শিখধর্ম ও হিন্দুধর্ম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিখধর্মহিন্দুধর্ম দুইই ভারতীয় ধর্ম। হিন্দুধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে;[১] অন্যদিকে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে শিখধর্ম প্রবর্তন করেন গুরু নানক[২][৩] দুই ধর্মেই কর্ম, ধর্ম, মুক্তিমায়ার ন্যায় দার্শনিক ধারণাগুলি স্বীকৃত। যদিও সেগুলির ধারণা দুই ধর্মে পৃথক। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দুধর্মে কর্ম বলতে বোঝায় যা শরীর করে, কিন্তু শিখধর্মে কর্ম হল যা মন চিন্তা করে।[৪][৫] মুঘল শাসনকালে শিখ সম্প্রদায় সেই সব নিপীড়িত ব্যক্তির প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসে, যাঁদের বলপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হত।[৬][৭][৮]

সাদৃশ্য ও পার্থক্যের প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

লুই ফেনেশের মতে, শিখ ঐতিহ্যের শিকড় সম্ভবত ভারতের সন্ত-ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত। সন্তপন্থীদের আদর্শই পরবর্তীকালে বিকাশ লাভ করে শিখধর্মের রূপ পরিগ্রহ করে। ফেনেশ লিখেছেন, "ভারতীয় পুরাণ শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহিব ও অপ্রধান ধর্মগ্রন্থ দশম গ্রন্থে প্রবেশ করে আজকের শিখদের এবং তাঁদের অতীত পূর্বপুরুষদের পবিত্র প্রতীকী জগতে সূক্ষ্ম দ্যোতনা ও সারবস্তু যুক্ত করেছিল। যদিও অল্প শিখই শিখ ঐতিহ্যের সম পরিসরে এই সকল ভারতীয় গ্রন্থাবলি ও আদর্শগুলির উল্লেখ করেন; সেখানে এই কালপঞ্জিগত ও দাদর্শগত দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের ঐতিহ্যের সূত্র উপাদানগুলির উল্লেখ তো দূরের কথা।"[৯] অধিকাংশ ইতিহাসবিদই অবশ্য শিখধর্মের প্রমাণকে সরলভাবে ভক্তি আন্দোলনের সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে দেখেন না।[১০][১১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সার্ভে অফ হিন্দুইজম, আ: তৃতীয় সংস্করণ, সানি প্রেস, ক্লস কে. ক্লোস্টারমায়ার, পৃষ্ঠা ১, ৫৪৪
  2. ম্যাকলিওড, উইলিয়াম এইচ. (২০১৪)। "শিখিজম: হিস্ট্রি অ্যান্ড ডকট্রেইন"britannica.comএনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯Sikhs claim that their tradition has always been separate from Hinduism. Nevertheless, many Western scholars argue that in its earliest stage Sikhism was a movement within the Hindu tradition; Nanak, they point out, was raised a Hindu and eventually belonged to the Sant tradition of northern India, a movement associated with the great poet and mystic Kabir (1440–1518). The Sants, most of whom were poor, dispossessed, and illiterate, composed hymns of great beauty expressing their experience of the divine, which they saw in all things. Their tradition drew heavily on the Vaishnava bhakti (the devotional movement within the Hindu tradition that worships the god Vishnu), though there were important differences between the two. Like the followers of bhakti, the Sants believed that devotion to God is essential to liberation from the cycle of rebirth in which all human beings are trapped; unlike the followers of bhakti, however, the Sants maintained that God is nirgun (“without form”) and not sagun (“with form”). For the Sants, God can be neither incarnated nor represented in concrete terms.
    অনুবাদ: শিখেরা দাবি করেন যে তাঁদের ঐতিহ্য সর্বদাই হিন্দুধর্ম হতে পৃথক। তথাপি অনেক পাশ্চাত্য বিশেষজ্ঞের মতে শিখধর্মের আদিতম পর্যায়ে এটি ছিল হিন্দু ঐতিহ্যেরই অন্তর্গত একটি আন্দোলন; নানক যে শৈশবে হিন্দুগৃহে লালিতপালিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে উত্তর ভারতের সন্ত সম্প্রদায়-ভুক্ত হয়েছিলেন, সেই তথ্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেন তাঁরা। [উল্লেখ্য,] বিশিষ্ট কবি ও মরমিয়া সাধক কবির (১৪৪০-১৫১৮) এই সম্প্রদায়ের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। সন্তেরা অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র, বঞ্চিত ও নিরক্ষর। [তবু] সর্ববস্তুতে তাঁরা যে দিব্যসত্ত্বাকে অনুভব করতেন তা তাঁরা অত্যন্ত সুন্দর সব গান রচনা করে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের ঐতিহ্য বহুলাংশে বৈষ্ণব ভক্তিবাদের (হিন্দুধর্মের অভ্যন্তরে বিষ্ণুর পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক ভক্তিবাদী আন্দোলন) কাছে ঋণী, যদিও দুই মতের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও বিদ্যমান ছিল। ভক্তিবাদীদের মতো সন্তেরাও মনে করতেন যে, সমগ্র মানবজাতি পুনর্জন্মের যে চক্রে বাঁধা পড়ে রয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অপরিহার্য্য; কিন্তু ভক্তিবাদীদের সঙ্গে সন্তদের প্রধান পার্থক্য এই যে ভক্তিবাদীদের মতো তাঁরা ঈশ্বরকে "সগুণ" (সাকার) নয়, বরং "নির্গুণ" (নিরাকার) মনে করতেন। সন্তদের মতে, ঈশ্বর অবতার রূপে অবতীর্ণ হতে পারেন না, বা কোনও সুনির্দিষ্ট পরিভাষাতেও তাঁকে উপস্থাপন করা যায় না।
      এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "শিখ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি"বিবিসি। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯Sikhism was born in the Punjab area of South Asia, which now falls into the present day states of India and Pakistan. The main religions of the area at the time were Hinduism and Islam. The Sikh faith began around 1500 CE, when Guru Nanak began teaching a faith that was quite distinct from Hinduism and Islam. Nine Gurus followed Nanak and developed the Sikh faith and community over the next centuries.
    অনুবাদ: দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাব অঞ্চলে শিখধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলটি ভারতপাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত। সেই যুগে এই অঞ্চলের প্রধান ধর্ম ছিল হিন্দুধর্ম ও ইসলাম। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গুরু নানক হিন্দুধর্ম ও ইসলামের থেকে কিছুটা আলাদা এক মতবিশ্বাসের শিক্ষা দিতে শুরু করলে শিখ ধর্মবিশ্বাসের সূত্রপাত গজটে। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে শিখ গুরুরা নানকের পথ ধরে শিখধর্ম ও সম্প্রদায় গড়ে তোলেন।
     
