ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামসিরিল ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা
জন্ম১০ অক্টোবর, ১৯২৮
সেন্ট জেমস পারিশ, বার্বাডোস
মৃত্যু১০ নভেম্বর, ১৯৯৫
ম্যানচেস্টার, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড
ডাকনামদেপিয়াজা লিনিং টাওয়ার
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক
সম্পর্কডেনিস দেপিয়াজা (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৮৮)
২৬ এপ্রিল ১৯৫৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৫১/৫২ ০ ১৯৫৬/৫৭বার্বাডোস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৬
রানের সংখ্যা ১৮৭ ৬২৩
ব্যাটিং গড় ৩১.১৬ ৩২.৭৮
১০০/৫০ ১/- ১/৪
সর্বোচ্চ রান ১২২ ১২২
বল করেছে ৩০ ৩০
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৭/৪ ৩১/৯
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৯ এপ্রিল ২০২০

সিরিল ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা (ইংরেজি: Clairmonte Depeiaza; জন্ম: ১০ অক্টোবর, ১৯২৮ - মৃত্যু: ১০ নভেম্বর, ১৯৯৫) বার্বাডোসের সেন্ট জেমস পারিশ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করাসহ ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘দেপিয়াজা লিনিং টাওয়ার’ ডাকনামে পরিচিত ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৫১-৫২ মৌসুম থেকে ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম পর্যন্ত ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। বার্বাডোস ক্রিকেট লীগে উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন।[১]

১৯৫১-৫২ মৌসুমে থেকে ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম পর্যন্ত বার্বাডোসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতেন। কেবলমাত্র প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনেই তিনি বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা। ২৬ এপ্রিল, ১৯৫৫ তারিখে জর্জটাউনে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে সিরিজের প্রথম দুইটি টেস্টে খেলেন। এ পর্যায়ে অবশ্য তিনি উইকেট-রক্ষক হিসেবে অংশ নেননি। তার পরিবর্তে আল্ফি বিন্সকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে ৭ম উইকেট জুটিতে ডেনিস অ্যাটকিনসনের সাথে ৩৪৭ রান তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ব্রিজটাউন টেস্টে ১২২ রান তুলেন তিনি। এটিই তার সমগ্র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র শতরানের ইনিংস ছিল।[২] দলের সংগ্রহ ১৪৭/৬ থাকা অবস্থায় এ জুটি অস্ট্রেলিয়ার ৬৬৮ রানের জবাবে অগ্রসর হয়েছিল। অদ্যাবধি এ সংগ্রহটি রেকর্ড হিসেবে টিকে রয়েছে।

বিশ্বরেকর্ড[সম্পাদনা]

টেস্টে সপ্তম উইকেটে সংগৃহীত রানের মাধ্যমে রেকর্ড গড়ার অংশীদার তিনি। ছয় দিনব্যাপী গড়া টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষদিকে ডেনিস অ্যাটকিনসনের সাথে জুটি বাঁধেন। এরপর পুরো চতুর্থ দিন ব্যাটিং করেছিলেন। নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে প্রথম ওভারে ১২২ রান তুলে আউট হন। ৩৩০ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ১৬টি চার হাঁকিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ডেনিস অ্যাটকিনসনও তার অধিনায়কত্বের বিষয়ে সমালোচকদের যথোচিত দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন এবং ২১৯ রানের পাশাপাশি ৪৮-১৪-১০৮-২ ও ৩৬.২-১৬-৫৬-১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

এ জুটিতে খেলাকালীন বেশ কয়েকবার কিথ মিলাররে লিন্ডওয়ালের শর্ট বল মোকাবেলা করেছিলেন। দলীয় সঙ্গী জন গডার্ডের পিতার পরামর্শক্রমে তিনি বুকে আত্মরক্ষার্থমূলক ফোমের রাবারের টুকরো পরিধান করেছিলেন।। এভাবেই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেব প্রথমবারের মতো বুকে রক্ষাকবচ পরিধানের ঘটনা জানা যায়।[৩] ঐ ইনিংস খেলার পর দর্শকেরা $১০০০ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে তাকে প্রদান করে।[৩]

