আমিনদিভি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমিনদিভি
আমিনীদ্বীপ
അമിനിദ്വീപ്
দ্বীপপুঞ্জ
আমিনদিভি ভারত-এ অবস্থিত
আমিনদিভি
আমিনদিভি (ভারত)
রাষ্ট্র ভারত
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চললাক্ষাদ্বীপ
জেলালাক্ষাদ্বীপ
আয়তন
 • মোট৯.২৬ বর্গকিমি (৩.৫৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১৯,৬২৯
 • জনঘনত্ব২,১০০/বর্গকিমি (৫,৫০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • দাপ্তরিকমালয়ালম
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন[১]৬৮২ ৫৫২, ৫৫৪, ৫৫৫, ৫৫৬, ৫৫৮
যানবাহন নিবন্ধনLD (এলডি)
এই দ্বীপপুঞ্জের নামে নামাঙ্কিত লাক্ষাদ্বীপের একটি যাত্রীবাহী জাহাজ এম.ভি. আমিনদিভি

আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জ ভারতের লাক্ষাদ্বীপ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত তিনটি শ্রেণীর দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে উর্বোত্তরের শ্রেণী৷ লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের সহিত আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জ মোটামুটিভাবে ১১তম উত্তর অক্ষরেখা দ্বারা পৃথকীকৃত৷ [২] এই দ্বীপরাশির মোট ভূমির ক্ষেত্রফল ৯.২৬ বর্গ কিলোমিটার৷

লাক্ষাদ্বীপ নামে পরিচিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি পূর্বে লাক্ষা, মিনিকয় ও আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জনামে পরিচিত ছিল,[৩] তবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় আইনসভায় পেশ করা একটি অ্যাক্ট অনুসারে এটির নাম পরিবর্তন করে লাক্ষাদ্বীপ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।[৪] আমিনদিভি শ্রেণীটি এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি তালুক গঠন করে৷[৫] এই শ্রেণীতে অবস্থিত আমিনি, কিলতান, চেতলাত, কাদমাত এবং বিত্রা হল জনবসতিযুক্ত দ্বীপ৷ ২০০১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে এই দ্বীপের জনসংখ্যা ছিলো ১৮,৮৭৬ জন৷ দ্বীপবাসীদের মূল ধর্ম ইসলাম৷ [৬]

আমিনদিভি ৬ই মে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ২৪ ঘণ্টায় (দৈনিক) ভারতের সর্বাধিক ১,১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত করে৷

ভূগোল[সম্পাদনা]

আমিনদিভিতে রয়েছে ভূদ্বীপ সহ একাধিক প্রবালদ্বীপ, তিনটি প্রবাল প্রাচীর বা উচ্চ উলরেখা সম্পন্ন বালুকাময় ঊষর প্রবালদ্বীপ এবং চারটি সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি৷ [৭] এছাড়া পিট্টি দ্বীপিকার উত্তর-পশ্চিমে ১১°০৬′ উত্তর ৭২°৪৫′ পূর্ব / ১১.১০০° উত্তর ৭২.৭৫০° পূর্ব / 11.100; 72.750 স্থানাঙ্কে রয়েছে আমিনিদ্বীপ, যার নামে এই দ্বীপমালার নাম৷

