মনোরঞ্জন গুপ্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মনোরঞ্জন গুপ্ত
জন্ম৭ মার্চ ১৮৯০
মৃত্যু১৩ অক্টোবর ১৯৭৬ (বয়স ৮৬)
কলকাতা , ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল,বাংলাদেশ
পেশাসশস্ত্র বিপ্লবী ও যুগান্তর দলের সদস্য
পিতা-মাতাদীনবন্ধু গুপ্ত (পিতা)

মনোরঞ্জন গুপ্ত ( ৭ মার্চ ১৮৯০ - ১৩ অক্টোবর ১৯৭৬ ) বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ও আইন সভার সদস্য।[১]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

মনোরঞ্জন গুপ্তর জন্ম ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ বৃটিশ ভারতের ( অধুনা বাংলাদেশের) বরিশালের আধুনা নামক এক গ্রামে। পিতার নাম দীনবন্ধু গুপ্ত।

তিনি বাটাজোড় উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ হতে আই.এ ও ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাশ করেন। কলেজের সহপাঠী হীরালাল দাসগুপ্ত ছিল তার বাল্য বন্ধু। তারা ছাত্রাবস্থায় বরিশাল শঙ্কর মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রজ্ঞানন্দ সরস্বতীর (ব্রহ্মচারী সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের) নিকট বিপ্লবী দীক্ষা গ্রহণ করে বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি 'বরিশাল দলে' যোগ দেন। পরে এটি যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. পাশ করার পরে তিনি কলকাতায় চলে আসেন।

সশস্ত্র ক্রিয়াকলাপ ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

কলকাতায় আসার আগেই বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে যে তিনটি ডাকাতি হয় তার প্রত্যেকটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তার পরিচালনায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই নভেম্বর কলকাতা মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে একটি বাড়িতে পুলিশ ইনস্পেক্টর গিরীন মুখার্জি নিহত হন এবং ২ রা ডিসেম্বর করপোরেশন স্ট্রিটের এক সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। প্রথম ঘটনায় তার সঙ্গে ছিলেন ভূপতি মজুমদার ও আলিপুরদুয়ারের প্রখ্যাত ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ দত্ত। বিপ্লবী নরেন ঘোষ চৌধুরীর অতি ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরূপে বহু রোমহর্ষক কাজের অংশীদার ছিলেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিন আইনে গ্রেপ্তার হয়ে রাজবন্দি হিসাবে সাড়ে চার বছর জেলে আটক থাকেন। ছাড়া পেয়ে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অরুণচন্দ্র গুহর সহযোগিতায় কলকাতার হ্যারিসন রোডে প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর নাম অনুসারে ‘সরস্বতী লাইব্রেরি’ স্থাপন করেন। বই বিক্রির ভার নিলেন বিপ্লবী কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ১৯২১ খৃস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনকালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন তার ও জিতেন্দ্রনাথ দত্তের উপর বরিশালের আন্দোলন সংগঠনের ভার অর্পণ করেন। শ্রীসরস্বতী প্রেসের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রেসের কাজ আরম্ভ করে তিনি তার প্রথম ম্যানেজার হন। ওই বছরই যুগান্তর দলের সদস্য ভূপতি মজুমদার ও মনোরঞ্জন গুপ্ত যথাক্রমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক হন এবং নেতৃস্থানীয় আরও অনেকের সঙ্গে মনোরঞ্জন গুপ্ত গ্রেপ্তার হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ছাড়া পান। ওই বছরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি খাদি প্রদশর্নীর সম্পাদক ছিলেন। এই সময়ে সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্র,হরিকুমার চক্রবর্তী ও প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে মিলে তিনি ‘বেঙ্গল ইন্সিয়োরেন্স অ্যান্ড রিয়াল প্রপার্টি কোম্পানি’ নামে এক জীবনবিমা কোম্পানির পরিচালন-ভার গ্রহণ করেন এবং এই কোম্পানির কাজে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ শাখার সেক্রেটারি হিসাবে বৎসরাধিকাল মাদ্রাজে কাটান। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর কংগ্রেসে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব পাশ হয়। এরপরই তিনি ও অন্যান্য বিপ্লবীরা সুভাষ চন্দ্রের নেতৃত্বে মিলিত হয়ে দাবি করতে আরম্ভ করেন যে এই পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে এখনই কংগ্রেসের আন্দোলন আরম্ভ করতে হবে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে শ্রীসরস্বতী প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা’ সাপ্তাহিকে ভূপেন্দ্রকুমার দত্তের ‘ধন্য চট্টগ্রাম’ প্রবন্ধের জন্য সরকার পত্রিকাটি বেআইনি ঘোষণা করে ও প্রেসের কাছ থেকে দু-হাজার টাকা জামানত নেয়। এই সময় দলের ডা. নারায়ণ রায় প্রমুখের চেষ্টায় বোমা তৈরীর কাজ সফলতার সাথে এগিয়ে চলতে থাকে। প্রত্যেক জেলার ইউরোপিয়ান ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি অথবা সেখানের ইউরোপিয়ানদের ক্লাবে বোমা ফেলে তাদের আতঙ্কিত করে ইংরেজদের দেশ ছাড়া করার যে রাজনৈতিক চাপ-সৃষ্টির কার্যসূচি তখন নেয়া হয়, তাতে তার অবদান অনেকখানি।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় পুলিশ কমিশনার টেগার্ট সাহেবের উপর আক্রমণ চালান। ফেরারি অবস্থায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সনে মুক্তি লাভ করেন। ঐ বছর যুগান্তর দলভুক্ত সকলের মিলিত সিদ্ধান্ত অনুসারে খবরের কাগজে বিবৃতির মাধ্যমে বিপ্লবী গুপ্ত সমিতির পরিসমাপ্তি করা হলে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ সন পর্যন্ত বন্দী ছিলেন। কারাগারে থেকে তিনি ১৯৪৬ সনের নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। তিনি বিপুল ভোটে এমএলএ পদে জয়লাভ করেন। তিনি ১৯৫০ সনে বরিশালে দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে কলকাতায় চলে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ আইনসভায় ১৫ বছর এম.এল.সি ছিলেন। আইন সভার বাইরে তিনি প্রধানত সমবায়ের কাজ নিয়ে ব্যাপৃত থাকতেন।

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ[সম্পাদনা]

তার রচিত গ্রন্থগুলি হল:

  • সমবায়মূলক সাধারণতন্ত্র ও বিশ্বরাজনীতি
  • Philosophy of co-opeartion (সহযোগিতা দর্শন)
  • বিপ্লবীর জীবনস্বপ্ন - সমবায় সমাজ
  • রবীন্দ্র চিত্রকলা
  • যারা হারিয়ে গেল
  • মেকিয়াভেলির রাজনীতি

মৃত্যু[সম্পাদনা]

মনোরঞ্জন গুপ্ত ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৫৪৫-৫৪৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