পুয়ের্তো রিকো খাত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত পুয়ের্তো রিকো খাত।

পুয়ের্তো রিকো খাতটি ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম এই খাতটি ৮০০ কিলোমিটার (৪৯৭ মাইল) দীর্ঘ এবং এর সর্বোচ্চ গভীরতা ৮,৩৭৬ মিটার (২৭,৪৮০ফুট)। সর্বোচ্চ গভীর বিন্দুটি মিওয়াকি ডিপ নামে পরিচিত যা ব্রাউন্সন ডিপ নামক সমুদ্র তলদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মিওয়াকি এবং ব্রাউন্সন ডিপ পরস্পরের সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্ট এই বিন্দুটি চিহ্নিত করা হয় ১৯১৮ সালে ভিক্টর ভেস্কোভো এর তত্ত্বাবধানে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে এই চ্যুতিরেখায় উৎপন্ন যেকোনো ভূমিকম্প একটি সুনামি তৈরিতে সক্ষম। ১৯১৮ সালে পুয়ের্তো রিকো দ্বীপটি, যা এই অঞ্চলের দক্ষিণে অবস্থিত, সান ফারমিন ভূমিকম্প দ্বারা সৃষ্ট একটি মারাত্বক সুনামির সম্মুখিন হয়েছিল।

ভূতত্ত্ব

পুয়ের্তো রিকো খাতটি পূর্বে ধাবমান ক্যারিবিয়ান প্লেট এবং পশ্চিমে ধাবমান উত্তর আমেরিকান প্লেটের সীমারেখায় অবস্থিত। এরকম অবস্থানের কারনে যদিও পুয়ের্তো রিকোয় কোন সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই, এটি ভূমিকম্প ও সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে পূর্বে ৮.০ মাত্রার ভূমিকম্প পরিলক্ষিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এরকমটা হতে পারে।

নাসার গবেষণা অনুযায়ী, এই খাতটির নিচে অবস্থিত পদার্থ এতটাই ঘন যে তা সাগর তলদেশের উপর মধ্যাকর্ষণ টান তৈরিতে সক্ষম যা কালের পরিক্রমায় গভীরতম এই খাতের সৃষ্টি করেছে।

ভুমিকম্পের ইতিহাস

১৯১৮ সালের ১১ই অক্টোবর পুয়ের্তো রিকোর পশ্চিম উপকূলে একটি বড়সড় ভূমিকম্প অনুভূত হয় যা সুনামি সৃষ্টি করেছিল। এছাড়াও পুয়ের্তো রিকো এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রায়ই ছোটখাটো কম্পন অনুভূত হয়।

স্থান                                  সাল       মাত্রা

পুয়ের্তো রিকো খাত         ১৭৮৭    ৮.১

আনেগাডা                      ১৮৬৭    ৭.৫

মোনা ক্যানিয়ন               ১৯১৮      ৭.৫

মোনা ক্যানিয়ন               ১৯৪৬     ৭.৫

ডমিনিকান রিপাবলিক    ১৯৪৬     ৮.১

ডমিনিকান রিপাবলিক    ১৯৫৩     ৮.১

পুয়ের্তো রিকো খাত         ২০১৪      ৬.৪

পুয়ের্তো রিকো খাত        ২০১৯      ৬.০

জনসচেতনতা 

পুয়ের্তো রিকোর সাধারন জনগনের মাঝে ভূমিকম্প বা সুনামি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে পুয়ের্তো রিকোয় গঠিত ভূমিকম্প সমিতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহাহতায় সচেতনতা তৈরির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।

২০০৪ সালের সুনামি, যা ইন্ডিয়ান সাগর এবং এর পার্শ্ববর্তী ৪০ টিরও বেশি দেশকে প্রভাবিত করেছিল, এরকম একটি দুর্যোগ যেকোনো সময় পুয়ের্তো রিকোতেও আঘাত হানতে পারে। এরকম দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরইমধ্যে কিছু জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যেমন ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন এবং সুনামির পূর্বাভাস দেয়ার পদ্ধতি আবিষ্কারকরণ।

অনুসন্ধান

অনেকগুলো অনুসন্ধানি অভিযানের সাপেক্ষে পুয়ের্তো রিকো খাত সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৬৪ সালে আরকিমিদে নামক একটি ফরাসি বেথিস্কোপ প্রথম সমুদ্র তলদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালে একটি রোবটযান পাঠানো হয়। অভিযানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল অসংখ্য বেন্থিক অ্যাম্ফিপডের ছবি এবং কিছু অ্যাম্ফিপড বিস্তারিত গবেষণার জন্য উপরে আনা হয়েছিল। ছবিতে দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর দেখাও মিলেছিল কিন্তু তাদেরকে সংগ্রহ করা হয়েছিলনা বিধায় পরবর্তীতে তাদের সঠিক প্রজাতি চিহ্নিত করা যায়নি।

মানব অনুসন্ধান

২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর আমেরিকান অনুসন্ধানকারী ভিক্টর ভেস্কোভো পুয়ের্তো রিকো খাতের গভীরতম অংশে ডুব দিয়ে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তিনি প্রায় ৮,৩৩৬ মাইল (২৭,৪৮০ ফুট) গভীরতায় পৌঁছেছিলেন এবং একারণে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশ পর্যন্ত গিয়েছেন। এই অভিযানটি চালানো হয় ‘ফাইভ ডিপস এক্সপিডিশন’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে যার উদ্দেশ্য ছিল  ২০১৯ সালের সেপটেম্বরের মধ্যে বিশ্বের পাঁচটি মহাসাগরের গভীরতম স্থানে পৌঁছানো।