ব্যাংক হিসাব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহকের কাছে চিঠি, বৈদ্যুতিন ডেটা প্রসেসিংয়ের বিষয়ে এবং বর্তমান অ্যাকাউন্টগুলির অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলিতে তাদের অবহিত করা

ব্যাংক হিসাব একটি ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত ব্যাংকগ্রাহকের নামে একটি আর্থিক হিসাব, যেটি ব্যবহার করে গ্রাহক টাকা জমা ও উত্তোলনসহ অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা নিতে পারে। ব্যাংক হিসাব বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বহুল ব্যবহৃত ব্যাংক হিসেবের মধ্যে রয়েছে আমানত হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব এবং ক্রেডিট কার্ড হিসাব ইত্যাদি। ব্যাংক হিসেবে গ্রাহকের যাবতীয় লেনদেন লিপিবদ্ধ থাকে যা প্রতিবেদন আকারে গ্রাহককে প্রদান করা হয়।[১]

প্রতিটি দেশের ব্যাংক হিসাবসমুহ পরিচালনা পদ্ধতি উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করে দেয়। এছাড়াও প্রতিটি ব্যাংক প্রচলিত আইনের আলোকে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা বিষয়ক নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। কারা কোন হিসাব খুলতে পারবে, হিসাব খোলার এবং পরিচালনা পদ্ধতি নির্দিষ্ট আইন ও ব্যাংক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত থাকে। বেশিরভাগ দেশে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হতে হয়। তবে কয়েকটি দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর ধার্য করা আছে। বাংলাদেশে সাধারণ ব্যাংক হিসাব খুলতে গ্রাহকের বয়স ১৮ বছর হতে হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন- শিক্ষার্থীদের জন্য হিসাব[২], গ্রাহকের বয়স ১৮ বছর হওয়ার বাধ্যবাধকতা নাই। তবে সেক্ষেত্রে অবিভাবকের সাহায্য প্রয়োজন হয়।

হিসাব কাঠামো[সম্পাদনা]

সাধারণত সকল ধরনের আমানত হিসাবের জের সর্বদা ক্রেডিট বা ধনাত্মক থাকে।এক্ষেত্রে গ্রহকের টাকা ব্যাংকে জমা থাকে অর্থাৎ ব্যাংক গ্রাহকের কাছে ঋণী থাকে। অন্যদিকে ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে জের ডেবিট বা ঋণাত্মক থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক গ্রহককে টাকা ঋণ বা ধার দেয় অর্থাৎ গ্রাহক ব্যাংকের কাছে ঋণী থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ড হিসাবে জের ডেবিট, ক্রেডিট বা শূন্যও হতে পারে।

হিসাবের প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন দেশে ব্যাংকভেদে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাংক হিসাব দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুল ব্যবহৃত কিছু ব্যাংক হিসেবের ধরন নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • আমানত হিসাব
  • ঋণ/লোন হিসাব
    • কর্পোরেট লোন
    • রিটেইল লোন
    • বাড়ি নির্মাণ লোন
    • গাড়ি লোন
    • ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি

হিসাব খোলা ও পরিচালনা পদ্ধতি[সম্পাদনা]

প্রতিটি ব্যাংক প্রচলিত আইনের আলোকে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা বিষয়ক নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। সাধারণত ব্যাংকগুলো হিসাব খোলার জন্য গ্রাহককে একটা মুদ্রিত বা অনলাইন ফরম[৩] সরবারহ করে থাকে যেখানে কিছু শর্তাবলী যুক্ত থাকে। কোন গ্রাহক উক্ত ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকে জমা দেয় এবং ব্যাংক সেই ফরম ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি সন্তুষ্ট হন, তবে গ্রাহকের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খুলে দেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক এবং গ্রাহক উভয়পক্ষ একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। গ্রাহক ব্যাংক হিসাব পরিচালনা সংক্রান্ত ঘোষণা দেয় এবং ব্যাংক প্রচলিত আইনের আলোকে হিসাব পরিচালনার অনুমোদন দেয়। সাধারণত, ব্যক্তি হিসাব গ্রাহক নিজেই পরিচালনা করে এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মালিক বা মালিকের প্রতিনিধি অথবা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে থাকে।

হিসাব হ্যাক হলে করণীয়[সম্পাদনা]

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা চুরি বা অন্যকোন অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংক হিসাব হ্যাক করে থাকে। বর্তমানে প্রায় প্রতিনিয়তই ব্যাংক হিসাব হ্যাকিং-এর ঘটনা ঘটছে। এজন্য, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ব্যাংকিং বিশ্লেষকরা নিন্মক্ত পরামর্শগুলি অনুসরণ করতে বলেন-[৪]

  1. গ্রাহক যদি লক্ষ্য করেন যে তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে তার অজান্তে টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে বা হয়েছে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে সেটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে;
  2. হিসাবে টাকা লেনদেন হলে সাধারণত গ্রাহকের মোবাইলে দ্রুত একটি বার্তা আসে। এতে যদি দেখা যায় যে গ্রাহক লেনদেন না করলেও টাকা উত্তোলনের বার্তা এসেছে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে;
  3. ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নিলে দ্রুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে;
  4. গ্রাহকের ডেবিট কার্ড এবং ক্রেটিড কার্ড-এর পাসওয়ার্ড সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং গোপনীয়তার সাথে রাখতে হবে। নিজের দোষে হ্যাকিং-এর শিকার হলে ব্যাংক তার দায়ভার নিবে না;
  5. ফেসবুক বা ইমেইলে অপরিচিত কোন ব্যক্তির পাঠানো অ্যাটাচমেন্ট ক্লিক না করাই উত্তম। এতে গ্রাহকের মোবাইল ফোন সেট কিংবা কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং হ্যাকাররা সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
  6. গ্রাহক অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক তৎক্ষণাৎ ব্যাংক হিসাবের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিচ্চিত করবে।

সর্বোপরি, হ্যাকিং থেকে নিরাপদ থাকতে হলে ব্যাংকগুলোকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমনি গ্রাহকদেরও সচেতন থাকতে হবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ব্যাংক হিসাবের প্রকারভেদ"দ্যা ব্যালেন্স (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৩ 
  2. "ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে | অর্থনীতি"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০২০-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৩ 
  3. "৫ মিনিটেই খুলবে ব্যাংক হিসাব"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৩ 
  4. হোসেন, আকবর (২০১৮-০৮-১৭)। "ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং হলে গ্রাহক কী করবেন?"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৩