রাম দেব রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রাম দেব রায় (বা বীর রাম দেব রায়) ১৬১৭-১৬৩২) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজা হিসাবে ১৬১৭ সালে একটি ভয়াবহ যুদ্ধের পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৬১৪ সালে তার পিতা, পূর্ববর্তী রাজা দ্বিতীয় শ্রীরঙ্গ এবং তার পরিবারকে জগ্গা রায় নেতৃত্বাধীন প্রতিদ্বন্দ্বী দল দ্বারা ভয়ঙ্করভাবে হত্যা করা হয়। জগ্গা রায় ছিল তাদের একজন আত্মীয়। রাম দেবকে, তার বিশ্বস্ত কমান্ডার ও প্রাক্তন রাজা দ্বিতীয় ভেঙ্কটার ভাইসরয় ইয়াচামা নাইডু জেল থেকে লুকিয়ে বের করে আনেন।

গৃহ যুদ্ধ[সম্পাদনা]

জগ্গা রায় দ্বিতীয় ভেঙ্কটার রানীর অবৈধ পুত্রকে রাজা হিসাবে বসানোর দাবি করেন, ইম্পেরিয়াল আর্মি এবং কালাহস্তি নায়েকের নেতৃস্থানীয় সেনাপতি ইয়াচামা নাইডু এর তীব্র বিরোধিতা করেন। যিনি সঠিক উত্তরাধিকারী হিসেবে রাম দেবকে সিংহাসন দেয়ার দাবি করেন। সমগ্র রাজ্য দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায় এবং দুই দলের মধ্যে একটি দীর্ঘ টানা যুদ্ধ লেগে যায়। জগ্গা রায় নিহত হয় এবং নেলোরের দক্ষিণ পশ্চিম গব্বুর রাজ্য (বর্তমান চেন্নাইয়ের চেঙ্গেলপেট) ইয়াচামা নাইডু দ্বারা দখল করা হয়।

টপ্পুরের যুদ্ধ[সম্পাদনা]

পরাজিত জগ্গা রায় জঙ্গলে আশ্রয় নেন। কিন্তু পরে আবার ফিরে আসেন এবং বিজয়নগর বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী জিঙ্গি ও মাদুরাইয়ের নায়েকদের সাহায্য কামনা করেন, যারা চামা নাইডু এবং রামদেবকে আক্রমণ করতে আগ্রহী। ইয়াচামা নাইডু এবং রামদেব তানজোর নায়েকদের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছিলেন, যারা এখনও বিজয়নগরকে তাদের কর্তৃত্ব হিসেবে বিবেচনা করেন।

সৈন্য বাহিনী[সম্পাদনা]

জগ্গা রায় এবং তার মিত্র মাদুরাইয়ের নায়েক, জিঙ্গি এবং চেরা শাসক, মাদুরাইয়ের প্রধান, এবং উপকূল থেকে কিছু পর্তুগীজ মিলে তিরুচিরাপল্লির কাছে একটি বিশাল সৈন্য জড়ো করে। ইয়াচামা ভেলোর থেকে তার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং তাঞ্জোর রাজা রঘুনাথ নায়কের নেতৃত্বে তানজোর বাহিনী নিয়ে রওনা দেয়। ইয়াচামা - তানজোর বাহিনী কর্ণাটক এবং (কিছু হিসাব অনুযায়ী) ডাচ এবং জাফনা সৈন্য দ্বারা আরো শক্তিশালী করা হয়।

উভয় সৈন্যই ১৬১৬ সালের শেষের দিকে তিরুচিরাপল্লি ও গ্র্যান্ড আনিকাটের মধ্যবর্তী কাবেরী নদীর উত্তর তীরে একটি খোলা মাঠে তোপপুরে মিলিত হয়।

ফলাফল[সম্পাদনা]

যুদ্ধে জগ্গা রায়ের সৈন্যরা সাম্রাজ্যবাদী বাহিনীর দ্বারা সৃষ্ট আগ্রাসন সহ্য করতে পারেনি। ইম্পেরিয়াল ক্যাম্পের সেনাপতি ইয়াচামা ও রঘুনাথ অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে তাদের বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন। জগ্গা রায় ইয়াচামা দ্বারা নিহত হয়, এবং তার সেনাবাহিনী র‍্যাংক ভেঙ্গে যায় ও সৈন্যরা পলায়ন করে। জগ্গা রায়ের ভাই ইয়েথিরাজকে তার জীবন বাচানোর জন্য পালাতে হয়েছিল। মাদুরাইয়ের নায়কা প্রধান পালানোর চেষ্টা করেন, তাকে ধাওয়া করেন ইয়াচামার সেনাপতি রাও দামা নয়নি, যিনি তিরুচিরাপল্লির কাছে তাকে ধরে ফেলেন। নায়ক গিঙ্গি এই যুদ্ধে গিঙ্গি ফোর্ট এবং ভেঙ্কটার অবৈধ পুত্র ছাড়া অন্য সকল দূর্গ হারায়। এবং এই অবৈধ পুত্রই সকল ঝামেলার মূল বলে প্রতীয়মাণ হয়। এই বিজয় উদ্‌যাপন করেন তাঞ্জাবুর নায়েক ও ইয়াচামানেদুর নেতৃত্বে ইম্পেরিয়াল আর্মি দ্বারা উদযাপিত হয়। তারা বিজয়ের স্তম্ভ বপন করে এবং ১৬১৭ সালের প্রথম দিকে রাম দেব রায় হিসেবে রাম দেবকে মুকুট দেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় রাম দেব রায়ের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।

