ক্ষুদ্র ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মাইক্রোইতিহাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ক্ষুদ্র ইতিহাস

ক্ষুদ্র ইতিহাস বা মাইক্রোহিস্টরি (Microhistory) হচ্ছে ইতিহাসের একটি ঘরানা যা গবেষণার ছোট একক গুলোতে যেমন একটি কর্মশালা, সম্প্রদায়, ব্যক্তি বা কোনও বন্দোবস্ত ইত্যাদির দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করে। চার্লস জয়নারের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে, এটির উচ্চাকাঙ্ক্ষায় অবশ্য ক্ষুদ্র ইতিহাসকে সাধারণ বিষয়বস্তু অধ্যয়ন থেকে যতটা সম্ভব আলাদা করা যায়, কারণ ক্ষুদ্র ইতিহাস "ছোট জায়গায় বড় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা" করতে আগ্রহী।[১] এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

ক্ষুদ্র ইতিহাস বা মাইক্রোহিস্টরি ১৯৭০ এর দশকে ইতালিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।[২] এই পদ্ধতির অন্যতম পথিকৃৎ জিওভান্নি লেভির মতে, এটি বিদ্যমান ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুভূত সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে শুরু হয়েছিল। [৩] মাইক্রোহিস্টোরির আরেক প্রতিষ্ঠাতা কার্লো গিঞ্জবার্গ লিখেছেন যে তিনি সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালের দিকে শব্দটি শুনেছিলেন এবং তার পরেই লেভি এবং সাইমোনা সেরুটির সাথে মাইক্রোস্টোরিতে কাজ শুরু করেছিলেন, মাইক্রোস্টোরি হলো ক্ষুদ্র ইতিহাসের কাজের একটি সিরিজ।[৪]

"মাইক্রোহিসটরি" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৫৯ সালে, যখন আমেরিকান স্টুয়ার্ট পিকেটস চার্জ:আ মাইক্রোহিস্টোরি অভ দ্য ফাইনাল অ্যাটাক অন গেটিসবার্গ, জুলাই ৩, ১৮৬৩ (Pickett's Charge: A Microhistory of the Final Attack on Gettysburg) প্রকাশ করেছিলেন, এতে গেটিসবার্গের যুদ্ধের চূড়ান্ত দিনের গল্পটি বর্ণনা করা হয়েছে।[৪] আরেকটি প্রাথমিক ব্যবহার করেছিলেন অ্যানালিস ঐতিহাসিক ফার্নানড ব্রুডেল, যার জন্য গ্রামীণ ইতিহাসের বিষয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা ছিল, তিনি বিভিন্ন কর্মশালার ইতিহাস নিয়ে অত্যধিক উদ্বিগ্ন ছিলেন। [৪] এই শব্দটির তৃতীয় প্রাথমিক ব্যবহারটি ছিল লুইস গঞ্জালেসের ১৯৬৮ সালের পুয়েবলো এন ভিলো: মাইক্রোহিস্তোরিয়া দে সান হোসে দে গ্রাসিয়া (Pueblo en vilo: Microhistoria de San José de Gracia) শিরোনামে । [৪]

অভিলক্ষ্য[সম্পাদনা]

ক্ষুদ্র ঐতিহাসিক বা মাইক্রোহিস্টোরিকাল পদ্ধতির সবচেয়ে স্বতন্ত্র দিকটি হলো তদন্তের ছোট স্কেল। [২] সামাজিক বিজ্ঞান দ্বারা তৈরি সাধারণীকরণগুলোর প্রতিক্রিয়ায় ও পরিবর্তে ক্ষুদ্র ঐতিহাসিকরা (মাইক্রোহিস্টোরিয়ান) সমাজের ছোট ছোট ইউনিটগুলিতে মনোনিবেশ করেন, যেখানে সামাজিক বিজ্ঞান এইসব বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে।[৫] উদাহরণস্বরূপ, গিঞ্জবার্গের ১৯৭৬ সালের দ্য পিজ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্মস – "সম্ভবত ক্ষুদ্র ইতিহাসের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বহুল পঠিত রচনা" [২] – যাতে ষোড়শ শতাব্দীর একজন ইতালীয় মিলশ্রমিক মেনোচিওর জীবন নিয়ে অনুসন্ধান করে। ব্যক্তিক ক্ষুদ্র ঐতিহাসিক কাজ হলো উঠতে-বসতে উদ্বিগ্ন থাকা যাকে রবার্ট ট্রিসট্যানো "ছোট মানুষ" হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন, আরো ভেঙ্গে বললে 'ধর্মান্ধদের মতো'। [২]

কার্লো গিঞ্জবার্গ লিখেছেন যে, "ক্ষুদ্র ইতিহাসের একটি মূল নীতি ঐতিহাসিক বিবরণের অংশ ল্যাকুনির মতো উৎসগুলোতে বাঁধার সৃষ্টি করে।" [৪] এরই সাথে সম্পর্কিতভাবে, লেভি বলেছেন যে গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষুদ্র ইতিহাসের বিবরণের অংশ হয়ে যায়। [৩] ক্ষুদ্র ঐতিহাসিক পদ্ধতির প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ইতিহাসের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিক হলো অভিজাত ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ এবং [২] ইতিহাসের ক্ষুদ্র ও সামগ্রিক স্তরের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ। [২]

উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র ইতিহাসবেত্তাগন[সম্পাদনা]

▪ ভোল্ফগাং বেরিনজার
▪ জারুস্লাভ সেচুরা
▪ সাইমনা সেরুটি
▪ অ্যালেই কোর্বিন
▪ জন জে. কারি
▪ রবার্ট ডার্নটন
▪ নাটালি যেমোন ডেভিস
▪ থিও ভেন ডারসেন
ক্লিফোর্ড গার্টস
▪ কার্লো গিঞ্জবার্গ
▪ লুইস গঞ্জালেস
▪ মাওরিসিও গ্রিবাদি
▪ ক্রেইগ হ্যার্লাইন
▪ সিনথিয়া এ. কেইর্নার
▪ মার্ক কার্ল্যানস্কাই
▪ ইমানুয়েল লি রয় ল্যাডুরাই
▪ জিওভান্নি লেভি
▪ সিগারাওর গিলফি ম্যাগনুশন
▪ লুইস মোট
▪ লেসলি পিয়ের্স
▪ ডেটলেভ পিউকার্ট
▪ ওসভালডো র‍্যাগিও
▪ জ্যাকুইস র‍্যাভেল
▪ গুইদো রুগিয়েরো
▪ ডেভিড সেবিন
▪ মিমি শেলার
▪ জোনাথন ডি. স্পেন্স
▪ অ্যালান টেলর
▪ স্টেলা টিলিয়ার্ড
▪ ই. পি. থম্পসন
▪ আলফ্রেড এফ. ইয়ং
▪ ক্যারোলিম স্টিডম্যান
▪ লরেল থাচার ভোলরিখ
▪ রবার্ট বিকার্স

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Joyner, C. W. Shared Traditions: Southern History and Folk Culture, (Urbana: University of Illinois, 1999), p. 1.
  2. Tristano 1996
  3. Burke 1991
  4. Ginzburg, Tedeschi এবং Tedeschi 1993
  5. Magnússon, Sigurdur Gylfi (২০০৩)। "'The Singularization of History': Social History and Microhistory within the Postmodern State of Knowledge": 709। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]