বতসোয়ানার ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

"বাতসোয়ানা" হলো বতসোয়ানার প্রধান জাতিসত্তা। তবে বতসোয়ানার সকল অধিবাসীদের নির্দেশ করতে "বাতসোয়ানা" কথাটি ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে তারা পশুচারণ ও কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত।

ইউরোপীয় আগমনের পূর্বে[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের অক্টোবরে গবেষকরা বলেন, ২,০০,০০০ বছর আগে বতসোয়ানায় আধুনিক মানবজাতির উদ্ভব ঘটে। [১] ২০০-৫০০ খ্রিস্টাব্দে কাতাঙ্গা ( বর্তমানে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রজাম্বিয়ার বান্টুভাষী লোকেরা লিমপোপো নদী অতিক্রম করে বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছায়।[২]

বান্টু জাতিসত্তার মানুষদের মধ্যে "এনগুনি" গোষ্ঠীর সদস্যরা পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বসবাস শুরু করে। অন্যদিকে,সতো-সিওয়ানা গোষ্ঠীর মানুষরা দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যভাগের উঁচুভূমিতে বসবাস করতে শুরু করে।

১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই বান্টুরা দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলকে সফলভাবে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়। বান্টুভাষীরা অত্যন্ত বিকেন্দ্রীকৃত একটি সমাজ গড়ে তুলে। এ সমাজ এক একটি ক্রাল এ বিভক্ত ছিল। প্রতিটি ক্রালের একজন প্রধান ছিলেন, যিনি বান্টু জাতির প্রধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেন।

নিল পারসনের বতসোয়ানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস অনুযায়ী,

১০৯৫ সালের দিকে দক্ষিণ পূর্ব বতসোয়ানায় একটি নতুন ধরনের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা সূচিত হয়। গ্যাবান গ্রামের নিকটে মোরিতসানে পাহাড়ের মৃৎশিল্প এই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার এক অন্যতম পরিচায়ক। পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশেলে মৃৎশিল্প এখানে অনন্য মাত্রা লাভ করে। খালাগারে গোত্রতন্ত্রের সাথে মোরিসানে সংস্কৃতির একটি নিবিড় সম্পর্ক ছিল। খালাগারে গোত্রের মানুষরা পশুপালন ও শিকারে দক্ষ ছিল।

বতসোয়ানার উত্তর পূর্বাঞ্চলে সেরোয়ায় একটি সমৃদ্ধ কৃষি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। তুতসে পাহাড়ে বসবাসকারী রাজারা এর দেখভাল করতেন। পূর্বে কালাহারিতে শিকার করার পাশাপাশি উত্তরে লিমপোপো নদীপথে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেও রাজ্যের লোকজন দক্ষ হয়ে উঠেছিল। ৭০০ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রা হিসেবে সামুদ্রিক খোলসের ব্যবহার শুরু হয়।

১২০০-১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাপুংবে রাজ্য তুতসি রাজত্ব নিজেদের করায়ত্ত করে নেয়। লিমপোপো-সাশো নদীর মোহনায় একটি পাহাড়ে মাপুংবে রাজ্য গড়ে ওঠেছিল। ১০৫০ সালের দিকে তারা সোনার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, এবং এটাই তাদের আর্থিক সমৃদ্ধির নিয়ামকরূপে আবির্ভূত হয়। পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ে মহারাজ্য (Great State of Zimbabwe) সোনার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করলে মাপুংবে রাজত্ব বিলীন হয়ে যায়। জিম্বাবুয়ে মহারাজ্য থেকে পরবর্তীতে বুতোয়া রাজ্যের সৃষ্টি হয়। বুতোয়া রাজ্য ১৪৫০ সাল থেকে লবণ ব্যবসায় প্রাধান্য বিস্তার করে।

— নিল পার্সনস, বতসোয়ানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস[৩]

