অর্ফিকবাদ (ধর্ম)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অনেক শেষ-রোমান যুগের ভিলা বা বাড়িগুলোতে অরফিক মোজাইকগুলি পাওয়া গিয়েছিল

প্রাচীন গ্রিক এবং হেলেনবাদী বিশ্বে,[১] পাশাপাশি থ্রেসীয়দের থেকে[২] উদ্ভূত গ্রিক পাতালপুরীতে অবতরণ ও উত্তোরণ করা পৌরাণিক চরিত্র ও কবি অরফিয়াস সংক্রান্ত লিখিত সাহিত্যের সাথে সম্পর্কিত[২] ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলনের একটি সমষ্টিকে অর্ফিকবাদ (Orphism, কম ক্ষেত্রে Orphicism; প্রাচীন গ্রিকὈρφικά ) নামটি প্রদান করা হয়।[৩] অর্ফিকবাদীরা ডায়নিসাসকে (যিনি একবার পাতালপুরীতে নেমে ফিরে এসেছিলেন) এবং পার্সেফোনকে (যিনি বার্ষিকভাবে একটি মৌসুমের জন্য পাতালপুরীতে নামেন ও তারপর ফিরে আসেন) সম্মান জানায়। অর্ফিকবাদকে পূর্বের ডায়োনিসীয় ধর্মের সংস্কার হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে প্রাক-সক্রেটীয় দর্শনের একটি অংশের উপর ভিত্তি করে ডায়োনিসাস সম্পর্কিত পুরাণের পুনর্পাঠ এবং হেসিওডের থিওগনি এর পুনর্বিণ্যাস করা হয়েছিল।[৪]

অরফিজমের কেন্দ্রীয় কেন্দ্রবিন্দু হল টাইটানদের হাতে দেবতা ডায়োনিসাসের দুর্ভোগ ও মৃত্যু, যা অর্ফিকবাদের কেন্দ্রীয় পুরাণের ভিত্তি রচনা করে। এই পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শিশু ডায়োনিসাসকে মেরে ফেলা হয়, ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং টাইটানরা তাকে খেয়ে ফেলে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, জিউস টাইটানদের বজ্র দিয়ে আঘাত করে ও তাদেরকে ছাইয়ে পরিণত করে। এই ছাই থেকে মানবতার জন্ম হয়। অর্ফিকবাদ অনুসারে এই পৌরাণিক কাহিনীটি মানবতাকে দ্বৈত প্রকৃতির বলে বর্ণনা করে: এর একটি প্রকৃতি হল দেহ (সোমা বা sōma), যা মানুষ টাইটানদের কাছ থেকে লাভ করেছে এবং আত্মা (সাইকি psychē) যা মানুষ লাভ করেছে ডায়োনিসাসের কাছ থেকে। [৫] টাইটানীয় বস্তুগত অস্তিত্ব থেকে মুক্তি অর্জন করার একজনকে ডায়োনিসীয় রহস্যবাদে দীক্ষা নিতে হবে এবং টেলেটে নামক একটি ধর্মীয় আচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে যা তাকে পবিত্র করবে এবং দুঃখ ও জরা থেকে মুক্তি এনে দেবে।[৬] অর্ফিকবাদীরা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরে তারা অরফিয়াস এবং অন্যান্য বীরদের সাথে অনন্তকাল কাটাবে। তাদের মতে যারা এই রহস্যবাদে দীক্ষিত হয়নি (এমিয়েত্রি বা amyetri) তারা মুক্তি পাবে না, বরং চিরকাল ধরে তাদের পুনর্জন্ম ঘটতে থাকবে।[৭]

অর্ফিকবাদীরা দীক্ষা ও আচারের মাধ্যমে পবিত্রতা আর্জনের পর সেই পবিত্রতাকে বজায় রাখার জন্য আধ্যাত্মিক দূষণ থেকে মুক্ত একরকম সন্ন্যাস জীবনযাপন করত। তারা কঠোর নিরামিষাসী জীবন পালন করত, এমনকি নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের শিমও (bean) ভক্ষণ করত না।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

