জিয়াউর রহমান ফারুকী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আবু রায়হান জিয়াউর রহমান ফারুকী
ابو ریحان ضیاءالرحمن فاروقی
জিয়াউর রহমান ফারুকী
সভাপতি, সিপাহে সাহাবা পাকিস্তান
অফিসে
১৯৯১ – ১৯৯৭
পূর্বসূরীইসারুল হক কাসেমি
উত্তরসূরীআজম তারিক
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৯৫৩
মৃত্যু১৯৯৭ (বয়স ৪৩–৪৪)
মৃত্যুর কারণবোমা হামলা
সমাধিস্থলগুলশানে ঝংভি শহীদ চত্বর, পাকিস্তান
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাপাকিস্তানি
পিতামাতা
  • মুহাম্মদ আলী জানবাজ (পিতা)
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহহাদীস, ইসলামি আন্দোলন, খতমে নবুয়ত, আজমতে সাহাবা, শিয়া বিরোধী
উল্লেখযোগ্য কাজ
  • ইত্তেহাদুল আলমী (সংগঠন)
  • ফয়সাল: এক উজ্জ্বল নক্ষত্র (বই)
যেখানের শিক্ষার্থী
ঊর্ধ্বতন পদ

আবু রায়হান জিয়াউর রহমান ফারুকী ( উর্দু: ابو ریحان ضیاءالرحمن فاروقی‎‎ , ১৯৫৩ — ১৯৯৭ ) ছিলেন একজন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত, বাগ্মী ও রাজনীতিবিদ। তিনি সিপাহে সাহাবা পাকিস্তানের সভাপতি ও জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রাদেশিক নেতা ছিলেন। [১][২]

জন্ম ও বংশ[সম্পাদনা]

আবু রায়হান জিয়াউর রহমান ফারুকী ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ফয়সালাবাদ শহরের সামুন্দ্রিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুহাম্মদ আলী জানবাজ, যিনি তেহরিকে তাহাফফুজে খতমে নবুয়তের সক্রিয় নেতা ছিলেন এবং আন্দোলনের কারণে সুক্কুর কেন্দ্রীয় কারগারে বন্দী হয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

তিনি খানিওয়ালের সিরাজিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। এবং সাহীওয়ালের জামিয়া রাশেদিয়ায় হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি দারুল উলুম কাবিরওয়ালা ও বাবুল ইলম কাহুরপাক্কায় ভর্তি হন। তারপর তিনি মুলতানের খাইরুল মাদারিসে ভর্তি হন এবং দাওরায়ে হাদিস (সমমান এম এ) সম্পন্ন করেন। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। মুফতি মাহমুদ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি তাঁর সাথে তিন মাস কাজ করেছিলেন। এর পরে তিনি জমিয়তের প্রাদেশিক নেতা হন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি বিশ্বব্যাপী অমুসলিম দেশগুলিকে তাদের ভাষায় ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে পারে এমন আলেম তৈরি করার লক্ষ্যে একটি উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি “জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া” মাদ্রাসাকে সম্প্রসারণ করে “ওমর ফারুক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি ফয়সালাবাদ রোডে ৪২ ক্যানাল জমিও নিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার কারণে এই প্রকল্পটি শেষ করতে পারেন নি।

প্রচার প্রসার[সম্পাদনা]

তিনি বিশ্বের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশে সাংগঠনিক স্বার্থে ভ্রমণ করেছিলেন। এবং কুরআনের সর্বজনীন বাণী বিশ্বজুড়ে অমুসলিম জাতিকে তাদের মাতৃভাষায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মুসলিম সংস্থা ইত্তেহাদ-উল-আলমী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি ইংরেজি, ফারসি, জার্মান, ফরাসী এবং অন্যান্য অনেক ভাষায় সাহিত্য প্রকাশ করে এবং তা সংশ্লিষ্ট দেশে বিতরণ করে।

রচনাবলি[সম্পাদনা]

বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৬০টিরও বেশি বই লিখেছেন। তাঁর দুটি সর্বাধিক বিক্রিত বই: রাহবার ও রাহনুমা (সঃ)(পথপ্রদর্শক) এবং ফয়সাল: য়েক রৌশনী সিতারা(ফয়সাল:একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র) । যথাক্রমে সৌদি সরকার এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক পুরষ্কৃত হয়েছে। তার রচিত বইসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • শহীদে কারবালা
  • সাইয়িদা ফাতিমা
  • তারীখী দস্তাভেজ
  • খেতাবাতে মিম্বর ও মেহরাব
  • খুতুবাতে ফারুকী
  • জওয়াহেরাতে ফারুকী
  • আয়েশা সিদ্দীকা
  • আবু বকর সিদ্দীক
  • উমর ফারুক
  • সাইয়িদানা উসমান গণী
  • সাইয়িদানা আলী মুরতাজা
  • সীরাতুন্নাবী
  • রাহবর ও রাহনুমা
  • ফায়সাল য়েক রৌশনী সিতারা

সিপাহে সাহাবার নেতৃত্ব[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারি তারিখে হক নওয়াজ ঝংভির শাহাদতের পরে জিয়াউর রহমান সিপাহে সাহাবার প্রধান নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি বাংলাদেশের তাবলিগে ছিলেন। জিয়াউর রহমান নিজ সংগঠনের বার্তা কেবল পাকিস্তান নয়, বরং অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দিতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তার বিশেষ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সিপাহে সাহাবার প্রচারের সমালোচনা করেছেন। তাঁর নির্দেশে মাওলানা জিয়াউর রহমান ফারুকী এবং তৎকালীন জাতীয় সংসদের সদস্য মাওলানা আজম তারিককে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উভয়ই লাহোরের অধিবেশন আদালতের পাশে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শিকার হন। এই বিস্ফোরণে জিয়াউর রহমান নিহত হন। সে সময় জিয়াউর রহমানের বয়স ছিল ৪২ বছর। বিস্ফোরণে আজম তারিক গুরুতর ভাবে আহত হন এবং প্রায় ৬০ জন পুলিশও আহত হন। [৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সিপাহে সাহাবা পাকিস্তান - যোদ্ধা সংগঠনের বিশদ বর্ণনা"স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২০ 
  2. মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতি (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১৯১–১৯৭। আইএসবিএন 98483916605 
  3. "Samiul Haq among many Pakistani religious figures killed since 1987"www.thenews.com.pk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]