পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি সাধারণ কম কার্বন ইস্পাতের পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা

প্রকৌশল এবং বস্তু বিজ্ঞানে, একটি বস্তুর পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা পীড়ন এবং বিকৃতির মধ্যে সম্পর্কটি উপস্থাপন করে। পরীক্ষা কুপনে ধীরে ধীরে ভার বৃদ্ধি করে বিকৃতি পরিমাপ করা হয়, যা থেকে পীড়ন এবং বিকৃতি নির্ধারণ করা যায় (দেখুন প্রসার্য পরীক্ষা)। সেই মানগুলি বসিয়ে এই লেখচিত্রটি পাওয়া যায়। এই বক্ররেখাগুলি একটি পদার্থের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, যেমন ইয়ং-এর গুণাঙ্ক, ইল্ড শক্তি এবং চূড়ান্ত প্রসার্য শক্তি

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে বলতে গেলে, যে কোনও ধরনের বিকৃতিতে পীড়ন এবং বিকৃতির মধ্যে সম্পর্কের প্রতিনিধিত্বকারী রেখাচিত্রগুলি পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পীড়ন এবং বিকৃতি লম্বভাবে, ব্যবর্তন বা দুইয়ের মিশ্রণ হতে পারে। এছাড়াও হতে পারে একাক্ষবিশিষ্ট, দ্বি-অক্ষবিশিষ্ট, অথবা বহু-অক্ষবিশিষ্ট, এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনও হয়। বিকৃতির রূপটি সংকোচন, প্রসারণ, মোচড়, আবর্তন ইত্যাদি হতে পারে। অন্যথায় উল্লিখিত না হলে, পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা হল, প্রসারণ পরীক্ষায়, অক্ষ বরাবর লম্বভাবে কাজ করা বস্তুর পীড়ন এবং অক্ষ বরাবর লম্বভাবে হওয়া সংশ্লিষ্ট বিকৃতির মধ্যে সম্পর্ককে বোঝায়।

প্রকৌশল পীড়ন এবং বিকৃতি[সম্পাদনা]

একটি দণ্ডের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল প্রাথমিকভাবে এবং সেটিকে সমান এবং বিপরীত দুটি বল দুই প্রান্ত বরাবর টানলে তার মধ্যে পীড়ন সৃষ্টি হয়। বস্তুটি একটি চাপ অনুভব করে যেটির মান বল এবং দণ্ডের প্রস্থচ্ছেদের অনুপাতের সমান, এর সাথে অক্ষ বরাবর বৃদ্ধি ঘটে:

(বল/প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল = পীড়ন)
(দৈর্ঘের পরিবর্তন/মূল দৈর্ঘ্য = বিকৃতি)

নিম্ন লিখিত 0 দণ্ডের প্রাথমক মাত্রা বোঝায়। পীড়নের এসআই একক হল প্রতি বর্গমিটারে নিউটন, বা পাস্কাল (১ পাস্কাল = ১ নিউটন/মি)। এই উপাদানটির জন্য পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখাটি আঁকা হয়েছে। বল প্রয়োগ করার পর নমুনাটি দীর্ঘায়িত হয় এবং নমুনাটি ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত বিকৃতির সাথে পীড়নের পরিবর্তন নথিবদ্ধ করে লেখচিত্র অঙ্কন করা হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বিকৃতিকে অনুভূমিক অক্ষে এবং পীড়নকে উল্লম্ব অক্ষে নেওয়া হয়। মনে রাখা দরকার যে প্রকৌশলের জন্য আমরা ধরে নিই যে উপাদানের প্রস্থচ্ছেদ ক্ষেত্রফল পুরো বিকৃতি প্রক্রিয়া চলাকালীন পরিবর্তিত হয় না। এটি ঠিক নয় কারণ স্থিতিস্থাপক বস্তুর বিকৃতিজনিত কারণে প্রকৃত ক্ষেত্রফল কমে যায়। মূল প্রস্থচ্ছেদ ক্ষেত্রফল এবং মাপিত দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে বক্ররেখাটিকে প্রকৌশল পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা বলা হয়, তাৎক্ষণিক প্রস্থচ্ছেদ ক্ষেত্রফল এবং দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে যে বক্ররেখাটিকে আঁকা হয় তাকে বলা হয় প্রকৃত পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা। অন্যথায় বলা না হলে প্রকৌশল পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখাটি সাধারণত ব্যবহৃত হয়।

