ঝাঁসি রাজ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঝাঁসি রাজ্য

झाँसी
১৮০৪; ২১৯ বছর আগে (1804)–১৮৫৮; ১৬৫ বছর আগে (1858)
জাতীয় পতাকা
পতাকা
রাজধানীঝাঁসি
সরকারকরদ রাজ্য
ইতিহাস 
• ব্রিটিশ অধীনস্থ
১৮০৪; ২১৯ বছর আগে (1804)
১৮৫৮; ১৬৫ বছর আগে (1858)
আয়তন
৪,০৫৯ বর্গকিলোমিটার (১,৫৬৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
• 
৩,১৭,০০০
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মারাঠা সাম্রাজ্য
গোয়ালিয়র রাজ্য
ব্রিটিশ ভারত

ঝাঁসি রাজ্য ছিল ব্রিটিশদের অধিরাজ্যে অবস্থিত মারাঠা নেবলকর বংশের রাজাদের দ্বারা শাসিত একটি স্বাধীন দেশীয় রাজ্য৷ ১৮০৪ থেকে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উক্ত রাজবংশ শাসন করলেই তার পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে৷ দুর্গবেষ্টিত ঝাঁসি নগরটি ছিলো এই রাজ্যের রাজধানী৷

ঐতিহাসিকভাবে বুন্দেলখন্ডের অধিপতি ছিলেন পেশোয়ার একজন অঞ্চল উপ-প্রধান যিনি ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের পর এই প্রদেশটিকে সমস্ত অধিকারসহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই আনুগত্যের ফলস্বরূপ লর্ড হেস্টিংস তকে ঝাঁসি প্রদেশে বংশপরম্পরায় প্রশাসন চালানোর জন্য নিযুক্ত করেন।[২] যদিও রাজ্যটি ঝাঁসির রানী নামে পরিচিত লক্ষ্মীবাঈ উদ্ধার করেন এবং পুনরায় শাসনকার্যে নিযুক্ত হন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃবৃন্দের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। রাজ্যের প্রতীক ছিল হিন্দু ধর্মীয় গেরুয়া রঙের পতাকা।

পুরাতন ইতিহাস[সম্পাদনা]

বুন্দেল রাজপুত ঘরানা[সম্পাদনা]

ঝাঁসি শহর এবং তার আশেপাশের এলাকা ছিল চান্দেল শাসকদের সুরক্ষিত আশ্রয় ও শক্তিকেন্দ্র। বলবন্ত নগর ছিলে এই শহরের পুরনো নাম, খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দী থেকে এই নাম এবং রাজ্যের ঐতিহ্য হ্রাস পাওয়া শুরু করে। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা বীরসিংহ দেওয়ের (১৬০৫-১৬২৭) রাজত্বকালে ঝাঁসি আবার পূর্বের মতো গুরুত্ব ফিরে পায়। তখন এটি ছিল ওর্ছা রাজ্যের অন্তর্গত। রাজা বীরসিংহ দেবের মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আতিথেয়তা ছিল। ১৬১৩ থেকে ১৬১৮ এই পাঁচ বছরের মধ্যে বলবন্ত নগরের চারিদিকে ঝাঁসির দুর্গ নির্মাণ করা সমাপ্ত হয়। দুর্গের নামে পরবর্তীকালে শহরটির নামও ঝাঁসি হয়ে যায়।

করক বিজলি তোপ ছিল ঝাঁসির দুর্গে অবস্থিত একটি কামান

পান্না রাজ্যের বুন্দেলা শাসক মহারাজা ছত্রশাল, মুঘল সাম্রাজ্যের মুসলিম শাসকদের আক্রমনাত্মক ভাবমূর্তির শিকার হন। ১৭২৯ মোহাম্মদ খান বাঙাস ছত্রশাল আক্রমণ করলে তিন‌ বছর পর ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দে রাজা ছত্রশাল এই সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য মোগলদের বিরুদ্ধে মারাঠাদের সাহায্য চান। পেশোয়া প্রথম বাজিরাও মহারাজা ছত্রশালকে সাহায্য করতে সম্মত হন এবং তারা একত্রে মুঘল বাহিনী প্রতিহত করতে সক্ষম হন।[৩]

পুণের পেশোয়ার অধীন[সম্পাদনা]

রাজা ছত্রশালের ইচ্ছা অনুসারে তার মৃত্যুর দুই বছর পর তার সাম্রাজ্যে এক তৃতীয়াংশ উপহারস্বরূপ পেশোয়ার প্রথম বাজিরাওকে অর্পণ করা হয়। এভাবে ঝাঁসি রাজ্যটি মারাঠাদের অধীনে আসে।[৩]