অর্ফিকবাদ নামটি কিংবদন্তি কবি-নায়ক অর্ফিয়াসের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যাকে ডায়োনিসীয় রহস্যবাদের উদ্ভাবক হিসেবে দাবি করা হয়। [৮] তবে প্রথম দিকের উৎস্য এবং মূর্তিতত্ত্বে অরফিয়াস ডায়োনিসাসের চেয়ে অ্যাপোলোর সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তার পৌরাণিক কাহিনীটির কয়েকটি সংস্করণ অনুসারে তিনি ছিলেন অ্যাপোলোর পুত্র এবং তার জীবনের শেষদিকে তিনি অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেকে কেবল অ্যাপোলোর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। [৯]

বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে চিহ্নিত অর্ফিকবাদী বিশ্বাসের কবিতাগুলোর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে[১০] বা অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর, এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের গ্রাফিতিগুলো "অর্ফিকবাদীদের" ("Orphics") নির্দেশ করে।[১১] দারভেনি প্যাপিরাস অনুসারে অর্ফীয় পুরাণ খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের শেষের দিকে রচিত হয়েছিল,[১২] এবং এটি এর চেয়েও পুরনো হতে পারে। অর্ফীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন হেরোডোটাস, ইউরিপিদেস এবং প্লেটো দ্বারা সত্যায়িত হয়। প্লেটো "অর্ফিউস-দীক্ষাদাতা" (Ὀρφεοτελεσταί) এবং সংশ্লিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যদিও "অর্ফীয়" সাহিত্য সাধারণভাবে এই আচার-অনুষ্ঠানের সাথে কতদূর সম্পর্কিত তা নিশ্চিত নয়।[১৩]

বার্ট্র্যান্ড রাসেল (১৯৪৭) সক্রেটিস সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন

তিনি কোনও গোঁড়া অর্ফিকবাদী নন; তিনি কেবলমাত্র এর মৌলিক মতবাদগুলোকে গ্রহণ করেন, এর কুসংস্কার ও পবিত্রতার অনুষ্ঠানকে নয়। [১৪]

পিথাগোরীয়বাদের সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

অর্ফিকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন পিথাগোরীয়বাদের মধ্যে সমান্তরাল উপাদান রয়েছে, এবং বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, পিথাগোরাস বা পিথাগোরীয়রা নিজেরাই প্রারম্ভিক অর্ফিকবাদী রচনাগুলো তৈরি করেছিলেন; অন্য সূত্র অনুসারে, পরবর্তী দার্শনিকগণ বিশ্বাস করতেন, পিথাগোরাস অর্ফিকবাদের একজন দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন। পিথাগোরীয়বাদ ও অর্ফিকবাদের মধ্যে কোনটি কোনটিকে প্রভাবিত করেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। [১৫] কোন কোন পণ্ডিত বলেন, অর্ফিকবাদ ও পিথাগোরীয়বাদ দুটি ভিন্ন ধারা হিসেবে শুরু হয়, যা পরবর্তীতে কিছু সাদৃশ্যের জন্য একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় বা এদের আলাদা সত্তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অন্যেরা যুক্তি দেন, এই দুটো ধারার উৎপত্তি একই, এবং এদেরকে একই সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যাকে “অর্ফিকো-পিথাগোরীয়বাদ” বলা হয়। [১৬]

পিথাগোরীয়বাদ অর্ফিকবাদের প্রত্যক্ষ উত্তরসুরির একটি অংশ, এই বিশ্বাসটি লেট এন্টিকুইটি বা শেষ প্রাচীন যুগে অস্তিত্বশীল ছিল, যখন নব্যপ্লেটোবাদী দার্শনিকগণ পিথাগোরীয়বাদী শিক্ষার অর্ফিকবাদী উৎপত্তিকে মেনে নেন। প্রোক্লাস লেখেন:

“অর্ফিয়াস অর্ফিকবাদী রহস্যবাদের মাধ্যমে যেসব গোপন শিক্ষা দীক্ষাপ্রাপ্তদেরকে দান করেছিলেন, থ্রেসের লিবার্থায় অ্যাগ্লাওফেমাসের কাছে দীক্ষা গ্রহণের পর পিথাগোরাস সেগুলোকে বিস্তারিতভাবে শেখেন। এর ফলে তার কাছে ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান প্রকাশিত হয় যা অর্ফিয়াস তার মা ক্যালিওপির কাছ থেকে শিখেছিলেন”। [১৭]

