ব্যাংক হার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্যাংক হার (ইংরেজি: Bank rate), অন্যনাম ডিসকাউন্ট হার, বলতে সেই সুদ হারকে বুঝায় যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণ দেয়। ব্যাংক হার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। দেশে দেশে সময় পরিবর্তনের সাথে এই হারের নামের সাথে সাথে কৌশল বা পদ্ধতিগত পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। ব্যাংক হার মুদ্রানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।[১]

বাণিজ্যিক ব্যাংক তহবিল সঙ্কটে পরলে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে এই সুদহারে ঋণ নিতে পারে। এই ধরনের ঋণ সাধারণত রেপো রেট বা নীতি সুদহারের মাধ্যমে করা হয়। যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকসমূহকে ঋণ দেয়, সেটিই রেপো রেট বা নীতি সুদহার। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতেই মুদ্রানীতির এ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারটি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে, অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে ঋণ দেয়, সেটি রিভার্স রেপো হিসেবে পরিচিত।

ব্যাংক হার নির্ধারণ[সম্পাদনা]

মুদ্রানীতির উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে অর্থনীতিতে অর্থ সরবারহ বৃদ্ধি করা দরকার, তখন ব্যাংক হার কমিয়ে দেয়। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যাংক গ্রহকদের ঋণ দেয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে অর্থনীতিতে অর্থ সরবারহ কমানো দরকার, তখন ব্যাংক হার বাড়িয়ে দেয়। এতে ঋণ সরবারহ কমে যায়। সর্বোপরি, ব্যাংক হার পরিবর্তনের সাথে ব্যাংক সুদের হারেও পরিবর্তন হয়।[২]

দেশ অনুযায়ী[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়া[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়ায়, রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক হার নির্ধারণ করে থাকে, যা অফিসিয়াল নগদ হার নামে পরিচিত। রিজার্ভ ব্যাংক বোর্ড প্রতি মাসে এই হার পর্যালোচনা করে থাকে।[৩]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে, বাংলাদেশ ব্যাংক মাসিক ভিত্তিতে ব্যাংক হার নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশে এই হার ব্যাংক হার নামেই পরিচিত। মুদ্রানীতির উপর ভিত্তি করে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই হার পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশে বর্তমান ব্যাংক হার ৮%।[৪]

কানাডা[সম্পাদনা]

কানাডায়, ব্যাংক হারকে ওভারনাইট রেট নামে অভিহিত করা হয়। ব্যাংক অব কানাডা ওভারনাইট রেট নির্ধারণ করে থাকে।

ইউরো অঞ্চল[সম্পাদনা]

ইউরো অঞ্চলে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক হার নির্ধারিত হয় যেটা স্ট্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি নামে পরিচিত এবং ওভার নাইট তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ব্যাংক হার নির্ধারণ করে। পর্যায়ক্রমে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ব্যাংক হার পর্যালোচনা ও সংশোধন করে।

যুক্তরাজ্যে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের মুদ্রানীতি কমিটি করতিক ব্যাংক রেট নির্ধারণ হয়। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সর্বনিম্ন একটা হার নির্ধারণ করে দেয় যেটা অফিসিয়াল ব্যাংক হার নামে পরিচিত।

যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্যাংক হারকে ডিসকাউন্ট হার বলা হয়। ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের গভর্নর বোর্ড দ্বারা ডিসকাউন্ট হার নির্ধারিত হয়।[৫]

আরোও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ব্যাংক হার-কেমব্রিজ অভিধানে অনুসারে অর্থ"কেমব্রিজ অভিধান (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৬ 
  2. লিয়াদিস, নিক কে। "সুদহার কে নির্ধারণ করে?"ইনভেস্টোপিডিয়া ডট কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৬ 
  3. "নগদ হারের লক্ষ্যমাত্রা"রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া। ২০২০-০৬-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৬ 
  4. "সুদ হার"বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০-০৬-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৬ 
  5. বোয়েস, উইলিয়াম; মেলভিন, মাইকেল (২০১১)। অর্থনীতির মৌলিক ধারণা (ষষ্ঠ সংস্করণ)। সাউথ ওয়েস্টার্ন কেনেগা লার্নিং। পৃষ্ঠা ৩২৯। আইএসবিএন 978-0-538-48119-9