তাক্বী আদ দীন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাক্বী আদ দীন
তাক্বী আদ দীনের মানমন্দিরে কার্যক্রম
জন্ম১৫২৬
দামেস্ক, সিরিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু১৫৮৫
পরিচিতির কারণইস্তাম্বুল মানমন্দির
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রগণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল, যান্ত্রিকবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক দর্শন

তাক্বী আদ দীন মুহাম্মদ ইবনে মা'রুফ আশ-শামি আল-আসাদি ( আরবী : تقي الدين محمد بن معروف الشامي , উসমানীয় তুর্কি : تقي الدين محمد بن معروف الشامي السعدي, আধুনিক তুর্কি:Takiyüddin) উসমানীয় সাম্রাজ্যভুক্ত সিরিয়ার একজন বহুবিদ্যাবিশারদ। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি মধ্যযুগের মুসলিম বিজ্ঞানীদের অন্যতম এবং তিনি কোনো একক বিষয়ে অবদান রাখেননি বরং জ্যোতির্বিজ্ঞান , ঘড়ি , প্রকৌশল , গণিত , যান্ত্রিকবিজ্ঞান , আলোকবিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক দর্শন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন এবং এসব বিষয়ে নব্বইয়েরও অধিক গ্রন্থ লিখেছেন।

যান্ত্রিক শিল্পে তাঁর ব্যতিক্রমী জ্ঞানকে ব্যবহার করে যান্ত্রিক ঘড়িগুলির মতো যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন। পাশ্চাত্যের ড্যানিশ বিজ্ঞানী ট্যুকো ব্রাহের মতো তিনিও প্রাচ্যের একজন বিজ্ঞানী রূপে মহাধূমকেতু (১৫৭৭) পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং তাঁর নির্মিত যান্ত্রিক ঘড়ি তাঁকে এ কাজে সহায়তা করেছিল।

জীবনী[সম্পাদনা]

জন্ম ও বংশপরিচয়[সম্পাদনা]

অধিকাংশ তথ্যসূত্র তাক্বী আদ-দীন দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছে।তিনি নিজে বলেছেন যে তিনি বর্তমান লেবাননের বেকা উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন।[১] তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত "আশ শামী" অংশটি তাঁকে শামের অধিবাসী বলে নির্দেশ করছে।শাম বলতে সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল,ফিলিস্তিন,জর্ডান এই অঞ্চলগুলোকে বোঝায়। তাঁর জাতিসত্তাকে উসমানীয় আরব[২] , উসমানীয় তুর্কি এবং সিরীয়[৩] রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । “রায়হানাত আল-রুহ” শিরোনামে তাঁর গ্রন্থে, তিনি নিজেকে আইয়ুবী বংশোদ্ভূত বলেছেন।[৪] তিনি নিজেকে আইয়ুবী রাজকুমার নাসির আল দীন মানকারুসের বংশধর বলেছেন।[৫] ইসলামী বিশ্বকোষ (The Encyclopedia of Islam) তাঁর কোনো জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করেনি শুধু একজন উসমানীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেছে।[৬]

কর্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

তাক্বী আদ-দ্বীনের শিক্ষা ধর্মতত্ত্বে আরম্ভ হয়েছিল তিনি যুক্তিবাদী বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তার আগ্রহের পরে, তিনি দামেস্ক এবং কায়রোতে যুক্তিযুক্ত বিজ্ঞান অধ্যয়ন আরম্ভ করলেন। এই সময়ে তিনি তাঁর পিতা মারুফ ইফেন্দির সাথে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুস্তাফা ইবনে আলী আল মুওয়াক্বক্বিতের স্থলে প্রধান জ্যোতির্বিদ হন।

ইস্তাম্বুল মানমন্দির[সম্পাদনা]

তাক্বী আদ-দীনের প্রতিষ্ঠিত ইস্তাম্বুল মানমন্দির মধ্যযুগের মানমন্দিরগুলোর অন্যতম ও ষোড়শ শতাব্দীর ইসলামি মানমন্দিরের নিদর্শন।একে ড্যানিশ বিজ্ঞানী ট্যুকো ব্রাহের বিখ্যাত উরানিবর্গ্ মানমন্দিরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তিনি তাঁর মানমন্দিরে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যান্ত্রিক ঘড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা সঠিকভাবে গ্রহের গতি ও অবস্থান পরিমাপ করতে পারত। এটি অনেক ক্ষণস্থায়ী ছিল এবং ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস হয়ে যায়।

অবদান[সম্পাদনা]

বিবিধ যন্ত্র[সম্পাদনা]