১৫শ শতকে, নব্যপ্লেটোবাদী গ্রিক পণ্ডিত কনস্টান্টাইন ল্যাসকারিস (যিনি আরগোনটিকা অরফিকা কবিতাটি আবিষ্কার করেছিলেন) একজন পিথাগোরীয় অর্ফিয়াসকে বিবেচনা করেছিলেন। [১৮] বার্ট্রান্ড রাসেল (১৯৪৭) উল্লেখ করেন:

অর্ফিকবাদীরা ছিলে একটি সন্যাসী সম্প্রদায়; দ্রাক্ষাসুরা তাদের কাছে কেবলই একটি প্রতীক ছিল, যা পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় স্যাক্রামেন্টে প্রবেশ করে। তারা যে নেশাকে খুঁজতেন তা ছিল ঈশ্বরের সাথে মিলনের “এনথুসিয়াজম” এর। তারা এভাবে মনে করতেন রহস্যবাদী জ্ঞানকে সাধারণ উপায়ে অর্জন করা যায় না। পিথাগোরাস হয়ে এই রহস্যবাদী উপাদান গ্রিক দর্শনে প্রবেশ করে, যিনি অর্ফিকবাদের একজন সংস্কারক ছিলেন, যেমনটা অর্ফিয়াস ছিলেন ডায়োনিসাসের ধর্মের সংস্কারক। পিথাগোরাস হয়ে অর্ফিকবাদী উপাদানগুল প্লেটোর দর্শনে প্রবেশ করে, এবং প্লেটো থেকে তা পরবর্তীকালের দর্শনে প্রবেশ করে যা যেকোন মাত্রায় ধর্মীয় ছিল। [১৯]

প্রাথমিক অর্ফিকবাদী এবং পিথাগোরীয় সূত্রসমূহের অধ্যয়নসমূহ তাদের সম্পর্কের বিষয়ে অধিকতর দ্ব্যর্থক, এবং যেসব লেখকগণ পিথাগোরাসের জীবদ্দশার আশেপাশের সময়কালের ছিলেন তারা কখনই অর্ফিকবাদে পিথাগোসাসের দীক্ষাপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেন নি, এবং সাধারণভাবে অর্ফিয়াসকে একজন পৌরাণিক চরিত্র হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। [১৬] তারপরও খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৪র্থ শতকের লেখকগণ দুই মতবাদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক খুঁজে পান। প্রকৃতপক্ষে কেউ কেউ দাবি করেন, পিথাগোরাস কেবল অর্ফিকবাদের দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন না, বরং তিনিই প্রথম অর্ফিকবাদী গ্রন্থ রচনা করেন। বিশেষ করে কিওসের আয়ন দাবিকরেন, পিথাগোরাস সেইসব কাব্য রচনা করেন যা পৌরাণিক চরিত্র অর্ফিয়াসের উপর আরোপ করা হয়, এবং এপিজেনিস তার অন ওয়ার্ক্স এট্রিবিউটেড টু অর্ফিয়াস গ্রন্থে কয়েকটি প্রভাবশালী অর্ফিক কাব্যকে প্রারম্ভিক পিথাগোরীয়দের রচনা বলে দাবি করেছিলেন, যাদের মধ্যে অর্ফিকবাদী কবি সার্কপ্সও একজন। সিসেরোর মতে, অ্যারিস্টোটলও দাবি করেছিলেন যে অর্ফিয়াসের অস্তিত্ব কখনই ছিল না, এবং পিথাগোরীয়রাই কিছু অর্ফিকবাদী কবিতার কৃতিত্ব সারকন নামে একটি চরিত্রকে দান করেছিল। (দেখুন সার্কপ্স)। [২০]

পিথাগোরীয়বাদের মধ্য দিয়ে নব্যপ্লেটোবাদীরা অর্ফিয়াসের ধর্মতত্ত্বকে গ্রিসের উৎপত্তিগত ধর্মীয় ধারার কেন্দ্র হিসেবে মনে করতেন। তবে প্রারম্ভিক সূত্রগুলো অনুসারে অর্ফিকবাদী ধর্মের উদ্ভব ঘটে একটি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ও অল্পসংখ্যক মানুষের ধর্মীয় আন্দোলন (ফ্রিঞ্জ মুভমেন্ট) হিসেবে, যেখানে এর পুরাণ ও ধর্মীয় আচারকে মূলধারার বাইরের ও অশাস্ত্রীয় বলে বিবেচনা করা হত, এবং এর মধ্যে এমন অনেক উপাদান ছিল যেগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ ও ৫ম শতকের মিশরীয় ধর্মের সদৃশ ছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই দৃষ্টিভঙ্গিটিকেই অধিকতর সমর্থন করেন। [১৬]

