রানী কর্ণা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রানী কর্ণা
জন্ম১৯৩৯
মৃত্যু
পেশাকত্থক নৃত্যশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীনায়ক
পিতা-মাতাআসনদাস কর্ণা
পুরস্কারপদ্মশ্রী
উপরাষ্ট্রপতির স্বর্ণ পদক
লাওস-য়ের রানীর ঘোষণাপত্র
সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
সঙ্গীত বারিধি
বিজয় রত্ন

রানী কর্ণা একজন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, যিনি ভারতীয় নৃত্যধারা কত্থকের দক্ষতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন[১]। বিশেষজ্ঞরা তাঁকে কত্থকের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী রূপে বিবেচনা করেন[২]। ২০১৪ সালে, ভারত সরকার তাঁকে কত্থক নৃত্যের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন[৩]

জীবনী[সম্পাদনা]

রানী কর্ণার জন্ম ১৯৩৯ সালে, বর্তমান পাকিস্তান এবং পূর্ববর্তী ব্রিটিশ ভারতের হায়দরাবাদে, একটি সিন্ধি আমির [৪] পরিবারে হয়েছিল[৫][৬]। তাঁর পিতা, আসানদাস কর্ণা মূলত লারকানা অঞ্চলের কর্ণমালানী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁদের পারিবারিক নাম কর্ণমালানী কালক্রমে সংক্ষেপিত হতে হতে কর্ণা হয়ে যায়। ১৯৪২ সালে, তিন বছর বয়সী রানী সমেত তাঁর পরিবার দিল্লিতে চলে আসে[৪] এবং কনট প্লেসে বসবাস শুরু করে। দিল্লিতেই তাঁর পড়াশোনা সম্পন্ন হয় এবং তিনি দিল্লির হিন্দু কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক হন। পরে তিনি উদ্ভিদবিদ্যায় সাম্মানিক ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন। তবে তিনি নৃত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়ায়, পড়াশোনা আর এগিয়ে নিয়ে যাননি।

দিল্লিতে থাকাকালীন এক প্রতিবেশীর নাচ দেখে নাচের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল[৭]।চার বছর বয়স থেকেই তিনি নাচ শিখতে শুরু করছিলেন[৬][৮] ; তিনি কথক, ওড়িশি, ভারতনাট্যম এবং মণিপুরী নাচে প্রশিক্ষণ নিতেন[২]। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন নৃতাচার্য নারায়ণ প্রসাদ এবং সুন্দর প্রসাদ। পরবর্তী কালে তিনি গুরু হীরালালের অধীনে জয়পুর ঘরানা রীতি এবং পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছ থেকে লখনউয়ের ঘরানা রীতিতে অধ্যয়ন অব্যাহত রেখেছিলেন।

১৯৬৩ সালে একটি ওড়িয়া পরিবারে বিয়ে করার সুবাদে রানী কর্ণা ভুবনেশ্বরে স্থানান্তরিত হন[১][৮] এবং এই স্থানান্তর তাঁকে ওড়িশির বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী কুমকুম মোহান্তির সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ দেয়। তাঁর মাধ্যমে, রানী কর্ণা প্রখ্যাত গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি ওড়িশি শিখেছিলেন[২][৪][৫]। তিনি অন্যান্য বিভিন্ন বিখ্যাত গুরু, যেমন অমুবি সিং, নরেন্দ্র কুমার এবং ললিতা শাস্ত্রীর শিষ্য হিসাবেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ললিতা শাস্ত্রী ছিলেন খ্যাতিমান রুক্মিণী দেবী অরুন্ডালের শিষ্যা[৯]

রানী কর্ণা ভারতে এবং প্রবাসে প্রায় সমস্ত বড় ধ্রুপদী নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন [১০] এবং দেশ-বিদেশে বহু মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন[৮]। তার নৃত্যানুষ্ঠানগুলি যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় দেশগুলির মতো জায়গায় দর্শক শ্রোতাদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে[৭]

রানীর স্বামী নায়ক, ১৯৭৮ সালে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে আসার সাথে সাথে, রানী কর্ণাও কলকাতায় থাকতে শুরু করেন এবং সাংস্কৃতিক শ্রেয়স্করের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়কাল অবধি সক্রিয় ছিলেন। তাঁর শেষ প্রকাশ্য অনুষ্ঠান ছিল ২০১৩ সালে রানীর ৭৪ বছর বয়সে[১১]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

