প্রযুক্তি দানব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট।

প্রযুক্তি দানব (ইংরেজি Big Tech[১] বিগ টেক) সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচলিত একটি শব্দগুচ্ছ যা দিয়ে বিশ্ব পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তারকারী ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশ করা হয়।

২০১০-এর দশকের শেষে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ৫টি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাজার পুঁজিভবনের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকার শীর্ষে স্থান পায় (কেবল খনিজ তেল প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো এদের চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল।)[২] এ সময় বাজার পুঁজিভবনের ভিত্তিতে বড় থেকে ছোট অনুক্রমে এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলি হল যথাক্রমে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট (গুগল) ও ফেসবুক। ২০১০-এর দশকের বিভিন্ন সময়ে এগুলির প্রতিটির সর্বোচ্চ বাজার পুঁজিভবনের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছিল। এছাড়া দুইটি চীনভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ২০১০-এর দশকের শেষে এসে সবচেয়ে মূল্যবান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিসমূহের শীর্ষ দশ তালিকাতে স্থান পায়; এগুলি হল আলিবাবাটেনসেন্ট

২১ শতকের প্রথম দশকে ন্যাসড্যাক শেয়ারবাজার সূচকের শীর্ষে খনিজ তেল ও শক্তি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেমন এক্সন মোবিল, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, গাজপ্রম, পেট্রোচায়না এবং রয়াল ডাচ শেল (যাদেরকে প্রায়শই "তৈল দানব" নামে আখ্যায়িত করা হয়) অবস্থান করত। এগুলিকে মার্কিন প্রযুক্তি দানবগুলি ২০১০-এর দশকে এসে স্থানচ্যুত করে। অধিকন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলি ঐতিহ্যবাহী অতিবৃহৎ গণমাধ্যম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও প্রায় ১০ গুণ ছাড়িয়ে গেছে, যাদের মধ্যে ডিজনি, এটিঅ্যান্ডটি, কমক্যাস্ট এবং টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স (তথাকথিত "গণমাধ্যম দানবসমূহ")[৩] ২০১৭ সালে উপর্যুক্ত ৫টি প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত মূল্য ছিল ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা মার্কিন শেয়ারবাজার ন্যাসড্যাকের শীর্ষ ন্যাসড্যাক ১০০-র ৪০% মূল্য গঠন করে।[৪] শীর্ষ ৫টি মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি সহ (অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও ফেসবুক) স্যামসাং (কোরীয়), ইন্টেল, আইবিএম, হোন হাই (ফক্সকন) (তাইওয়ানীয়), টেনসেন্ট (চীনা) ও ওরাকল মিলে ২০১০-এর দশকের শেষে এসে বিশ্বের সেরা ১০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তালিকা গঠন করে; ফোর্বস সাময়িকীর সেরা ২০০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকাতে বার্ষিক বিক্রয়, লাভ, সম্পদ, বাজার পুজিভবন এবং সামগ্রিক বাজার মূল্য, ইত্যাদি মানদণ্ড বিবেচনা করে এই মূলায়নটি করা হয়।[৫]

কারও কারও মতে প্রযুক্তি দানবদের সৃষ্ট পরিবেশ তথা বাস্তুসংস্থানের বাইরে থেকে ডিজিটাল বিশ্বে (অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায়) দৈনন্দিন কাজকর্ম চালানো দুরূহ।[৬] কেউ কেউ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, বাজার শক্তি, বাকস্বাধীনতা, অপ্রীতিকর বিষয়বস্তু কর্তন (সেন্সর), জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনের ক্ষেত্রগুলিতে প্রযুক্তি দানবগুলির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করার ঔচিত্য নিয়ে প্রশ্ন উথাপন করেছেন।[৭] অন্যপক্ষে গ্রাহকদের কাছে সস্তায় এমনকি বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে বলে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Economics of Big Tech"Financial Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৩-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৬ 
  2. "Most Valuable Companies in the World - 2020"FXSSI - Forex Sentiment Board (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. Jason Paul Whittaker (ফেব্রু ১১, ২০১৯), "Introduction", Tech Giants, Artificial Intelligence, and the Future of Journalism (Open Access), Routledge 
  4. The 'Big Five' Could Destroy the Tech Ecosystem 
  5. Melissa Parietti (নভেম্বর ৩, ২০১৯), The Top 10 Technology Companies, Investopedia 
  6. It’s almost impossible to function without the big five tech giants 
  7. Privacy, power and censorship: how to regulate big tech 
  8. Yglesias, Matthew (মে ৩, ২০১৯), The push to break up Big Tech, explained