উপকূলীয় ভাঙন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারী সামু‌দ্রিক ভাঙন: ইংল‌্যান্ডে‌র পূর্বাঞ্চ‌লে অব‌স্থিত হান্সট‌্যানটনের উপকূলীয় ভাঙন
ভারতের কেরালার ভা‌লিয়াথুরার সামু‌দ্রিক ভাঙন
চীনের ডে‌লিয়ানে, লিয়াও‌নিং অঞ্চ‌লের জিন‌সিথান কোস্টাল ন‌্যাশনাল জিওপা‌র্কে

উপকূলীয় ভাঙন বল‌তে প্রবাহ, মহাসাগরীয় স্রোত বা জোয়ার-ভ‌াটা, পা‌নি‌তে বাতা‌সের স্রোত, পা‌নিবা‌হিত বরফ এবং ঝ‌ড়ের অন‌্যান‌্য প্রভা‌ে‌বের কার‌ণে অন‌্যান‌ ভূ‌মি হারা‌নো বা স্থানান্ত‌রিত হওয়া অথবা তট‌রেখার প‌লি-পাথরের পা‌নিতে ত‌লি‌য়ে যাওয়া‌কে বােঝায়।[১][২][৩] উক্ত উপাদানগু‌লোর ক্রিয়ায় উপকূলীয় ভূমি দূর্বল হয়ে পড়লে এবং উপকূলীয় ভাঙন ঘ‌টে। জোয়ার-ভাটা, মৌসূম এবং অন‌্যান‌্য ছোট পর্যায়বৃত্ত বিষয়গু‌লোর মাধ‌্যমে ভূ‌মির দি‌কে তট‌রেখার এ‌গি‌য়ে আসা আপাত মাত্রায় মাপা যায়।[৪] উপকূলীয় ভাঙন হাই‌ড্রো‌লিক্স ক্রিয়া, ঘর্ষণ এবং বায়ু, পা‌নি এবং অন‌্যান‌্য প্রাকৃ‌তিক-অপ্রাকৃতিক বি‌ভিন্ন উপাদান কর্তৃক জারণের কার‌ণে ঘট‌তে পা‌রে।[৪]

উচু মৃ‌ত্তিকাস্তরহীন উপকূ‌লে, উপকূলীয় ভাঙনের ফ‌লে ভাঙন র‌ক্ষিত অঞ্চলগু‌লো‌তে উচু মৃ‌ত্তিকাস্তর ‌তৈ‌রি হ‌তে পারে। উপকূলীয় ভাঙ‌নে হালকা অঞ্চল শক্ত অঞ্চলের চে‌য়ে তুলনামূলক দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যার ফ‌লে সুড়ঙ্গ, সেতু এবং স্ত‌ম্ভের ম‌তো আকা‌রের ভূ‌মি গ‌ঠিত হ‌তে পা‌রে। সম‌য়ের সা‌থে সা‌থে উপকূলও সমান হ‌য়ে যায়। ভাঙ‌নের ফ‌লে কঠিন অঞ্চলের ক্ষয়প্রাপ্ত প‌লি দ্বারা নরম অঞ্চলগু‌লো ভ‌রে যায় এবং ক‌ঠিন অঞ্চলে মৃত্তিকাস্তর গঠন লোপ পায়।[৫] প্রবল বাতাস, নরম বালি এবং নরম মৃ‌ত্তিকা স্তর যেসব অঞ্চ‌লে বিদ‌্যমান সেগুলো‌তে ঘর্ষণ বে‌শি সংঘ‌টিত হয়। মি‌লিয়ন মি‌লিয়ন ধারালো বালির দানার বাতা‌সের সা‌থে প্রবাহিত হওয়ার ফ‌লে এক‌টি সেন্ডব্লা‌স্টিং ই‌ফেক্ট দেখা দেয়। এ‌টি মৃ‌ত্তিকাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হ‌তে, মসৃণ এবং প‌রিষ্কার কর‌ে। ঘর্ষণ বল‌তে এ‌ক্ষে‌ত্রে বোঝায় যে, মৃ‌ত্তিকাস্তর‌ে‌র অন‌্য মৃ‌ত্তিকাস্তর বা ধারালো বালির দানা যা‌ন্ত্রিক ক্রিয়া দ্বারা চূর্ণন বা অ‌তিবা‌হিত হওয়া।

উদাহরণ[সম্পাদনা]

ছোট মাত্রার ভাঙ‌নে এর ফ‌লে প‌রিত‌্যাক্ত রেললাইন ধ্বংস হ‌য়ে‌ছে

নিউ সাউথ ও‌য়েলস এর কেন্দ্রীয় উপকূলীয় অঞ্চ‌লে ওম‌বেরাল এর খাড়া উচুঁ মৃ‌ত্তিকাস্তরের এক‌টি উপকূ‌লে এক‌টি উপকূ‌লে ভাঙন ঘ‌টে, যেখা‌নে কিনারার মৃ‌ত্তিকাস্ত‌রের উপ‌রে নি‌র্মিত বা‌ড়িগু‌লো পা‌নি‌তে ত‌লি‌য়ে যায়। বা‌ড়িগু‌লো ভিত যে প্রধান পাল‌লিক পদা‌র্থগু‌লোর উপর ছিল পানির ঢ়েউ কর্তৃক সেগু‌লোর ভাঙনের কার‌ণে এ‌টি ঘ‌টে।[৬]