  4. শিখধর্ম ও মৃত্যু বিবিসি
  5. পুনর্জন্মশিখধর্ম, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা
  6. স্টিফেন নেইল (২০০৪)। আ হিস্ট্রি অফ ক্রিস্টিয়ানিটি ইন ইন্ডিয়া: দ্য বিগিনিংস টু এডি ১৭০৭। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৬৭। আইএসবিএন 978-0-521-54885-4 ;
    পাশাউরা সিং ও লুই ফেনেশ (২০১৪)। দি অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ শিখ স্টাডিজ। অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৩৬–২৪৫, ৪৪৪–৪৪৬। আইএসবিএন 978-0-19-969930-8 
  7. অরবিন্দ-পাল সিং মন্দৈর (২০১৩)। শিখধর্ম: আ গাইড ফর দ্য পারপ্লেক্সড। ব্লুমসবেরি অ্যাকাডেমি। পৃষ্ঠা ৫৩–৫৪। আইএসবিএন 978-1-4411-0231-7 
  8. সিং, হরবংশ (১৯৬৯)। গুরু নানক অ্যান্ড অরিজিনস অফ দ্য শিখ ফেইথ। এশিয়া পাবলিকেশন হাউস। পৃষ্ঠা ১১। 
  9. লুই ফেনেশ (২০১৪), দি অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ শিখ স্টাজিজ (সম্পাদক: পাশাউরা সিং, লুই ই. ফেনেশ), অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৬৯৯৩০৮, পৃষ্ঠা ৩৬, উদ্ধৃতি: "Few Sikhs would mention these Indic texts and ideologies in the same breadth as the Sikh tradition, let alone trace elements of their tradition to this chronological and ideological point, despite the fact that the Indic mythology permeates the Sikh sacred canon, the Guru Granth Sahib and the secondary canon, the Dasam Granth (Rinehart 2011), and adds delicate nuance and substance to the sacred symbolic universe of the Sikhs of today and of their past ancestors."
  10. গ্রেওয়াল, জে. এস. (১৯৯৮)। দ্য শিখস অফ দ্য পাঞ্জাব। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ২৮। আইএসবিএন 9780521637640 
  11. পৃথি, রাজ (২০০৪)। শিখিজম অ্যান্ড ইন্ডিয়ান সিভিলাইজেশন। ডিসকভারি পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ২০২। আইএসবিএন 9788171418794 

