বনগাঁও সভা মহোৎসব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বনগাঁও সভা মহোৎসব
বনগাঁও সভা উৎসবের গোঁসাই আনয়নের দৃশ্য
অবস্থাসক্রিয়
ধরনহিন্দু ধর্মোৎসব
অবস্থান (সমূহ)বনগাঁও, বজালী, বরপেটা, আসাম
দেশভারত

বরপেটা জেলার বজালী মহকুমার অন্তর্গত বনগাঁওর এক বার্ষিক ধর্মোৎসব হল বনগাঁও সভা মহোৎসব। শতবর্ষ পেরনো এই সভা উৎসব প্রতি বছর মাঘ-ফাল্গুন মাসের ভীষ্মাষ্টমী-এর দিন হোম-যজ্ঞের দ্বারা আরম্ভ করা হয়। বনগাঁও এবং এর দাঁতিকাষরীয়া অঞ্চলটিকে মহামারী, অরাজকতা ইত্যাদির থেকে বাচানোর জন্য সমূহ গঞাই মিলিত হয়ে হোম-যজ্ঞের মাধ্যমে জগন্নাথ মহাপ্রভুর শ্রীচরণে সেবা করাই এই সভার মুখ্য উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও কৃষি কর্ম শেষ করার পরে সমূহ জনতা একবার মিলিত সুযোগ লাভ করে। [১]

সভার স্থান[সম্পাদনা]

আদিতে প্রথম সভার স্থান খারপরা পথ ছিল। সেখানে অস্থায়ীভাবে বেদী নির্মাণ করে ১৩০৮ সালের (ইং ১৯০১ সাল) ভীষ্মাষ্টমীতে প্রথম সভা শুরু হয়েছিল। এই সভা প্রথম তিনদিনের শুরু হয়েছিল যদিও পরে পাঁচদিনের শুরু করে। তার কয়েক বছর পরে গ্রামের কেন্দ্রস্থলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণদিকের মাটি জনতার নামে কিনে সেখানে সভার স্থান ঠিক করে। তখন থেকে সেই স্থানেে সভা তৈরি করে আসা হচ্ছে। [১][২]

অন্যান্য অনুষ্ঠান[সম্পাদনা]

সভার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কামরূপীয়া ঢুলীয়া বা কৈহাটীর ঢুলীয়া, ওজাপালি এবং যাত্রাপার্টীর ভাওনা এক বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। [২]

ইতিবৃত্ত[সম্পাদনা]

১৩০৪ সালের ২৯ জৈষ্ঠ্য, ইংরাজী ১৮৯৭ সালে নিম্ন আসামে হওয়া প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প-এর কবলে পড়ে বরপেটা জেলার (পুরানো কামরূপ জেলা) ছোটক্ষেত্রী অঞ্চলের বহু অনিষ্ট হয়েছিল। ভূমিকম্পের পরের বানজল এবং তার ঠিক পরের মহামারী সংহার মূর্ত্তি ধারণ করা সময়ে সেই অঞ্চল থেকে উঠে এসে কিছু মানুষ বনগাঁওতে এসে ঠাই নিয়েছিল এবং মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষগুলি এক হয়ে একটি মেল তৈরি করে। এই মেলটিতে সমস্ত মানুষ এক হয়ে জনতার মধ্যে একতা, সংহতি, শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ বাজিয়ে রাখা এবং বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য একটি পাঁচদিনের সভা শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত মর্মে শ্রীশ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে মাঘ মাসের ভীষ্মাষ্টমী তিথিতে হোমের দিন ধার্য করে। হোমের আগের দিন সভার গোন্ধ এবং সেইদিন গোঁসাই স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। [১]

প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিসকল[সম্পাদনা]

  1. ভাটিগোমূরা চুপার ধর্ম্মেশ্বর শর্ম্মা, বাপুরাম ভূঞা, দুতিরাম পাঠক, কেত্রা কলিতা
  2. বরগোমূরা সুপার চেনী রাম পণ্ডিত, রূপারাম ডেকা, কান্দ্রা মেধি, উগ্র মেধি
  3. বতিয়া সুপার ইন্দুর তালুকদার, গুণারাম তালুকদার, কেতেরু গ্রামবুঢ়া, পহরু তালুকদার
  4. ঠেকা সুপার গেরা পাঠক, মুলুং কাহার
  5. ব্রাহ্মণ সুপার সভা অধ্যাপক লোকনাথ শর্মা, বনমালী শর্মা, গঙ্গা শর্মা, গোবিন্দ শর্মা, লম্বো শর্মা
  6. পাকা সুপার পঞ্চানন লহকর, তপা গ্রামবুঢ়া
  7. গোঁসাই সুপার সর্বেশ্বর অধিকারী, সূর্যকান্ত গোস্বামী।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বনগাঁও সভা উৎসবের স্মৃতিগ্রন্থ, বনগাঁও সভা উৎসবের ইতিবৃত্তি, অখিল চন্দ্র শর্মা, পৃষ্ঠা নং ১২
  2. বনগাঁও সভা উৎসবের স্মৃতিগ্রন্থ, বিহঙ্গম দৃষ্টিত বনগাঁওর শ্রীশ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভুর সভা উৎসব, শ্রীকনক চন্দ্র মেধি, পৃষ্ঠা নং ১৯