ডানউইচ, ইং‌রেজ‌দের মধ‌্যযুগীয় পশম বা‌ণি‌জ্যের রাজধানী ঢেউ কর্তৃক মৃ‌ত্তিকার পুনরায় বিভাজনের কার‌ণে ক‌য়েক শত বছ‌রে বিলুপ্ত হ‌য়ে যায়। মানু‌ষের কা‌ন্ডের ফ‌লে উপকূলীয় ভাঙন বৃ‌দ্ধি পে‌তে পা‌রে, যেমন: ইংল‌্যান্ডে‌র ডেভোন -এ হোলসেন্ডস নামক এক‌টি গ্রামের সাম‌নের উপসাগর অমসৃণ নুড়ি পঙ্কোদ্ধারের কারণে ১৯১৭ সা‌লে এক বছ‌রের পা‌নি‌তে ভে‌সে যায়।

ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল, হালকা মূ‌ত্তিকাস্ত‌রের কিনারা সম্পন্ন জনবহুল উপকূল এ প্রায়ই উপকূলীয় ভাঙন এবং বা‌ড়িঘর ক্ষ‌তিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘ‌টে।[৭] ডে‌ভিল'স স্লাইড, সানতা বারবানা, অ‌্যান্সেনাডার উত্তর উপকূল এবং মা‌লিবু নিয়‌মিতভা‌বে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়।

ইংল‌্যা‌ন্ডের হামবার অ‌্যাস্টুয়া‌রি-এর হোল্ডারনেস হালকা মৃ‌ত্তিকাস্তর বি‌শিষ্ট কিনারা এবং শ‌ক্তিশালী ঢেউর জন‌্য এ‌টি ইউ‌রো‌পের সব‌টে‌য়ে দ্রুত ভাঙ‌নের শিকার হওয়া উপকূলসীমার এক‌টি। উপকূ‌লে নিয়ন্ত্রণ কর‌তে গ্রো‌য়েনসহ অন‌্যান‌্য কৃ‌ত্রিম পদক্ষেপগুলো এই প্রক্রিয়াটিট‌কে উপকূ‌লের আ‌রো অঞ্চল জু‌ড়ে সম্প্রাসারণ ক‌রে। লোঙ্গ‌সোর ড্রিফ্ট বা‌লির উপকূ‌লে ভাঙন ঘটায়, যার ফ‌লে সেগু‌লো আ‌রো দূর্বল হ‌য়ে প‌ড়ে। ডাভা‌রের সাদা উপকূলও ক্ষ‌তির শিকার হ‌য়ে‌ছে।

নেনার্থ কেভ ওয়া‌শিংটন -এর উপকূলীয় সীমানার ভাঙন হার প্রতি বছ‌রে ১০০ ফুট বা তারও বে‌শি, তাই এই উপকূল‌কে ওয়‌াশ এয়‌য়ে ‌বিচ (Wash Away Beach) বা ভে‌সে যাওয়া উপকূল ব‌লে অ‌ভি‌হিত করা হয়। মূল শর‌রের অ‌নেকাংশ পা‌নি‌তে ভে‌সে যায়। এ‌টি‌কে যুক্তরা‌ষ্ট্রের পশ্চিম উপকূ‌লের সব‌চে‌য়ে দ্রুত ভাঙ‌নের শিকার উপকূল বলা হয়। দৃঢ় প্রক্রিয়ার মাধ‌্যমে এই ভাঙনের গ‌তি হ্রা‌সের পদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌য়ে‌ছে ব‌লে ২০১৮ সা‌লে উ‌ল্লেখ করা হয়।[৮]

মাল্টার ক‌্যালকারা‌তে অব‌স্থিত ফর্ট রিকা‌সো‌লির যেখা‌নে ভাঙন সংঘ‌টিত হ‌য়ে‌ছে সেখ‌া‌নে ক্ষ‌তির চিহ্ন পাওয়া যা‌চ্ছে।‌

মাল্টার ১৭শ শতা‌ব্দির এক‌টি ঐ‌তিহা‌সিক উপকূল, [Fort Ricasoli[|ফর্ট রিকা‌সো‌লি]] ভাঙ‌নের হুম‌কির সম্মখীন হচ্ছে। এর অন্তরী‌পে এক‌টি ত্রু‌টি থাকায় এ‌টি ভাঙন প্রবণ। এখানকার ভূ‌মির ভাঙ‌নের ফ‌লে ই‌তোম‌ধ্যেই এক‌টি দুর্গ দেয়া‌লের ছোট এক‌টি অংশ পা‌নি‌তে দ‌লি‌য়ে যায় এবং অন‌্যান‌্য দেয়ালগু‌লো‌তেও ফাটল ধ‌রে‌ছে।

‌স্পে‌নের এল কাম্প‌লো -‌তে অব‌‌স্থিত খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতা‌ব্দি‌তে প্রতি‌ষ্ঠিত রোমান ফার্ম ফিশ নিকটবর্তী স্পোর্ট হার্ভার নির্মাণের কার‌ণে এ‌টি আ‌রো ত্রু‌টিপূর্ণ হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।[৯]

উপকূলীয় প্রক্রিয়াসমূহ[সম্পাদনা]

হাই‌ড্রো‌লিক ক্রিয়া[সম্পাদনা]

ঢেউ যখন কিনারার মাথ‌ায় এ‌সে আঘাত ক‌রে উপকূ‌লের ফাট‌লে বাতাস সং‌ক্চেন ক‌রে তখন হাই‌ড্রো‌লিক‌ক্রিয়া ক্রিয়া সংঘ‌টিত হয়। এ‌টি সেখানকার মৃ‌ত্তিস্ত‌রের উপর চাপ প্রদান ক‌রে দ্রুত সে‌টি‌কে ভে‌ঙে ফে‌লে মৃ‌ত্তিকাকণাগু‌লো অপসারণ ক‌রে। সময়ের সা‌থে সা‌থে এই ফাটল‌টি বড় হতে পা‌রে, ফ‌লে কখ‌নো কখ‌নো গুহা তৈ‌রি হ‌তে পা‌রে। ভে‌ঙে যাওয়া মৃ‌ত্তিকাস্তর সমু‌দ্রের নি‌চে ত‌লি‌য়ে যায় এবং তারপর সেগুলো ঢেউয়ের অ‌ধিকতর ক্রিয়ার উপর নির্ভর ক‌রে।