প্রকৃত পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখা[সম্পাদনা]

প্রকৃত পীড়ন – বিকৃতি বক্ররেখা এবং প্রকৌশল পীড়ন – বিকৃতির বক্ররেখার মধ্যে অন্তর

প্রস্থচ্ছেদ অঞ্চল সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে এবং দীর্ঘায়িত হওয়া অংশ আরও দীর্ঘায়নের প্রভাব উপেক্ষা করার কারণে, প্রকৃত পীড়ন-বিকৃতিটি প্রকৌশল পীড়ন-বিকৃতি থেকে পৃথক।

এখানে মাত্রাগুলি তাৎক্ষণিক মান। যেহেতু উপাদানের আয়তন একই থাকে এবং বিকৃতি একইভাবে ঘটে, সুতরাং

প্রকৃত পীড়ন এবং বিকৃতি প্রকৌশল পীড়ন এবং বিকৃতি দ্বারা প্রকাশ করা যেতে পারে। প্রকৃত পীড়নের জন্য,

বিকৃতির জন্য,

উভয় পক্ষকে সমাকলন এবং সীমানা শর্ত প্রয়োগ করে পাওয়া যায়,

সুতরাং একটি প্রসার্য পরীক্ষায় প্রকৃত পীড়ন প্রকৌশল পীড়নের চেয়ে বড় প্রকৃত বিকৃতি প্রকৌশল বিকৃতির চেয়ে কম। সুতরাং, প্রকৃত পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখাকে দেখানোর প্রতি বিন্দু সমতুল্য প্রকৌশল পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখাকে দেখানোর প্রতি বিন্দু থেকে উপরে এবং বামে সরে যাবে। প্রকৃত এবং প্রকৌশল পীড়ন এবং বিকৃতির মধ্যে পার্থক্য প্লাস্টিক বিকৃতির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। নিম্ন বিকৃতি অঞ্চলে (যেমন স্থিতিস্থাপক বিকৃতি), উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নগণ্য। প্রসারণ শক্তির বিন্দুটি প্রকৌশল পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখার সর্বোচ্চ বিন্দু। কিন্তু প্রকৃত পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখায় এমন কোনও বিন্দু নেই। প্রকৌশল পীড়ন নমুনা বরাবর প্রয়োগ বলের সমানুপাতিক হওয়ার কারণে, গ্রীবা গঠনের মানদণ্ড হিসাবে বলা যায়

এই বিশ্লেষণটি থেকে সর্বোচ্চ প্রসারণ ক্ষমতা (ইউটিএস) বিন্দুর প্রকৃতি সম্বন্ধে জানা যায়। কাজের শক্তিশালীকরণ প্রভাবটি ইউটিএস বিন্দুতে প্রস্থচ্ছেদ অংশটির সঙ্কুচিত হওয়ার সঙ্গে সঠিক সঙ্গতিপূর্ণ

গ্রীবা গঠনের পরে, নমুনাটিতে অসমসত্ত্ব বিকৃতি আসে, সুতরাং তখন আর উপরের সমীকরণগুলি বৈধ নয়। গ্রীবা অঞ্চলে পীড়ন এবং বিকৃতিকে প্রকাশ করা যেতে পারে নিম্নরূপে:

প্রকৃত পীড়ন এবং বিকৃতির মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করার জন্য একটি পরীক্ষামূলক সমীকরণ সাধারণত ব্যবহৃত হয়। সেটি হল

এখানে, হল পদার্থ-কঠিনতা সহগ এবং হল the প্রতিরোধশক্তি সহগ। হল উপাদানেরর কার্য কঠিনতার একটি পরিমাপ। উচ্চ যুক্ত বস্তু গ্রীবা তৈরিতে বাধা দেয়। সাধারণত, ঘরের তাপমাত্রায় ধাতুর এর মান ০.০২ থেকে ০.৫ পর্যন্ত হতে পারে।[১]

