আয়শা সুলতান বেগম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আয়শা সুলতান বেগম
তৈমুরী রাজকন্যা
ফরঘান উপত্যকার রাণী
সমরকন্দের রাণী
কার্যকালআনু. ১৪৯৯ – ১৫০৩
দাম্পত্য সঙ্গীবাবর (m. ১৪৯৯–১৫০৩)
বংশধরফখরুন্ নিসা
রাজবংশতৈমুরী (জন্ম সূত্রে)
পিতাসুলতান আহমেদ মির্জা
মাতাকুতাক বেগম
ধর্মইসলাম

আয়শা সুলতান বেগম ছিলেন প্রথম মুঘল সম্রাট ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের প্রথম স্ত্রী এবং সেই সূত্রে ফরঘান উপত্যকা এবং সমরকন্দের সম্রাজ্ঞী।

আয়শা ছিলেন তার স্বামীর প্রথম চাচাতো বোন। আর জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন একজন তৈমুরী রাজকন্যা। তিনি সমরকন্দ এবং বুখারার রাজা এবং বাবরের চাচা সুলতান আহমেদ মির্জার কন্যা।[১]

পরিবার ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

আয়শা সুলতান বেগম একজন তৈমুরী রাজকন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সুলতান আহমেদ মির্জা (সমরকন্দবুখারার রাজা) এবং তাঁর স্ত্রী কুতাক বেগমের তৃতীয় কন্যা। সম্ভবত ইসলামী নবি মুহাম্মদের স্ত্রী আয়িশা বিনতে আবু বকরের নামানুসারে তার নাম আয়শা রাখা হয়েছিল।[২]

তার বাবা সুলতান আহমেদ মির্জা ছিলেন তৈমুরী রাজবংশের সুলতান আবু সা'ইদ মির্জার বড় ছেলে এবং এবং তার উত্তরাধিকারী। ফেরঘানা উপত্যকার শাসক ওমর শাইখ মির্জা ছিলেন আয়শার চাচা, যিনি পরে তার শ্বশুর হয়ে গিয়েছিলেন। এইভাবে ওমরের সন্তান বাবর (আয়শার ভবিষ্যত স্বামী) এবং তার বড় বোন খানজাদা বেগম ছিলেন আয়েশার প্রথম চাচাতো ভাই বোন।

বিয়ে[সম্পাদনা]

শৈশবেই আয়েশা এবং তার চাচাতো ও খালাতো ভাই বাবরের বাগদান সম্পন্ন হয়। আয়শার বাবা ও বাবরের বাবা ছিলেন একে অপরের ভাই; আর তাদের মায়েরা ছিলেন পরস্পরের বোন। ১৪৮৮ সালে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে যখন তাদের বাগদান হয় তখন বাবরের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। এর এগারো বছর পরে ১৪৯৯ সালের আগস্টে খোজান্দে আয়িশা বাবরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পরবর্তীকালে তার সাথে ফেরঘানায় চলে যান। কেননা, বাবর তার পিতার মৃত্যুর পরে ফারঘানা উপত্যকার শাসনভার লাভ করেছিলেন।

বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অল্প বয়সী রানী আবিষ্কার করেন যে তার স্বামী অত্যন্ত লাজুক এবং প্রেমে অনাগ্রহী। কারণ, তাদের বৈবাহিক জীবনের প্রথম দিকে বাবুর খুব লজ্জাশীল ছিলেন এবং দশ বা পনের দিনে তাকে মাত্র একবার দেখতে যেতেন। বাবর নিজেই বলেছেন, "যদিও আমি তার (আয়েশার) প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলাম না, তবুও এটি আমার প্রথম বিবাহ হওয়ায় লজ্জার কারণে আমি তার সাথে দশ-পনেরো বা বিশ দিনে একবার দেখা করতাম।"[৩] কিছু দিনের মধ্যে তিনি এতেও বিরক্ত হয়ে যান এবং আয়শার সাথে দেখা-সাক্ষাত পুরোপুরি বন্ধ করে দেন।[৪] এতে বাবরের মা (আয়েশার খালা ও শাশুড়ি) কুতলুগ নিগার খানম বেশ রেগে যান ও তাকে সাথে বকা দিয়ে কিছুদিন পরপরই আয়শার সাথে দেখা করতে পাঠাতে থাকেন।[৫] অথচ, বাবর তখন আয়শার প্রতি বা বিয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও, আয়েশা বিয়ের তিন বছর পর বাবরের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। তাদের কন্যা ফখর-উন-নিসা ১৫০১ সালে সমরকান্দে জন্মগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এক মাস বা চল্লিশ দিনের মধ্যেই সে মারা যায়। তার মৃত্যু বাবুরকে অত্যন্ত শোকাহত ও কাতর করে তুলেছিল।[৬]

বিচ্ছেদ[সম্পাদনা]

যদিও তাদের সম্পর্ক পরবর্তীকালে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল, তবে মনে করা হয় যে আয়শা ও বাবরের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল এবং তিনি ১৫০৩ সালের তাশখন্দ বিজয়ের আগেই বাবরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অবশ্য, বাবরের ভাষ্য মতে আয়শা তার বড় বোন রাবিয়া সুলতান বেগমের উস্কানিতেই তার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Erskine, William (১৮৫৪)। A History of India Under the Two First Sovereigns of the House of Taimur, Báber and Humáyun। Longman, Brown, Green, and Longmans। পৃষ্ঠা 128। 
  2. Urubshurow, Victoria Kennick (২০০৮)। Introducing world religions। Providence, Utah: Journal of Buddhist Ethics Online Books। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 9780980163308 
  3. abridged, translated from the Turkish by Annette Susannah Beveridge; edited; Hiro, introduced by Dilip (২০০৬)। Babur Nama : journal of Emperor Babur (1.publ. সংস্করণ)। New Delhi: Penguin Books। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 9780144001491 
  4. Harold, Lamb (২০১০)। Swords from the East.। University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা 364। আইএসবিএন 9780803229723 
  5. "The London Literary Gazette and Journal of Belles Lettres, Arts, Sciences"। H. Colburn। ১৮২৭: 22। 
  6. Shyam, Radhey (১৯৭৮)। Babar। Janaki Prakashan। পৃষ্ঠা 105। 
  7. Babur (Emperor of Hindustan) (১৮২৬)। Waddington, Charles, সম্পাদক। Memoirs of Zehir-Ed-Din Muhammed Baber: Emperor of Hindustan। Longman, Rees, Orme, Brown, and Green। পৃষ্ঠা 22।