অদিতি সেন দে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অধ্যাপক

অদিতি সেন দে
জন্ম(১৯৭৪-১০-০১)১ অক্টোবর ১৯৭৪
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারত
মাতৃশিক্ষায়তনবেথুন কলেজ (বিএসসি),
রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ (এমএসসি),
দানস্ক বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি)
পরিচিতির কারণকোয়ান্টাম তথ্য
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠানসমূহ
ডক্টরাল উপদেষ্টামারেক যুকভস্কি
ওয়েবসাইটhttp://www.hri.res.in/~aditi/

অদিতি সেন দে একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং এলাহাবাদের হরিশ-চন্দ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি কোয়ান্টাম তথ্য এবং গণনা, কোয়ান্টাম যোগাযোগ, কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যা এবং পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য পরিচিত। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল ২০১৮ সালে তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করে।[১] তিনি এই পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম নারী পদার্থবিজ্ঞানী

জীবনী ও ক্যারিয়ার[সম্পাদনা]

অদিতি সেন দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মা লক্ষ্মী দে একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তার পিতা অজিত কুমার দে একজন রাজ্য-সরকারী কর্মচারী ছিলেন। তিনি কলকাতার সারদা আশ্রম বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। গণিতে প্রবল আগ্রহ এবং উচ্চ দক্ষতার সাথে তিনি গণিত বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিজ্ঞানে স্নাতক অর্জনের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেথুন কলেজে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের ফলিত গণিত বিভাগে যোগদান করেন। সেখানে তিনি কোয়ান্টাম এবং পরিসংখ্যান পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হন। তিনি ১৯৯৭ সালে সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ভারতে কিছুদিন গবেষণামূলক পরে তিনি পোল্যান্ডের দানস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে মারেক যুকভস্কির সাথে কাজ করা জন্য পোল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে পিএইচডি অর্জন করেছিলেন। তার ডক্টরাল পড়াশোনার পরে তিনি লাইবনিৎজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাকিয়েজ লেভেনস্টেইনের সাথে কাজ করার জন্য হাম্বোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসাবে জার্মানির হ্যানোভারে যান। এরপরে, তিনি কোয়ান্টাম তথ্য তত্ত্ব, ঘনপদার্থ এবং পরিসংখ্যান পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্পেনের বার্সেলোনায় ইনস্টিটিউট অফ ফোটোনিক সায়েন্সেসে যোগদান করেন। তিনি স্পেনে থাকাকালীন মর্যাদাপূর্ণ রেমন ই কাহাল গবেষণা ফেলোশিপ অর্জন করেছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে ফিরে আসার পরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুদিনের জন্য স্কুল অব ফিজিকাল সায়েন্সে পদার্থবিজ্ঞানে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করে। তিনি ২০০৯ সালে এলাহাবাদের হরিশ-চন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।[২] অদিতি দে ১০০টিরও বেশি পর্যালোচিত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং বেশ কয়েকজন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করেছেন।

তিনি পদার্থবিজ্ঞানী উজ্জ্বল সেনের সাথে বিবাহিত। তার স্বামীও এলাহাবাদের হরিশ-চন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।

গবেষণা[সম্পাদনা]

অদিতি সেন দে কলকাতায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সময় কোয়ান্টাম তথ্য তত্ত্বের ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু করেছিলেন এবং ২০০৪ সালে দানস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট লাভ করেন। কোয়ান্টাম তথ্য এবং গণনার ক্ষেত্রটি তখন একটি নতুন বিষয় ছিল। পোল্যান্ডের দানস্ক ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রধান গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে কোয়ান্টাম জট তত্ত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছিল। তার তত্ত্বাবধায়ক মারেক যুকভস্কি এবং তার স্বামী উজ্জ্বল সেনের মতো অন্যান্য বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় তিনি কোয়ান্টাম জট, কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম যোগাযোগের কিছু মৌলিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেছিলেন। দানস্ক তার গবেষণা শেষ হওয়ার পরে, তিনি জার্মানির হ্যানোভারের ম্যাকিয়েজ লেভেনস্টেইন এবং পরে স্পেনের দ্য ইনস্টিটিউট অফ ফোটোনিক সায়েন্সেস-এ যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার প্রাথমিক গবেষণার বেশ কিছু সময় ব্যয় করেছিলেন। এই সময়কালে, তিনি কোয়ান্টাম তথ্য এবং তার গবেষণাকে একীভূত করেছিলেন। কোয়ান্টাম ফেজ ট্রানজিশনের উপর তিনি গবেষণা করেন। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন কাজ করার পরে তিনি এলাহাবাদের হরিশ-চন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে চলে আসেন। ২০০৯ সালে তিনি সেখানের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিদ উজ্জ্বল সেন এবং অরুণ কুমার পতির সাথে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্পিউটেশন গ্রুপের সূচনা করেছিলেন।[৩] গত কয়েক বছর ধরে, বেশ কিছু তরুণ গবেষকরা তাদের ডক্টরালের পাশাপাশি পোস্টডক্টোরাল গবেষণা এই দলে সম্পন্ন করেছে। এর ফলে পদার্থবিজ্ঞানের সুপরিচিত জার্নালগুলিতে ৫০টিরও বেশি প্রকাশনা তৈরি হয়েছে। দলটি সারা বিশ্বের অংশগ্রহণকারী এবং বক্তাদের নিয়ে একাধিক সম্মেলন এবং কর্মশালার আয়োজন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অদিতি সেন দে কোয়ান্টাম তথ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে, কোয়ান্টাম জট তত্ত্বের ক্ষেত্রে তার অবদান অসামান্য।[৪] তার কাজের মধ্যে কোয়ান্টাম চ্যানেল তত্ত্ব, কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যার সুরক্ষা এবং কোয়ান্টাম সম্পর্কের পরিমাপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল তাকে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করেছে। এটি ২০১৮ সালের অন্যতম ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার।[১] তিনি ভৌত বিজ্ঞান বিভাগে এই পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম নারী।[৬] ২০১২ সালে, তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানজ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এমন তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য ইন্ডিয়ান ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিবার্ষিক বুটি ফাউন্ডেশন পুরস্কার জিতেছেন।[৭] তিনি স্পেনের রেমন ই কাহাল মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ এবং জার্মানির আলেকজান্ডার ভন হাম্বলড ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাম্বলড্ড রিসার্চ ফেলোশিপ অর্জন করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Shanti Swarup Bhatnagar Prize (SSB) for Science and Technology 2018 :Brief Profile of the Awardee"। Shanti Swarup Bhatnagar Prize। ২০১৮-১০-০১। 
  2. "Aditi HomePage"www.hri.res.in 
  3. "QIC group"www.hri.res.in 
  4. "Awardee Details: Shanti Swarup Bhatnagar Prize"ssbprize.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১ 
  5. "Research Interests: Aditi Sen De" 
  6. "'I Was the Only Woman in the Room': The Difficulty in Being a Female Scientist in India"News18। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১ 
  7. "'Buti Foundation Award : Awardees'"