পুরাণ[সম্পাদনা]

অর্ফিক থিওগনিসমূহ হেসিওডের থিওগোনির মতই বংশলতিকামূলক কাজ, কিন্তু এদের ভেতরের খুঁটিনাটি ভিন্ন। অর্ফিক থিওগনিসমূহ প্রতীকীভাবে নিকট প্রাচ্যের মডেলের সদৃশ। মূল গল্পটি হচ্ছে, ডায়োনিসাসের পূর্বজন্ম জাগ্রিয়াস ছিলেন জিউসপার্সিফোনের পুত্র। জিউস শিশুটিকে তার উত্তরসুরি ঘোষণা করেন যা তার স্ত্রী হেরাকে রাগিয়ে দেয়। তিনি শিশুটিকে হত্যার জন্য টাইটানদের উস্কে দেন। এরপর টাইটানরা জাগ্রিয়াসকে আয়না ও শিশুদের খেলনার দ্বারা ছলনার মাধ্যমে ধরে ফেলেন, তাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করেন এবং ভক্ষণ করেন। অ্যাথিনা জাগ্রিয়াসের হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করেন এবং জিউসকে ব্যাপারটি জানিয়ে দেন। জিউস টাইটানদের এই পাপের জন্য তাদেরকে বজ্রের দ্বারা আঘাত করেন। তাদের ছাই থেকে পাপী মানবজাতির জন্ম হয়, যার মধ্যে টাইটান ও জাগ্রিয়াসের শরীর নিহিত। মানুষের আত্মাটি ডায়োনিসাসের অংশ, আর তাই তা স্বর্গীয়, কিন্তু শরীরটি ছিল টাইটান অংশের যা তার আত্মাকে বন্দি করে রাখে। এভাবে ঘোষণা করা হয় যে, পুনর্জন্মের চক্র বা মেটেমসাইকোসিসের মাধ্যমে আত্মা তার পোষকদেহের কাছে ১০ বার প্রবেশ করবে। শাস্তির পর জাগ্রিয়াসের বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলোকে অ্যাপোলো সচেতনভাবে সংগ্রহ করেন এবং এগুলোকে ডেলফির পবিত্র ভূমিতে সমাহিত করেন। পরের শতকগুলোতে, পুরাণের এই সংস্করণগুলোর বিকাশ ঘটে যেখানে অ্যাপোলোর দ্বারা জাগ্রিয়াসের অঙ্গগুলোর সমাহিতকরণের ফলে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে, এভাবে অ্যাপোলো তার ডায়োনিসিওডোটেস (ডায়োনিসাসের সম্প্রদায়ক) উপাধিটি লাভ করেন।[২১] অ্যাপোলো এই অঙ্গের বিচ্ছিন্নকরণের পুরাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কারণ তিনি এনকসমিক আত্মাকে মিলনের দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেন। [২২][২৩]

ডায়োনিসাসের পুনর্জন্মের দুটি অর্ফিক গল্প আছে: একটিতে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে তার পিতা জিউসের উরুতে প্রবিষ্ট ডায়োনিসাসের হৃৎপিণ্ড থেকে, আরেকটি অনুসারে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে জিউসের সাথে মরণশীল নারী সেমিলির মিলনের মাধ্যমে। এই বিবরণগুলোর অনেকগুলোই ধ্রুপদী লেখকদের বিবরণ বিবরণ থেকে ভিন্ন। দামাস্কিয়াস বলেছেন যে, অ্যাপোলো "তাকে (ডায়োনিসাস) একত্রিত করেন এবং তাকে ফিরিয়ে আনেন"। খ্রিস্টীয় লেখক ফার্মিকাস ম্যাটারনাস তার গ্রন্থ অন দি এরর অফ প্রোফেন রেলিজিয়ন গ্রন্থে ভিন্ন বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, জুপিটার ( জিউসের) উৎপত্তিগতভাবে ক্রিটের একজন মরণশীল রাজা ছিলেন (ইউহেমেরাসের ধারণা), আর ডায়োনিসাস তার পুত্র ছিলেন। ডায়োনিসাসকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং তারপরে তাকে ভক্ষণ করা হয়েছিল। কেবল তার হৃৎপিণ্ডকেই এথেনা উদ্ধার করতে পারেন। এক ডায়োনিসাসের মত করে একটি জিপসামের মূর্তি (টাইটানরা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে জিপসাম ব্যবহার করত) বানানো হয় এবং তার মধ্যে তার হৃৎপিণ্ডটিকে স্থাপন করা হয়।[২৪]

