কেল্টীয় পুরাণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কেল্টীয় পুরাণ (বানানান্তরে সেল্টীয় পুরাণ) হল লৌহযুগীয় কেল্ট জাতিগুলির বহুদেববাদী ধর্মের পুরাণসংগ্রহ[১] অন্যান্য লৌহযুগীয় ইউরোপীয় জাতিগুলির মতোই আদি কেল্টদের পুরাণ ও ধর্মবিশ্বাসের কাঠামোটি ছিল বহুদেববাদীপ্রাচীন রোমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সূত্রে রোমান সাম্রাজ্যে গলকেল্টিবেরিয়ান ইত্যাদি কেল্টিক জাতির পুরাণ উত্তরজীবী হতে পারে। পরবর্তীকালে এই জাতিগুলি খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয় এবং তাদের কেল্টিক ভাষাও অবলুপ্ত হয়। প্রধানত সমসাময়িক রোমান ও খ্রিস্টীয় নথিপত্রে তাদের পুরাণসংগ্রহ সংরক্ষিত হয়েছিল। নিজেদের রাজনৈতিক ও ভাষাগত পরিচয়টিকে অক্ষুণ্ণ রাখা কেল্টিক জাতিগুলি (যেমন আয়ারল্যান্ডস্কটল্যান্ডে গ্যেল, ওয়েলসে ওয়েল এবং দক্ষিণ গ্রেট ব্রিটেনব্রিটনিতে কেল্টিক ব্রিটন) তাদের পূর্বপুরুষের পুরাণসংগ্রহের প্রচুর অবশেষ রেখে গিয়েছিল। মধ্যযুগে সেগুলিকে লিপিবদ্ধ করা হয়।

রূপরেখা[সম্পাদনা]

কেল্টীয় দেবতা সুসেলাস

কেল্টীয় সভ্যতার মধ্যগগনে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের অধিকাংশ স্থানই কেল্টীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু তা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল না। এমনকি সাংস্কৃতিক প্রভাব বা সমরূপতার কোনও উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় উৎসেরও কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ফলে কেল্টীয় ধর্মের স্থানীয় প্রথা ও রীতিনীতির মধ্যে অনেক পার্থক্য ফুটে উঠেছিল (যদিও দেবতা ল্যুগের মতো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সমগ্র কেল্টীয় বিশ্বেই পরিব্যাপ্ত ছিল)। শিলালিপিগুলি থেকে তিনশোরও বেশি দেবদেবীর কথা জানা যায়। তাঁদের প্রায়শই তাঁদের রোমান প্রতিরূপের সঙ্গে সমান বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এঁদের অধিকাংশকেই মনে করা হয় জেনি লোকোরাম অর্থাৎ স্থানীয় বা আদিবাসী দেবতা। অল্প কয়েকজনের পূজাও বহুল প্রচলিত ছিল। যদিও কেল্টীয় পুরাণসংগ্রহের যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তা থেকে সাদৃশ্যগুলি উপলব্ধি করা সম্ভব। এই সাদৃশ্যগুলি ইঙ্গিত করে যে, সাধারণভাবে কেল্টীয় দেবমণ্ডলীকে যতটা বিসদৃশ মনে হয়, প্রকৃত ক্ষেত্রে তা তার থেকে অনেক বেশি একীভূত ছিল।

এই প্রাচীন দেবদেবীদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুমিত হয় তাঁদের নাম, তাঁদের শিলালিপির অবস্থান, তাঁদের মূর্তিতত্ত্ব, যে রোমান দেবতাদের সঙ্গে সমান বিবেচনা করা হয় তাঁদের এবং পরবর্তী যুগের কেল্টীয় পুরাণের সমরূপ চরিত্রগুলি থেকে।

কেল্টীয় পুরাণ পাওয়া যায় একাধিক উপশাখায় বিভক্ত অবস্থায়। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই উপশাখাগুলি কেল্টীয় ভাষাসমূহের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে যুক্ত:

ঐতিহাসিক উৎসসূত্র[সম্পাদনা]

মানসসিদ্ধিতে দেবসমীপে উৎসর্গিত কেল্টীয় চক্র। মনে করা হয়, এগুলি টারানিসের কাল্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫০ অব্দ থেকে ৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত এই ধরনের সহস্রাধিক চক্র পাওয়া গিয়েছে গ্যালিয়া বেলজিয়ার পবিত্র স্থানগুলিতে। ফ্রান্সের জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে রক্ষিত