কত্থকনৃত্যশিল্পী রূপে নৃত্য প্রচারে তাঁর অবদানের পাশাপাশি রানী কর্ণাকে জয়পুর ও লখনউ ঘরানার ঐতিহ্য সংহত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয়।[১][৭][১০][১২]

সাংস্কৃতিক শ্রেয়স্কর[সম্পাদনা]

'সাংস্কৃতিক শ্রেয়স্কর' ১৯৯৯ সালে রানী কর্ণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি নৃত্য একাডেমী, যার উদ্দেশ্য ছিল কত্থক নৃত্যের প্রচার ও সাধারণভাবে পরিবেশন শিল্পকলাকে বিকশিত করা[৪][৮]। একাডেমিটি প্রধান কেন্দ্র কলকাতার যোধপুর পার্কে অবস্থিত। এছাড়া ভুবনেশ্বরে এর একটি শাখাও রয়েছে। একাডেমি এবং এর ছাত্ররা ভারত জুড়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিয়েছে[৫]

  • কোনার্ক উৎসব - ১৯৯৪
  • জয়পুর কত্থক উৎসব, নতুন দিল্লি - ১৯৯৫
  • রবীন্দ্র জন্মোতসব, কলকাতা - ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯
  • বসন্তোতসব, নতুন দিল্লি - ২০০০
  • নাট্যাঞ্জলি উৎসব, চিদাম্বরম - ২০০০
  • পুরী সমুদ্রসৈকত উতসব - ২০০০
  • কত্থক মহোৎসব, কলকাতা - ২০০০
  • ত্যাগরাজা উৎসব, তিরুপতি - ২০০০
  • বিরাসাত উৎসব, মাঙ্গালোর - ২০০০

পুরস্কার ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

কত্থকের সংগীত করা হয় সাধারণত তবলা এবং সেতার বাদন দ্বারা

রানী কর্ণাকে ২০১৪ সালে ভারত সরকার কত্থক নৃত্যের প্রসারে তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ পদ্মশ্রী পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন[৩][১৩]। তিনি আরও অনেক পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন যেমন:

  • উপ-রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক - ১৯৫৪[২][৭]
  • লাওসের রানীর শংসাপত্র - ১৯৬৪
  • নতুন দিল্লির ভারতীয় কলাকেন্দ্রের 'সঙ্গীত বারিধি' উপাধি - ১৯৭৭
  • বিজয় রত্ন - ভারতীয় আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব সমাজ, নতুন দিল্লি - ১৯৯০
  • সিনিয়র ফেলো - বিভাগের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন - ভারত সরকার
  • সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার - ১৯৯৬

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "PAD MA"। PAD MA। ১২ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. "Sindhistan"। Sindhistan। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  3. "Padma Awards Announced"Circular। Press Information Bureau, Government of India। ২৫ জানুয়ারি ২০১৪। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪ 
  4. "New Indian Express"New Indian Express। ৭ ডিসেম্বর ২০১৩। ২২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  5. "Rani Karnaa bio"। Rani Karnaa.net। ২০১২। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  6. "Meri News"। Meri News। ৭ এপ্রিল ২০০৯। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  7. "IUE Mag"। IUE Mag। ২৮ আগস্ট ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  8. "The Telegraph"। The Telegraph। ৭ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  9. "The Hindu"। The Hindu। ৯ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  10. "Seher Now"। Seher Now। ৭ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  11. "Kathak guru Rani Karnaa's journey of life and dance"। Narthaki.com। ৩ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  12. "Buzz in Town"। Buzz in Town। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "Receiving the Padma Shri"। V6 News TV। ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • Rani Karnaa (3 July 2011). "Kathak guru Rani Karnaa's journey of life and dance" (Interview). Interviewed by Nita Vidyarthi. Kolkata. Retrieved 25 September 2014.
  • "Rani Karnaa at her best - YouTube video"। YouTube। ১৪ এপ্রিল ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  • "Rani karnaa at Chidambaram - YouTube video"। YouTube। ৯ এপ্রিল ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  • "Rani Karnaa's interview on Rajya Sabha TV - YouTube video"। YouTube। ৬ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৬