বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ
সংক্ষেপেবি.এন.এন.সি
মূলনীতিপুষ্টিই প্রগতি
গঠিত১৯৭৫; ৪৯ বছর আগে (1975)
উদ্দেশ্য
  • জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি প্রণয়ন ও হালনাগাদকরণ
  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ইনস্টিটিউটের পুষ্টি পরিকল্পনা অনুমোদন
  • পুষ্টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও মূল্যায়ন
সদরদপ্তরঢাকা, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৩°৪৬′৪০″ উত্তর ৯০°২৪′০১″ পূর্ব / ২৩.৭৭৭৮১° উত্তর ৯০.৪০০৪০° পূর্ব / 23.77781; 90.40040
যে অঞ্চলে কাজ করে
 বাংলাদেশ
সদস্য
৪৮ জন[১]
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা ভাষা
মহাপরিচালক
ডা. মো. খলিলুর রহমান
স্টাফ
৫০ জন[২]
ওয়েবসাইটbnnc.portal.gov.bd

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) বাংলাদেশের জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতিমালা পরিকল্পনা ও প্রণয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারী প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় অবস্থিত।[১][৩] বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদাধিকারবলে এই পরিষদের সভাপতিত্ব করে থাকেন।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫] এই কর্তব্য পালনের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জারি করা এক অধ্যাদেশের ভিত্তিতে ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠিত হয়।[৬][৭]

কার্যক্রম[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের প্রধান কাজ হল জাতীয় খাদ্যনীতি ও পুষ্টিনীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখা। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।[৮] এছাড়া, জনগণকে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করতে তারা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি, শিশুদের ওজন পরিমাপের জন্য দন্ডমাপনি ও শারীরিক বৃদ্ধির হিসাব রাখার জন্য গ্রোথ কার্ডেরও[৯] ব্যবস্থা করে থাকে।[১০]

এই পরিষদ খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে।[৭][৯][১১] বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা ছাড়াও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও এ সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়া, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বেতারবাংলাদেশ টেলিভিশনে খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্প্রচার করে থাকে।[১০]

১৯৯৪ সালে সংস্থাটি বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় জাতীয় পুষ্টি জরিপ পরিচালনা করে।[১২] ১৯৯৭ সালে পরিষদের উদ্যোগে প্রথম জাতীয় পুষ্টি-কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে সংস্থাটি প্রতি বছর জাতীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ আয়োজন করে থাকে।[৯] ২০১৫ সালের জাতীয় পুষ্টিনীতি এবং ২০১৭ সালের দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি-কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নেও সংস্থাটির অবদান ছিল।[৬]

পরিষদের মুখপত্র হল সাউথ এশিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন যা বছরে দুবার প্রকাশ করা হয়।[১০]

গঠন[সম্পাদনা]

সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠিত করেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্যাজেটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীকে সহ-সভাপতি করে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অর্থ মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১১ জন সচিব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান এবং ৩ জন পুষ্টিবিদ।[১৩]

৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি পরিষদটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী এবং সহ-সভাপতি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া আছেন ১৯ জন সচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, বিবিএস সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান। এই কমিটি পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমে পরামর্শ প্রদান, পুষ্টি নীতি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পুষ্টি বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে।[১৪]

এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের একটি স্থায়ী করিগরি কমিটি রয়েছে, যা পুষ্টিবিদদের নিয়ে গঠিত। এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। এছাড়াও, কমিটিতে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, প্রাণ-রসায়ন বিভাগ ও অ্যানথ্রোপোলজি বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপক; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান; ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন ও বিএমডিসি'র চেয়ারম্যান; জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, নিপসম, ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।[১৫]

পরিষদের দাপ্তরিক কাজ পরিচালনায় রয়েছেন ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন মহাপরিচালক। বর্তমানে এ পদে ডা: মোঃ খলিলুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনে রয়েছেন ৩ জন পরিচালক: নীতি ও পরিকল্পনা এবং সমন্বয় বিষয়ক পরিচালক, গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিষয়ক পরিচালক এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক। এদের অধীনে আছেন ৬ জন উপ-পরিচালক। নীতি ও পরিকল্পনা এবং সমন্বয় পরিচালকের অধীনে রয়েছেন ২ জন উপ-পরিচালক: একজন নীতি ও পরিকল্পনা এবং অপরজন সমন্বয় বিষয়ক। গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পরিচালকের অধীনে রয়েছেন ২ জন উপ-পরিচালক: একজন পুষ্টি গবেষণা বিষয়ক এবং অপরজন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিষয়ক। সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যোগাযোগ পরিচালকের অধীনে একজন উপ-পরিচালক রয়েছেন। আর প্রশাসন ও অর্থ বিষয়ক উপ-পরিচালক সরাসরি মহাপরিচালকের অধীন। এদের অধীনে আবার ১১ জন সহকারী পরিচালক রয়েছেন। এর মধ্যে পুষ্টি গবেষণা উপ-পরিচালকের অধীনে একজন এবং বাকিদের অধীনে ২ জন করে সহকারী পরিচালক কর্মরত আছেন।[২]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সভা হয় না ১৬ বছর"প্রথম আলো। ২০১৫-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  2. "বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো"bnnc.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৬ 
  3. "Food import to double"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. "Bangladesh rolls out a new action plan to combat malnutrition"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান | ১৮৷ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  6. "বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের ইতিহাস"bnnc.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  7. "সংবিধানে নাগরিকদের পুষ্টিস্তর উন্নয়ন রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য | রাজধানী"ittefaq। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. Mahmud, Iffat; Mbuya, Nkosinathi (২০১৫)। Water, Sanitation, Hygiene, and Nutrition in Bangladesh: Can Building Toilets Affect Children's Growth? (ইংরেজি ভাষায়)। World Bank Publications। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 9781464806995 
  9. "জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ শুরু আজ | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০১৯-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  10. "বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  11. "নীলফামারীতে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা জানো প্রকল্পের সভা অনুষ্ঠিত || The Daily Janakantha"Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  12. "Per head daily intake declined by 250 calories in 32 yrs"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১ আগস্ট ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. বাংলাদেশ গেজেট (পিডিএফ), অতিরিক্ত সংখ্যা, ২০ অক্টোবর ২০১৫
  14. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন (পিডিএফ), ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
  15. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন (পিডিএফ), ২ জানুয়ারি ২০১৯

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]