অরফিক থিওগনিসমূহে রয়েছে:

পরকাল[সম্পাদনা]

দক্ষিণ ইতালির পেটেলিয়ায় সোনার অরফিক ট্যাবলেট এবং কেস পাওয়া গেছে ( ব্রিটিশ মিউজিয়াম) [২৫]

টিকে যাওয়া লিখিত টুকরোগুলো পরকাল সম্পর্কে বেশ কিছু বিশ্বাস প্রদর্শন করে যেগুলো ডায়োনিসাসের মৃত্যু এবং পুনরুত্থান সম্পর্কিত "অর্ফীয়" পৌরাণিক কাহিনীর অনুরূপ। ওলবিয়ায় পাওয়া হাড়ের ফলকে (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী) সংক্ষিপ্ত এবং রহস্যময় খোদাই করা লিপি পাওয়া যায়, যেমন: "জীবন. মৃত্যু. জীবন. সত্য. ডিও(নিসাস). অর্ফিক্স." ("Life. Death. Life. Truth. Dio(nysus). Orphics.")। এই হাড়ের ফলকের কার্যকারিতা অজানা।[২৬]

থুরি, হিপ্পোনিয়াম, থেসালি এবং ক্রিটের (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী ও পরবর্তীকালের) সমাধিসমূহে পাওয়া স্বর্ণপাতার ফলকে মৃতদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ (টোটেনপাস) পাওয়া যায়। যদিও এই পাতলা ফলকগুলোর লেখাগুলো প্রায়ই অত্যন্ত খণ্ডিত, সম্মিলিতভাবে তারা পরকালে যাবার একটি সাধারণ দৃশ্য উপস্থাপন করে। যখন কোন মৃত ব্যক্তি পাতালপুরীতে আসে, তখন সে বাধার সম্মুখীন হবে বলে আশা করা হয়। তাকে অবশ্যই লেথে নদীর জল (যা পান করলে মানুষ অতীতের সব ভুলে যায়, এছাড়া লেথে এর অর্থও স্মৃতিশক্তিহীনতা) পান না করার কথা মনে রাখতে হবে, কিন্তু নেমোসিনি নদীর (যা পান করলে মৃতের সব মনে পড়ে ও সে সর্বজ্ঞ হয়, এছাড়া নেমোসিন শব্দটি স্মৃতিকে নির্দেশ করে) জল পান করতে হবে। তাকে সূত্রমূলক অভিব্যক্তি প্রদান করা হয় যা দিয়ে তিনি নিজেকে পরকালের অভিভাবকদের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন।

আমি পৃথিবী ও তারকাময় আকাশের পুত্র। আমি তৃষ্ণার্ত হয়ে মরছি; কিন্তু তাড়াতাড়ি আমাকে স্মৃতির হ্রদ থেকে ঠান্ডা জল পান করতে দাও। [২৭]

অন্যান্য স্বর্ণপত্রে পাতালপুরীর শাসকদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দেখা যায়:

হে একই দিনে তিনবার সুখী, এখন তুমি মারা গেছো, এবং এখন তুমি জীবন লাভ করেছ। পার্সিফোনকে বলো যে, বাক্কীয় ব্যক্তিটি তোমাকে মুক্ত করেছেন। [২৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Three Faces of God by David L. Miller, 2005, Back Matter: "[...] assumed that this was a Christian trinitarian influence on late Hellenistic Orphism, but it may be that the Old Neoplatonists were closer [...]"
  2. History of Humanity: From the seventh century B.C.E. to the seventh century C.E. Routledge reference, Siegfried J. de Laet, UNESCO, 1996, আইএসবিএন ৯২-৩-১০২৮১২-X, pp. 182–183.
  3. Sexuality in Greek and Roman Culture by Marilyn B. Skinner, 2005, page 135, "[...] of life, there was no coherent religious movement properly termed 'Orphism' (Dodds 1957: 147–9; West 1983: 2–3). Even if there were, [...]"
  4. A. Henrichs, “‘Hieroi Logoi’ ” and ‘Hierai Bibloi’: The (Un) Written Margins of the Sacred in Ancient Greece,” Harvard Studies in Classical Philology 101 (2003): 213-216.
  5. Sandys, John, Pindar. The Odes of Pindar including the Principal Fragments. Cambridge, MA: Harvard University Press; London, William Heinemann Ltd, 1937.
  6. Ana Isabel Jiménez San Cristóbal, Rituales órficos (Madrid: Universidad Complutense de Madrid, 2006);
  7. Proclus, Commentary on the Republic of Plato, II, 338, 17 Kern 224.
  8. Apollodorus (Pseudo Apollodorus), Library and Epitome, 1.3.2. "Orpheus also invented the mysteries of Dionysus, and having been torn in pieces by the Maenads he is buried in Pieria."
  9. Alberto Bernabé, Miguel Herrero de Jáuregui, Ana Isabel Jiménez San Cristóbal, Raquel Martín Hernández, Redefining Dionysos
  10. Backgrounds of Early Christianity by Everett Ferguson, 2003, page 162, "Orphism began in the sixth century BCE"
  11. W. K. C. Guthrie, The Greeks & Their Gods (Beacon, 1954), p. 322; Kirk, Raven, & Schofield, The Presocratic Philosophers (Cambridge, 1983, 2nd edition), pp. 21, 30–31, 33; Parker, "Early Orphism", pp. 485, 497
  12. "The Derveni Papyrus: An Interdisciplinary Research Project"Harvard University, Center for Hellenic Studies। ৩০ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০২০ 
  13. Parker, "Early Orphism", pp. 484, 487.
  14. Bertrand Russel (১৯৪৭)। History of Western Philosophy। George Allen and Unwin। পৃষ্ঠা 111 
  15. Parker, "Early Orphism", p. 501.
  16. Betegh, G. (2014). Pythagoreans, Orphism and Greek Religion. A History of Pythagoreanism, 274-295.
  17. Proclus, Tim. 3.168.8
  18. Russo, Attilio (2004). "Costantino Lascaris tra fama e oblio nel Cinquecento messinese", in Archivio Storico Messinese, pp. 53-54.
  19. Bertrand Russel (১৯৪৭)। History of Western Philosophy। George Allen and Unwin। পৃষ্ঠা 37 
  20. The works of Aristotle। ১৯০৮। পৃষ্ঠা 80 
  21. Alberto Bernabé, Miguel Herrero de Jáuregui, Ana Isabel Jiménez San Cristóbal, Raquel Martín Hernández. (2013), Redefining Dionysos
  22. Proclus in commentary on Cratylus states that Apollo signifies the cause of unity and that which reassembles many into one
  23. Dwayne A. Meisner, Orphic Tradition and the Birth of the Gods (2018)
  24. Firmicus Maternus, De errore profanarum religionum 6.4
  25. British Museum Collection
  26. Sider, David; Obbink, Dirk (২০১৩-১০-৩০)। Doctrine and Doxography। পৃষ্ঠা 160। আইএসবিএন 9783110331370 
  27. Numerous tablets contain this essential formula with minor variations; for the Greek texts and translations, see Fritz Graf and Sarah Iles Johnston, Ritual Texts for the Afterlife: Orpheus and the Bacchic Gold Tablets (Routledge, 2007), pp. 4–5 (Hipponion, 400 BC), 6–7 (Petelia, 4th century BC), pp. 16–17 (Entella, possibly 3rd century BC), pp. 20–25 (five tablets from Eleutherna, Crete, 2nd or 1st century BC), pp. 26–27 (Mylopotamos, 2nd century BC), pp. 28–29 (Rethymnon, 2nd or 1st century BC), pp. 34–35 (Pharsalos, Thessaly, 350–300 BC), and pp. 40–41 (Thessaly, mid-4th century BC) online.
  28. Tablet from Pelinna, late 4th century BC, in Graf and Johnston, Ritual Texts for the Afterlife, pp. 36–37.

সাহিত্য[সম্পাদনা]

বহিঃস্থ সূত্র[সম্পাদনা]