পদ্মা-শ্রেণীর টহল জাহাজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(পদ্মা–শ্রেণির টহল জাহাজ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শ্রেণি'র সারাংশ
নাম: পদ্মা-শ্রেণী
নির্মাতা: খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড
ব্যবহারকারী:
উপশ্রেণী: সবুজ বাংলা-শ্রেণীর টহল জাহাজ
নির্মিত: ২০১১–বর্তমান
অনুমোদন লাভ: ২০১৩–বর্তমান
পরিকল্পিত: ২৩টি
সম্পন্ন: ১৭টি
সক্রিয়: ১৭টি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার: টহল জাহাজ
ওজন: ৩৫০ টন
দৈর্ঘ্য: ৫০.৪ মিটার (১৬৫ ফু)
প্রস্থ: ৭.৫ মিটার (২৫ ফু)
গভীরতা: ১.৮০ মিটার (৫.৯ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × ডিজেল
  • ২ × শ্যাফট
গতিবেগ: ২১ নট (৩৯ কিমি/ঘ; ২৪ মা/ঘ)
সহনশীলতা: ৭ দিন
লোকবল: ৩৩ জন
রণসজ্জা:
  • ২ × ৩৭ মিমি কামান
  • ২ × ২০ মিমি বিমান-বিধ্বংসী কামান
  • সামুদ্রিক মাইন

পদ্মা-শ্রেণী হচ্ছে বাংলাদেশে নির্মিত টহল জাহাজের শ্রেণী যা বাংলাদেশ নৌবাহিনীবাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। গণচীনের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত প্রতিটি জাহাজ উপকূলীয় অঞ্চলে টহল প্রদান, উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমন, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।[১][২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় উৎস থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ নির্মানের পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০১০ সালের ২ মে খুলনা শিপইয়ার্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাথে পাচটি টহল জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করে যা পরবর্তিতে পদ্মা-শ্রেণি নামে পরিচিত হয়। ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ জাহাজগুলোর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর এই শ্রেণির প্রথম জাহাজ, বানৌজা পদ্মাকে পানিতে ভাসানো হয়, যা পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে যুক্ত হয়। এই শ্রেণির দ্বিতীয় জাহাজ, বানৌজা সুরমাকে পানিতে ভাসানো হয় ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি এবং নৌবহরে যুক্ত হয় ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট। বাকি তিনটি জাহাজ, বানৌজা অপরাজেয়, বানৌজা অদম্যবানৌজা অতন্দ্রকে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়[৩][৪] ও ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ নৌবহরে যুক্ত হয়।[৫]

২০১৬ সালের ১৭ জুলাই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে তিনটি পদ্মা শ্রেণির টহল জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করে। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর এগুলোর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সালের ২০ জুন কোস্ট গার্ডকে তিনটি জাহাজ, সিজিএস সোনার বাংলা, সিজিএস অপরাজেয় বাংলাসিজিএস স্বাধীন বাংলা হস্তান্তর করা হয়।[৬]

২০১৯ সালের ২০ মে, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরও পাচটি টহল জাহাজের নির্মানাদেশ দেয়। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর এই জাহাজগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়।

নকশা[সম্পাদনা]

দেশীয় যুদ্ধজাহাজ নির্মান কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী জাহাজের নকশা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত এই টহল জাহাজের ওজন ৩৫০ টন। এই জাহাজগুলো ৫০.৪ মিটার (১৬৫ ফু) দীর্ঘ, ৭.৫ মিটার (২৫ ফু) প্রশস্থ এবং ৪.১ মিটার (১৩ ফু) গভীরতা বিশিষ্ট। নৌযানগুলো ৪৫ জন নৌসেনা ও কর্মকর্তা নিয়ে একনাগাড়ে এক সপ্তাহ মিশন পরিচালনা করতে পারে। এই জাহাজের সর্বোচ্চ গতি ২৩ নট (৪৩ কিমি/ঘ)।

রণসজ্জা[সম্পাদনা]

পদ্মা-শ্রেণীর জাহাজগুলোর আকার আয়তন অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও এর সক্ষমতা আধুনিক বিশ্বে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। শত্রু জাহাজ মোকাবেলা, চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমনে জাহাজটিতে রয়েছে: ব্যাচ-১:

  • ২টি ৩৭মিমি টুইন ব্যারেল বিমান বিধ্বংসী কামান;
  • ২টি ২০মিমি বিমান বিধ্বংসী কামান;

ব্যাচ-২:

  • ১টি ৪০মিমি বোফোর্স গান (পরবর্তীতে ১টি ৩০ মিমি অ্যাসেলসান স্ম্যাশ রিমোট কন্ট্রোলড গান সংযোজিত হবে);
  • ২টি ১২.৭মিমি সিআইএস-৫০ বিমান বিধ্বংসী মেশিনগান;
  • সামুদ্রিক মাইন;
  • ৬টি কিউডব্লিউ-২ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণ যোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।[৭]

জাহাজসমূহ[সম্পাদনা]

নাম নিশান নির্মাতা নির্মাণাদেশ নির্মাণ প্রবর্তন হস্তান্তর কমিশন টীকা
বাংলাদেশ নৌবাহিনী
বানৌজা পদ্মা পি৩১২ খুলনা শিপইয়ার্ড ২ মে, ২০১০ ৫ মার্চ, ২০১১ ৮ অক্টোবর, ২০১২

[৮]

- ২৪ জানুয়ারি, ২০১৩

[৯]

সক্রিয়
বানৌজা সুরমা পি৩১৩ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৩ ৬ মে, ২০১৩

[১০]

২৯ আগস্ট, ২০১৩

[১১]

বানৌজা অপরাজেয় পি২৬১ - ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

[১২]

বানৌজা অদম্য পি২৬২ -
বানৌজা অতন্দ্র পি২৬৩ -
বানৌজা শহীদ দৌলত পি৪১১ ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ - ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ - - পরীক্ষাধীন
বানৌজা শহীদ ফরিদ পি৪১২ - ২৪ জুন, ২০২২ - -
বানৌজা শহীদ মহিবুল্লাহ পি৪১৩ - ২৭ জুলাই, ২০২২ - -
বানৌজা শহীদ আক্তার উদ্দিন পি৪১৪ - - - - নির্মাণাধীন
বানৌজা বিষখালী পি৪১৫ - - - -
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড
বিসিজিএস সোনার বাংলা পি২০৪ খুলনা শিপইয়ার্ড ১৭ জুলাই, ২০১৬

[১৩]

২ অক্টোবর, ২০১৬ ২৩ মে ২০১৮ ২০ জুন, ২০১৯

[৬]

- সক্রিয়
বিসিজিএস অপরাজেয় বাংলা পি২০৫ ৫ আগস্ট, ২০১৮ -
বিসিজিএস স্বাধীন বাংলা পি২০৬ - -

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "First-ever Warship Built in Bangladesh Operating in BN Fleet"। W3.khulnashipyard.com। ২০১৩-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬ 
  2. "'Padma' latest Bangladesh Navy warship"। bdnews24.com। ২০১৩-০১-২৪। ২০১৩-১২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬ 
  3. "Archived copy"। ২০১৫-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৫ 
  4. "Archived copy"। ২০১৩-১২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৫ 
  5. "Archived copy"। ২০১৭-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৫ 
  6. "Khulna Shipyard hands over 3 inshore patrol vessels to Coast Guard"The Daily Star। ২১ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৯ 
  7. "Bangladesh still aiming for sub purchases"upi.com। United Press International, Inc। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫ 
  8. "First Bangladesh made warship launched"। The Daily Star। ৯ অক্টোবর ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  9. "'Padma' latest Bangladesh Navy warship"। bdnews24.com। ২৪ জানুয়ারি ২০১৩। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  10. "Archived copy"। ২০১৩-০৮-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-২৪ 
  11. "Archived copy"। ২০১৫-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-২৪ 
  12. "4 warships including somoudra joy commissioned"। bdnews24.com। ১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৭ 
  13. "INSHORE PATROL VESSEL"Khulna Shipyard। ৯ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৮