তিন রান বেশি নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন। টেস্ট পর্যায়ে তাদের রেকর্ড অক্ষত থাকলেও পরবর্তীতে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ভেঙ্গে যায়। এ পর্যায়ে, দিল্লিতে রঞ্জী ট্রফির সেমি-ফাইনালে পাঞ্জাবের সদস্যরূপে ভুপিন্দর সিং জুনিয়র ও পঙ্কজ ধারমানি সপ্তম উইকেটে ৪৬০ রান তুলেছিলেন। উভয় খেলোয়াড়ের এটিই একমাত্র শতরানের ইনিংস ছিল। ঐ টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়। ক্লাইড ওয়ালকট রেকর্ডসংখ্যক পাঁচটি শতরানের ইনিংস খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাভূত হয়।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আরও দুই টেস্ট খেলেন। সব মিলিয়ে ৩১.১৬ গড়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করেন। সাতটি ক্যাচ ও চারটি স্ট্যাম্পিং করেছিলেন তিনি। নিজস্ব শেষ টেস্টে ক্রাইস্টচার্চের খেলায় কিউইদের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান বার্ট সাটক্লিফকে উভয় ইনিংসে স্ট্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে বিদেয় করেন।

ইংল্যান্ডে অবস্থান[সম্পাদনা]

দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে প্রায়শঃই অনিয়মিত অবস্থায় খেলানো হতো। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ড গমনে তাকে দলে রাখা হয়নি। দল ঘোষণার পূর্বেই পেশাদারী পর্যায়ে স্কটিশ ক্লাব ফরফারশায়ারের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। জেরি আলেকজান্ডাররোহন কানহাইকে ঐ সফরে গ্লাভস ভাগাভাগি করে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতে হয়েছিল। এরপর থেকেই দেপিয়াজা’র ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন ব্রিটেনের পেশাদারী পর্যায়ে জড়িত হয়ে পড়ে।

রক্ষণাত্মক শটে খেলার কারণে ‘দেপিয়াজা লিনিং টাওয়ার’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। এ পর্যায়ে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে লীগ ও মাইনর কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬০, ১৯৬৩ ও ১৯৬৫ সালে সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার লীগের শিরোপা বিজয়ে হেউডে অনন্য অবদান রাখেন। তন্মধ্যে, ১৯৬৫ সালে হেউডে শেষ বছরে থাকাকালে ১০০ উইকেট পান। এরপর তিনি হ্যাসলিংডনের দিকে ধাবিত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে সিএলএল ক্লাব ক্রম্পটনের সাথে পেশাদারী খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটান।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

কাস্টমসের কেরানি হিসেবে তিনি কাজ করতেন।[৩] ১৯৬০ সাল থেকে ম্যানচেস্টারে বসবাস করতে থাকেন। মে, ১৯৮৮ সালের ডব্লিউসিএমের সংস্করণে তাকে নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে তিনি তার নামের বানানের সংশোধনের বিষয়ে কথা বলেন ও উল্লেখ করেন যে, তিনি ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন; ১৯২৭ সালে নয়। তবে, অধিকাংশ রেকর্ড বহিতে তার জন্ম ১৯২৭ সালকে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। ডেনিস দেপিয়াজা নামীয় তার এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ১০ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ৬৭ বছর বয়সে ল্যাঙ্কাশায়ারের ম্যানচেস্টার এলাকায় ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা’র দেহাবসান ঘটে। ১৯ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট রেকর্ড ধারক হিসেবে ডেনিস দেপিয়াজা স্বীয় পিতার পুরস্কার গ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sobers, p. 39
  2. West Indies v Australia, Bridgetown 1954–55
  3. Sobers, p. 46.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]