নিরক্ষীয় শান্ত বলয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিরক্ষীয় অঞ্চলকে ঘিরে মেঘের একটি সরু ফিতার আকারে "আই টি সি জেড"কে দেখা যাচ্ছে।

নিরক্ষীয় শান্ত বলয় (আই টি সি জেড), হল নিরক্ষীয় অঞ্চলে, যেখানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু এক-কেন্দ্রমুখি হয়ে একটি সরু ফিতার মতো স্থানে নিশ্চল অনড় বায়ুপ্রবাহহীন বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি করে,যাকে নাবিকরা খর্বাকৃতি বা নিশ্চল আবহাওয়ার অঞ্চল বলে থাকে। এটি তাপ নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীকে ঘিরে থাকে, যা ঋতু অনুযায়ী অবস্থান কিছু পরিবর্তন করে। এটি যখন ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা অঞ্চলে থাকে, তখন তাকে নিকট-নিরক্ষীয় অবতল বলে। আর যখন, আই টি সি জেড মৌসুমি বায়ুর আবর্তনের কাছে বা তার সাথে মিলে যায়, তখন তাকে মৌসুমীয় অবতল বলা হয়, যা অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার কিছু অংশে প্রায়ই দেখা যায়।

আবহাওয়া বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

১৯২০ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে আই টি সি জেড-কে আন্তঃ-ক্রান্তীয় অগ্রভাগ বা (আই টি এফ), বলে ভাবা হত, কিন্তু ১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে যখন ক্রান্তি বলয়ে বাতাস প্রবাহের এক-কেন্দ্রমুখিতা বিষয়টি উপলব্ধি করা গেল, তখন থেকে, আন্তঃ-ক্রান্তীয় এক-কেন্দ্রমুখি অঞ্চল বা (আই টি সি জেড) পরিভাষাটি ব্যবহার শুরু হল। [১]

এই আই টি সি জেডহল, সাধারণ ভাবে একটি বজ্রগর্ভ মেঘের সরু ফালি বা ফিতার আকার, যা ক্রান্তিরেখায় সারা ভূমণ্ডলকে ঘিরে রাখে। উত্তর গোলার্ধে অয়ন বায়ু, উত্তরপূর্ব দিক থেকে দক্ষিণপশ্চিম দিকে বয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে তা, দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে উত্তরপশ্চিমে বয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তর বা দক্ষিণে 'আই টি সি জেড'এর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে অয়ন বায়ু কোরিওলিস প্রভাবপৃথিবীর আহ্নিক গতি অনুযায়ী, দিক পরিবর্তন করে প্রবাহিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যখন 'আই টি সি জেড'এর অবস্থান নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তরে, তখন দক্ষিণপূর্ব অয়ন বায়ু সেই অঞ্চলে এসে দিক পরিবর্তন করে দক্ষিণপশ্চিম দিকে বইতে থাকে। তড়িৎঝঞ্ঝার কারণে ও সূর্যের তাপে সংক্রামক হয়ে 'আই টি সি জেড'এ উল্লম্ব গতির সৃষ্টি করে ও প্রচুর বাতাসকে আকর্ষণ করে, আর এতেই অয়ন বায়ুর সৃষ্টি হয়। [২] 'আই টি সি জেড', সক্রিয় ভাবে যে অংশটি ঊর্ধ্বমুখী হেডলি সেলের অনুসরণ করে,তখন তা আর্দ্র। আর যে অংশটি নিম্নমুখী তাকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে।

