মনসুরা, মিশর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মনসুরা, মিশর
المنصورة
Clockwise from top:
মনসুরায় সূর্যাস্ত, মনসুরা শিল্প, পুরাতন রেল সেতু
ডাকনাম: নীলের বধূ
মনসুরা, মিশর মিশর-এ অবস্থিত
মনসুরা, মিশর
Location in Egypt
স্থানাঙ্ক: ৩১°২′২৫″ উত্তর ৩১°২২′৫৮″ পূর্ব / ৩১.০৪০২৮° উত্তর ৩১.৩৮২৭৮° পূর্ব / 31.04028; 31.38278
দেশ মিশর
শাসনব্যবস্থাদাকাহলিয়া
স্থাপিত১২১৯
সরকার
 • গভর্নরআহমেদ এল শারাভী
আয়তন
 • মোট৩৭১ বর্গকিমি (১৪৩ বর্গমাইল)
উচ্চতা১২ মিটার (৩৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১২)
 • মোট৯,৬০,৪২৩
 • জনঘনত্ব২,৬০০/বর্গকিমি (৬,৭০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলপূর্ব ইউরোপীয় সময় (ইউটিসি+২)
এলাকা কোড+(20) 50
ওয়েবসাইটOfficial website

মনসুরা[১] (Al Manṣūra, মিশরীয় আরবি: el.mɑnˈsˤuːɾɑ, : মিশরীয় আরবি: el.mænˈsˤuːɾe) হচ্ছে মিশরের একটি শহর। যার জনসংখ্য প্রায় ৯৬০,৪২৩।[২] এটি দাকাহলিয়া গভর্নরেটের রাজধানী।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

আরবী ভাষায় মনসুরা মানে "বিজয়ী"। সপ্তম ক্রুসেডের সময় ফ্রান্সের নবম লুইসের বিরুদ্ধে এল মানসুরা যুদ্ধে মিশরীয়দের বিজয়ের নামানুসারে এ শহরের নামকরণ করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১২১৯ সালে নীল নদের একটি ফ্যাটমেটিক শাখায় আইয়ুবী রাজবংশের আল-কামিল কর্তৃক অনেক পুরনো গ্রামের উপর (যেমন- আল-বিস্তমির (আরবি: আল-বাদামাস) এবং কাফর আল-বাদামাস (আরবি: কামুতা আল-বাদাম)) মনসুরা প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩] সপ্তম ক্রুসেডের সময় মিশরীয়রা ক্রুসেডারদের পরাজিত করার পর এর নাম করণ করা হয় মনসুরা (ওরফে- বিজয়ী)।

সপ্তম ক্রুসেডে, কেপেতিয়ানরা পরাজিত হয় এবং তাদেরকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়; তাদের পনের থেকে ত্রিশ হাজার লোক যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পরে। ফ্রান্সের নবম লুই মনসুরার প্রধান যুদ্ধে গ্রেফতার হন এবং সুলতানের সচিব ইব্রাহিম ইবনে লোকমানের বাড়িতে বন্দী হন। রাজার ভাইকে একই বাড়িতে বন্দী করা হয়। সুলতান তাদের জীবিকা রসদ সরবরাহ করেন। ইব্রাহিম ইবনে লোকমানের বাড়ি এখন মনসুরার একমাত্র জাদুঘর। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এখানে রয়েছে ফরাসি রাজকীয়দের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যার মধ্যে রয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীর তার ব্যক্তিগত শৌচাগার।[৪]

১৯৭৩ সালের ১৪ অক্টোবর ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের সময় মনসুরায় বিমান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মিশরীয় বিমান ঘাঁটিতে হামলাকারী ইজরায়েলি বিমান বাহিনীর যোদ্ধারা মিশরীয় বিমান বাহিনী দ্বারা আটক হয়।[৫][৬] সেদিন ইজরায়েলের ১৬০ জন জেট ফাইটার মনসুরার উপর ৫৩ মিনিট ধরে যুদ্ধ করে। ইজরায়েলি যুদ্ধবিমানের সংখ্যাগত এবং গুণগত শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও ১৭টি ইজরায়েলি বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। বাকিরা পিছু হটে যায়।[৭][৮] মিশর ছয়টি বিমান হারানোর ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে মাত্র তিনটি ইজরায়েলি আক্রমণে ধ্বংস হয়। মিশরীয় সরকার পরবর্তীতে মনসুরা বিমান যুদ্ধের স্মরণে ২ নভেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির "বিমান বাহিনী দিবস " প্রবর্তন করে। [6]

ভূগোল[সম্পাদনা]

অবস্থান[সম্পাদনা]