বেচুয়ানাল্যান্ড[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বতসোয়ানার শোনা অধিবাসী এবং কালাহারি মরুভূমি থেকে আগত এনডেবেলেদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।[৪] বতসোয়ানার রাজা তৃতীয় খামা, প্রথম বাথোয়েন এবং প্রথম সেবেলে লন্ডন গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৮৮৫ সালের ৩১শে মার্চ ব্রিটিশ সরকার বেচুয়ানাল্যান্ডকে একটি সুরক্ষিত রাজ্য বা প্রোটেকটোরেট ঘোষণা করে। এর উত্তরাংশের ভূখণ্ডটিই আজকের বতসোয়ানা।

১৯১০ সালে কতগুলো ব্রিটিশ উপনিবেশের সমন্বয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গঠিত হয়। বেচুয়ানাল্যান্ড, বাসুতোল্যান্ড (লেসোথো) ও এসওয়াতিনি এদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিটিশ সরকারের কাছে বারবার ঐ ভূখণ্ডগুলো হস্তান্তরের অনুরোধ জানায়, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তাতে কর্ণপাত করে না। ১৯৪৮ সালে বর্ণবাদী ন্যাশনাল পার্টির বিজয় ও ১৯৬১ সালে কমনওয়েলথ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যাওয়ার ফলে ভূখণ্ডগুলোর ঐ দেশের সাথে যুক্ত হওয়ার সকল সম্ভাবনা অন্তর্হিত হয়।

১৯২০ সালে আফ্রিকান ও ইউরোপীয়দের প্রতিনিধিত্বকারী দুইটি প্রতিনিধি পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৩৪ সালে জারি করার একটি ঘোষণাপত্র গোত্রগুলোর দায়িত্ব ও ক্ষমতার পরিধি নির্ধারণ করে দেয়। ১৯৬১ সালে প্রণীত সংবিধানে একটি পরামর্শসভা গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। [৫]

স্বাধীন বতসোয়ানা[সম্পাদনা]

১৯৬৬ সালের জুনে ব্রিটেন বতসোয়ানার স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নেয়। ১৯৬৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর বতসোয়ানা স্বাধীনতা লাভ করে। ঐ দিন বতসোয়ানায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে সেরেৎসে খামা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮০ সালে মারা যান। উপরাষ্ট্রপতি কেতুমিলে মাসিরে পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে মাসিরে পদত্যাগ করলে ফেটাস মোগায়ে ২০০৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে ইয়ান খামা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে খামার পদত্যাগের পর মোইসি মাসিসি বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

বতসোয়ানার মানুষ[সম্পাদনা]

বতসোয়ানার মানুষদের একবচনে মোতসোয়ানা ও বহুবচনে বাতসোয়ানা বলা হয়। বতসোয়ানার ৮টি প্রধান গোত্রের প্রত্যেকটিই "গোত্রপ্রধানদের সভায়" প্রতিনিধি প্রেরণ করে থাকে। [৬]

জাতিসত্তা[সম্পাদনা]

বতসোয়ানায় অবস্থিত জাতিসত্তাগুলো নিম্নরূপ :

  1. সোয়ানা - সর্ববৃহৎ জাতিসত্তা।
  2. বাকালাঙ্গা- দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জাতিসত্তা । তারা কালাঙ্গা ভাষায় কথা বলে। বতসোয়ানার উত্তর পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিম জিম্বাবুয়েতে তাদের বসবাস। এরা বুতোয়াদের বংশধর।[৭]
  3. হেরেরো- হেরেরোরা নামিবিয়ার বাসিন্দা ছিল। জার্মানরা তাদের ভূমি কেড়ে নিতে শুরু করলে তারা এর প্রতিবাদ করে। পরিণামে জার্মানরা সেখানে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। যার ফলে তারা বতসোয়ানায় পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
  4. বাসুবিয়া- নদীমাতৃক জনগোষ্ঠী। চোবে ও লিনিয়াতি নদীর পাড়ে তারা বসতি স্থাপন করে। বায়েইদের তারা জোরপূর্বক চোবে অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে।
  5. বায়েই- নামিবিয়া ও অ্যাঙ্গোলায় তাদের আদি নিবাস। বাসুবিয়াদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে তারা ওকাভাঙ্গো ব-দ্বীপে বসবাস শুরু করে।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]