ঘষর্ণ[সম্পাদনা]

ঢেউয়ের কার‌ণে হালকা মৃ‌ত্তিকাস্তরের ধ্বংসাব‌শেষের আলগা অংশগু‌লোর (ছোট ছোঠ নু‌ড়ি) এক‌টি আ‌রেক‌টার সা‌থে সংঘর্ষে‌র মাধ‌্যমে চুর্ণন ঘট‌লে এবং হ্রাস পেয়ে দ্রুত ছোট, মসৃণ এবং গোলাকার হ‌তে থাক‌লে তখন ঘর্ষণ ঘ‌টে। ছোট ছোট নু‌ড়িগু‌লোর উপকূ‌লের আগার ভি‌তের সা‌থেও সংঘর্ষ ঘ‌টে এবং উপকূ‌লের মৃ‌ত্তিকাস্তর‌কে ছোট ছোট টুকরায় ভে‌ঙে যায় অথবা সেন্ড‌পেপা‌রিং‌য়ের সা‌থে সাদৃশ‌্যপূর্ণ জারণ প্রভাব দেখা যে‌তে পা‌রে।

দ্রবীভবন[সম্পাদনা]

দ্রবীভবন হ‌লো এমন এক‌টি প্রক্রিয়া যা‌তে চক এবং চূনাপাথ‌রের ম‌তো পাথর দ্রবিভূত হয়।[১০]

যা‌ন্ত্রিক ক্ষয়[সম্পাদনা]

য‌া‌ন্ত্রিক ক্ষয়, জারণ হি‌সে‌বেও অ‌ভি‌হিত এই প্রক্রিয়া‌টি যখন ঢেউ কিনারার অ‌ভিমু‌খে ঝা‌পি‌য়ে প‌ড়ে ধী‌রে ধী‌রে ভাঙন ঘটায় তখন সংঘ‌টিত হয়। সমুদ্র কিনারায় আঘাত হান‌লে নু‌ড়ি পাথরগু‌লো সেই কিনারার চে‌য়ে উচু কিনারার অ‌ভিমুখের নু‌ড়ি পাথ‌রের অং‌শে আঘাত ক‌রে এবং সেগু‌লো‌কে ভাঙ‌ে, যা একই প্রবাহ ক্রিয়ায় বা ঘর্ষণে অংশ নি‌তে পা‌রে।

জারণ[সম্পাদনা]

জারণ বা দ্রবিভূবন অথবা রাসায়‌নিক আবহাওয়া যখন সমূদ্রে‌র পিএইচ মান (‌পিএইচ মান ৭.০ এর নি‌চে) কিনারার অ‌ভিমুখের পাথরগু‌লো‌র ক্ষয় ক‌রে তখন সংঘ‌টিত হয়। মোটামুটি উচ্চ মাত্রার পিএইচ সহনশীল চুনাপাথ‌রের কিনারা অ‌ভিমু‌খ এই প্রক্রিয়ায় বিশেষভা‌বে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়। ঢেউ‌য়ের ক্রিয়া কর্তৃক প্রতি‌ক্রিয়াশীল পদার্থ হ্রাস করার মাধ‌্যমে প্রতিাক্রায়ার হার বৃ‌দ্ধি পায়।

উপকূলীয় ভাঙ‌নের কারণ[সম্পাদনা]

প্রাথ‌মিক কারণ[সম্পাদনা]

ওয়েলসের টেরাস উপকূ‌লে সামুদ্র-বা‌লিয়া‌ড়ি ভাঙন

উপকূলীয় ভাঙ‌নের ক্ষ‌েত্রে পা‌নি প্রবাহের ক্ষমতা বি‌ভিন্ন বিষ‌য়ের উপর নির্ভর ক‌রে।

সমু‌দ্রের মু‌থখামু‌খি ভূ‌মির কঠরতা (অথবা বৈরত‌্য, ভাঙন প্রবণতা) ভূ‌মির ক্ষমতা, ফাটলের উপ‌স্থি‌তি, ফাটল এবং অ-সং‌যোজক পদা‌র্থ যেমন, প‌লি এবং বা‌লির স্ত‌রের উপর নির্ভরশীল।

যে হা‌রে উচ্চ ও নিম্নসীমা কিনারার মধ‌্যবর্তী কিনারার বর্জিতাংশ হ্রাস হয় তা উপকূ‌লে আসা প্রবাহের উপর নির্ভর ক‌রে। বর্জিতাংশ স্তর থে‌কে পদার্থ হ্রাস কর‌তে এই শ‌ক্তি‌টিকে এক‌টি জ‌টিল পর্যা‌য়ে পৌঠা‌তে হয়। বর্জিতাংশ স্তর অ‌নেক অটল হ‌তে পা‌রে এবং সে‌টি অপসা‌রিত হ‌তে ক‌য়েক বছর লাগ‌তে পা‌রে।

উপকূলসমূহ উচ্চ ও নিম্নসীমা কিনারার মধ‌্যবর্তী কিনারায় প্রবাহ ক্ষমতা হ্র‌াস ক‌রে এবং সংলগ্ন ভূ‌মি‌কে নির্ধা‌রিত প‌রিমাণ সুরক্ষা প্রদান করে।

