কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে বাংলাদেশে চিকিৎসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, স্বাস্থ্যখাতের বহুবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতির তথ্য জানা গেছে।

১৫ই জুন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের), বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম খুঁজে বের করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন৷ এছাড়াও হাসপাতাসমূহের কী কী প্রয়োজন তা নিয়ে সেই কমিটির করা সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।[১]

১৫ই জুন বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট এক আদেশে জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ বা অন্য যেকোন রোগে আক্রান্ত রোগীকে কোনো হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। কারও অবহেলায় যদি কোনো রোগী মারা যায় বা কোনো হাসপাতাল যদি কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা না দেয়, তাহলে সেটি একটি ফৌজদারি অপরাধ হবে। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনীহা দেখালে ও তাতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা অবহেলা জনিত মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট।

বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) দেওয়া নির্দেশাবলী (১১ ও ২৪ মে) কঠোরভাবে কার্যকর করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট। হাসপাতালে কতগুলো শয্যা খালি আছে এবং কখন কত শয্যা খালি হচ্ছে, সে বিষয়ের তথ্য গণমাধ্যমকে জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব ও ডিজিএইচএসের মহাপরিচালককে ১৫ দিনের মধ্যে এসব নির্দেশনা অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে সুপ্রীম কোর্ট।[২][৩]

১৭ই জুন প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, (১০১ তম দিন) তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের কোভিড-১৯ পরীক্ষা এবং সাধারণ রোগের রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বহুবিধ জটিলতা, অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। দেশের সব জেলাতেই সাধারণ রোগের চিকিৎসাসেবা নিতে অনেক রকমের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং ভোগান্তি, হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলে জানা গেছে। সরকারি নির্দেশনা দেয়ার পরেও দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল করোনা পরীক্ষার ফলাফল (কোভিড-১৯ নেগেটিভ ছাড়পত্র) না দেখে সাধারণ রোগী ভর্তি নেয় নি, বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র সরকারি করোনা চিহ্নিত হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া রোগী ভর্তি নিয়েছিল যা চাহিদার তুলনায় অনেক অপ্রতুল ছিল বলে গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছিল। বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সাধারণ রোগী ও স্বজনদের বহু ব্যর্থ চেষ্টা এবং ফলাফলের অপেক্ষার সময়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছিল। আর কোভিড-১৯ এর নমুনা দেয়া এবং ফলাফল পেতেও দীর্ঘসূত্রতায় ভুগতে হয়েছিল।[৪]

১৭ই জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারিভাবে ৬১টি ল্যাবে ৮৫টি পিসিআর মেশিনে জনগণের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাজধানী ঢাকার নমুনা নেয়ার স্থানগুলোতে নিয়মিত লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল এবং কিছু স্থানে পূর্বে থেকে যোগাযোগ করেও নির্ধারিত সময়ে নমুনা পরিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলস্বরুপ কোভিড-১৯ আক্রান্ত, উপসর্গযুক্ত এবং আনুষঙ্গিক সকল রোগীদেরকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। পরবর্তীতে, বেসরকারি হাসপাতালসমূহে ঝামেলামুক্তভাবে পরীক্ষা করানোর সুযোগ আসলেও মাত্রাধিক খরচের কারনে নিম্নবিত্তরা সেই সেবা গ্রহণ করতে পারেনি। আইইডিসিআর ও দেশের অন্যান্য বিভাগে ল্যাব সংকট, দক্ষ জনবল, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও পারস্পরিক সমন্বয়হীতনতার যথেষ্ট অভাব দেখা গিয়েছিল এবং ফলস্বরুপ সক্ষমতার চেয়েও কমসংখ্যক পরীক্ষা দেখা গিয়েছিল।

বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের জরীপে জানা গেছে যে, এপ্রিল, মে মাসে দিনপ্রতি আইইডিসিআর এর ৪২ হাজার পরীক্ষা করানোর সক্ষমতা থাকলেও; মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, জনবল সংকট, মেশিন নষ্ট ও সমন্বয়হীনতার কারনে প্রকৃতপক্ষে মাত্র ১৫ হাজার পরীক্ষা করেছিল। সারা দেশেই মাঠ পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ এবং পিসিআর মেশিন চালানোর জনবলের সংকট ছিল এবং অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী কর্তৃক নমুনা সংগ্রহ করায় অনেক নমুনা নষ্টও হয়েছিল যার ফলস্বরুপ কিছু ভুল রিপোর্টও পৌঁছেছিল। বেসরকারি অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিকট জনবল ও মেশিনের সক্ষমতা থাকলেও তাদেরকে যথাসময়ে সমন্বয় করে ব্যবহার করা হয়নি, বলে জানা গেছে।[৪]

ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম পরিমানে কোভিড-১৯ আক্রান্তের পরীক্ষা হয়েছিল। বাংলাদেশে পরীক্ষার হার ০.২৯% যা সারা বিশ্বে নিচের দিক থেকে প্রায় শীর্ষে (১৪৯ তম)৷ ১৭ই জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে ৬১টি ল্যাবে ৮৫টি পিসিআর মেশিন দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে তবে সর্বশেষ ১৪ দিনে প্রকৃতপক্ষে, গড়ে ১৩.৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনবল সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে হয়েছে এবং ভুল প্রতিবেদন এসেছে।

২৫শে মার্চ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে মাত্র ১ টি পরীক্ষাগারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল এবং এই সময়কালের মধ্যে নির্ধারিত হটলাইনে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ, কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানোর জন্য যোগাযোগ করেছিল যার মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছিল মাত্র ৭৯৪টি। ২৫শে মার্চের পর রাজধানীর বাইরে পরীক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছিল এবং ততদিনে সীমিত আকারে সম্প্রদায় বাহীত (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) সংক্রমণ শুরু হয়েছিল বলে দাবী করা হয় প্রতিবেদনটিতে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিস্তারের পর থেকে আইইডিসিআর’র হটলাইনে ১৪ই জুন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ফোন কল আসলেও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছিল মাত্র ৫ লাখ জনের।[৪]

অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তির কারণে ৫৭% হাসপাতাল প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে একইসাথে পরীক্ষার্থীদেরকে ফল পেতে ৮- ১০ দিন পর্যন্ত বিলম্ব করতে হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগেও কোভিড-১৯ উপসর্গ দেখা দেয়ার পর নমুনা পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করলে পরীক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘসূত্রতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। জানা গেছে নমুনা দেয়ার জন্য, চট্টগ্রামে ২-৪ দিন; রংপুরে ৫-৬ দিন, খুলনায় ১-২ দিন, সিলেটে ৫ দিন, বরিশালে ১ দিন, ময়মনসিংহে ১ দিন, রাজশাহীতে ২-৩ দিন লাগে।[৪]

সুপ্রীম কোর্টের আদেশ[সম্পাদনা]

বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের প্রতি বিশেষত: ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কোভিড-১৯ ও নন কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারীর জন্য 'পর্যাবেক্ষণ সেল' গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট

নন কোভিড/সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা এবং যদি না করে থাকে তাহলে সেসব ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে ৩০শে জুন সুপ্রীম কোর্টকে অবহিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট।[২]

আদালতের এই নির্দেশনাসমূহ কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত:

আইসিইউ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করা এবং ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ।

কোন হাসপাতালে আইসিইউ-তে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কি অবস্থায় আছে তার হালনাগাদ তথ্য প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ। 'আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও পর্যাবেক্ষণ সেলে', ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন' নামে পৃথক হট লাইন চালু এবং হটলাইন নাম্বার গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিশেষত: টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ।[২]

ফি আদায়ে নজরদারী[সম্পাদনা]

আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে নজরদারীর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ।[২]

অক্সিজেনের মূল্য প্রদর্শন[সম্পাদনা]

অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারন করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ এবং খুচরা বিক্রেতাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

কৃত্রিম সংকট রোধের জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয় পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিবেচনার সুযোগসহ নির্দেশ দিয়েছে এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা পর্যাবেক্ষণ জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে।[২]

জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের একজনসহ মোট ৫ জন আইনজীবীর দায়েরকৃত পৃথক ৩টি রিটের শুনানি নেয়ার পর ১৫ই জুন বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট এই সমস্ত আদেশ দিয়েছে।[২][৩]

হাসপাতাল ও চিকিৎসক[সম্পাদনা]

একজন স্বেচ্ছাসেবী মলিকুলার জীবতত্ত্ববিদ সন্দেহভাজন রোগীর থেকে সংগ্রহকৃত নমুনা থেকে ভাইরাসের আরএনএ সংগ্রহ করছেন (২৬শে মে)

২০শে জুন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), চিকিৎসকদের জন্য মানসম্মত স্বতন্ত্র হাসপাতালের দাবী জানিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর নিকট পাঠানো সেই চিঠিতে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা দাবী জানিয়েছিলেন।

দাবী করা হয়েছিল, তখন পর্যন্ত ১১০০ জন চিকিৎসকসহ ৩৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ৪৪ জন চিকিৎসক এবং নার্সসহ ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন যাদের মধ্যে অনেক কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসকও রয়েছেন।

দাবী করা হয়েছিল, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের এত বহুলাংশের আক্রান্ত ও মৃত্যু তখন পর্যন্ত কোনো কোভিড-১৯ সংক্রমিত দেশে ঘটেনি এবং এর কারণ হল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা, অদূরদর্শীতা ও সমন্বয়হীনতা।[৫]

২০ শে জুন চিকিৎসকদের সংগঠন, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবলিটি (এফডিএসআর) চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ ১০ দফা দাবী জানিয়েছিল।

সংগঠনটি কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী সুরক্ষা আইন’ নামক আইন প্রনয়নের জন্য দাবী জানান। এই আইনের আওতায় কোন ক্লিনিক, প্যাথলজি ল্যাব বা ব্যবসাপরিচালনাকে সংযুক্ত না করে, কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করা ও ‘হেলথ পুলিশ’ গঠন করার দাবী জানান তারা৷