পর্যায়গুলি[সম্পাদনা]

ঘরের তাপমাত্রায় কম কার্বন স্টিলের পীড়ন–বিকৃতি বক্ররেখার জন্য একটি রৈখিক লেখচিত্র দেখানো হয়েছে চিত্র ১য়ে। পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে উপাদানের বিভিন্ন আচরণ দেখা যায়, যা থেকে বোঝা যায় উপাদানের বিভিন্ন যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। স্পষ্ট করে বলা যায়, উপকরণগুলিতে চিত্র ১য়ে দেখানো এক বা একাধিক পর্যায়ে অনুপস্থিত থাকতে পারে বা সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্যায়ও থাকতে পারে।

প্রথম পর্যায়টি হল সরলরৈখিক স্থিতিস্থাপক অঞ্চল। এখানে পীড়ন বিকৃতির সমানুপাতিক, অর্থাৎ, সাধারণ হুকের সূত্র মেনে চলে, এবং এর নতিটি হল ইয়ং-এর গুণাঙ্ক। এই অঞ্চলে, উপাদানগুলির কেবল স্থিতিস্থাপক বিকৃতি হয়। এই পর্যায়ের শেষে শুরু হয় প্লাস্টিক বিকৃতি। এই বিন্দুর পীড়নকে বলা হয় ইল্ড শক্তি (বা উপরের ইল্ড বিন্দু (সংক্ষেপে ইউওয়াইপি)।

দ্বিতীয় পর্যায় হল পদার্থ-কঠিনতা অঞ্চল। বিকৃতি ইল্ড শক্তি বিন্দু পার হওয়ার পর এই অঞ্চলটি শুরু হয়, চূড়ান্ত ক্ষমতা বিন্দুতে এটি সর্বোচ্চে পৌঁছোয়। এই বিন্দুর পীড়ন হল সর্বাধিক, যেটি উপাদানটি সহ্য করতে পারবে। এই বিন্দুকে বলা হয় সর্বোচ্চ প্রসারণ ক্ষমতা (ইউটিএস)। এই অঞ্চলে, মূলত বিকৃতি হতে থাকে এবং উপাদান দীর্ঘ হতে থাকে পীড়নের কোন বৃদ্ধি ছাড়াই। স্টিলের মতো কিছু উপকরণে এই অংশটি প্রায় সমতল থাকে। এই সমতল অঞ্চলের পীড়নকে নিম্ন ইল্ড বিন্দু (এলওয়াইপি) বলা হয়। এটি হয়লিডারস বন্ধনী গঠন এবং প্রসারণ থেকে। স্পষ্টতই, উপরের ইল্ড শক্তিতে অসমসত্ত্ব প্লাস্টিক বিকৃতি এই বন্ধনী গঠন করে এবং বিকৃতি সহ এই বন্ধনীগুলি উপাদানের নিম্ন ইল্ড শক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। উপাদানটি আবার একইভাবে বিকৃত হবার পর, কার্য কঠিনতার ফলে পীড়ন এবং সমান বিকৃতি বৃদ্ধি হয়।

তৃতীয় পর্যায় হল গ্রীবা গঠন অঞ্চল। প্রসারণ শক্তির পরে, একটি গ্রীবা অঞ্চল তৈরি হয় যেখানে স্থানীয় প্রস্থচ্ছেদ অঞ্চল গড় প্রস্থচ্ছেদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে যায়, অর্থাৎ ঐ অংশটি অন্য অংশের থেকে সরু হতে থাকে। গ্রীবা বিকৃতিটি অসমসত্ত্ব এবং এই সময় পীড়ন ছোট অংশে বেশি কেন্দ্রীভূত হয়। এর ফলে গ্রীবা গঠন আরো তাড়াতাড়ি হতে থাকে এবং উপাদানটি ভেঙে যায়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Courtney, Thomas (২০০৫)। Mechanical behavior of materials। Waveland Press, Inc। পৃষ্ঠা 6–13। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]