রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির

স্থানাঙ্ক: ২৫°১৯′০৪″ উত্তর ৮২°৫৮′২৬″ পূর্ব / ২৫.৩১৭৬৪৫° উত্তর ৮২.৯৭৩৯১৪° পূর্ব / 25.317645; 82.973914
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির
रत्नेश्वर महादेव मंदिर
রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির
রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবারাণসী
ঈশ্বরশিব
উৎসবসমূহশিবরাত্রি
অবস্থান
অবস্থানমণিকর্ণিকা ঘাট, বারাণসী
রাজ্যউত্তর প্রদেশ
দেশ ভারত
স্থানাঙ্ক২৫°১৯′০৪″ উত্তর ৮২°৫৮′২৬″ পূর্ব / ২৫.৩১৭৬৪৫° উত্তর ৮২.৯৭৩৯১৪° পূর্ব / 25.317645; 82.973914
স্থাপত্য
সম্পূর্ণ হয়১৯শ শতাব্দী (সূত্রানুসারে)
উচ্চতা২৫ মি (৮২ ফু)[১]

রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির (হিন্দি:रत्नेश्वर महादेव मंदिर) (মাতৃঋণ মহাদেব বা বারাণসীর হেলানো মন্দির নামেও পরিচিত) ভারতের উত্তরপ্রদেশে হিন্দু ধর্মানুসারীদের তীর্থশহর বারাণসীতে অবস্থিত। মন্দিরটি আপাতদৃষ্টিতে ভালভাবে সংরক্ষিত মনে হলেও এর পশ্চাৎ অংশ(উত্তর-পশ্চিম কোণ) উল্লেখযোগ্যভাবে হেলানো। এটির গর্ভগৃহ গ্রীষ্ম ঋতুর কয়েক মাস বাদে সাধারণত বছরের বেশিরভাগ সময় জলের নিচে থাকে। [২][৩] একই নামে করাচি'র ক্লিফটনে সমুদ্র তীরবর্তী প্রাকৃতিক গুহায় আরো একটি মন্দির আছে।[৪]

স্থাপত্য[সম্পাদনা]

রত্নেশ্বর মন্দিরের নাগর শিখর এবং মণ্ডপ ধ্রুপদী শৈলীতে মার্জিতভাবে নির্মিত।[৫] মন্দিরটির নির্মাণ করার স্থানটি বেশ অস্বাভাবিক। বারাণসীর অন্যান্য মন্দির উঁচু স্থানে অবস্থিত হলেও এই মন্দিরটি গঙ্গা নদীর তটে বেশ নিচু স্তরে নির্মিত। ফলে বর্ষা মৌসুমে গঙ্গার নদীর পানির স্তর মন্দিরের শিখর অংশ পর্যন্ত উঠে যায়।[৬]

মন্দির নির্মাতারা নিশ্চয়ই জেনে বুঝে এমনভাবে মন্দিরটি নির্মাণ করেছেন যেন গর্ভগৃহটি বছরের বেশিরভাগ সময় ডুবে থাকবে। বেশিরভাগ সময় মন্দিরের অধিকাংশ পানির নিচে থাকা সত্ত্বেও স্থাপনাটি ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তবুও এটি হেলে পড়েছে। মন্দিরের হেলে পড়ার বিষয়টি ২০শ শতাব্দীর বিভিন্ন স্থিরচিত্রেও দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের কারণে মন্দিরের উপরের অংশটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।[৭]

কিংবদন্তি ও ইতিহাস[সম্পাদনা]

রত্নেশ্বর মন্দিরের নির্মাণ, নির্মাণের সময়কাল ও মন্দিরটির ঝুঁকে পড়া নিয়ে বেশ কয়েকটি কিংবদন্তি প্রচলিত। একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুসারে, প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজা মান সিংহের মা রত্না বাইয়ের জন্য এক নামহীন ব্যক্তি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটি তৈরি করার পরে, সেই ব্যক্তি গর্ব করেছিলেন যে তিনি তার মাতৃঋণ শোধ করেছেন। যেহেতু নিজের মায়ের প্রতি ঋণ কখনও শোধ করা যায় না, তাই মায়ের অভিশাপের কারণে মন্দিরটি হেলতে শুরু করেছিল।[৩] একারণে মন্দিরটি মাতৃঋণ মন্দির নামেও পরিচিত। আরেকটি উপাখ্যান অনুসারে, মন্দিরটি ইন্দোরের রানী অহল্যাবাঈ হোলকারের রত্না বাই নামের এক মহিলা চাকর দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তার চাকর নিজের নাম অনুসারে এই নামকরণ করার কারণে অহল্যা বাই রাগান্বিত হয়ে এই মন্দিরটি অভিশাপ দিয়েছিলেন। তার অভিশাপের কারণে মন্দিরটি হেলতে শুরু করে।