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মানসম্মত ‘ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী’র (পিপিই) দাবী জানিয়েছিল সংগঠনটি৷ পিপিইর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে তা সহজলভ্য করতে করা এবং এসম্পর্কিত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অতিদ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরেও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছিল তারা। এছাড়াও অধিক সংক্রমিত স্থানে পরিণত হওয়া শহর-জেলাগুলোকে ৩ রঙের জোনে বিভক্ত না করে, বরং পুরো শহর-জেলা'কে কঠোরভাবে ৪ সপ্তাহের সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছিল সংগঠনটি।

সেই সময়কালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং দরিদ্র, চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেটা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছিল সংগঠনটি।[৬]

২১শে জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৮ জন চিকিৎসকের মৃত্যু ঘটেছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে।

সরকারীভাবে সরবরাহকৃত পিপিই দেওয়া হয় শুধুমাত্র স্বতন্ত্র 'করোনা ইউনিট'/করোনা হাসপাতাল এর স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে এবং তাদেরকেও যথেষ্ট পরিমানে সরঞ্জামাদি (মাস্ক, গ্লাভ্স, আই প্রোটেক্টর) প্রদান করা হয় না, বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে করোনা ইউনিটের একজন চিকিৎসক দাবী করেছেন যে, তাকে নিজ খরচে এন-৯৫ মুখোশ কিনতে হচ্ছে এবং তারই এক সহকর্মী সরকারি সরবরাহকৃত কেএন-৯৫ মুখোশ ব্যবহার করায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজের আরেকজন চিকিৎসক দাবী করেছেন যে, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিবার কাজের আগে তাদেরকে প্রায় ৫ হাজার টাকার সুরক্ষা সরঞ্জামাদী ক্র‍য় করতে হয় এবং তাদের বর্তমান বেতনের উপর এটা চাপ ফেলছে। তিনি আরও দাবী করেছেন যে, তার ব্যাচের ৮০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৩০ জন বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত।

করোনা ওয়ার্ডে কর্তব্যপ্রাপ্ত কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন যে, ওয়ার্ডগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্যই চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা দাবী করেছেন রোগীর লোক, স্বজনেরা সচেতনতার অভাবে নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ছড়ানোর অন্যতম একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছেন৷

অনেক বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছেন যে স্বাস্থ্যকর্মীদের ডফিং রুম (যে স্বতন্ত্র কক্ষে স্বাস্থ্যকর্মীরা ডিউটির আগে-পরে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য পিপিই পরেন ও খুলে রাখেন) নিয়মিত জীবাণুমুক্ত না করার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। যেহেতু করোনাভাইরাসে সংক্রমিত পিপিই কিছু সময়ের জন্য হলেও ওখানে রাখা হয় তাই প্রতি রাতেই একবার করে এই কক্ষকে জীবাণুমুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসকদের আনা-নেয়ার গাড়িতে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রাখা উচিত এবং তাদের হোস্টেল/হোটেল কক্ষগুলোকেও নিয়মিত সময়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও জানা গেছে যে, যেসব স্বাস্থ্যকর্মী নন-কোভিড হাসপাতালে বা কোভিড হাসপাতালের নন-কোভিড অংশে কাজ করছেন তারা নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছেন কারণ তারা যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কিনা তা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড ইউনিটে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের তুলনায় স্বভাবতই কম সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে থাকেন এবং কিছুক্ষেত্রে রোগী ও স্বজনেরা তথ্য গোপন রেখে তাদেরকে ঝুঁকিতে ফেলেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, আক্রান্তের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছেন অ্যানেস্থেসিয়া ও শ্বষনযন্ত্র (আরটিআই) বিভাগের চিকিৎসকরা এবং তাদের মধ্যে আক্রান্তের হারও বেশি।

এছাড়াও বর্তমানে বাজারের বেশি দামে নকল, নিম্নমানের মাস্ক ব্যবসায়ীরাও এর অন্যতম একটি কারণ বলে দাবী করা হয়েছে।[৭]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তদন্ত কমিটির দাবি জিএম কাদেরের"বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  2. কোর্ট "চিকিৎসায় অনীহা দেখালে দায়ী ব্যক্তি আইনের আওতায়: সুপ্রীম কোর্ট | আদালত" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  3. "অবহেলায় রোগী মারা গেলে ফৌজদারি অপরাধ: সুপ্রীম কোর্ট"দ্য ডেইলি স্টার। ২০২০-০৬-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  4. "পরীক্ষাের ভোগান্তির শেষ কোথায়?"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  5. "চিকিৎসকদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রীকে বিএমএর চিঠি"bdnews24। ২০২০-০৬-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  6. "চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ ১০ দফা দাবি এফডিএসআরের"দ্য ডেইলি স্টার। ২০২০-০৬-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 
  7. "কেন এত চিকিৎসক করোনাক্রান্ত?"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১