মনসুরা নীল নদের দামিয়েতা শাখার বদ্বীপ অঞ্চলে পূর্ব তীরে অবস্থিত। মানসুরা কায়রো থেকে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। শহরের চারদিকে, নীল নদের বিপরীত তীরে তালখা শহর অবস্থিত।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

কোপেন-গেইগার জলবায়ু শ্রেণীকরণ পদ্ধতি এই শহরের জলবায়ুকে উষ্ণ মরু হিসেবে শ্রেণীকরণ করেছে (BWh)।

Mansoura-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১৯.০
(৬৬.২)
১৯.৮
(৬৭.৬)
২২.৪
(৭২.৩)
২৬.৩
(৭৯.৩)
৩২.১
(৮৯.৮)
৩৩.০
(৯১.৪)
৩২.৬
(৯০.৭)
৩৩.৩
(৯১.৯)
৩২.০
(৮৯.৬)
২৮.৬
(৮৩.৫)
২৫.০
(৭৭.০)
২০.৭
(৬৯.৩)
২৭.১
(৮০.৭)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ১২.৯
(৫৫.২)
১৩.৫
(৫৬.৩)
১৫.৮
(৬০.৪)
১৯.০
(৬৬.২)
২৩.৬
(৭৪.৫)
২৫.৭
(৭৮.৩)
২৬.৬
(৭৯.৯)
২৬.৮
(৮০.২)
২৫.৩
(৭৭.৫)
২২.৮
(৭৩.০)
১৯.৪
(৬৬.৯)
১৪.৯
(৫৮.৮)
২০.৫
(৬৮.৯)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ৬.৮
(৪৪.২)
৭.৩
(৪৫.১)
৯.২
(৪৮.৬)
১১.৮
(৫৩.২)
১৫.২
(৫৯.৪)
১৮.৪
(৬৫.১)
২০.৬
(৬৯.১)
২০.৪
(৬৮.৭)
১৮.৭
(৬৫.৭)
১৭.০
(৬২.৬)
১৩.৯
(৫৭.০)
৯.১
(৪৮.৪)
১৪.০
(৫৭.৩)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১৩
(০.৫)

(০.৪)

(০.২)

(০.১)

(০.১)

(০)

(০)

(০)

(০)

(০.২)

(০.৩)
১১
(০.৪)
৫৬
(২.২)
উৎস: Climate-Data.org[৯]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

মনসুরা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাথমিকভাবে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা হিসেবে মনসুরা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১০] অধ্যাপক মোহাম্মদ ঘোনেমেম প্রতিষ্ঠিত মনসুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি ও নেফ্রোলজি সেন্টারকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সেরা কিডনি কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মনসুরায় একটি ক্রীড়া স্টেডিয়াম (মনসুরা স্টেডিয়াম) আছে যেটি মনসুরা ফুটবল দলের ঘরোয়া মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১১]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

মানসুরার জনগোষ্ঠী দ্বারা কথিত মিশরীয় আরবি উপভাষাটি হচ্ছে একটি উত্তর মিশরীয় আরবি উপভাষা। শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামে এই উপভাষার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। যারা বছরের পর বছর ধরে শহরের জনগোষ্ঠীর উপভাষায় অবদান রেখেছে। উচ্চারণের কিছু দিক থেকে এর সাথে আলেকজান্দ্রিয়ান মিশরীয় আরবির কিছু সাদৃশ্য আছে।

মনসুরা জাতীয় জাদুঘর হচ্ছে দার ইবনে লোকমান, যে বাড়িতে সপ্তম ক্রুসেডের সময় ১২৫০ সালে নবম লুইকে কারারুদ্ধ করা হয়। জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে ক্রুসেডারদের মেইল এবং তলোয়ারের স্যুট, সেই সাথে মানচিত্রের সংগ্রহ। বিশাল পেইন্টিং -এ মনসুরার যুদ্ধকে চিত্রিত করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Archived copy"। ২০১৬-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-০৭ 
  2. "citypopulation"www.citypopulation.de। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৩ 
  3. Timm, Stefan (২০০৭)। Das christlich-koptische Agypten in arabischer Zeit। পৃষ্ঠা 366। 
  4. "Al-Makrisi: Account of the Crusade of St. Louis"। ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  5. Al-Ahram weekly ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৫-১৯ তারিখে
  6. Al-Ahrm weekly ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৯-১৩ তারিখে
  7. Photos of the battle ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-১২-২০ তারিখে
  8. "Mansourah air battle, Near true story"। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  9. "Climate: Mansoura - Climate graph, Temperature graph, Climate table"। Climate-Data.org। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৩ 
  10. "Mansourah University official website"। ২০০৮-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-৩১ 
  11. "World Stadiums - El-Mansora Stadium in El-Mansora"www.worldstadiums.com। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