হাসেকি সুলতান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাসেকি সুলতান
হুররাম সুলতানের তৈলচিত্র, যিনি প্রথম "হাসেকি সুলতান" পদবি ধারণ করেছিলেন৷ তিনি ছিলেন প্রথম সুলাইমান এর রুথেনীয়/ইউক্রেনীয় বংশদ্ভূত বৈধ স্ত্রী
সম্বোধনরীতিহাসেকি সুলতান
বাসভবনতোপকাপি প্রাসাদ
গঠন১৫৩৪
প্রথমহুররাম সুলতান
সর্বশেষরাবিয়া সুলতান
বিলুপ্ত১৬৯৫

হাসেকি সুলতান (উসমানীয় তুর্কি: خاصکى سلطان, Ḫāṣekī Sulṭān; তুর্কি উচ্চারণ: [haseˈci suɫˈtaːn]) ছিল উসমানীয় সুলতানের প্রধান স্ত্রী/উপপত্নীর ব্যবহার করা রাজকীয় পদবি। প্রথমদিকে "হাসেকি সুলতান" শব্দদ্বয়ের অর্থ সুলতানের প্রধান নারীসঙ্গী বা একমাত্র প্রিয়তমা। পরবর্তী বছরগুলোতে এর অর্থ হয়ে দাঁড়ায় imperial consort বা রাজমহিষী[১]হুররাম সুলতান এই পদবির প্রথম ধারণকারী, যিনি ছিলেন সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের প্রিয়তমা ও একমাত্র বৈধ স্ত্রী। বস্তুত সুলতান সুলাইমান ১৫৩৪ সালে হাসেকি সুলতান পদবির সৃষ্টি করেন। সুলতানের মায়ের জন্য ভালিদে সুলতান পদবি এবং রাজপরিবারের নারীদের নামের শেষে সুলতান পদবি ব্যবহারের প্রথাও একইসময় চালু করা হয়। [২]

হাসেকি সুলতান পদবি কেবল ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকে কাদিনেফেন্দি বা শুধু কাদিন হয়ে দাঁড়ায় উসমানীয় রাজমহিষীদের ব্যবহৃত সর্বোচ্চ পদবি। [৩]

পদবি ধারণকারীরা[সম্পাদনা]

হাসেকি সুলতান পদবি হুররাম সুলতান (যিনি রোক্সেলানা নামেও পরিচিত) ষোড়শ শতকে প্রথম ব্যবহার করা শুরু করেন; তখন তিনি সুলতান সুলাইমানের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। তিনিই ছিলেন সুলাইমানের একমাত্র বৈধ স্ত্রী এবং তাঁর উত্তরসূরী সুলতান দ্বিতীয় সেলিম সহ অন্তত ৪ জন শাহজাদা ও একজন শাহজাদীর (মিহরিমাহ সুলতান) জননী। দ্বিতীয় উসমানীয় সুলতান ওরহানের পর, শত বছরের প্রথা ভেঙে সুলাইমান তার উপপত্নী হুররামকে বিয়ে করেছিলেন। হুররাম উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী সুলতানাদের একজন।

এরপর এই পদবি ব্যবহার করেন নুরবানু সুলতান, যিনি ছিলেন দ্বিতীয় সেলিমের প্রিয় খাসবাদী ও পরবর্তী সুলতান তৃতীয় মুরাদের মা। ১৫৭৫ সালে তৃতীয় মুরাদ সিংহাসনে আরোহণের কিছুদিন পর তার প্রিয় খাসবাদী সাফিয়া সুলতানকে হাসেকি সুলতান করা হয় এবং এমনকি সুলতানের নিজের বোনদের (ইসমিহান সুলতান, গেভহেরহান সুলতানশাহ সুলতান) চেয়ে উচ্চতর পদমর্যাদা দেওয়া হয়।

লেসলি পি. পিয়ার্স এর মতে, সুলতান তৃতীয় মুহাম্মদের শাসনামলে হাসেকি পদবি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি।[৪] অন্যদিকে, সমসাময়িক ঐতিহাসিক মুস্তাফা সেলানিকি তৃতীয় মুহাম্মদের একজন হাসেকির কথা লেখেন, যিনি একজন পুত্রসন্তানের জননী ছিলেন। তবে তিনি ১৫৯৮ সালের জুলাই মাসে প্লেগ রোগে মারা যান।[৫] মুহাম্মদের পুত্র সুলতান প্রথম আহমেদ তাঁর প্রিয় স্ত্রী কোসেম সুলতানকে হাসেকি উপাধি দেন। এই কোসেম দুজন সুলতানের জননী- চতুর্থ মুরাদইব্রাহিমদ্বিতীয় উসমানের একজন হাসেকি ছিল- আয়শে সুলতান। রাজকীয় ভাতার রেজিস্ট্রারে সুলতান চতুর্থ মুরাদের প্রায় পুরো শাসনামল জুড়ে কেবল একজন হাসেকির অস্তিত্ব দেখা যায়৷ তার নামও আয়শে, তবে মুরাদের ১৭ বছর শাসনের শেষ প্রান্তে তাঁর দ্বিতীয় হাসেকির আবির্ভাব ঘটে। [৬] কিন্তু তখনো হাসেকিরা শাহজাদীদের তুলনায় উচ্চতর পদমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। সুলতান ইব্রাহিমের ৮ জন হাসেকি ছিল- তুরহান সুলতান, আসুব সুলতান, মুয়াজ্জেজ সুলতান, আয়শা, মাহিয়েনভার, সিভেকার, সাকবাগি, হুমাশাহ সুলতান[৬] এর মধ্যে প্রথম তিনজনের প্রত্যেকে একজন করে শাহজাদার জননী ছিলেন। এই তিনজন শাহজাদাই ইব্রাহিমের পরবর্তী তিনজন উসমানীয় সুলতান- যথাক্রমে চতুর্থ মুহাম্মদ, দ্বিতীয় সুলাইমান, দ্বিতীয় আহমেদ। চতুর্থ মুহাম্মদের একজন হাসেকি ছিলেন, গুলনুস সুলতান৷ দ্বিতীয় সুলাইমানের কোন হাসেকি ছিল না এবং তাদের ভাই দ্বিতীয় আহমেদের একজন হাসেকি ছিল বলে জানা যায়- রাবেয়া সুলতান। রাবেয়ার পরে হাসেকি সুলতান উপাধি তুলে দেওয়া হয়। তাই উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসে হাসকি সুলতানের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ১৬/১৭ জন।