উচ্চ ও নিম্নসীমা কিনারার মধ‌্যবর্তী কিনারা স্থিরতা এবং তার নি‌চে ধাবিত না হওয়ার সুরক্ষা ব‌্যবস্থা। একবার স্থির হ‌য়ে গে‌লে সাধারণত উচ্চ ও নিম্নসীমা কিনারার মধ‌্যবর্তী কিনারা বিস্তৃত হয় এবং প্রবাহ ক্ষমতা হ্রা‌সে বেব‌শি কার্যকর হয়। শুধু কিছু অল্প শ‌ক্তিশালী ঢেউ পৌছা‌তে পা‌রে। উপকূ‌লের নি‌চে অব‌স্থিত উচ্চ ও নিম্নসীমা কিনারার মধ‌্যবর্তী কিনারা থে‌কে পদার্থ উ‌ত্তোলণ ব‌্যবস্থা এক‌টি উপকূ‌লের স্থিরতা নি‌শ্চিত ক‌রতে সহায়ক।

সংলগ্ন ব্যাথিমেট্রি বা সমদ্রত‌লের রূপরেখা উপকূলে পৌছা‌নো প্রবাহ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে এবং উপকূলীয় ভাঙ‌নে‌র হা‌রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেল‌তে পা‌রে। শোল এবং‌ বারগু‌লো ত‌টে ঢেউ‌য়ের পৌছা‌নে‌ার পূ‌র্বে ঝ‌ড়ের ঢেউ সৃ‌ষ্টি ক‌রে সে‌টির ক্ষমতা নষ্ট ক‌রে উপকূলীয় ভাঙ‌নেরহাত থে‌কে অ‌নেক সময় সুরক্ষা প্রদাস ক‌রে। সমুদ্রপৃ‌ষ্ঠের প্রগাতশীল আবহাওয়া প্রদা‌নের মাধ‌্যমে শোল এবয় বারগু‌লোর অবস্থা‌নের প‌রিবর্তনের ফ‌লে তরটর সা‌থে উপকূল বা কিনারার অবস্থা‌নেরও প‌রিবর্তন হ‌তে পা‌রে।[১১]

উপকূলীয় ভাঙন বৈ‌শ্বিক সমুদ্রপৃ‌ষ্ঠের উচ্চতা খুবই প্রভাব ফেল‌ছে। যুক্তরা‌ষ্ট্রের পূর্ব সমুদ্রতী‌রে উপকূলীয় ভাঙন বৃ‌দ্ধির প্রভাব দেখা দি‌য়ে‌ছে। ফ্লো‌রিডার ম‌তো স্থানগু‌লো‌তে এই বৃ‌দ্ধি পাওয়া উপকূলীয় ভাঙন অনুভূত হয়ে‌ছে। ফ্লো‌রিডা এবং তার স্বতন্ত্র কাউ‌ন্টিগু‌লো এর প্রতি‌ক্রিয়া স্বরূপ ভাঙ‌নে হারা‌নো বা‌লি পুনরায় পূর্ণ কর‌তে বা‌জেট বৃ‌দ্ধি ক‌রে‌ছে, যা ভ‌্রমণকারী‌দের আক‌র্ষিত ক‌রে এবং ক‌য়েক বি‌লিয়ন ডলা‌রের পর্যটন শিল্পগু‌লো‌র হন‌্য সহায়তাপূর্ণ।

মাধ‌্যমিক কারণসমূহ[সম্পাদনা]

  • আবহাওয়া এবং পরিবহন স্লপ প্রক্রিয়া।
  • স্লপ হাই‌ড্রো‌লো‌জি
  • উ‌দ্ভিদ সংক্রান্ত পরি‌বেশ
  • কিনারার পাদেশের ভাঙন
  • কিনারার পাদরদ‌শে প‌লি জমা
  • কিনারার পাদ‌দে‌শে প‌লি জমার এবং প‌ি‌র বহ‌নের ‌ক্ষে‌ত্রে বাধা
  • মানু‌ষের কার্য়ক্রম

অন‌্যান‌্য কারণ[সম্পাদনা]

  • সম্পদ নিষ্কাশন
  • উপকলীয় ব্যবস্থাপনা

‌নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি[সম্পাদনা]

উপকূলীয়রভাঙ‌নের তিন‌টি সাধারণ রূপ র‌য়ে‌ছে। এগু‌লো হ‌চ্ছে- হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণ, শক্ত ভাঙন নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানান্তর।

শক্ত ভাঙন নিয়ন্ত্রণ[সম্পাদনা]

শক্ত ভাঙন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধ‌তি হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির চে‌য়ে বে‌শি স্থায়ী সমাধান দেয়। এ‌টি ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হওয়া ক্ষয় সহ‌্য কর‌তে পা‌রে না এবং এ‌টি মেরামত বা পু্নঃ‌নির্মাণ করার প্রয়োজন হয়। সমুদ্রপ্রাচীর এবং কা‌ঠের বাঁ‌ধের গড় স্থা‌য়িত্ব কাল যথাক্রমে ৫০-১০০ বছর এবং ৩০-৫০ বছর।[১২] এ‌গু‌লোর আ‌পে‌ক্ষিক ভা‌লো কার্যকা‌রিতার জন‌্য এ‌দের‌কে ভাঙ‌নের চূড়ান্ত সমাধান ব‌লে ধারণা করা হয়। সমুদ্রপ্রাচীর উপকূ‌লে জনগ‌ণের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত ক‌রে এবং উপকূ‌লের প্রাকৃ‌তিক প‌রি‌বেশ প‌রিবর্তন ক‌রে। কা‌ঠের বাঁধও উপকূ‌লের প‌রি‌বেশ বাধাগ্রস্ত হয়। কেউ কেউ ম‌নে করেন যে, কা‌ঠের বাঁধ বিচ না‌রিশ‌মেন্ট প্রজেক্টগু‌লোর মধ‌্যবর্তী সময় কাস‌য়ে আন‌তে পা‌রে, য‌দিও সে‌টিকে বিচ নারিশমেন্ট এর সমাধান হি‌সে‌বে বি‌বেচনা করা হয় না।[১৩] এছাড়াও সসুদ্রপ্রাচীরের রক্ষনাবেক্ষণ ব‌্যায়বহুল এবং ক‌ঠিন এবং যথাযথ ভা‌বে তৈ‌রি না কখ‌নো কখ‌নো সে‌টি উপকূ‌লের অ‌ধিকতর ক্ষ‌তি সাধন কর‌তে পা‌রে।[১৪]

