শিফা বিনতে আবদুল্লাহ
আশ-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (আরবি: الشفاء بنت عبد الله) ছিলেন নবী মুহাম্মদ এর একজন নারী সাহাবা[১]। তিনি চর্মরোগ চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।[২][৩]
নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রের মহিলা ছিলেন, খলিফা ওমর ও সাহাবী সাঈদ ইবনে যায়িদও এ গোত্রের সদস্য ছিলেন। শিফার ডাকনাম উম্মে সুলায়মান। অনেকে বলেছেন, তার আসল নাম লায়লা এবং পরবর্তীতে তার উপাধি আশ-শিফা নামে পরিচিতি লাভ করেন।[৪] তার পিতার নাম আবদুল্লাহ ইবনে আবদে শামস, মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আবি ওয়াহাব, যিনি একই বংশের আমর ইবনে মাখযুম শাখার কন্যা।[৫][৬]
আশ শিফার বিয়ে হয় আবু হুসমা ইবনে হুযায়ফা আল আদাবীর সঙ্গে।[৭] এবং এই ঘরে একটি সুলায়মান নামে একটি পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তার কন্যা প্রখ্যাত সাহাবা শুরাহবিল ইবনে হাসানার স্ত্রী ছিলেন।[৮]
ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]
হিজরতের পূর্বে মক্কাতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম পর্বে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরাতকারী মহিলাদের সাথে হিজরত করেন।[৯][১০] আশ শিফা বিনতে আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। মুহাম্মাদ যেসমস্ত প্রধান সাহাবাদের বাড়িতে যেতেন তাদের মধ্যে আশ শিফা অন্যতম।[১১] মুহাম্মাদ তার বাড়িতে গিয়ে বিশ্রামও নিতেন। আশ শিফা বিনতে আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ এর জন্য আলাদা বিছানা ও আলাদা পরিধেয় কাপড়ের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে রেখেছিলেন। মুহাম্মাদ তাকে একটি বাড়ী দান করেন, সেই বাড়ীতে তিনি ছেলে সুলায়মানকে নিয়ে বাস করতেন।[১২] তিনি মুহাম্মাদ এর স্ত্রী হাফসাকে আরবি পড়া ও লেখা ও ক্যালিগ্রাফি শিখিয়েছিলেন।[১৩]
আশ শিফার মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা ঐ সমস্ত কাপড় অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। কিন্তু উমাইয় খলিফা মারওয়ান ইবনে হাকাম তাদের নিকট থেকে সেগুলো কেড়ে নেন।[১৪][১৫]
উমরের যুগে[সম্পাদনা]
আশ শিফা উমরের চাচাত বোন ছিলেন। এজন্য খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব শিফাকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতেন। তার মতামতের অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং বিশেষ শ্রদ্ধার ভাব পোষণ করতেন। উমর শিফাকে বাজার পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কিছু দায়িত্ব প্রদান করেন।[৯][১৬][১৭] উক্ত দ্বায়িত্বও তিনি সফলভাবে পালন করেছিলেন।[১৮] আশ শিফাও উমরের গুণমুগ্ধা ও অনুগত ছিলেন।[১৯][২০]
একবার খলিফা উমর আশ শিফা এবং আতিকা বিনতে উসাইদকে ডেকে এনে চাদর দান করেন।[২১][২২][২৩] উমর মাঝে মাঝে আশ শিফার খোঁজ খবর নিতে বাসায় যেতেন এবং নামাজের খবর নিতেন।[২৪][২৫]