সাধারণত নিরক্ষীয় উত্তাপের ওপর নির্ভর করে,'আই টি সি জেড'এর অবস্থান' যা ঋতুর সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। সমুদ্রের উপরিভাগের বায়ুর উত্তাপ যখন ভূমিভাগের উপরের বায়ুর উত্তাপ থেকে বেশি থাকে, তখন ভূমিভাগের দিকে বায়ুর অভিসরণ অনেক স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। মহাসাগরের ওপরে, যেখানে এক-কেন্দ্রমুখী অঞ্চল বেশি স্পষ্ট, সেখানে ঋতুচক্র আরও সূক্ষ, এবং সেটি সামুদ্রিক তাপমাত্রার বিতরণের কারণে পরিচলন সীমাবদ্ধতা থেকে উদ্ভূত। [৩] কোনো কোনো সময়ে এমনও হয়, দুটি 'আই টি সি জেড' একই সাথে তৈরী হয়েছে,একটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তরে ও আরেকটি দক্ষিণে, যার মধ্যে একটি আরেকটির থেকে বেশি শক্তিশালী। আর যখনি এটা হয়, তখন এদের মাঝখানের মিলনস্থলের মধ্যে উচ্চচাপের একটি সেতু তৈরী হয়।

সমুদ্র বনাম ভূমির 'আই টি সি জেড'[সম্পাদনা]

ঋতু নির্ভর আন্তঃ-নিরক্ষীয় পরিবর্তনশীল কেন্দ্রমুখী অঞ্চল (আই টি সি জেড), কঙ্গো আকাশ পরিসীমা (সি এ বি), নিরক্ষীয় বৃষ্টিপাত বলয়, এবং আফ্রিকার ভূমিভাগের ওপর বায়ুপ্রবাহ (দেজফুলি ২০১৭ থেকে পরিবর্তন করে গৃহীত). এই রেখাচিত্রতে দেখা যাচ্ছে, 'আই টি সি জেড' ও অধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চলের পারস্পরিক সংযুক্তি সমস্ত মহাদেশ জুড়ে নেই।[৪]

'আই টি সি জেড' বলতে নিরক্ষীয় সেই অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে অয়ন বায়ু মুখোমুখি মিলিত হয়। বর্ষা ঋতুর আগমন ও তার পরিমাণ সাধারণ ভাবে, সূর্যের তাপের পরিমাণের ওপর ও 'আই টি সি জেড'-এর উত্তর-দক্ষিণ পরিযানের ওপর নির্ভর করে। এই বিষয়টি নিরক্ষীয় সমুদ্র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সমস্ত মহাদেশে বৃষ্টির অতিরিক্ত মাত্রার কারণ অবশ্যই 'আই টি সি জেড'-এর ওপরে নির্ভর করে হয় না। [৪][৫] এমনকি নিরক্ষীয় ভূমিভাগের বৃষ্টিপাতও শুধুমাত্র ওই মখোমুখি মিলনের কারণেই হয়, তা বলা যায় না। বরং বলা যায়, বৃষ্টিপাতের পরিমাণের বেশি বা কম, তা নির্ভর করে স্থানীয় নানা বিষয়ের ওপর; যেমন, বায়ুমণ্ডলের ঢেউ বা তার নির্গমন মুখের সূক্ষতা, সমুদ্র সন্নিহিত অবস্থান, অঞ্চল প্রভাবিত সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, আর্দ্রতার আবর্তন, নানা প্রাকৃতিক তফাত ও আলবেডো বা আলোর, তাপের প্রতিফলন।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Barry, Roger Graham; Chorley, Richard J. (১৯৯২)। Atmosphere, weather, and climateবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। London: Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-07760-6ওসিএলসি 249331900Atmosphere, weather, and climate. 
  2. "Inter-Tropical Convergence Zone"JetStream - Online School for WeatherNOAA। ২০০৭-১০-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৪ 
  3. "Inter Tropical Convergence Zone (ITCZ) - SKYbrary Aviation Safety"www.skybrary.aero (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১২ 
  4. Dezfuli, Amin (২০১৭-০৩-২৯)। "Climate of Western and Central Equatorial Africa"Oxford Research Encyclopedia of Climate Science (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসবিএন 9780190228620ডিওআই:10.1093/acrefore/9780190228620.013.511 
  5. Nicholson, Sharon E. (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "The ITCZ and the Seasonal Cycle over Equatorial Africa"। Bulletin of the American Meteorological Society99 (2): 337–348। আইএসএসএন 0003-0007ডিওআই:10.1175/bams-d-16-0287.1বিবকোড:2018BAMS...99..337N