বৃক্ষ রোপণ এবং বিদ‌্যমান উ‌দ্ভিকু‌লের যেমন, মেন‌গ্রোভ বন এবং প্রবাল-প্রাচীরের প‌রিচর্যা এগু‌লো শক্ত ভাঙন‌ নিয়ন্ত্রণ এর প্রাকৃ‌তিক রূপ।

হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণ[সম্পাদনা]

হা‌রি‌কেন সেন্ডির সময় সিব‌্যাগ দেওয়া উপকূল

হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণ কৌশল ভাঙ‌নের প্রভা‌বের গ‌তি হ্রাস করার সাম‌য়িক ব‌্যবস্থাপনা হি‌সে‌বে নি‌র্দেশিত। এই ব‌্যবস্থাপনার ম‌ধ্যে সিব‌্যাগ এবং বিচ না‌রিশমেন্ট স্থায়ী সমাধান বা দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান নয়।[১২] উপকূল আচঁড়া‌নো অথবা বিচ বুল‌ডোজিং কো‌নো স্থাপ‌ত্যের ভিত রক্ষায় সে‌টির সাম‌নে এক‌টি কৃ‌ত্রিম বা‌লিয়া‌ড়ি সৃ‌ষ্টি ক‌রে। ১‌মে-১৫ ন‌ভেম্বর কচ্ছ‌পের বাসা বাধার এই মৌসু‌মে বিচ বুল‌ডোজিং যুক্তরাষ্ট্র ফেডা‌রেল রিজার্ভ কর্তৃক স্থ‌গিতা‌দেশ র‌য়ে‌ছে।[১৫] অ‌ধিকাংশ সাধারণ হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণ ব‌্যবস্থাপনার ম‌ধ্যে র‌য়ে‌ছে বিচ না‌রিশ‌মেন্ট কার্যক্রম। এই কার্যক্রমগু‌লো ম‌ধ্যে র‌য়ে‌ছে ভাঙ‌নে হারা‌নো পুনঃস্থাপনার জন‌্য বা‌লি পঙ্কোদ্ধার এবং উপকূ‌লে স্থানান্তর।[১২] বা‌লি ভে‌সে যাওয়া এবং প্রায়ই বড় বড় ঝড় হওেয়া অঞ্চলগু‌লো ম‌তো কিছু ক্ষে‌ত্রে বিচ না‌রিশ‌মেন্ট উপযুক্ত পদ‌ক্ষেপ নয়।[১৪] ডাইন‌া‌মিক রি‌ভেট‌মেন্ট, যাতে প্রাকৃ‌তিক ঝড় প্রবণ উপকূ‌লের বৈ‌শিষ্ট‌্য অনুকর‌ণের জন‌্য পাথর ব‌্যবহ‌ার করা হয়। খোলা উপকূল সীমানার ম‌তো উচ্চ শ‌ক্তি প‌রি‌বেশ সে‌টি হালকা ভাঙন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প হ‌তে পা‌রে।[১৬]

পুনঃস্থাপন[সম্পাদনা]

উপকূল থেকে দূরে যেকোনো বা‌ড়ির অবকাঠামো পুনঃস্থাপন করাও একটি উপায়। উভয় পূর্ণ এবং আ‌পে‌ক্ষিক সমুদ্রপৃ‌ষ্ঠের উচ্চতা এবং ভাঙ‌নের প্রকিয়াসমূহ‌কে পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় বি‌বেচনা করা হয়। পুনঃস্থাপন সাধারণত সমুদ্রপৃ‌ষ্ঠের উচ্চতা এবং স্থাপ‌ত্যের ভূ-কাঠামোর উপর নির্ভর ক‌রে স্থাপন‌া‌টি‌কে সমুদ্র অল্প কিছু দূ‌রে নি‌য়ে যাওয়া অথবা পুনঃস্থাপনেনর কার‌ণে কো‌নো অঞ্চলের সকল উন্নয়ন অপসা‌রিত হ‌তে পা‌রে।[১৪] সাধারণত এই প্রকি্রয়ার প্রতি জনসমর্থন কম।[১৭]

পর্যবেক্ষণ[সম্পাদনা]

সাধারণ আবহ‌াওয়ার চে‌য়ে ঝড় আরও দ্রুত ভাঙন ঘটায়। হস্তকৃত জ‌রিপ, অ‌্যা‌ল্টি‌মিটটার এবং এ‌টি‌ভিতে লাগা‌নো ‌জি‌পিএস এর মাধ‌্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত ব‌্যবহার ক‌রে ঝ‌ড়ের আ‌গে এবং প‌রের তূলনা করা যায়। ল্যান্ডস্যাট দৃ‌শ্যের ম‌তো দূর অনুধাবন উপাত্ত উপকূলীয় ভাঙনের বড় প‌রিস‌রে এবং বহু বছরব‌্যাপী অনুমা‌ণের জন‌্য ব‌্যবহার করা যে‌তে পা‌রে।

বাংলা‌দে‌শে উপকূলীয় ভাঙন[সম্পাদনা]