প্রবালদ্বীপ/সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলপ্রাচীর/সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি ধরন ভূমি
ক্ষেত্রফল
(বর্গকিমি)
উপহ্রদ
ক্ষেত্রফল
(বর্গকিমি)
ক্ষুদ্র দ্বীপ
সংখ্যা
জনসংখ্যা
জনশুমারি
২০০১
অবস্থান
আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জ
কোরাদিভি সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি - ৩৩৯.৪৫ - - ১৩°৪২′ উত্তর ৭২°১১′ পূর্ব / ১৩.৭০০° উত্তর ৭২.১৮৩° পূর্ব / 13.700; 72.183
সেসোস্ট্রিস সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি - ৩৮৮.৫৩ - - ১৩°০৮′ উত্তর ৭২°০০′ পূর্ব / ১৩.১৩৩° উত্তর ৭২.০০০° পূর্ব / 13.133; 72.000
বাসাস দে পেড্রো সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি - ২৪৭৪.৩৩ - - ১৩°০৭′ উত্তর ৭২°২৫′ পূর্ব / ১৩.১১৭° উত্তর ৭২.৪১৭° পূর্ব / 13.117; 72.417
চেরপন্যানি প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলপ্রাচীর ০.০১ ১৭২.৫৯ - ১২°১৮′ উত্তর ৭১°৫৩′ পূর্ব / ১২.৩০০° উত্তর ৭১.৮৮৩° পূর্ব / 12.300; 71.883
বাইরামগড় প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলপ্রাচীর ০.০১ ৫৭.৪৬ - ১১°৫৪′ উত্তর ৭১°৪৯′ পূর্ব / ১১.৯০০° উত্তর ৭১.৮১৭° পূর্ব / 11.900; 71.817
চেতলাত প্রবালদ্বীপ ১.১৪ ১.৬০ ২২৮৯ ১১°৪২′ উত্তর ৭২°৪২′ পূর্ব / ১১.৭০০° উত্তর ৭২.৭০০° পূর্ব / 11.700; 72.700
বিত্রা প্রবালদ্বীপ ০.১০ ৪৫.৬১ ২৬৪ ১১°৩৩′ উত্তর ৭২°০৯′ পূর্ব / ১১.৫৫০° উত্তর ৭২.১৫০° পূর্ব / 11.550; 72.150
কিলতান প্রবালদ্বীপ ২.২০ ১.৭৬ ৩৬৬৪ ১১°২৯′ উত্তর ৭৩°০০′ পূর্ব / ১১.৪৮৩° উত্তর ৭৩.০০০° পূর্ব / 11.483; 73.000
কাদমাত প্রবালদ্বীপ ৩.২০ ৩৭.৫০ ৫৩১৯ ১১°১৪′ উত্তর ৭২°৪৭′ পূর্ব / ১১.২৩৩° উত্তর ৭২.৭৮৩° পূর্ব / 11.233; 72.783
এলিকালপেনি সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি - ৯৫.৯৪ - - ১১°১২′ উত্তর ৭৩°৫৮′ পূর্ব / ১১.২০০° উত্তর ৭৩.৯৬৭° পূর্ব / 11.200; 73.967
পেরুমাল পার সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলপ্রাচীর ০.০১ ৮৩.০২ - ১১°১০′ উত্তর ৭২°০৪′ পূর্ব / ১১.১৬৭° উত্তর ৭২.০৬৭° পূর্ব / 11.167; 72.067
আমিনি ১) প্রবালদ্বীপ ২.৫৯ ১৫৫.০৯ ১) ৭৩৪০ ১১°০৬′ উত্তর ৭২°৪৫′ পূর্ব / ১১.১০০° উত্তর ৭২.৭৫০° পূর্ব / 11.100; 72.750

আবহাওয়া[সম্পাদনা]

আমিনদিভি (১৯৮১–২০১০, ১৯০১–২০১২)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ৩৬.৭
(৯৮.১)
৩৫.৭
(৯৬.৩)
৩৭.২
(৯৯.০)
৩৭.৭
(৯৯.৯)
৩৭.৫
(৯৯.৫)
৩৬.২
(৯৭.২)
৩৩.৩
(৯১.৯)
৩৪.৪
(৯৩.৯)
৩৩.৯
(৯৩.০)
৩৬.৪
(৯৭.৫)
৩৫.০
(৯৫.০)
৩৫.১
(৯৫.২)
৩৭.৭
(৯৯.৯)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ৩১.৮
(৮৯.২)
৩২.৪
(৯০.৩)
৩৩.০
(৯১.৪)
৩৩.৮
(৯২.৮)
৩৩.৫
(৯২.৩)
৩০.৫
(৮৬.৯)
২৯.৮
(৮৫.৬)
২৯.৭
(৮৫.৫)
৩০.৩
(৮৬.৫)
৩০.৯
(৮৭.৬)
৩১.৫
(৮৮.৭)
৩১.৭
(৮৯.১)
৩১.৬
(৮৮.৯)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ২৩.৮
(৭৪.৮)
২৪.৫
(৭৬.১)
২৫.৫
(৭৭.৯)
২৬.৭
(৮০.১)
২৬.৯
(৮০.৪)
২৫.৭
(৭৮.৩)
২৫.৪
(৭৭.৭)
২৫.৩
(৭৭.৫)
২৫.৩
(৭৭.৫)
২৫.১
(৭৭.২)
২৪.৬
(৭৬.৩)
২৩.৮
(৭৪.৮)
২৫.২
(৭৭.৪)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) ১৮.৯
(৬৬.০)
১৯.৪
(৬৬.৯)
২০.০
(৬৮.০)
২০.০
(৬৮.০)
১৬.৬
(৬১.৯)
২১.১
(৭০.০)
২১.০
(৬৯.৮)
২০.৯
(৬৯.৬)
২১.৩
(৭০.৩)
১৯.৭
(৬৭.৫)
১৮.৩
(৬৪.৯)
১৮.৯
(৬৬.০)
১৮.৩
(৬৪.৯)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১৫.৯
(০.৬৩)
১.৬
(০.০৬)
৩.২
(০.১৩)
১০.০
(০.৩৯)
১৪৭.৭
(৫.৮১)
৩৭৩.৫
(১৪.৭০)
৩৩৬.০
(১৩.২৩)
২৩১.২
(৯.১০)
১৮৭.২
(৭.৩৭)
১৪৬.০
(৫.৭৫)
৯০.৫
(৩.৫৬)
৩১.৩
(১.২৩)
১,৫৭৪.৩
(৬১.৯৮)
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় ০.৬ ০.১ ০.২ ০.৮ ৫.৮ ১৬.৮ ১৬.১ ১৩.৩ ১০.৯ ৮.৫ ৫.১ ২.২ ৮০.২
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) (১৭:৩০ ভারতীয় প্রমাণ সময়) ৬৮ ৬৭ ৬৮ ৬৮ ৭২ ৮৩ ৮৫ ৮৪ ৮১ ৭৭ ৭৪ ৭০ ৭৫
উৎস: ভারতীয় মৌসম ভবন[৮][৯]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের মতোই আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জও বহুপূর্ব থেকেই জনবসতিপূর্ণ ছিলো৷ প্রাথমিকভাবে নিকটবর্তী কেরালা থেকে এবং পরবর্তীকালে আরব থেকে আসা ধর্মপ্রচারক ও বণিকরা এখানে বসতি স্থাপন করেন৷ ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শনে আসেন। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লাক্ষা মিনিকয় আমিনদিভি এই তিন শ্রেণীর দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত অধিবাসী পর্তুগিজ আধিপত্য থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আরক্কাল সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য দেখায় ও তাদের জায়গীর-এ পরিণত হয়। [১০]