নির্দেশিত সূত্র[সম্পাদনা]

  • শ্যাকল, ক্রিস্টোফার; মন্দৈর, অরবিন্দ-পাল সিং (২০০৫)। টিচিংস অফ দ্য শিখ গুরুস: সিলেকশনস ফ্রম দ্য শিখ স্ক্রিপচার্স। যুক্তরাজ্য: রটলেজ, তেরো–চোদ্দ আইএসবিএন ০-৪১৫-২৬৬০৪-১

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • কে. পি. আগরওয়ালা: আদি শ্রীগুরুগ্রন্থসাহিব কি মহিমা (হিন্দি: "মূল পবিত্র গ্রন্থসাহিবের মহিমা")
  • রাজেন্দ্র সিং নিরালা: হাম হিন্দু হ্যায়, ১৯৮৯। হাম হিন্দু কিঁউ, ১৯৯০। দিল্লি: ভয়েস অফ ইন্ডিয়া
  • ই. ট্রাম্প. আদি গ্রন্থ অর দ্য হোলি স্ক্রিপচার অফ দ্য শিখস, মুনশিরাম মনোহরলাল, দিল্লি, ১৯৭০
  • ম্যাকলিয়ড, ডব্লিউ. এইচ.:(সম্পাদিত) টেক্সচুয়াল সোর্সেস ফর দ্য স্টাডি অফ শিখিজম। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি প্রেস, ম্যানচেস্টার ১৯৮৪, -: হু ইজ আ শিখ? দ্য প্রবলেম অফ শিখ আইডেন্টিটি। ক্ল্যারেনডন প্রেস, অক্সফোর্ড ১৯৮৯
  • হ্যারিয়ট ওবেরয়, দ্য কনস্ট্রাকশন অফ রিলিজিয়াস বাউন্ডারিজ: কালচার, আইডেন্টিটি, অ্যান্ড ডাইভার্সিটি ইন দ্য শিখ ট্র্যাডিশন, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাফো প্রেস, ১৯৯৪
  • রাজেন্দ্র সিং: শিখ ইতিহাস মেঁ রাম জন্মভূমি।
  • স্বরূপ, রাম: হিন্দু-শিখ রিলেশনশিপ। ভয়েস অফ ইন্ডিয়া, দিল্লি ১৯৮৫। -: ইউদার শিখিজম? ভয়েস অফ ইন্ডিয়া, দিল্লি ১৯৯১।
  • তালিব, গুরবচন (১৯৫০)। মুসলিম লিগ অ্যাটাক অন শিখস অ্যান্ড হিন্দুস ইন দ্য পাঞ্জাব ১৯৪৭। ভারত: শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি অনলাইন পাঠ ১ অনলাইন পাঠ ২ অনলাইন পাঠ ৩

টেমপ্লেট:হিন্দুধর্ম ফুটার