বঙ্গীয় বদ্বীপ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি প্রধানত দু‌টি ভাগে বিভক্ত, যথা- নিষ্ক্রিয় অথবা পরিত্যক্ত গাঙ্গেয় জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমি ও সক্রিয় মেঘনা বদ্বীপীয় প্লাবনভুমি। এই দুই প্রকার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে গাঙ্গেয় জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমি মেঘনা বদ্বীপীয় প্লাবনভূমি চে‌য়ে বে‌শি পু‌রো‌নো এবং মেঘনা বদ্বীপীয় প্লাবনভূমি ভূতাত্ত্বিকভা‌বে অ‌নেক নতুন। মেঘনা বদ্বীপীয় প্লাবনভূমির বিস্তৃ‌তি চট্টগ্রাম উপকূল থেকে তেঁতুলিয়া চ্যানেল পর্যন্ত। সর্বতা পরিবর্তনশীল রূপবি‌শিষ্ট ভূমির এই অঞ্চল‌টি খুবই গতিশীল, ত‌বে এর বদ্বীপীয় এলাকার চ্যানেল এবং দ্বীপাঞ্চলের ভাঙন নিয়ে বর্তমা‌নে অ‌নেক সমীক্ষাকার্য পরিচালনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের তট‌রেখা ও তার সংলগ্ন অঞ্চলগু‌লো বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ভূত জোয়ার-ভাটা সৃষ্ট তরঙ্গের প্রতিসরণ ক্রিয়া দ্বারা ক্ষাতগ্রস্ত হয়। এ প্রতিসরণের কারণ হ‌লো আন্তঃসাগরীয় গিরিখাত  সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড-এর ক্রিয়া এবং এই প্রতিসরণ ক্রিয়ার জন‌্য গিরিখাতের উভয় দি‌কে জোয়ারভাটার উচ্চ পরিসর ও গিরিখাতের সাম‌নের দি‌কে জোয়ার-ভাটার নিম্ন পরিসর সৃষ্টি হয়।

সন্দ্বীপ এবং হাতিয়া চ্যানেলে তটরেখার আকৃতি ফানেলের মতো, তাই জোয়ার-ভাটার ক্রিয়ায় এর প্রভাব লক্ষনীয়। এ অঞ্চলে জোয়ারভাটার পরিসর উচ্চ হয়ে থাকে। সক্রিয় বদ্বীপীয় অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় মধ্যম-জোয়ার-ভাটার ক্রিয়ার প্রভাব বিস্তৃত থাকে। এই অঞ্চলগু‌লো‌তে জোয়ার-ভাটার গড় পরিসর ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত হতে পা‌রে। কিন্তু সন্দ্বীপের নিকটবর্তী ক্ষুদ্র অঞ্চলগু‌লো‌তে উচ্চ-জোয়ারভাটা দেখা যায় এবং সেগু‌লোর গড় পরিসর সাধারণত ৪ মিটারের বে‌শি। সন্দ্বীপের উত্তরাংশে ভরা-কটালের সময়  জলোচ্ছ্বাস হলে সন্দ্বীপ এবং হাতিয়া চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আসা দুটি জলোচ্ছ্বাসের সংঘর্ষ হয়।

ভরা জোয়ারের সময় সন্দ্বীপ ও হাতিয়া চ্যানেল অঞ্চলে জোয়ারে কার‌ণে সৃষ্ট তরঙ্গের গতিবেগ প্রতি সে‌কেন্ডে ৩ মিটার অতিক্রম করে।

মৌসুমি ঋতুতে পশ্চিম শাহবাজপুর ও হাতিয়া চ্যানেল এলাকাযর ভাটার সৃষ্ট গতিবেগ সাধারণত প্রতি সে‌কেন্ড ৩ মিটারের অ‌ধিক হয়ে থাকে। বিভিন্ন চ্যানেলের পলির বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ ক‌রে দেখা যায় যে, সন্দ্বীপ ও হাতিয়া চ্যানেলের পরিবেশ কর্দম এবং শাহবাজপুর এবং তেঁতুলিয়া চ্যানেলের পরিবেশ সূক্ষ্ম বালুকা।

বিভিন্ন সময়ের মানচিত্র তুলনামূলকভা‌বে পর্যালোচনা ক‌রেপে‌রিল‌ক্ষিত হয় যে, বিগত দুই শতক জুড়ে সমুদ্র অভিমুখে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবৃদ্ধি হয়‌নি। গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুতে্রর মাধ‌্যমে প্রচুর পরিমাণ প্রতি বছর পলি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হ‌চ্ছে। তারপর‌েও এখা‌নে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবৃদ্ধি না ঘট‌লেও একই সম‌য়ের ব্যবধানে মেঘনা মোহনা বদ্বীপীয় এলাকায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধ‌ি ঘ‌টেছে। সন্দ্বীপ ও তার সংলগ্ন দীপ অঞ্চল, হাতিয়া দ্বীপ, ভোলা দ্বীপ এবং নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড সংলগ্ন তটরেখা অঞ্চ‌লেও লক্ষণীয় প‌রিবর্তন ঘ‌টে‌ছে।

দুইশো বছরের ব্যবধানে সন্দ্বীপের আয়তন অ‌নেক হ্রাস পে‌য়ে‌ছে। ১৭৬৪ থেকে ১৭৯৩ সা‌লের দিকে সন্দ্বীপ চ্যানেল প্রধান নদী ব্যবস্থা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল এবং সে সময়ে হাতিয়া দ্বীপের আয়তন যথেষ্ট পরিমাণে বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে‌ছে ও অনেকটা দক্ষিণ দি‌কে স্থানান্তরিত হয়েছে। ভোলা দ্বীপও উত্তর-দক্ষিণ দি‌কে বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে‌ছে। সাধারণভাবে দ্বীপগুলোর প্রায় দক্ষিণা দি‌কে ৫০কি‌লো‌মিটার অগ্রসর লক্ষ হ‌য়ে‌ছে ব‌লে পরিলক্ষিত হয়ে‌ছে। মেঘনা নদী তার মূল গতিপথ পরিত্যাগ করে দক্ষিণ-পশ্চিম দি‌কে স্থানান্তরিত হয়েছে।

