পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
গঠিত১৯৭৫
ধরনপারমাণবিক গবেষণা ইন্সটিটিউট
সদরদপ্তরসাভার উপজেলা, ঢাকা জেলা, বাংলাদেশ
যে অঞ্চলে কাজ করে
বাংলাদেশ
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা

পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হলো সাভার উপজেলা, বাংলাদেশ এ স্থাপিত বাংলাদেশ সরকারের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র। পারমাণবিক সম্পদ সম্পর্কে আরো দক্ষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে।[২][৩] বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং কমিশনের অধীনে এটি সবথেকে বড় প্রতিষ্ঠান।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৩ সালে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। বেশিরভাগ এডুকেশনাল ইন্সটিটিউশন অফ পাকিস্তান এটোমিক এনার্জি কমিশন পশ্চিম পাকিস্থানে ছিলো। বাংলাদেশ স্বাধিনতা যুদ্ধের পর, বাংলাদেশের কাছে ছিলো শুধুমাত্র একটি ঢাকা পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার এবং তিনটি নিউক্লিয়ার মেডিকেল সেন্টার।[১] পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্র ১৯৭৫ সালে গণকবাড়ি, সাভার উপজেলা, ঢাকা জেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটি লোকবল সণ্কটে পড়ে।[২]

১৯৮৬ সালে ৩ মেঘাওয়াট ট্রিগা মার্ক-২ রিসার্চ রিয়্যাক্টর প্রতিষ্ঠানে যোগ করা হয়।[৫] প্রতিষ্ঠানটির আঙ্গিকে একটি এড়িয়া ক্লিনিক রয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক দালান এবং একটি অর্থনৈতিক এবং হিসাব দালান রয়েছে। ১৯৯৯ সালে একটি শক্তি একক, একটি প্রকৌশলি কর্মশালা এবং একটি কেন্দ্রীয় পাঠাগার প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ করার পরিকল্পনা করা হয়।[২]

উন্নতিপ্রকল্প[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠানঠিতে কর্মরত একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং একজন মহাপরিচালক, যাদের অধীনস্থ রয়েছেন আরো ৩৬৬ জন কর্মকর্তা এবং প্রায় দুই শতাধিক বিজ্ঞানী। ১৯৯৭ সালে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যার আওতায় ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি এনার্জি ইউনিট, কেন্দ্রীয় প্রকৌশল ওয়ার্কশপ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও একটি ক্যাফেটেরিয়া স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।[১]

বাণিজ্যিক উৎপাদন[সম্পাদনা]

এ পর্যন্ত টেক-৯৯এম নামের ক্রোমোগ্রাফিক জেনারেটর উৎপাদন করা হয়েছে মোট ৫৭১টি। যা দেশের সকল পারমাণবিক মেডিসিন সেন্টারে সরবরাহ করা হয়েছে এবং এর সর্বমোট বাজারমূল্য ২ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। তাছাড়া মোট ২২ লক্ষ টাকার ৩০০ জিবিকিউ আয়োডিন ১৩১ জিআই উৎপাদন করা হয়েছে। আয়োডিন ১৩১ মূলত থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়াও এটি থাইরোটক্সিকোসিস এবং থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসার কাজের জন্যও যথেষ্ট সুপরিচিত।[৬]

সাফল্য[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠানটির সবথেকে বড় সাফল্য এসেছে ট্রিগা মার্ক-২ গবেষণা চুল্লীর মাধ্যমে। এর বিমপোর্ট ২ একটি উচ্চ শক্তিশালী নিউট্রন পাউডার ডিফ্রেসোমিটার স্থাপন করা হয়েছে।[৬] যা দ্বারা বিভিন্ন ধাতব বস্তুর গঠন নির্ণয় এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।

এছাড়াও অন্যান্য সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চিংড়ীর খোসা থেকে ছিটোসান তৈরির জন্য একটি সেমি পাইলট প্লান্ট তৈরি করা, যার মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে ১ কেজি কাইটোসান উৎপাদন করা সম্ভব।

অন্যান্য কার্যক্রম[সম্পাদনা]

বিভিন্ন দেশি বিদেশি স্বনামধন্য পত্র পত্রিকায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত একটি সার্ক সেমিনার আয়োজন করেছে।

অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

সাভার ক্যাম্পাসের অধীনে সর্বমোট ১২টি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা পরমাণুর সাথে সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:[২]

  • ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ( আইএনএসটি)
  • ইন্সটিটিউট অফ ফুড এন্ড র‍্যাডিয়েশন বায়োলজি (আইএফআরবি)
  • ইন্সটিটিউট অফ ইলেক্ট্রনিক্স (আইই)
  • ইন্সটিটিউট অফ কম্পিউটার সায়েন্স (আইসিএস)
  • ইন্সটিটিউট অফ র‍্যাডিয়েশন এন্ড পলিমার টেকনোলজি (আইআরপিটি)
  • ইন্সটিটিউট অফ টিস্যু ব্যাংকিং এন্ড বায়োম্যাটারিয়াল রিসার্চ (আইটিবিবিআর)
  • ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মিনারেল (আইএনএম)
  • ইন্সটিটিউট অফ এনার্জি সায়েন্স (আইইএস)
  • ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (টিআই)
  • সেন্টার ফর রিসার্চ রিয়্যাক্টর (সিআরআর)
  • সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাসিলিটিস (সিইএফ)
  • সাইন্টিফিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট (এসআইইউ)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Forty one years of Bangladesh Atomic Energy Commission"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. মিয়া মোহাম্মদ সিরাজুল হক (২০১২)। "পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. "Rooppur needs professional management"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. "Atomic Energy Commission gets new member"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. "State of nuclear safety education and research in Bangladesh"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  6. http://www.baecbd.org/bangla/aere/inst.php

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]