মারাঠা সেনাধ্যক্ষ ঝাঁসি শহরটিকে উন্নত করার চেষ্টা করেন এবং পার্শ্ববর্তী ওড়ছা রাজ্য থেকে বহু জনসাধারণকে এখানে বসবাস করার সুযোগ করে দেন। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির সুবেদার হিসেবে নর শঙ্করকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।[৪] দীর্ঘ পনের বছরের এই ভোগ দখলের সময়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণভাবে তিনি ঝাঁসির দুর্গ বৃদ্ধি এবং তার সাথে একাধিক অট্টালিকার নির্মাণ করান। তার এই সিদ্ধান্ত রাজ্যটির জন্য ছিল যথেষ্ট ইতিবাচক। ঝাঁসির দুর্গের অতিরিক্ত অংশটি শঙ্করগড় নামে পরিচিত। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া, নর শঙ্করকে এই অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার ও নিজ রাজ্যে পুনরাহ্বান করেন। এরপর ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি বাবুলাল কানাহাই এবং মাধব গোবিন্দ কাকির্দে এই অঞ্চলে সুবেদার নিযুক্ত হন। পরবর্তী দুজন সুবেদার হলেন বিশ্বাস রাম লক্ষণ এবং দ্বিতীয় রঘুনাথ রাও নেবালকর। তিনি যথেষ্ট সক্ষম প্রশাসক ছিলেন এবং রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সদর্থক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজ্যে মহালক্ষ্মী মন্দির এবং রঘুনাথ মন্দির নির্মাণ করান।

১৮০৪-১৮৫৩[সম্পাদনা]

১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে পুনের পেশোয়াদের বিরুদ্ধে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য মারাঠা সুবেদার রাও শিবরাও হরি ভাউ ব্রিটিশ সহায়তা এবং সুরক্ষার দাবিদার হন। ওই বছরই তিনি ঝাঁসির রাও হিসেবে ঘোষিত হয়। ৪,০৫৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই রাজ্যটি প্রথম রাও ছিলেন তিনিই। [৪]

১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে তৃতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ সম্পন্ন হলে বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে পেশোয়া নিজেদের দাবি তুলে নেন।

১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা শিব রাওয়ের মৃত্যুর পর তার পুত্র রামচন্দ্র রাও ওই রাজ্যের শাসক পদে বসেন। ১৮ই নভেম্বর ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি পূর্ব সুরক্ষা চুক্তির পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি ছিল ঝাঁসি রাজ্যে ওই বংশের উত্তরসূরিদের বংশপরম্পরায় রাজ্য প্রাপ্তির চুক্তি। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রিটিশদের থেকে মহারাজাধিরাজ উপাধিটি লাভ করেন।[৪] ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মহারাজাধিরাজ রামচন্দ্র রাওয়ের মৃত্যু ঘটে।

তার মৃত্যুর পর তৃতীয় রঘুনাথ রাও রাজ সিংহাসনে বসেন এবং ওই বছরই তিনি বৃটিশের থেকে "মহারাজাধিরাজ ফিড়বী বাদশাহ জমজাহ ইংলিশস্তান" উপাধি গ্রহণ করেন। এর অর্থ ছিল গ্রেট বৃটেনের প্রতি অনুগত মহারাজাধিরাজ। তৃতীয় রঘুনাথ রাও ছিলেন অকর্মণ্য এবং উচ্ছৃঙ্খল রাজা, ফলে এই অজুহাতে রাজ্যটি পুনরায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৫] ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় রঘুনাথ রাও মারা গেলে ব্রিটিশরা তার ভাই গঙ্গাধর রাওকে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির সিংহাসনে বসান।[৫]

ঝাঁসির রাজাদের কবরস্থানের চিত্র, ১৮৭২

রাজা গঙ্গাধর রাও লক্ষীবাই কে বিবাহ করেন এবং আনন্দ রাও নামে এক পুত্র সন্তান দত্তক নেন। আনন্দ রাও ছিলেন রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র, দত্তকপ্রাপ্তির পর তার নাম হয় দামোদর রাও। ব্রিটিশ অফিসারদের সাক্ষী রেখে এই দত্তকগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরে রাজা তার মৃত্যুর পর তার বিধবা পত্নীর আজীবন দত্তক পুত্র গ্রহণের আর্জি জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে একটি পত্র লেখেন। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজার মৃত্যু হলে ব্রিটিশ জেনারেল গভর্নর লর্ড ডালহৌসি রাজ্যটির উপর স্বত্ববিলোপ নীতি আরোপ করেন এবং দত্তক পুত্র হওয়ার দরুন দামোদর রাওকে রাজ্যটির পরবর্তী শাসক হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন৷

