লৈঙ্গিক সমতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লৈঙ্গিক সমতার জন্য ইউরোপীয় ইনস্টিটিউট দ্বারা সৃষ্ট লৈঙ্গিক সমতা ইনডেক্সের অধিক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে ইনফোগ্রাফিক

লৈঙ্গিক সমতা বলতে কোনও ব্যক্তির লিঙ্গ (নাবালক ছেলে বা মেয়ে এবং সাবালক পুরুষ কিংবা নারী) নির্বিশেষে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পদ, সুযোগ ও সুরক্ষা লাভ করা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যাপারে সমান অধিকারকে বোঝায়। তবে তার মানে এই নয় যে পুরুষ ও নারী হুবহু একই ধরনের ব্যক্তি কিংবা তাদের সাথে সম্পূর্ণ একইভাবে ব্যবহার করতে হবে।[১][ক]

লৈঙ্গিক বৈষম্য বিশ্বের সমস্ত সমাজেই প্রচলিত এবং এর বহিঃপ্রকাশ বহুমাত্রিক। চাকুরির অভিজ্ঞতা, শিক্ষার সুযোগ বা স্বাস্থ্য, সব ক্ষেত্রেই এটি দেখা যেতে পারে। লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিভিন্ন কারণ উপস্থাপন করা হয়েছে। জৈবিক সরলীকরণ বা লঘুকরণ এবং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজে একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা তার জৈবিক, শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে জন্মগত যে লৈঙ্গিক পার্থক্য, তার উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট বৈষম্যমূলক মনোভাব বা আচরণ দ্বারা নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাধারণত দাবী করা হয় যে বিভিন্ন সমাজে কৃত্রিমভাবে নির্মিত রীতিনীতি ও প্রথার কারণে ভিন্ন লিঙ্গের ব্যক্তিদেরকে ভিন্ন ভিন্ন বা অসম ভূমিকা পালন করার জন্য দলে ভাগ করে ফেলা হয়।

লৈঙ্গিক বৈষম্য সমাধান করার জন্য কোনও সংগঠনের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লৈঙ্গিক প্রশ্ন বা বিষয়গুলি মাথায় রাখা হয়। সাধারণত দুই দিক থেকে সমতা আনয়নের চেষ্টা করা হয়। একদিকে লিঙ্গ নির্বিশেষে সম্পদ ও সুযোগের সমান লভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনা বা সুবিধা প্রদান করা হতে পারে। অন্যদিকে এমন শর্ত বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হতে পারে, যাতে লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান ফল পাওয়া যায়। দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিরই ভাল-মন্দ দিক আছে।

বর্তমান বিশ্বে লৈঙ্গিক বৈষম্যের সাথে নারীর অধিকারের ব্যাপারটি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সারা বিশ্ব জুড়ে নারী ও নাবালক মেয়েদের অনেক ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের শিকার হতে হয়, যার মধ্যে যৌনতা পাচার, নারীহত্যা, যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য নিপীড়নমূলক কৌশল অন্তর্ভুক্ত। এগুলিকে নির্মূল করলে লৈঙ্গিক বৈষম্য অনেকখানি দূর হবে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বিবৃতি দিয়েছে যে "যদিও বহুসংখ্যক আন্তর্জাতিক ঐকমত্য বা চুক্তিতে মানুষ হিসেবে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তা সত্ত্বেও কার্যক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীদের দরিদ্র ও নিরক্ষর হবার সম্ভাবনা এখনও বেশি। সম্পদের মালিকানা, ঋণগ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রগুলিতে তাদের প্রবেশাধিকার কম। নারীরা পুরুষদের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবার সম্ভাবনা কম এবং তাদের গৃহস্থালি সহিংসতার শিকার হবার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।"[২]

জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের যে ১৭টি লক্ষ্য স্থির করেছে, তাতে লৈঙ্গিক সমতাকে ৫ম স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি কর্তৃক প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে লৈঙ্গিক বৈষম্য পরিমাপ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. LeMoyne, Roger (২০১১)। "Promoting Gender Equality: An Equity-based Approach to Programming" (পিডিএফ)Operational Guidance Overview in Brief। UNICEF। ২০১৭-১০-২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২৮ 
  2. "Gender equality"United Nations Population Fund। UNFPA। ২০ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৫ 


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি