গাজি হুসরেভ-বেগ মসজিদ

স্থানাঙ্ক: ৪৩°৫১′৩৩″ উত্তর ১৮°২৫′৪৪.৫″ পূর্ব / ৪৩.৮৫৯১৭° উত্তর ১৮.৪২৯০২৮° পূর্ব / 43.85917; 18.429028
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গাজি হুসরেভ-বেগ মসজিদ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
অবস্থান
অবস্থানসারায়েভো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
স্থানাঙ্ক৪৩°৫১′৩৩″ উত্তর ১৮°২৫′৪৪.৫″ পূর্ব / ৪৩.৮৫৯১৭° উত্তর ১৮.৪২৯০২৮° পূর্ব / 43.85917; 18.429028
স্থাপত্য
স্থপতিআসেম ইয়াসির আলি "আলাউদ্দিন"
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীঅটোমান স্থাপত্যকলা
সম্পূর্ণ হয়১৫৩২
বিনির্দেশ
গম্বুজসমূহ
গম্বুজের উচ্চতা (বাহিরে)২৬ মিটার
গম্বুজের ব্যাস (বাহিরে)১৩ মিটার
মিনার
মিনারের উচ্চতা৪৭ মিটার

গাজি হুসরেভ-বেগ মসজিদ (বসনীয়:Gazi Husrev-begova Džamija, তুর্কি: Gazi Hüsrev Bey Camii), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো শহরের সুপ্রাচীন মসজিদ। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মসজিদটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বৃহত্তম ঐতিহাসিক মসজিদ এবং বলকান অঞ্চলে অটোম্যান সাম্রাজ্য ও স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন। নির্মাণকাজ শুরুর দিন থেকেই এটা সারায়েভো শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং অদ্যাবধি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মুসলিম সমাজের সম্মিলিত হওয়ার প্রধান মসজিদ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। মসজিদটি সারায়েভো শহরের স্টারিগ্রাড পৌরসভার বাসারসিজা মহল্লায় অবস্থিত এবং শহরের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন হওয়ায় প্রতিবছর বহু পর্যটক এই মসজিদ দর্শনে আসেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মসজিদটি বসনিয়াতে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে ৯৩৭ হিজরি সনে (১৫৩০/১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে) নির্মিত হয়েছিল। বসনিয়ার তৎকালীন অটোমান প্রশাসক গাজি হুসরেভ বেগ সারায়েভো শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হুসরেভ বেগ-এর ওয়াকফের শহর উন্নয়নের পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদের স্থাপনায় একটি মক্তব এবং মাদ্রাসা (ইসলামী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়), একটি খিলানযুক্ত বাজার, একটি হাম্মাম বা গণস্নানাগার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মসজিদের মূল স্থপতির নাম এখনো অজানা, ধারণা করা হয় বিখ্যাত মুসলিম স্থপতি মিমার সিনানকে এই মসজিদের মূল স্থপতির দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ ইসলামী স্থাপত্যের ইতিহাসবিদ একমত পোষণ করেন যে, অটোম্যান সম্রাজ্যের ইরানি বংশোদ্ভূত স্থপতি আসেম ইয়াসির আলী "আলাউদ্দিন" এই মসজিদের সম্ভাব্য নির্মাতা ছিলেন। সম্ভবত মিমার সিনান যখন বসনিয়ায় ছিলেন, তখন নিজেই এই মসজিদের নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধান করেছিলেন।[১] এছাড়াও ঐতিহাসিক দলিলগুলিতে, গাজি হুসরেভ বেগের অনুরোধে সেসময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র রাগুসা'র রাজমিস্ত্রিদের এই মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৮৯৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সময়কালে, বিশ্বের প্রথম মসজিদ হিসেবে গাজি হুসেরেভ-বেগ মসজিদে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয় এবং আলোকসজ্জা করা হয়।[২]

স্থাপত্য[সম্পাদনা]

মসজিদটি বহু-গম্বুজ বিশিষ্ট ও স্থান সংকুলানের যৌগিক নকশার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর নকশা ও নির্মাণশৈলী ধ্রুপদী অটোম্যান স্থাপত্যকলার (কখনও কখনও আদি ইস্তাম্বুলীয় নকশা হিসাবে পরিচিত) প্রাথমিক যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। মসজিদের সালাত আদায়ের মূলঘর বা হলরুমটি আয়তাকার। এই ঘরের চারদিকে উঁচু দেয়াল রয়েছে। এই চার দেয়ালের উপরে পেন্ডেন্টিভ বা ঝুলন্ত দেয়ালের উপরে মূল গম্বুজ স্থাপিত হয়েছে, যা এই মসজিদের কেন্দ্রীয় কাঠামো। মসজিদের ক্বিবলার দিকটি অতিরিক্ত আয়তাকার জায়গার সাহায্যে প্রসারিত এবং দুটি উচ্চ মুকার্ন অলংকরণ বসানো আধা গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মসজিদের মুখ্যস্থান হিসেবে চিহ্নিত, ক্বিবলার জন্য বর্ধিত অংশে মিহরাব, মিম্বর, ইমাম বসার স্থান এবং একটি বিশাল খিলান রয়েছে। সালাত আদায়ের মূলকক্ষের বাম এবং ডানদিকে, কিবলা পাশ থেকে দূরে তেতিমা নামক অপেক্ষাকৃত কম আয়তনের ফাঁকা স্থান রয়েছে। প্রতি তেতিমার উপরে একটি করে মোট দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে।

মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখলে প্রধান গম্বুজের আধিপত্য দৃশ্যমান হয়। গম্বুজের পাশে আজান প্রচারের জন্য একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথের দুইপাশে প্রবেশদ্বারে চারটি প্রশস্ত কলামসহ ছাউনি দেয়া বারান্দা রয়েছে। বারান্দার উপর ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে, এর মধ্যে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অন্য গম্বুজগুলির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় করে তৈরী করা হয়েছে। প্রবেশদ্বার ও কলামগুলির ভিত্তি সমূহ বিভিন্ন মুকার্ন অলংকরণে সজ্জিত রয়েছে।[৩]

ধ্বংস এবং পুনর্নির্মাণ[সম্পাদনা]

বসনিয়ার যুদ্ধে সারাজেভোর অবরোধের সময়, সার্বীয় বাহিনী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতবে নগরীর সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলি যেমন: যাদুঘর, গ্রন্থাগার এবং মসজিদগুলিকে ধ্বংস করে। বৃহত্তম ও সর্বাধিক পরিচিত স্থান হিসেবে এই মসজিদটিও সার্বীয় বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছিল। সার্বীয় বাহিনী মসজিদটিকে ধ্বংস করেছিল।[৩]

বসনিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরে ১৯৯৬ সালে বিদেশী অনুদানে মসজিদটির পুনর্নির্মাণ শুরু হয়েছিল। এসময় অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান অলঙ্করণের পুরানো এবং বিবর্ণ আস্তরণ, ক্যালিগ্রাফি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল কারণ এসকল ঐতিহাসিক ক্যালিগ্রাফি ও আস্তরণগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার আর পাওয়া যায় নি। ২০০১/২০০২ সালে বসনিয় ক্যালিগ্রাফার হাজিম নুমানাজিচ সম্পূর্ণ নতুন করে মসজিদের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি ও নকশা করেছিলেন। মসজিদের অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাজসজ্জার বেশিরভাগ মুরিশ স্থাপত্যশৈলী দ্বারা প্রভাবিত ও নির্মিত ছিল, যার কিছু নিদর্শন কেবল মসজিদের প্রবেশমুখের প্রবেশদ্বা্রে অবশিষ্ট রয়েছে।[৩]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Nihad Čengić - Begova džamija kao djelo umjetnosti" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৬ 
  2. Izvor: Dnevni avaz, br. 4297, godina XII, nedjelja, 9.9.2007., Panorama, str. 14 (ইংরেজি)
  3. Visit Sarajevo। "Gazi Husrev Bey's Mosque" (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]