বিহুগীত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রত্যেক অসমীয়ার বাপতিসাহোন উৎসব বিহুর সময়ে গাওয়া পরম্পরাগতভাবে চলে আসা গীতিসমূহকে বিহুগীত বলা হয় । বর্তমান সময়ে বিহুগীত এবং বিহুনাম দুটিকেই সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়৷ অসমীয়া জনজীবনের সঙ্গে জড়িত সকল বিষয়ই বিহুগীতিতে স্থান লাভ করেছে৷ মুখ্যতঃ পরম্পরাগত বিহু অনুষ্ঠানগুলির আধারে বিহুনামগুলি রচিত এবং পরিবেশিত হয়ে আসছে৷ এমন পরম্পরাগত বিহু অনুষ্ঠান হচ্ছে: রাতি বিহু, দিনের ভাগে বড় গাছের তলা, পথের এবং জুপজুপীয়া হাবিয়নিতে মরা গাছতলার বিহু ওরফে গাভরু বিহু ওরফে চেনেহী বিহু ওরফে মাইকী বিহু ওরফে জেং বিহু এবং গৃহস্থর চাতালে মরা হুঁচরি৷

রাতিবিহু এবং গাছতলার বিহুর বিহুনাম[সম্পাদনা]

রাতিবিহু এবং গাছতলার বিহুতে বিহুনামের এক একটি ফাঁকের পর সেইফাঁকে সকলে গাইত৷ সঙ্গে বাজানো হত টকা এবং হাত চাপড়ে৷ রাতিবিহুর প্রচলিত বিহুনাম গাওয়া অন্য একটি ধরন ছিল যোরানাম৷ একফাঁকে বিহুনামের উত্তর হিসাবে তার পরের ফাঁকে বিহুনাম গাওয়া হত৷ রাতিবিহু এবং গাছতলার বিহুর বিহুনামগুলি রচিত হত দুলড়ী ছন্দের দুটি পংক্তিতে৷ প্রায়শ বিহুনামের ফাঁকে ব্যবহৃত হত উপমার, অর্থাত অতি পোনপটীয়াভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে না বলে একটি উপমার মাধ্যমে একটি ভাব একফাঁকে নাম/গীতির দ্বারা প্রকাশ করা হত৷

হুঁচরি অনুষ্ঠানের বিহুনাম[সম্পাদনা]

হুঁচরি অনুষ্ঠানে প্রধানত দুচাপরীয়া তালে বিহুনাম গাওয়া হয়৷ হাত চাপড়ে এবং টকার ছাড়াও বিহুনাম গাইতে ঢোল সঙ্গত করা হয়৷ হুঁচরি অনুষ্ঠানে সাধারণত একটি মূল বিহুনাম বা জাত থাকে৷ যা প্রথমে একজন নামতি লাগিয়ে দেন এবং তারপর সকলে একসাথে গায়৷[১]

জনপ্রিয় বিহুগীতি[সম্পাদনা]

