সর্বপ্রধান নগরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রাইমেট শহরবিহীন দেশগুলি

কোনও দেশের সর্বপ্রধান নগরী (ইংরেজি: Primate city, প্রাইমেট সিটি) বলতে এমন একটি নগরীকে বোঝায় যার আকার জনসংখ্যার বিচারে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর দ্বিগুণেরও বেশি এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে নগরীটি দেশের অন্য সব নগরের সাথে অনুপাতের তুলনায় অনেক বেশি প্রাধান্য বা আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।

সর্বপ্রধান নগরীগুলি সাধারণত উপনিবেশবাদ-পরবর্তী যুগে গড়ে উঠেছে। ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপীয় সরকারগুলি সাধারণত তাদের সমস্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটিমাত্র আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করত। ফলে সেই সময়ে সামঞ্জস্যহীনভাবে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় এলাকাতে পৌর অবকাঠামোগুলি নির্মিত হয়। বি-উপনিবেশীকরণের পরে অবকাঠামোগুলি ঐসব নগরীতে থেকে যায় এবং এগুলি সর্বপ্রধান নগরী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সর্বপ্রধান নগরীর সুবিধা হল এতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুঞ্জীভূত হয়। এতে পণ্য ও সেবার একটি বৃহৎ বাজারের সৃষ্টি হয়। জনসংখ্যা বেশি বলে উচ্চমানের পণ্য ও সেবার (যেমন শিক্ষা) চাহিদা থাকে। তথ্য ও ধারণার প্রবাহ অনেক বেশি থাকে। কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সর্বপ্রধান নগরীটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।

সর্বপ্রধান নগরীর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। অসম বিনিয়োগের কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। সম্পদ ও ক্ষমতার বণ্টন অসম হয়। পরিবহন ব্যবস্থা সব অঞ্চলে সমান প্রবেশ্যতা দিতে পারে না। টেকসই পৌর উন্নয়ন সম্ভব হয় না। বস্তি ও পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়, যেগুলি সমাধানের জন্য জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ পড়ে। সর্বপ্রধান নগরীতে কোনও বিপর্যয় ঘটলে সারা দেশে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে মেধা, বিনিয়োগ ও শ্রম পাচার ঘটে।