দমইয়াত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দমইয়াত
دمياط
শহর
উপর থেকে ঘড়ির কাটার দিকে:
পুরনো সেতু, মেইনি মসজিদের প্রবেশপথ, দমইয়াত করনিচ, মেইনি মসজিদের গম্বুজ, মৎস্য শিকার।
দমইয়াত মিশর-এ অবস্থিত
দমইয়াত
দমইয়াত
মিশরে দমইয়াতের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩১°২৫′ উত্তর ৩১°৪৯′ পূর্ব / ৩১.৪১৭° উত্তর ৩১.৮১৭° পূর্ব / 31.417; 31.817
দেশ মিশর
গভর্নরেটদমইয়াত
উচ্চতা৫ মিটার (১৬ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১২)
 • শহর৩,৩৭,৩০৩
 • মহানগর১১,০০,০০০
সময় অঞ্চলমিশর মান সময় (ইউটিসি+২)
এলাকা কোড(+২০) ৫৭
নীল নদে দমইয়াতের করনিচ
আমর ইবনে আল-আ'স মসজিদ (আল-ফাতেহ)
ফ্রিজিয়ান ক্রুসেডারদের দ্বারা দমইয়াতের বন্দীত্ব
১৯১১ সালের একটি পোস্টকার্ডে লেখা নীলে নদের তীরে দমইয়াত শহর

দমইয়াত (আরবি: دمياط Dumyāṭ, মিশরীয় আরবি: domˈjɑːtˤ; কপটিক: ⲧⲁⲙⲓⲁϯ|Tamiat) হচ্ছে মিশরের দমইয়াত গভর্নরেটের একটি বন্দর শহর। এটি একটি বিশপাধীন এলাকা, তবে বর্তমানে কিছু নাম সর্বস্ব ক্যাথলিক চার্চ এখানে বিদ্যমান। নীল ব-দ্বীপের পূর্বের শাখা নদী দমইয়াত শাখায় এটি অবস্থিত। ভূমধ্যসাগর থেকে এর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মা) এবং উত্তর কায়রো থেকে এর দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার (১২০ মা)।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন মিশরে শহরটি তামিয়াত (কপট: ⲧⲁⲙⲓⲁϯ) নামে পরিচিত ছিল, কিন্তু হেলেনিস্টিক যুগে এর নাম ছিল তামিয়াথিস (Tamiathis) (গ্রিক- Ταμίαθις)।[১] ষষ্ঠ শতাব্দীর ভূগোলবিজ্ঞানী স্টেফানাস বাইজান্টিয়াস উল্লেখ করেন যে[২], শহরটি পরবর্তীতে দামিতা এবং দামিয়েত্তা নামে পরিচিত হয়, যা সম্ভবত একটি প্রাচীন মিশরীয় শব্দ "Damt" থেকে উদ্ভূত, যার মানে হচ্ছে ক্ষমতা, যেহেতু দামিয়েত্তার ভূমধ্যসাগরের লবণাক্ত পানি একত্রিত করার ক্ষমতা ছিল। অন্যান্য ঐতিহাসিকরা লক্ষ্য করেছেন যে এই শহরকে বলা হয় "তাম হেট", যার মানে হচ্ছে পানির শহর বা চলমান পানির শহর। নামের আরেকটি উৎপত্তি হতে পারে "Tam Hèt", যার মানে উত্তর শহর (কপট: ⲡϯⲙⲉ ϧⲏⲧ)।[৩]

খলিফা ওমরের (৫৭৯-৬৪৪) অধীনে আরবরা শহরটি দখল করে নেয় এবং সফলভাবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের আক্রমণ প্রতিরোধ করে, বিশেষ করে ৭৩৯, ৮২১, ৯২১ এবং ৯৬৮ সালে। আব্বাসীয়রা আলেকজান্দ্রিয়া, দামিয়েত্তা (বা দমইয়াত), এডেন এবং সিরাফকে ভারত ও চীনের তাং সাম্রাজ্যের প্রবেশ বন্দর হিসেবে ব্যবহার করত।[৪] দমইয়াতে আব্বাসীয়, তুলানিদ ও ফাতিমীয়দের আমলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ ঘাঁটি ছিল। এর ফলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এই শহরের উপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করে, বিশেষ করে ৮৫৩ সালের মে মাসে শহরের ধ্বংসযজ্ঞ এর উদাহরণ।

দমইয়াত ১২ এবং ১৩ শতকে ক্রুসেডের সময় আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১১৬৯ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সহায়তায় জেরুজালেম রাজ্য থেকে একটি বহর বন্দর আক্রমণ করে, কিন্তু সালাদিনরা এটিকে প্রতিহত করে।