উসমানীয় সাম্রাজ্যে প্রার্থনা বা সালাতের সঠিক সময় নির্ণয়ের জন্য এমন ঘড়ির প্রয়োজন ছিল যা একেবারে সঠিক সময় নির্ণয়ে সক্ষম। ইউরোপীয় ঘড়িনির্মাতারাও সাম্রাজ্যে এই প্রয়োজনীয়তা দেখে রুচিবোধ ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ঘড়ি নির্মাণ ও রূপায়ণ করতে থাকে।যান্ত্রিক ঘড়িগুলোর এই প্রয়োজনীয়তার সময় প্রধানমন্ত্রী সেমিজ আলী পাশা তাক্বী আদ-দীনকে এমন ঘড়ি নির্মাণ করতে বলেন যা সালাতের সঠিক সময় প্রদর্শন করবে। এরপর তিনি যান্ত্রিক ঘড়ির উপর তাঁর প্রথম গ্রন্থ "আল কাওয়াকিব আল দুররিয়া ফী ওয়াদ আল বাঙ্কামাত আল দাওরিইয়া" লেখেন তা তিনি তাঁর মানমন্দিরে গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন।[৭] ঘড়ি কীভাবে কাজ করে সেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি কখনো কখনো ইউরোপীয় ঘড়িনির্মাতাদের কাছেও যেতেন।[৮] তাক্বী আদ-দীন আরও চার ধরনের জল উত্তোলনকারী যন্ত্রের কথা বলেছেন।"আল তুরুক আল সামিইয়া ফী আল আনাত আল রুহানিয়া" গ্রন্থে বাষ্পীয় বায়ুকলের কিছু বাস্তব প্রয়োগের বর্ণনা রয়েছে।

গ্রন্থ[সম্পাদনা]

•"সিদরাত মুনতাহা আল-আফকার ফী মালাকুত আল ফালাক্ব আল দাওওয়ার" কে তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রূপে বিবেচিত হয়। গ্রন্থের প্রথম ৪০ পৃষ্ঠায় তিনি ত্রিকোণমিতির গণনা বিশেষত ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক যেমন:sin,cos,sec,tan ইত্যাদির ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন।
•"জারীদাত আল দুরার ওয়া খারীদাত আল ফিকার" হলো তাঁর অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এতে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে দশমিক পদ্ধতি এবং ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের উল্লেখ করেছেন।

এছাড়াও দুস্তূর আল তারজীহ লি-কাওয়া ঈদ আল তাসী,রায়হানাত আল রূহ ফী রসম আল সা'আত 'আলা মুসতাউঈ আল সুতূহ্ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

আলোকবিজ্ঞানের উপর তাঁর গ্রন্থ:
•"নাওর হাদিক্বত আল আবসার ওয়া নূর হাক্বিক্বত আল আনজার" গ্রন্থে তিনি আলোর গঠন,আলো ও রঙের সম্পর্ক,বিকিরণ ও প্রতিসরণ বর্ণনা করেন।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Chaarani, Mona SANJAKDAR (২০১৯)। تقي الدين محمد بن معروف الدمشقي - حياته وأعماله. 
  2. Soucek, Svat (১৯৯৪)। "Piri Reis and Ottoman Discovery of the Great Discoveries"। Studia Islamica79 (79): 121–142। জেস্টোর 1595839ডিওআই:10.2307/1595839 "Two such cases are Piri Reis (d.1554), an Ottoman Turk from Gallipoli, and Taqi al-Din (d.1585), an Ottoman Arab from Damascus. They form the symbolic pivot of my argument."
  3. Ibn Haytham, Nader el-Bizri, Medieval Science Technology and Medicine: An Encyclopedia, ed. Thomas F. Glick, Steven Livesey, Faith Wallis, (Taylor & Francis Group, 2005), 239;"..composed as a commentary on Kamal al-Din's "Tanqih" by Taqi al-Din Muhammad ibn Ma'ruf, the Syrian astronomer at the Ottoman court".
  4. Chaara, Mona SANJAKDAR (২০১৯)। تقي الدين محمد بن معروف الدمشقي - حياته وأعماله.। পৃষ্ঠা ১। 
  5. Lyons, Malcolm Cameron; Jackson, D. E. P. (1984). Saladin: The Politics of the Holy War. Cambridge University Press. p. 195.
  6. The Encyclopedia of Islam (Volume 10) 
  7. Stolz, Daniel A। . "POSITIONING THE WATCH HAND: 'ULAMA' AND THE PRACTICE OF MECHANICAL TIMEKEEPING IN CAIRO 
  8. İhsanoğlu, Ekmeleddin (২০০৪)। Science, Technology and Learning in the Ottoman Empire। Burlington VT: Ashgate Publishing Company। পৃষ্ঠা ২০। 
  9. Fazlıoğlu, İhsan (২০১৪)। "Taqī al-Dīn Abū Bakr Muḥammad ibn Zayn al-Dīn Maҁrūf al-Dimashqī al-Ḥanafī".