গল ভাষায় লিখিত ধ্বংসাবশেষের সংখ্যা এতই অল্প যে অনুমান করা হয়, অধিকাংশ কেল্টীয় লিপি রোমানরা ধ্বংস করে দিয়েছিল। যদিও গল ভাষার একটি লেখ্য রূপের ক্ষেত্রে গ্রিক, লাতিনউত্তর ইতালীয় লিপি ব্যবহৃত হত (দেবতাদের উদ্দেশ্যে মানসকল্পে উৎসর্গিত দ্রব্যাদিতে খোদিত গল ভাষা ও কলিগনি পঞ্জিকা এটির প্রমাণস্বরূপ)।[৩] জুলিয়াস সিজারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, গলেরা সাক্ষর ছিল। কিন্তু তিনি এও লিখেছেন যে তাদের পুরোহিতশ্রেণি অর্থাৎ ড্রুইডদের উপর ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন কিছু কিছু পঙ্‌ক্তি লিখে রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল[৪] (সিজার, কমেন্টারি ডে বেলো গ্যালিকো ৬.১৪)। এবং সেই সঙ্গে তিনি এও উল্লেখ করেন যে হেলভেটিতে একটি লিখিত জনগণনা হয়েছিল (সিজার, ডে বেলো গ্যালিকো ১.২৯)।

রোম সর্বজনীন শিলালিপি স্থাপনের এক ব্যাপকতর অভ্যাস প্রতিষ্ঠা করে এবং বিজিত অঞ্চলগুলিতে ড্রুইডদের ক্ষমতাও খণ্ডিত করে। প্রকৃতপক্ষে গল (অধুনা ফ্রান্সউত্তর ইতালি), ব্রিটেন ও অন্যান্য পূর্বতন (অথবা বর্তমান) কেল্টীয়-ভাষী অঞ্চলে আবিষ্কৃত দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে খোদিত অধিকাংশ শিলালিপি রোমান বিজয়ের পরবর্তীকালে স্থাপিত হয়েছিল।

আয়ারল্যান্ড ও আধুনিক ওয়েলসের কিয়দংশের আদি গ্যেলরা ছোটো ছোটো শিলালিপিতে (প্রধানত ব্যক্তিগত নাম) ওঘ্যাম লিপি ব্যবহার করলেও, রোমানদের দ্বারা বিজিত হয়নি এমন কেল্টীয় এলাকাগুলিতে খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে অধিকতর পরিশীলিত লিখনশৈলীর প্রচলন ঘটেনি। বাস্তবিক ক্ষেত্রে অনেক গ্যেলিক অতিকথা প্রথম নথিভুক্ত করেন খ্রিস্টান সন্ন্যাসীরা। যদিও সেই সব নথিপত্রে সেগুলির অধিকাংশ মূল ধর্মীয় অর্থই পাওয়া যায় না।[৫]

আইরিশ পুরাণ[সম্পাদনা]

ফারডিয়াডকে বহন করে নদী পার হচ্ছেন কুচুলেইন

বীরযুগের প্রাচীনতম অতিকথা-সংগ্রহের সন্ধান পাওয়া যায় শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ডের আদি মধ্যযুগ থেকে।[৬] খ্রিস্টধর্ম প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলে তাদের সংস্কৃতি থেকে আস্তে আস্তে দেবদেবীরা মুছে যেতে লাগলেন। বিদ্যমান উপাদানের মূল উপজীব্য থুয়েহা ডে দ্যানানফোমোরিয়ান। এই দু’টিই ক্যাথ ম্যাইগি থুইরেড (বহিরাক্রমণ পুস্তক) গ্রন্থের মূল ভিত্তি। থুয়েহা ডে-তে রাজপদ, শিল্পকলা ও যুদ্ধের মতো মানব সমাজের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে; অন্যদিকে ফোমোরিয়ান-এ আলোচিত হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও বন্য প্রকৃতি।

ড্যাগডা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cunliffe, Barry, (1997) The Ancient Celts. Oxford, Oxford University Press আইএসবিএন ০-১৯-৮১৫০১০-৫, pp. 183 (religion), 202, 204–8.
  2. O'Rahilly, T. F. (১৯৮৪) [1946, 1964, 1971]। Early Irish History and Mythology। Dublin: Dublin Institute for Advanced Studies। আইএসবিএন 0-901282-29-4 
  3. Ross, Anne (১৯৭২)। Everyday Life of the Pagan Celts। Carousel Books। পৃষ্ঠা 166–167। আইএসবিএন 0-552-54021-8 
  4. Chadwick, Nora Kershaw (১৯৭০)। The Celts। Penguin Books। পৃষ্ঠা 149আইএসবিএন 978-0-14-021211-2 
  5. Ross, Anne (১৯৭২)। Everyday Life of the Pagan Celts। Carousel Books। পৃষ্ঠা 168–170। আইএসবিএন 0-552-54021-8 
  6. Jackson, Kenneth Hurlstone (১৯৭১)। A Celtic Miscellany। Penguin Classics। পৃষ্ঠা 27–28আইএসবিএন 0-14-044-247-2 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:কেল্টিক সভ্যতা