ঝাঁসি রাজ্য, জালোন এবং চান্দেরী জেলা গঠন করে একজন কার্যনির্বাহী সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিযুক্ত করা হয়৷ ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাণী লক্ষ্মীবাঈকে ৬০,০০০ ভারতীয় মুদ্রা ভাতা দিয়ে রাজবাড়ী ও দুর্গ ছেড়ে দেওয়ার আদেশ করা হয়৷[৫] রাণী লক্ষ্মীবাঈ গভর্নর জেনারেলের কাছে তার পুত্র দামোদর রাওয়ের রাজ্যপ্রাপ্তির দাবী ও তাকে উত্তরসূরী রূপে গণ্য করার জন্য একটি আবেদন জমা দেন৷ আবেদনটি তৎক্ষণাৎ খারিজ করে দেওয়া হয়৷

ঝাঁসির পদস্খলন হলে খনিয়াধানা একটি পৃথক রাজ্য রূপে প্রকাশ পায়৷ [৬]

আগস্ট ১৮৫৭ থেচে জুন ১৮৫৮[সম্পাদনা]

যোদ্ধা সাজে রাণী লক্ষ্মীবাঈ
ঝাঁসি দখল
ঊনবিংশ শতাব্দীর কালীঘাট চিত্রকলায় লক্ষ্মীবাঈ

১০ মে ১৮৫৭ সাল। ঐদিন মিরাটে ভারতীয় বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, লি ইনফিল্ড রাইফেলের আচ্ছাদনে শুকরের মাংস এবং গরুর চর্বি ব্যবহার করা হয়। এরপরও ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী রাইফেলে শুকরের মাংস এবং গরুর চর্বির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। তারা বিবৃতি দেয় যে, যারা উক্ত রাইফেল ব্যবহারে অসম্মতি জানাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও শুরু করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এই বিদ্রোহে সিপাহীরা অনেক ব্রিটিশ সৈন্যসহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে নিযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করে।

ঐ সময়ে লক্ষ্মী বাঈ তার বাহিনীকে নিরাপদে ও অক্ষত অবস্থায় ঝাঁসি ত্যাগ করাতে পেরেছিলেন। সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী প্রবল গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই চরম মুহুর্তে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অন্যত্র মনোযোগের চেষ্টা চালায়। লক্ষ্মী বাঈ একাকী ঝাঁসী ত্যাগ করেন। তার নেতৃত্বে ঝাঁসি শান্ত ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রয়েছিল। হলদী-কুমকুম অনুষ্ঠানে ঝাঁসীর রমণীরা শপথ গ্রহণ করেছিল যে, যে-কোন আক্রমণকেই তারা মোকাবেলা করবে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণকে তারা ভয় পায় না।[৭]

এ প্রেক্ষাপটে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনায় দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ৮ জুন, ১৮৫৭ সালে জোখন বাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে কর্মরত কর্মকর্তাসহ স্ত্রী-সন্তানদের উপর গণহত্যার বিষয়ে তার ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।[৮] ওই একই সময় ঝাঁসিতে মিলিত আক্রমণ করে ওর্ছা এবং দাতিয়া রাজ্যের রাজারা। তাদের উদ্দেশ্য ঝাঁসিকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া। রাণী ব্রিটিশদের কাছে এই বিষয়ে সাহায্য চাইলেও বিতর্কিত কারণে তার কাছে কোন উত্তর আসে না। অবশেষে তার দ্বিধাগ্রস্থতা কেটে যায় যখন ব্রিটিশ সৈন্যরা স্যার হিউজ রোজের (লর্ড স্ট্রাথনায়র্ন) নেতৃত্বে ঘাঁটি গেড়ে বসে এবং ২৩ মার্চ, ১৮৫৮ তারিখে ঝাঁসি অবরোধ করে। লক্ষ্মী বাঈ তার বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেন এবং এ অবরোধের প্রেক্ষাপটে তিনি প্রচণ্ডভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। ঝাঁসি এবং লক্ষ্মী বাঈকে মুক্ত করতে বিশ হাজার সৈনিকের নিজস্ব একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অন্যতম বিদ্রোহী নেতা তাতিয়া তোপে। তবে, ব্রিটিশ সৈন্যদলে সৈনিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১,৫৪০জন। স্বল্প সৈনিক থাকা স্বত্ত্বেও তাতিয়া তোপে ব্রিটিশ সৈন্যদের অবরোধ ভাঙ্গতে পারেননি। ব্রিটিশ সৈনিকেরা ছিল প্রশিক্ষিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ যা প্রতিপক্ষের আনাড়ী ও অনভিজ্ঞ সৈনিকেরা তাদের ৩১ মার্চের আক্রমণে টিকতে পারেনি। লক্ষ্মী বাঈয়ের নিজস্ব বাহিনী এ আক্রমণ সহ্য করতে পারেনি। আক্রমণের তিন দিন পর ব্রিটিশ সৈন্যদল দুর্গের দেয়ালে ফাটল ধরায় এবং ঝাঁসি শহরটি করায়ত্ব করে নেয়। এর পূর্বেই এক রাতে দুর্গের দেয়াল থেকে সন্তানসহ লাফ দিয়ে লক্ষ্মী বাঈ প্রাণরক্ষা করেন। ঐ সময় তাকে ঘিরে রেখেছিল তার নিজস্ব একটি দল, যার অধিকাংশই ছিল নারী সদস্য।[৮]