১২১৭ সালে পঞ্চম ক্রুসেডের প্রস্তুতিকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দমইয়াত হবে আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। দমইয়াতের নিয়ন্ত্রণ মানে নীল নদের নিয়ন্ত্রণ, এবং সে-কারণে ক্রুসেডাররা বিশ্বাস করত যে তারা মিশর জয় করতে সক্ষম হবে। মিশর থেকে তারা ফিলিস্তিন আক্রমণ করে জেরুজালেমও পুনর্দখল করতে পারবে। ১২১৯ সালে যখন বন্দরটি ফ্রিসিয়ান ক্রুসেডারদের দ্বারা ঘেরাও করা হয় এবং দখল করা হয়, তখন আসিসির ফ্রান্সিস মুসলিম শাসকের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সমঝোতা করতে আসেন। এই অবরোধ দমইয়াতের জনগণকে ধ্বংস করে দেয়। অক্টোবর ১২১৮ সালে চেস্টারের ইংরেজ আর্লরানুলফ, উইনচেস্টারের স্যার এবং অরুন্ডেলের উইলিয়াম অবিগনি, ওডোনেল অবিগনি, রবার্ট ফিটজওয়াল্টার, চেস্টারের জন ল্যাসি, উইলিয়াম হারকোর্ট এবং অলিভার সহ বেশ কিছু শক্তিশালী বাহিনী আসে। ১২২১ সালে ক্রুসেডাররা কায়রো যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু প্রকৃতি ও মুসলিম প্রতিরক্ষার সমন্বয়ে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।

ফ্রান্সের নবম লুইয়ের নেতৃত্বে সপ্তম ক্রুসেডের লক্ষ্য ছিল দমইয়াত। তার নৌবহর ১২৪৯ সালে সেখানে পৌঁছায় এবং দ্রুত দুর্গটি দখল করে নেয়, যা তিনি পঞ্চম ক্রুসেডের সময় জেরুজালেমের নামমাত্র রাজার কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান। যাইহোক, এপ্রিল ১২৫০ সালে তার সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার পর, লুইস দামিয়েত্তাকে মুক্তিপণ হিসেবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।

লুইস একটি নতুন ক্রুসেডের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শুনে, মামলুক সুলতান বাইবার, ক্রুসেডারদের শহরের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে, ১২৫১ সালে তার দূর্গটি ধ্বংস করে ১২৬০ সালে পুনরায় নদী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি শক্তিশালী দুর্গ পুনর্নির্মাণ করেন, যা দমইয়াতকে নীল নদের মুখ অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।[৫]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

দমইয়াত এর আসবাবপত্র শিল্পের জন্য খুব বিখ্যাত। মিশরীয় বাজার ছাড়াও এর আসবাবপত্র আরব দেশ, আফ্রিকা, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রায় সারা বিশ্বে বিক্রি হয়। বর্তমানে, একটি খাল নীল নদের সাথে সংযুক্ত আছে, যা আবার এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পরিণত করেছে। নতুন দমইয়াত বন্দরের মাধ্যমে কন্টেইনার পরিবহন করা হয়। দামিয়েত্তা প্রদেশের জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১,০৯৩,৫৮০ (২০০৬) জন। এখানে সেগাস এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) প্ল্যান্ট রয়েছে, এর ৯.৬ মিলিয়ন টন/বছর উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, যা দুইটি ট্রেনের পরিবহন করা হয়। এই প্ল্যান্টটির মালিকানা সেগাসের, যা আবার স্প্যানিশ ইউটিলিটি ইউনিওন ফেনোসা (৪০%), ইতালীয় তেল কোম্পানি এনি (৪০%) এবং মিশরীয় কোম্পানি ইগ্যাস এবং ইজিপিসি (প্রতিটি ১০%) এর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর উৎপাদন স্বাভাবিক নয় কারণ এটি কোনো নিবেদিত ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করে না। এটি মিশরীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। ২০১০ সাল পর্যন্ত, ইমিথেনক্স, একটি কানাডিয়ান মালিকানাধীন কোম্পানি মিথেনক্স কর্পোরেশনের মিশরীয় বিভাগ, একটি ৩৬০০ এমটিপিডি মিথানল প্ল্যান্ট নির্মাণ করছিল। এছাড়াও দমইয়াতে একটি কাঠের কাজের শিল্প আছে এবং শহরটি এর সাদা দমইয়াতি পনির এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য, পাটিসেরি এবং মিশরীয় মিষ্টান্নের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি মাছ ধরার বন্দরও।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Smith, Sir William (১৮৫৭)। Dictionary of Greek and Roman geography। Little, Brown and Co.। পৃষ্ঠা 1086। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১২ 
  2. Siméon Vailhé, "Damietta" in The Catholic Encyclopedia (New York 1908)
  3. "The city of Damietta"। Ask Aladdin। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৭ 
  4. Donkin, Robin A (২০০৩)। Between East and West: The Moluccas and the Traffic in Spices Up to the Arrival of Europeans। Diane Publishing Company। আইএসবিএন 0-87169-248-1 
  5. Houtsma, M. Th (৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৭)। E.J. Brill's First Encyclopaedia of Islam, 1913-1936। BRILL। পৃষ্ঠা 911। আইএসবিএন 978-90-04-08265-6। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১২