তোপপুর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জগ্গা রায়ের ভাই ইয়েথিরাজা গিঙ্গি নায়কের সাথে জোট বেঁধে তানজোর আক্রমণ করেন, কিন্তু পরবর্তীতে পরাজিত হয়ে বন্দী হন। ইয়েথিরাজা রাম দেব রায়ের সাথে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে তার সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেন। ১৬১৯ সালে অবৈধ পুত্রের মৃত্যুর পর রাজার জন্য এই বিরূপ পরিস্থিতির নিষ্পত্তি হয়।

কুর্নুলের ক্ষতি[সম্পাদনা]

বিজাপুর সুলতান, বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ১৬২০ সালে কুর্নুল আক্রমণ করেন। কিন্তু পরাজিত হন এবং শুধুমাত্র ১৬২৪ সালে ফিরে আসার জন্য ঐ অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখল করে ফেরত পাঠানো হয়।

ইয়াচামা[সম্পাদনা]

এরপর ইয়াচামা নাইডু রাজ্যের সামরিক গভর্নর ইয়েথিরাজের মেয়ের সাথে রাম দেবের বিয়ের বিরোধিতা করেন। রাজাকে তিরস্কার করা হলেও তিনি ইয়েথিরাজার মেয়েকে বিয়ে করতে যান। ইয়াচামা অপমান অনুভব করেন এবং বয়সের অজুহাতে তাঁকে রাজকীয় সেবা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রামদেবকে অনুরোধ করেন। রাম দেব রায়ের বর্তমান শ্বশুর ইয়েথিরাজা যখন গোবুরির জমি দাবি করেন, তখন ইয়াচামা তারবসাথে সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, এবং ১৬২৯ সালে তানজোর ও গিঙ্গি বাহিনীর সহায়তায় ইয়াচামার অঞ্চল সাম্রাজ্যবাদী সেনাবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। ইয়াচামার বাহিনী সংখ্যায় কম হলেও কঠিন লড়াই করে। দীর্ঘ অবরোধের পর ইয়াচামা গোবুরির জমি ইয়েথিরাজার কাছে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন। পুলিকাট, চেঙ্গালপাট্টু এবং মাদুরান্তিকাম অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে ভেলোরের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ইয়াচামাকে ভেঙ্কটাগিরি শাসন করার অনুমতি দেওয়া হয় কিন্তু তিনি উদয়পালিয়াম প্রধানতাইন রক্ষায় তার জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

রাম দেব রায়ের কোন ভাই এবং পুত্র না থাকায় আলিয়া রাম রায়ের নাতি, পেডা ভেঙ্কটা রায়কে (তৃতীয় ভেঙ্কটা) উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। তৃতীয় ভেঙ্কটা উত্তরসুরি হিসাবে আনেকোন্ডা শাসন করেন। রাম দেব রায় ১৬৩২ সালে ১৫ বছরের একটি ঝামেলাপূর্ণ শাসনের পর ৩০ বছর বয়সে মারা যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Rao, Velcheru Narayana, and David Shulman, Sanjay Subrahmanyam. Symbols of substance : court and state in Nayaka period Tamilnadu (Delhi ; Oxford : Oxford University Press, 1998) ; xix, 349 p., [16] p. of plates : ill., maps ; 22 cm. ; Oxford India paperbacks ; Includes bibliographical references and index ; আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৪৩৯৯-২.
  • Sathianathaier, R. History of the Nayaks of Madura [microform] by R. Sathyanatha Aiyar ; edited for the University, with introduction and notes by S. Krishnaswami Aiyangar ([Madras] : Oxford University Press, 1924) ; see also ([London] : H. Milford, Oxford university press, 1924) ; xvi, 403 p. ; 21 cm. ; SAMP early 20th-century Indian books project item 10819.
  • K.A. Nilakanta Sastry, History of South India, From Prehistoric times to fall of Vijayanagar, 1955, OUP, (Reprinted 2002) আইএসবিএন ০-১৯-৫৬০৬৮৬-৮.
পূর্বসূরী
Sriranga II
Vijayanagar empire
1617–1632
উত্তরসূরী
Venkata III