নাম প্রথম নাম জাতিতত্ত্ব সম্রাজ্ঞী পদের সমাপ্তি মৃত্যু স্বামী
হুররাম সুলতান
خُرَّم سلطان
আলেকজান্দ্রা or
আনাস্তাজ্জা লিসোসকা
রুথেনিয়ান। একজন অর্থোডক্স পুরোহিতের কন্যা ১৫ এপ্রিল ১৫৫৮ প্রথম সুলাইমান
নুরবানু সুলতান
نور بانو سلطان
সিসিলিয়া ভেনিয়ার-বাফো or
র‍্যাচেল or
ক্যালে কার্তানৌ
জন্মানুসারে ভেনিসিয়ো or ইয়াহুদী or গ্রীক ১৫ ডিসেম্বর ১৫৭৪
স্বামীর মৃত্যু
৭ ডিসেম্বর ১৫৮৩ দ্বিতীয় সেলিম
সাফিয়া সুলতান
صفیه سلطان
সোফিয়া আলবেনিয়ান ১৫ জানুয়ারী ১৫৯৫
স্বামীর মৃত্যু
১০ নভেম্বর ১৬১৮ তৃতীয় মুরাদ
কোসেম সুলতান
قسّم سلطان
আনাস্তাসিয়া গ্রীক। তিনোসের একটি দ্বীপের একজন পুরোহিতের কন্যা ২২ নভেম্বর ১৬১৭
স্বামীর মৃত্যু
৩ সেপ্টেম্বর ১৬৫১ প্রথম আহমেদ
আয়েশা সুলতান
عایشه سلطان
অজানা[৭] ১০ মে ১৬২২
স্বামীর পদচ্যুতি
১৬৪০ এর পরে দ্বিতীয় উসমান
আয়েশা সুলতান
عایشه سلطان
অজানা ৮ ফেব্রুয়ারি ১৬৪০
স্বামীর মৃত্যু
১৬৮০ চতুর্থ মুরাদ
তুরহান সুলতান
ترخان سلطان
নাদিয়া ইউক্রেন ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
৪ আগস্ট ১৬৮৩ ইব্রাহিম
মুয়াজ্জেজ সুলতান
معزز سلطان
অজানা[৮] ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
১৬৮৭
আসুব সুলতান
آشوب سلطان
কাটেরিনা অজানা[৮] ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
৪ ডিসেম্বর ১৬৮৯
আয়েশা সুলতান
عایشه سلطان
আয়েশা ক্রিমিয়ান তাতার ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
মাহিয়েনভার সুলতান
ماه انور سلطان
সার্ক্যাশিয়ান ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
সাকবাগী সুলতান লায়লা সার্ক্যাশিয়ান ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
১৬৯৪
সিভেকার সুলতান
شوکار سلطان
মরিয়ম আর্মেনিয়ান ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
১১ সেপ্টেম্বর ১৬৮৮
হুমাশাহ সুলতান
ھما شاہ سلطان
সার্ক্যাশিয়ান ১২ আগস্ট ১৬৪৮
স্বামীর মৃত্যু
২৮ এপ্রিল ১৬৮০
গুলনুস সুলতান
کلنوش سلطان
এভমানিয়া ভোরিয়া গ্রীক ৮ নভেম্বর ১৬৮৭
স্বামীর পদচ্যুতি
৬ নভেম্বর ১৭১৫ চতুর্থ মুহাম্মদ
রাবেয়া সুলতান
رابعه سلطان
অজানা রোম মিল্লেত ৬ ফেব্রুয়ারি ১৬৯৫
স্বামীর পদচ্যুতি
১৪ জানুয়ারী ১৭১২ দ্বিতীয় আহমেদ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Peirce (1993) p.107
  2. Peirce (1993) p. 91
  3. Davis, Fanny (১৯৮৬)। "The Valide"। The Ottoman Lady: A Social History from 1718 to 1918আইএসবিএন 0-313 24811-7 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Peirce (1993) p.104
  5. Ipşırlı, Mehmet (জুন ১৯৭৬)। Mustafa Selaniki's history of the Ottomans। পৃষ্ঠা 172। 
  6. Peirce (1993) p.106–107
  7. Peirce (1993) p.106
  8. A.D. Alderson, The Structure of the Ottoman Dynasty, Clarendon Press, Oxford, 1955, p.83

বই