মাঠে প্রতিবন্ধকতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাঠে প্রতিবন্ধকতা হ'ল ক্রিকেট খেলায় মাঠ থেকে ব্যাটসম্যান কে আউট করার দশটি পদ্ধতির মধ্যে একটি। যদি কোনও কথা বা কর্মের মাধ্যমে ফিল্ডিং পক্ষকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয় তবে ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া যায়। ক্রিকেটের আইন এর অন্তর্গত আইন ৩৭ দ্বারা কোনও ব্যাটসম্যানকে এই উপায়ে আউট করা একটি বিরল ঘটনা। ক্রিকেটের ইতিহাসে টেস্ট ম্যাচে মাত্র দুইটি, একদিনের আন্তর্জাতিক (ওয়ানডে) খেলায় ছয়বার এবং টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে একটি মাত্র উদাহরণ রয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে সাতটি এবং ওয়ানডেতে দু'জন ব্যাটসম্যানকে হ্যান্ডল্ড দ্য বল এর কারণে আউট করার নজির রয়েছে। এই প্রকার আউটকে এখন 'মাঠে প্রতিবন্ধকতা'-র আওতায় আনা হয়েছে।

সীমিত ওভার ক্রিকেটে একটি আধুনিক উপায়ে মাঠে প্রতিবন্ধকতা ঘটানো হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যাটসম্যান যখন টের পান যে তিনি রান আউট হতে চলেছেন তখন তিনি বলটি তাঁর ব্যাট দিয়ে আটকে দেন অথবা উইকেটের মধ্যে দৌড়ে সময় বলটির অভিমুখ পরিবর্তন করতে বলটিকে আটকে দেন। এই বাধা দান ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়।

মাঠে প্রতিবন্ধকতার কারণে টেস্ট ম্যাচে যে দুইটি আউট দেওয়া হয়েছিল তার একটি ১৯৫১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর কালে পঞ্চম টেস্টে ইংল্যান্ডের লেন হাটন এর ব্যাটে লেগে বলটি টপ এজড হয়। বলটি স্টাম্পে আঘাত হানবে ভেবে তিনি বলটিকে দূরে ঠেলে দিতে আঘাত করার চেষ্টা করেছিলেন। এর ফলে উইকেট-কিপার এর পক্ষে বলটি ক্যাচিং করায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল । অপরটি ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর মাসে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ এ মুশফিকুর রহিম এর সাথে ঘটে।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) প্রবর্তিত ক্রিকেটের আইন এর অন্তর্গত আইন ৩৭ বর্ণিত নিয়মটিই হ'ল মাঠে প্রতিবন্ধকতা। খেলা চলমান অবস্থায় যদি ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষের ফিল্ডারকে কথায় বা কাজে বাধা প্রদান করেন তাহলে তাঁকে মাঠে প্রতিবন্ধকতা জনিত কারণে আউট দেওয়া যাবে।[১]

আইন ৩৭ এ যেখানে প্রযোজ্য তেমন তিনটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে। তবে আইনটি কেবল মাত্র এই তিন পরিস্থিতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়:

  • বলটি খেলার ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে হাতে ব্যাট না রেখে যদি বলকে হাত দিয়ে আঘাত করেন এবং সেটি যদি স্রেফ আঘাত এড়ানোর জন্য না হয়ে থাকে। [ক]
  • যদি কোনও ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ফিল্ডারকে আটকে বা বিভ্রান্ত করে একটি ক্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা আটকাতে যান।
  • বলটি খেলার সময় এবং ফিল্ডারের সম্মতি ব্যতীত যে কোনও সময়ে ব্যাটসম্যান নিজের ব্যাট বা তাঁর দেহের কোনও অংশ ব্যবহার করে বলটি কোনও ফিল্ডারকে যদি ফিরিয়ে দেন।


কোনও ব্যাটসম্যান যদি ফিল্ডারের দ্বারা স্টাম্প ফেলে দেওয়ার পথে দৌড়ের সময় বাধা দান করেন বা তাঁর ব্যাটটি ফাঁক করে ইচ্ছাকৃতভাবে তার গতিপথ পরিবর্তন করেন তবে আম্পায়ারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটি ব্যাটসম্যানের ইচ্ছাকৃত ছিল কিনা। [২]. সে ক্ষেত্রে ফিল্ডিংয়ের প্রভাবে ব্যাটসম্যান রান আউট হতে পারেন কিনা তা আম্পায়ারকে বিচার করতে হবে না।

মাঠে প্রতিবন্ধকতা জনিত আউটের কৃতিত্ব বোলার পান না। এই প্রতিবন্ধকতা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে কোনও রান পূর্ণ করা হলে তা ব্যাটসম্যানকে দেওয়া হয় (যদি বাধা দানের কারণে ক্যাচে ধরা পড়ার সম্ভাবনা না থাকে)[খ]

কোনও ফিল্ডারকে বল ফিরিয়ে দেওয়া[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যগতভাবে কোনও ব্যাটসম্যান বলটি স্পর্শ করার আগে তিনি বলটি স্পর্শ করতে পারেন কিনা ফিল্ডিং দলকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন। কিন্তু তা না করে তিনি যদি বলে হাত দেন তবে দুই দলে সদ্ভাব থাকলে ফিল্ডিং দলটির আবেদন করার সম্ভাবনা থাকে না। তবে আবেদন করা হলে আম্পায়ার ব্যাটসম্যানকে আউট দিতে বাধ্য থাকবেন। তাই এই 'অপ্রীতিকর' অবস্থা পরিহার করতে ব্যাটসম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়।[৩]

আধুনিক পেশাদার খেলায় প্রশ্নটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ ফিল্ডিং পক্ষ বলটি শুকনো ও পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেন যাতে তাঁরা বিপরীত সুইং (রিভার্স সুইং) পেতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানের বলটি স্পর্শ করার প্রস্তাবটি ভালভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

মন্তব্য[সম্পাদনা]

  1. This situation was previously covered in a separate Law:Handled the ball.
  2. In this case any penalty runs will stand.[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Law 37 – Obstructing the field"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. Marylebone Cricket Club, Tom Smith's Cricket Umpiring and Scoring, Marylebone Cricket Club, 2019
  3. R.S. Rait Kerr, The Laws of Cricket Their History and Growth, Longmans, 1950

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]