পর্বতর ঢেকীয়া লিহিরি লিহিরি

দেখিলে ল’বর মন যায়,

অতি চেনেহের ব’হাগর বিহুখন

হাততে মলঙি যায়।

আ দেন যালৈ মই নেযাওঁ সেইখনলৈ

বা পারে ছবুরি গালি,

মইনো ভনী যা চান্দি থৈছো

সাইলাখ তিঁয়হের জালি।

তিতাকৈ কেরেলা খালেহে বুজিবা

মুখত কেনেকুবা লাগে,

মরম কেনেকুবা দিলেহে বুজিবা

বুকুত কেনেকুবা লাগে।

চাপড়ে চাপড়ে তোলো মই বাবরি

পুরণিকলীয়া কচু,

যাকে চাব খোজো তাকে মই নেদেখো

কিনো জু লগা চকু।

কচুটেঙা ঢেঁকীয়া বিলাহী বেঙেনা

জুতি লগাই লগা খাবা,

রাতিরে রাতিটি দুার দাং খুলি থ’ম

বিরালী যাওয়াদি যাবা।

কুবাই কা নকরা জিলি জা নকরা

শদেয়া পাররে আলি,

কেঁচাই খাওঁ কেঁচাই খাওঁ নকর সোনামুবা

নহওঁ ম তিয়ঁহের জালি।

দীঘলী বজারর পাভমাছ কিনি নি

খরিচ টেঙা দিয়ে রান্ধো,

খাবরে সময়ে তো পর্যন্ত মনত পরে

ভাতর পাতত বসে কান্দো।

ঢাপরে বেঙেনা চাপর ঐ নাচনী

ঢাপরে বেঙেনা চাপর,

আমারে নাচনী লহঙে পহঙে

আনরে নাচনী চাপর।

গেলাকৈ কোমোরা পানী ঐ লাহরী

গেলাকৈ কোমোরা পানী,

এইজনী নাচনী আমাকো নালাগে

নিয়ক বরেঘরে টানি।

লাও পর্যন্ত বলে হেন্দালি তৈরি করেলো

বগালে বঙালী পূরৈ,

তোমাক পামে বলে মই আশা করা নাই

তুমি হলা বহুতর দূরৈ।

নদীর কাষরীয়া মাটি টাকরীয়া

বেঙেনা ঢপলা পাত,

বয়স ভাটি দিলে বিহুকো নালাগে

আনন্দ নাথাকে গায়ে।

লাইর মধ্যে মধ্যে লফা রুই দিলো

কুকুরাই খুঁচরি খায়,

অতিকৈ চেনেহের ব’হাগর বিহুখন

ধনে দিয়ে রাখোতা নাই।


ভঁরালর টুপতে কেরেলা বগালে

কোমোরা বগালে চালত,

জীবনে মরণে নেরিবা লাহরী

নেরিবা বিপদর কালে।

চাইনো চাই থেকেলে হাবিয়াস নপলায়

নেখালে নুগুচে ভো্‌ক,

কিনো খা যাবি বালিহাটর বেঙেনা

দলিয়াই দিয়ে যাম তোক।

চ’তে গিয়ে গিয়েয়ে- নয়া নদী নয়া কুল

ব’হাগে পালেহি- নয়া নদী নয়া কুল

ফুলিলে বাবরি ফুলেহে- নয়া নদী নয়া কুল

খোপাত মারে কপৌফুল, ফুলি আছে নাহের ফুল

হাততে ঐ, হাততে ঐ জেতুকার, হাততে ঐ জেতুকার বো্ল।

তোমারে সঙ্গে- নয়া নদী নয়া কুল

মরো যদি মরিম মই- নয়া নদী নয়া কুল

ছেড়ে যাম নিজেরে কুলেহে- নয়া নদী নয়া কুল

খোপাত মারে কপৌফুল, ফুলি আছে নাহের ফুল

হাততে ঐ, হাততে ঐ জেতুকার, হাততে ঐ জেতুকার বো্ল।

অ’ হায় হায়,

ধনশিরি দলংখন- অ’ জোনে জোনালী

বান্ধিলে চেনাইখন- অ’ জোনে জোনালী

লোহারে শলখা মারি জোনে জোনালী

জোনর আগত তরাখন, ওলাই আহা চেনাইখন

বিহুনো মারিবলৈ, বিহুনো মারিব পর্যন্ত যাঁও।

আমাকে বান্ধিলে- অ’ জোনে জোনালী

সমাজের বান্ধোনে- অ’ জোনে জোনালী

দুটি দেহা দুদিকে করে জোনে জোনালী

জোনর আগত তরাখন, ওলাই আহা চেনাইটি

বিহুনো মারিবলৈ, বিহুনো মারিব পর্যন্ত যাঁও।


অ’ হায় হায়,

জাঁজী নৈক ভেটিলে- অ’ জোনে জোনালী

জোঙে ঐ জাবরে- অ’ জোনে জোনালী

লুইতক ভেটিলে কোনে জোনে জোনালী

জোনর আগত তরাখন, ওলাই আহা চেনাইখন

বিহুনো মারিবলৈ, বিহুনো মারিব পর্যন্ত যাঁও।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. প্রান্তিক ১৬ এপ্রিল ২০১১