গুণাবলী[সম্পাদনা]
আশ শিফা একজন শিক্ষানুরাগী মহিলা ছিলেন। আরবের গুটিকয়েক লিখতে পড়তে জানা মহিলাদের একজন ছিলেন এবং আরবের মহিলাদের তিনি পড়তে ও লিখতে শেখাতেন। তৎকালীন চিকিৎসাতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। তিনি চর্মরোগের চিকিৎসা জানতেন[২৬] এবং এটা নবী স্ত্রী হাফসা বিনতে উমরকেও শিখেছিলেন।[৯] ইসলাম গ্রহণের পরেও নবী করীম এর অণুপ্রেরণায় তিনি তার জ্ঞানচর্চা চালিয়ে যান।
হাদিস বর্ণনা[সম্পাদনা]
আশ শিফা মুহাম্মাদ ও উমর থেকে সর্বোমোট ১২ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।[৯] এবং তার থেকে তার পুত্র সুলায়মান, পৌত্র আবু সালামা, আবু বকর,উসমান প্রভৃতি বিখ্যাত সাহাবাগন হাদিস বর্ণনা করেছেন।[২৭][২৮]
মৃত্যু[সম্পাদনা]
আশ শিফার সঠিক মৃত্যু সন জানা যায় না। তবে অনেকে উমরের খিলাফতকালে ২০ হিজরির কাছাকাছি কোন সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এই কথা বলেছেন।[২৯]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ Isfahani, Mushin. (২০০৬-০১-০১)। Encyclopedia of Prophetic Medicine (আরবি ভাষায়)। ktab INC.। পৃষ্ঠা ১০৪। আইএসবিএন 978-9953-81-229-8।
- ↑ Mona Rajab (২০০৭)। History... Woman (আরবি ভাষায়)। Kotobarabia.com। পৃষ্ঠা ৮১।
- ↑ [নিসা‘মিন আসর আন-নুবুওয়াহ, টীকা নং-১, পৃ. ১৫৯]।
- ↑ [আল-ইসাবা ফী তাময়ীয আস-সাহাবা-৪/৩৩৩]।
- ↑ [উসুদুল গাবা-৫/৪৮৬]।
- ↑ [তাবাকাত-৮/২৬৮; আল-ইসতী‘আব-৪/৩৩২]।
- ↑ [তাবাকাত-৮/২৬৮]।
- ↑ ক খ গ ঘ [আল-ইসাবা-৪/৩৩৩]।
- ↑ Mushin Husseini (২০০৬-০১-০১)। Prospects for Arab-Islamic Civilization - (আরবি ভাষায়)। Al Manhal। পৃষ্ঠা ১৬৪। আইএসবিএন 9796500012148।
- ↑ [নিসা‘মিন আসর আন-নুবুওয়াহ, পৃ.১৫৯]।
- ↑ [নিসা‘মিন আসর আন-নুবুওয়াহ-পৃ.১৬১]।
- ↑ Hilal., Kazan, (২০১০)। "৫"। Dünden bugüne hanım hattatlar [Female calligraphers past & present]। İstanbul Büyükşehir Belediyesi। আইএসবিএন 978-605-5592-51-6। ওসিএলসি 745977380।
- ↑ [আল-ইসতি‘আব-৪/৩৫৮]।
- ↑ [তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত-২/৮৭]।
- ↑ [জামহারাতুল আনসাব আল-আরাব-১/১৫০]।
- ↑ علي/المقريزي, أبي العباس تقي الدين أحمد بن (২০১৭-০১-০১)। Enjoy listening to the conditions, funds, interests and belongings of the Prophet 1-15 (আরবি ভাষায়)। Dar Al Kotob Al Ilmiyah دار الكتب العلمية। পৃষ্ঠা ৩৯৫।
- ↑ "Al-Shifa bint Abdullah: The market controller"। Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-১০-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৫।
- ↑ [তাবাকাত-৩/২৯০]।
- ↑ [তারীখ আত-তাবায়ী-২/৫৭১]।
- ↑ [সাহাবিয়াত, পৃ.২৪০]।
- ↑ [উসুদুল গাবা-৫/৪৯৭]।
- ↑ [আল-ইসতী‘আব-৪/৩৫৮]।
- ↑ [হায়াতুস সাহাবা-৩/১২৩]।
- ↑ [কানয আল-উম্মাল-৪/২৪৩]।
- ↑ [নিসা‘মিন আসর আন-নুবুওয়াহ, পৃ.১৬০]।
- ↑ [আল-ইসতী‘আব-৪/৩৩৩]।
- ↑ [তাহযীবুত তাহযীব-১২/৪২৮]।
- ↑ [আ‘লাম আন-নিসা-২/১৬৩]।