আরো পরে অষ্টাদশ শতাব্দী শুরুর দিকে আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারীদের উপর ব্যবসায়িক স্বার্থে জোর পূর্বক নারকেলের ছোবড়া থেকে দড়ি উৎপাদন শিল্প চাপিয়ে দেওয়া হয়। [১১] এর বিদ্রোহ করে উত্তর দিকের দ্বীপপুঞ্জ ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের রাজা টিপু সুলতানের শরণাপন্ন হয়। আবার দক্ষিণ দিকের দ্বীপপুঞ্জ পূর্বের মতোই কণ্ণনূর তথা আরক্কালের অনুগত রয়ে যায় যা পরবর্তীকালে কণ্ণনূর দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত হয়। [১২]

১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতানের পরাজয় হলে ফলস্বরূপ ব্রিটিল বাহিনী শ্রীরঙ্গপত্তমের দখলের মাধ্যমে আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে আমিনদিভি শ্রেণীর দ্বীপপুঞ্জকে ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর দক্ষিণ কানাড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [১৩][১৪] এরপর থেকে এই দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ কানাড়া দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিতি পায়।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. https://lakshadweep.gov.in/std-pin-codes/
  2. GEBCO Gazetteer of undersea feature names
  3. Lakshadweep | union territory, India | Britannica
  4. "The name of the Laccadive, Minicoy and Amindivi islands"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. Lakshadweep Tehsil Map - Maps of India
  6. Web123India
  7. Prakash Chauhan & Shailesh Nayak, Detection of submerged reef banks in the Lakshadweep Sea using IRS-P4 OCM satellite data
  8. "Station: Amini Divi Climatological Table 1981–2010" (পিডিএফ)Climatological Normals 1981–2010। India Meteorological Department। জানুয়ারি ২০১৫। পৃষ্ঠা 39–40। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  9. "Extremes of Temperature & Rainfall for Indian Stations (Up to 2012)" (পিডিএফ)। India Meteorological Department। ডিসেম্বর ২০১৬। পৃষ্ঠা M113। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  10. "The imperial gazetteer of India (Volume 8)"। ১৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  11. William Logan, Malabar Manual, p. CCLXXIX
  12. Logan, William (২০০৪) [1887]। Malabar Manual। New Delhi: Asian Education Services। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 81-206-0446-6 
  13. Times of India, dated 2005-07-25
  14. 1902 Encyclopedia - Laccadives (also known as: Laccadive Islands; Laccadive, Minicoy, and Amindivi Islands; Lakshadweep)
  15. R. H. Ellis, A Short Account of the Laccadive Islands and Minicoy. Government Press, Madras. 1924. p. 61