আনন্দ রাওকে সাথে নিয়ে রাণী তার বাহিনী সহযোগে বাণিজ্যিক বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র কাল্পীতে যান। সেখানে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে যোগ দেন। তাতিয়া তোপের নেতৃত্বেও একটি বিদ্রোহী দল ছিল।এরপর রাণী লক্ষ্মী বাঈ এবং তাতিয়া তোপে গোয়ালিয়রের দিকে রওনা দেন। সেখানে তাদের যৌথবাহিনী গোয়ালিয়রের মহারাজার দলকে পরাজিত করে। পরাজিত বাহিনীর সদস্যরা পরবর্তীতে যৌথবাহিনীর সাথে একত্রিত হয়। তারপর কৌশলগত অবস্থানে থাকা গোয়ালিয়রের কেল্লা দখল করে বাঈ এবং তোপের সম্মিলিত বাহিনী। ১৭ জুন, ১৮৫৮ সালে ফুল বাগ এলাকার কাছাকাছি কোটাহ-কি সেরাইয়ে রাজকীয় বাহিনীর সাথে পূর্ণোদ্দম্যে যুদ্ধ চালিয়ে শহীদ হন রাণী।[৯] পরবর্তীতে আরো তিনদিন পর ব্রিটিশ সেনাদল গোয়ালিয়র পুণর্দখল করে। যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে জেনারেল হিউজ রোজ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে,[১০]

শাসকবর্গ[সম্পাদনা]

  • রঘুনাথ রাও (ওরফে রঘুনাথহরি নেবালকর) (১৭৬৯–১৭৯৬)
  • শিবহরি রাও (১৭৯৬–১৮১১)
  • রামচন্দ্র রাও (জ. ১৮০৬, মৃ. ১৮৩৫) (১৮১১–১৮৩৫) (তার কৈশোরকালে সক্কুবাঈ ছিলেন রাজপ্রতিনিধি)
  • তৃতীয় রঘুনাথ রাও (১৮৩৫ – নভেম্বর ১৮৩৮)[১১]
  • দ্বিতীয় কৃষ্ণরাওয়ের সময় কালেও সক্কুবাঈ ছিলেন রাজপ্রতিনিধি (নভেম্বর ১৮৩৮ -৫ জানুয়ারি ১৮৩৯)
  • গঙ্গাধর রাও (১৮৪৩ – ২১ নভেম্বর ১৮৫৩)
  • রাণী লক্ষ্মীবাঈ (দামোদর রাও ওরফে আনন্দ রাওয়ের রাজপ্রতিনিধি) (২১ নভেম্বর ১৮৫৩ – ১০ মার্চ ১৮৫৭, ৪ জুন ১৮৫৭ – ৪/৫ এপ্রিল ১৮৫৮)[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ভারতের দেশীয় রাজ্য - ঝাঁসি
  2. John Clark Marshman, History of India from the Earliest Period to the Close of the East India Company's Government. Cambridge University Press, pg. 478
  3. Bhagavānadāsa Gupta, Contemporary Sources of the Mediaeval and Modern History of Bundelkhand (1531-1857), vol. 1 (1999)
  4. "Jhansi rulers"। ১০ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৪ 
  5. Edwardes (1975), p. 113
  6. "Khaniadna : Princely States of India"। Archived from the original on ২৫ মে ২০১১। 
  7. ডেভিড ই জোনস্‌, উইম্যান ওয়ারিয়র্সঃ এ হিস্টরী (ব্রাসেজ, ২০০৫), ৪৬
  8. Rani of Jhansi, Rebel against will by Rainer Jerosch, published by Aakar Books 2007, chapters 5 and 6
  9. শহীদ হলেন রাণী লক্ষ্মী বাঈ
  10. [David, Saul (2003), The Indian Mutiny: 1857, Penguin, London p367 জেনারেল হিউজ রোজের প্রতিবেদন]
  11. "Maharajadhiraj Fidvi Badshah Jamjah Inglistan" i.e."faithful servant of the glorious king of England".--Edwardes, Michael (1975) Red Year. London: Sphere Books; p. 113
  12. Guida M. Jackson; Guida Myrl Jackson-Laufer (১৯৯৯)। Women Rulers Throughout the Ages: An Illustrated Guide। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 227।