প্রাকৃতিক এবং মানবীয় কর্মকাণ্ডের পরিণতি সরূপ নিম্ন মেঘনার একটি মৃতপ্রায় শাখা পলি দ্বারা ভরাট করা হয়েছে, যার ফলে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সা‌থে নতুন ভূ-ভাগ সংযুক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম উপকূলরেখা বিগত বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল কিন্তু ফেনী নদীতে বাঁধ দেওয়ার জন‌্য উত্তরে ভূমি প‌রিবৃ‌দ্ধি ঘ‌টে‌ছে। এর কারণ সম্ভবত বর্তমান কালের প্রবাহ জালিকা থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। বর্তমানে সন্দ্বীপ চ্যানেলে জোয়ারভাটার প্রাধান্য বিরাজমান এবং শুধু মিহি পলিকণাই এখানে সঞ্চিত হতে পারে।

  • নোয়াখালী তটরেখা  বিগত বছরগুলিতে নোয়াখালী তটরেখার যথেষ্ট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ পরিবর্তন পু‌রো‌নো নিম্ন মেঘনা নদীর তলদেশে ভূমি পরিবৃদ্ধির ফলাফল হিসেবে সংঘটিত হয়। দুটি আড়-বাঁধ দেওয়ার কার‌ণে এই পরিবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২,০০০ হেক্টর ভূমি পরিবৃদ্ধ হ‌য়েছে। সংযোজিত এ ভূমির আয়তনকে শুধু নদীসমূহ দ্বারা পরিবাহিত বার্ষিক পলিরাশির পরিমাণের সা‌থে তুলনা করা যায়। যদিও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দি‌কে নোয়াখালী তটরেখার বৃদ্ধি সংঘটিত হলেও স্থানীয়ভাবে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙনও পরিলক্ষিত হয়। যেমন, শাহবাজপুর চ্যানেলের উপ‌রিভা‌গে নোয়াখালী তটরেখায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভাঙন সংঘটিত হয়েছে।
  • জোয়ার-ভাটা প্রবণ সন্দ্বীপ দ্বীপাঞ্চল পূর্ব হাতিয়া চ্যানেল, সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং উড়িরচর সংযোগকারী চ্যানেল দ্বারা আবদ্ধ একটি অঞ্চল। ১৯১৩ সালের সন্দ্বীপের সা‌থে ১৯৮৮ সালের সন্দ্বীপ দ্বীপাঞ্চলের তুলনা ক‌রে গে‌ছে যে, প্রায় ৭৫ বছরের ব্যবধানে সন্দ্বীপের আয়তন প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সন্দ্বী‌পের উত্তর-পশ্চিমা অং‌শে যথেষ্ট ক্ষয় হ‌য়ে‌ছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব অং‌শে প্রচুর পরিমাণে ভূমি ঘ‌টে‌ছে। ১৯৬৩ সালের পর থেকে সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিম অং‌শে ক্ষয় বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে‌ছে। ১৯১৩ সাল থে‌কে ১৯৬৩ সালের মধ্যে ক্ষয়কার্যের হার প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিটার এবং ১৯৬৩ থে‌কে ১৯৮৪ সালের মধ্যে এ হার বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে হয় প্রতিবছরে প্রায় ৩৫০ মিটার। উড়িরচরের আয়তন ১৯৬৩ সালের ৩ বর্গ কি‌লো‌মিটার থেকে ১৯৮১ সালে ৪৬ বর্গ পর্যন্ত বৃ‌দ্ধি পায়।
  • হাতিয়া দ্বীপ  দক্ষিণ এবং পশ্চিম হাতিয়া চ্যানেল এবং পূর্ব শাহবাজপুর চ্যানেল দ্বারা আবদ্ধ। পূর্ব শাহবাজপুর চ্যানেলটি একটি বন্যাপ্রবণ চ্যানেল এবং দক্ষিণ-পশ্চিম হাতিয়া চ্যানেলটি ভাটা প্রবণ। ১৯৫২ সাল থে‌কে ১৯৮৭ থে‌কে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়ে হাতিয়া দ্বীপের উত্তরাংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ  নদীভাঙন হ‌য়ে‌ছে কিন্তু একই সা‌থে দক্ষিণাংশে যথেষ্ট পরিমাণে সঞ্চয়নও সংঘটিত হয়েছে। ১৯৬৩ সালের আ‌গে হাতিয়ার উত্তর অং‌শে ক্ষ‌য়ের বার্ষিক হার খুবই কম থাক‌লেও ১৯৬৩ সালের পর থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে এ ক্ষয়ের বেড়ে গিয়ে বছরে ৪০০ মিটারে হয়, যা এই অঞ্চলগু‌লো‌তে ক্ষয়হা‌রের স‌র্বোচ্চ মান।
  • ভোলা দ্বীপ  উত্তর দি‌কে তেঁতুলিয়া চ্যানেল এবং পূর্ব দি‌কে শাহবাজপুর চ্যানেল দ্বারা আবদ্ধ এবং আবদ্ধকারী চ্যানেলগুলো ভাটাপ্রবণ। ভোলা দ্বীপের উত্তর-পূর্ব তটরেখার অত্যধিকভোঙ‌নের শিকার হওয়া অংশে ১৯৪০ সাল থে‌কে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ভাঙনের হার প্রতি বছরে প্রায় ১৫০ মিটার ছিল। ১৯৬৩ সাল এবং ১৯৮৯ সালের জরিপ পর্যা‌লোচনা তকরে দেখা যায় যে, একই সা‌থে ক্ষয় ও সঞ্চয়ন দু‌টিট প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কার‌ণে ভোলা দ্বীপের সংকোচন ও বৃদ্ধি দু‌টোই ঘ‌টে‌ছে। প্রধানত উত্তর-পূর্ব দিকে ক্ষয় ঘ‌টে‌ছে এবং দক্ষিণ দি‌কে ভূ‌মি বৃ‌দ্ধির প্রক্রিয়া সংঘ‌টিত হয়েছে।