নির্মাণ সম্পর্কিত কিছু সূত্রে দাবি করা হয় যে উনিশ শতকে গোয়ালিয়রের রানি বাইজা বাই নির্মাণ এটি করেছিলেন।[৩] বারাণসীর রাজস্ব রেকর্ড অনুসারে, এটি ১৮২৫-১৮৩০ সালে নির্মিত হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] জেলা সাংস্কৃতিক কমিটির ডাঃ রত্নেশ ভার্মার মতে, ১৮৫৭ সালে আমেঠি রাজপরিবার মন্দিরটি নির্মাণ করে।[৮][৮] ১৮২০-১৮৩০ দশকের সময় জেমস প্রিন্সেপ বেনারস টাকশালের মুদ্রা পরীক্ষক ছিলেন।[৯] এসময় তিনি বেনারসের একাধিক চিত্র আঁকেন, একটি চিত্রে রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির অন্তর্ভুক্ত। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি যখন পানির নিচে ছিল, তখন পুরোহিত পূজা পরিচালনার জন্য জলে ডুব দিতেন।

১৮৬০ এর দশকের তোলা স্থিরচিত্রে মন্দিরটিকে হেলে থাকতে দেখা যায়নি। আধুনিক স্থিরচিত্রগুলিতে প্রায় ৯ ডিগ্রি হেলানো দেখানো হয় (পিসার টাওয়ারটি প্রায় ৫ ডিগ্রি ঝুঁকে থাকে)।[১০] মন্দিরটি ত্রুটিযুুুক্ত ভিত্তি ও ভিত্তিস্তরে পলিমাটি সরে যাওয়ার জন্য হেলে পড়ছে।[৩] ২০১৫ সালে এক বজ্রপাতে এর চূড়ার কিছু অংশ ধসে পড়ে।

অবস্থান[সম্পাদনা]

রত্নেশ্বর মন্দিরটি মণিকর্ণিকা ঘাটের তারকেশ্বর মহাদেব মন্দিরের সামনে অবস্থিত[১১] তারকেশ্বর মন্দিরটি ১৭৯৫ সালে রানী অহল্যাবাঈ হোলকার নির্মাণ করেছিলেন।[১২] বলা হয়, তারকেশ্বর মন্দিরের স্থানে শিব তারক মন্ত্র(পরিত্রাণের মন্ত্র) পাঠ করেছিলেন। দুটি মন্দিরের মধ্যে একটি ফাঁকা স্থান রয়েছে। ১৮৩২ সালে, জেমস প্রিন্সেপ, তার একটি অঙ্কিত চিত্রে এই ফাঁকা স্থানটিকে বেনারসের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।[১৩] ১৮৬৫ সালের একটি ছবিতে মন্দিরটিকে বিষ্ণুপদ মন্দির হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। সম্ভবত এটি আশেপাশে ভগবান বিষ্ণুর চরণ পাদুকা সমেত গণেশ মন্দির থাকায় এই নামকরণ করা হয়েছিল।[১৪] একই স্থান ১৯০৩ সালের একটি মুদ্রণে একটি সতীর স্থান ছিল বলে জানা যায়।[১৫]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Elevation"। Elevation finder। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "पीसा की मीनार की तरह झुका हुआ है ये मंदिर, आज तक नहीं खुल पाया रहस्य dainikbhaskar.com, 14 September 2015"। ৮ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  3. "The Leaning Temple of Varanasi, Sais, 3 April 2016"। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  4. "SHRI RATNESHWAR MAHADEV MANDIR"। ৮ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  5. "Temples Styles in North India (Nagara Style)"। ৮ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  6. "Kashi Vishwanath JyotirLinga Temple Darshan in Varanasi - Part 1, at 8:28"। ২৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  7. "आकाशीय बिजली का कहर : 400 वर्ष पुराने रत्नेश्वर महादेव मंदिर का ऊपरी हिस्सा क्षतिग्रस्त"NDTVIndia। ২০২০-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-১৪ 
  8. "किसके श्राप से टेढ़ा हुआ था यह मंदिर, भरा रहता है कीचड़, पढ़ें 5 MYTHS"Dainik Bhaskar (হিন্দি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-১৪। ২০২০-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৮ 
  9. "James Prinsep | English antiquarian"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৭ 
  10. "Ratneshwar Mahadev - The Leaning Temple of Kashi"Varanasi Guru (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১০-০৬। ২০২১-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৫ 
  11. "Shri Tarkeshwar Mahadev Mandir, Varanasi"। ২৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২০ 
  12. "The Varanasi Heritage Dossier/Manikarnika Ghat - Wikiversity"en.wikiversity.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৮ 
  13. Prinsep, James (২০১১-০৪-২৫)। "English: "Benares, A Brahmin placing a garland on the holiest spot in the sacred city" - (aka: Varanasi)" 
  14. Parry, Jonathan P.; PhD, Professor of Anthropology Jonathan P. Parry (১৯৯৪-০৭-০৭)। Death in Banaras (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-46625-7। ২০২০-০৬-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৮ 
  15. Library, Boston Public (২০১৩-০৯-২৫)। "Local Accession Number: 06_11_003882"