তৃতীয় শ্রীরঙ্গ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তৃতীয় শ্রীরঙ্গ
পূর্বসূরিপেডা ভেঙ্কটা রায়

তৃতীয় শ্রীরঙ্গ (জন্ম- ১৬৪২, মৃত্যু- ১৬৭৮ বা ১৬৮১) ছিলেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শেষ শাসক। যিনি তাঁর চাচা তৃতীয় ভেঙ্কটার মৃত্যুর পর ১৬৪২ সালে ক্ষমতায় আসেন। তিনি আলিয়া রাম রায়ের মহান নাতি ছিলেন।

প্রাথমিক বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

রাজ সিংহাসনে বসার আগে, তৃতীয় শ্রীরঙ্গ তার চাচা তৃতীয় ভেঙ্কটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তিনি বিজাপুর সুলতানের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ১৬৩৮ সালে এবং চন্দ্রগিরি - ভেলোরে তৃতীয় ভেঙ্কটাকে আক্রমণ করেন। ১৬৪২ সালে এই দুটি আক্রমণের অন্য একটি আক্রমণ ভেঙ্কটা তৃতীয় -এর সেনাবাহিনী দ্বারা পরাজিত হয়। এদিকে তিনি মাদ্রাজের কাছে গোলকোন্ডা সৈন্যদেরও মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই তৃতীয় ভেঙ্কটা মারা যান। এরপর তৃতীয় শ্রীরঙ্গ যিনি বিজাপুর সেনাবাহিনীর সাথে ছিলেন। তিনি তাদের ছেড়ে ভেলোরে ফিরে আসেন এবং নিজেকে বিজয়নগরের রাজা করেন। তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে আসেন।[১]

রাজত্ব[সম্পাদনা]

তখনকার অনেক অভিজাত লোক যেমন গিঞ্জির নায়কা এবং মাদ্রাজের প্রধান দামারলা ভেঙ্কটাদ্রি নায়ক, প্রাক্তন রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে অশান্তির সৃষ্টি করার জন্য তার অপছন্দ ছিল। বিজাপুর ও গোলকোন্ডার সুলতানদের মধ্যে বিবাদ শ্রীরঙ্গকে কিছুসময়ের জন্য সাহায্য করে। ১৬৪৪ সালে গোলকোন্ডার সুলতান একটি বিশাল সৈন্য বাহিনী সঙ্গে নিয়ে আবির্ভূত হয়, কিন্তু তৃতীয় শ্রীরঙ্গ তাদেরকে পরাজিত করেন। এরপর তৃতীয় শ্রীরঙ্গ নিজেকে দক্ষিণ নায়কদের কাছ থেকে টাকা দাবি করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী অনুভব করে, দক্ষিণে মিছিল করে। তিনি ১৬৪০ -এর দশকে চন্দ্রগিরি দুর্গের রাজা মহলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ এজেন্টদের ফোর্ট সেন্ট জর্জ (মাদ্রাজ) -এর স্থান প্রদান করেন। জায়গাটি বর্তমান তিরুপাঠি।[২]

ভিরিঞ্চিপুরামের যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৬৪৬ সালে তৃতীয় শ্রীরঙ্গ মহীশূর, গিঙ্গি ও তানজোরের সহায়তায় একটি বৃহৎ সৈন্যদল সংগ্রহ করেন এবং গোলকোন্ডা বাহিনীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

মুসলিম বাহিনী হেরে যাচ্ছিল। কিন্তু পরে যখন ডেকান থেকে অতিরিক্ত সৈন্য বাহিনী তাদের সাথে একত্রিত হয় তখন তারা এগিয়ে যায়। যুদ্ধ ১৬৫২ পর্যন্ত চলতে থাকে। ১৬৪৯ সালে থিরুমালাই নায়ক বিজাপুর শাসকের সমর্থনে তার একটি সৈন্য বাহিনী পাঠান। কিন্তু গিঞ্জি দুর্গে একত্রিত হওয়ার পর যখন বিজাপুর এবং গোলকোন্ডা তাদের চুক্তি করে তখন মাদুরাই বাহিনী একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং জিঙ্গি সেনাবাহিনীর পক্ষ নেয়। এর ফলে ১৬৪৯ সালে গিঙ্গি নায়ক শাসন থেকে নির্বাসিত হন।

১৬৫২ সালে, তৃতীয় শ্রীরঙ্গের অধীনে শুধুমাত্র ভেলোর দুর্গই অবশিষ্ট থাকে, এটিও অবশেষে গোলকোন্ডা বাহিনী দ্বারা দখল করা হয়। ততক্ষণে তিনি শুধুমাত্র মহীশূরের সমর্থন পেয়েছিলেন, যখন তানজোর মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং মাদুরাই নায়ক মুসলিম বাহিনীকে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন, কিন্তু তিনজনই তাদের রাজ্য ধরে রেখেছিলেন।

শেষ বছর[সম্পাদনা]

তৃতীয় শ্রীরাঙ্গা তার এক ভাসাল প্রধান শিবাপ্পা নায়কের সমর্থনে তার শেষ বছর অতিবাহিত করেন, এবং তখনও তিনি মুসলিম বাহিনীর কাছ থেকে ভেলোর পুনরুদ্ধারের আশা করছিলেন। তৃতীয় শ্রীরঙ্গের প্রতি থিরুমালাই নায়কের বিশ্বাসঘাতকতা মহীশূরশাসক প্রথম কান্তিরাভা নারাসারাজা, মাদুরাই -এর সঙ্গে একটি ধ্বংসাত্মক ধারাবাহিক যুদ্ধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে মহীশূর কোয়েম্বাটুর এবং সালেম অঞ্চল দখল করে, যা ১৮০০ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

এরপরও মহীশূরের শাসক প্রথম কান্তিরাভা নরসারাজ শ্রীরঙ্গকে নাম সর্বস্ব সম্রাট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। শ্রীরঙ্গ ১৬৭৮ বা ১৬৮১ সালে একজন মুকুট বিহীন সম্রাট হিসাবে মারা যান। এর মধ্য দিয়ে ভারতে তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা বিজয়নগর শাসনের শেষ হয়। শ্রীরঙ্গর একমাত্র কন্যা নরসিংহচার্যের বংশধর শ্রীবল্লভকে বিয়ে করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Copley, Antony R. H. (১৯৮৬)। C. Rajagopalachari, Gandhi's southern commander। Indo-British Historical Society। পৃষ্ঠা 4। It was a Pretender of Vijayanagara, Sri Ranga Raya III (also known as the Raja of Chandragiri and Nayaka of Vellore) who had brought the English Company into South India and had given it title to its first petty principality. It was the Baniyas (Balijas, Chettiars, Komartis, &c) and Brahmans of Tirupati who had provided the Company with the coins from the mints of Sri Venkateswara at Tirupati. 
  2. asi। "Raja & Rani Mahal, Chandragiri Fort"Archeological Survey of India। Archeological Survey of India। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]