বদ্বীপ গঠন প্রক্রিয়ার দুটি প্রধান বিপরীতমুখী শক্তি নদীজএবং সামুদ্রি প্রক্রিয়ার আন্তঃক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে মেঘনা মোহনাজ বদ্বীপ অত্যধিক পরিবর্তনশীল আচরণ প্রদর্শন করছে। নদী প্রণালীসমূহ সমুদ্র অভিমুখে উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে স্বাদুপানির প্রবাহ এবং পলি সরবরাহ করে। অপরদিকে, সামুদ্রিক প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট পাক্ষিক ব্যবধান সংবলিত অর্ধ-আহ্নিক জোয়ার-ভাটা সংঘটিত করে থাকে। সন্দ্বীপ এবং তার সংলগ্ন এলাকার আঙ্গিক পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে শক্তিশালী জোয়ার-ভাটা সৃষ্ট তরঙ্গের ফলাফল এবং ভোলা দ্বীপের পরিবর্তনকে প্রাথমিকভাবে নদীজ স্রোতের ফলাফল হিসেবে বি‌বেচনা করা হয়। ভোলার ভাঙন কর্মকাণ্ড অত্যধিক মৌসুম‌ভি‌ত্তিক। হাতিয়া দ্বীপ এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলগু‌লো‌তে জোয়ার-ভাটা এবং নদীজ প্রবাহ উভয় প্রক্রিয়াই সক্রিয়। তবে, কিছু কিছু অঞ্চলে যেমন, উড়িরচরের আঙ্গিকগত পরিবর্তন প্রক্রিয়া জোয়ার-ভাটার মিলন প্রক্রিয়ার প্রভাব দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে, যার ফলে হাতিয়া ও সন্দ্বীপ চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আগত দুটি জোয়ারের মধ্যবর্তী বিস্তার ও পর্যায়ের পার্থক্য দ্বারা সূচিত হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ueberman, A.S. and O'Neill Jr, C.R., 1988. Vegetation use in coastal ecosystems. Cornell Cooperative Extension Information Bulletin 198, Cornell University, Ithaca, New York. 32 pp.
  2. New York Coastal Erosion Hazard Areas Act of 1981.
  3. Gibb, J. G., 1978. Rates of coastal erosion and accretion in New Zealand. New Zealand Journal of Marine and Freshwater Research, 12(4): 429–456.
  4. Stephenson, W., 2013, Coastal Erosion. in Bobrowsky, P.T., ed., pp. 94-96. Encyclopedia of Natural Hazards, Springer Dordrecht, New York, New York. 1135 pp. আইএসবিএন ৯৭৮-৯০৪৮১৮৬৯৯০
  5. Valvo, Lisa M.; Murray, A. Brad; Ashton, Andrew (২০০৬-০৬-০১)। "How does underlying geology affect coastline change? An initial modeling investigation"। Journal of Geophysical Research: Earth Surface111 (F2): F02025। ডিওআই:10.1029/2005JF000340 
  6. "The Impact of Coastal Erosion in Australia"। ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৬ 
  7. Xia, Rosanna (মার্চ ১৩, ২০১৯)। "Destruction from sea level rise in California could exceed worst wildfires and earthquakes, new research shows"Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৫ 
  8. Banse, Tom। "New Hope To Stop Relentless Erosion of Washington's "Washaway Beach""NW Public Broadcasting। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৯ 
  9. Luís Aragonés, Roberto Tomás, Miguel Cano, Emilio Rosillo, and Isabel López (২০১৭)। "Influence of Maritime Construction within Protected Archaeological Sites along Coastal Areas: Los Baños De La Reina (Alicante), Spain"। Journal of Coastal Research33 (3): 642–652। ডিওআই:10.2112/JCOASTRES-D-16-00016.1 
  10. Cambers, Gary; Sibley, Steve (২০১৫-০৯-১০)। Cambridge IGCSE® Geography Coursebook with CD-ROM (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781107458949 
  11. Oldale, Robert N.। "Coastal Erosion on Cape Cod: Some Questions and Answers"। U.S. Geological Survey। ৬ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  12. Dean, J.। "Oceanfront Sandbag Use in North Carolina: Management Review and Suggestions for Improvement" (পিডিএফ)। Nicholas School of the Environment of Duke University। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৩ 
  13. Knapp, Whitney। "Impacts of Terminal Groins on North Carolina's Coast" (পিডিএফ)। Nicholas School of the Environment of Duke University। ১২ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৩ 
  14. Managing Coastal Erosion। National Academies Press। ১৯৮৯। আইএসবিএন 9780309041430 
  15. "Coastal Hazards & Storm Information: Protecting Oceanfront Property from Erosion"। North Carolina Division of Coastal Management। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  16. Paul D. Komar; Jonathan C. Allan (২০১০)। ""Design with Nature" Strategies for Shore Protection: The Construction of a Cobble Berm and Artificial Dune in an Oregon State Park" (পিডিএফ)। Puget Sound Shorelines and the Impacts of Armoring—Proceedings of a State of the Science Workshop, May 2009: U.S. Geological Survey Scientific Investigations Report। 
  17. McPherson, M.। "Adaptation to Sea-Level Rise in North Carolina" (পিডিএফ)। Nicholas School of the Environment of Duke University। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৩ 

ব‌হিঃসং‌যোগ[সম্পাদনা]

Images:

টেমপ্লেট:Coastal geography