ, অরু চরিত্রে অভিনয় করেন মাহিয়া মাহী, জেবা চরিত্রে অভিনয় করেন তানিয়া আহমেদ।চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক এস আই টুটুল

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

১.কৃষ্ণপক্ষ, সুবর্ণ প্রকাশনী

২.Official website: http://krishnopokkho.com/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ মে ২০১৯ তারিখে

৩. কৃষ্ণপক্ষ চলচ্চিত্র, মেহের আফরোজ শাওন

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

১.হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্ম

২.হুমায়ূন আহমেদের গ্রন্থতালিকা

৩. হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র