শাকম্ভরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবী শাকম্ভরী
"যে দেবী প্রাণিকূলকে ফলমূল ও শাকসবজি প্রদান করে পরিচর্যা করেন।"
দেবনাগরীशाकम्भरी
উৎসবনবরাত্রি, দুর্গা পূজা, দূর্গা অষ্টমী, দশেরা

হিন্দু ধর্মে, দেবী শাকম্ভরী (সংস্কৃত: शाकम्भरी) হলেন মহাদেবীর অবতার। [১] তার নাম "শাকম্ভরী" এর অর্থ- যিনি প্রাণিকূলকে ফলমূল এবং শাকসবজি প্রদান করে রক্ষা করেন।" কথিত হয়েছে যে, শত বৎসরব্যাপী দুর্ভিক্ষে জর্জরিত মানব ও প্রাণিদেরকে রক্ষা করার জন্য শত বৎসরের শেষে দেবী পরামাশক্তি শাকম্ভরী রূপে আবির্ভূত হন। দেবী শাকম্ভরী ঋষি, মানবগণকে শাক ও ফলমূল প্রদান করেন। এতে অনাহারী ও দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রাণিদের জীবন রক্ষা পায়। [২][৩] "দেবী মাহাত্ম্য বা শ্রী শ্রী দুর্গা সপ্তশতী/ শ্রী শ্রী চণ্ডীর "মূর্তি রহস্য" অধ্যায়ে উক্ত হয়েছে- দেবী শাকম্ভরী, মহামায়া জগজ্জননীর তৃতীয় অবতার। দেবী মহামায়ার অন্যান্য অবতারগণ হলেন— নন্দাদেবী, দেবী রক্তদন্তিকা, দুর্গা, দেবী ভীমা এবং দেবী ভ্রামরী। দেবী আদিশক্তি মহামায়ার অনেক শক্তিপীঠ রয়েছে। তবে, রাজস্থানের সম্বর পীঠ এবং উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত সাহারানপুর শক্তিপীঠ দেবী শাকম্ভরীর মন্দির হিসেবে খুবই বিখ্যাত। ভগবতী শাকম্ভরীর সবচেয়ে প্রাচীন মন্দিরটি শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের একটি জঙ্গলের মধ্যে একটি মৌসুমী নদীর তীরে অবস্থিত। এই মন্দিরের উল্লেখ স্কন্দ পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, ভাগবত পুরাণ প্রভৃতি পুরাণে পাওয়া যায়। কথিত হয় যে, এখানে দেবী নিত্য বিরাজ করেন। দেবী এই মন্দিরে স্বয়ং আবির্ভুত হয়েছেন বলে জনশ্রুতি আছে। আরো জনশ্রুতি আছে যে, এক রাখাল বালক সর্বপ্রথম দেবী শাকম্ভরীর এই প্রাচীন মন্দিরটি দেখতে পান। রীতি অনুযায়ী, মন্দির প্রাঙ্গনে সমাহিত দেবীভক্ত ভুরাদেবের সমাধি দর্শন করে তারপর দেবী দর্শন করতে হয়।

দেবীভাগবত পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে, হিরণ্যাক্ষাসুরের বংশধর রুরুরাসুরের পুত্র দুর্গমাসুরকে বধ করার নিমিত্তে দেবী পার্বতী, শাকম্ভরী রূপে অবতীর্ণ হন।

দুর্গমাসুরের সহিত যুদ্ধ[সম্পাদনা]

ব্রহ্মার বরে দুর্গমাসুর ত্রিলোক মধ্যে অখিল দেব দ্বিজগণের অন্তরে যে বেদমন্ত্র বিদ্যমান ছিল তা প্রাপ্ত করেন। ফলে বিগ্রগণ বেদমন্ত্র সকল বিস্মৃত হয়। ঋষিরা যজ্ঞে আহুতি প্রদানে অসমর্থ হয়। তখন ভূমণ্ডলে নিত্য হোম, শ্রাদ্ধ-যজ্ঞ ও জপাদি সমুদয় কার্যই বিলুপ্ত হওয়ার ফলে ভীষণ হাহাকার ধ্বনি উত্থিত হল । যজ্ঞে ঘৃত আহুতি প্রদান না হওয়ায় ধরণীতলে বর্ষণ হল না। শস্য, ফসল কিছুই উৎপাদিত হয় নি। ঋষিগণ, দেবগণ ক্রমে দুর্বল হতে লাগল। অনাহারে বিপ্রগণ দেবী মহামায়ার স্তব-স্তুতি করেন। দেবী মহামায়া পার্বতী তাদের কাছে প্রকট হলে বিপ্রগণ ও দেবগণ তাদের করুণ অবস্থা দেবীর নিকট নিবেদন করেন। তাদের দুঃখে দেবীর নয়ন হইতে অশ্রুধারা ধরণীতলে বর্ষণ রূপে পতিত হতে লাগল। যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে নতুন শস্য, ফসল উৎপন্ন হয় নি, ততদিন পর্যন্ত দেবী নিজ দেহে শাক, ফল উৎপাদন করে পৃথিবীবাসীদের ভরন-পোষণ করেন। আপন দেহে শাক উৎপন্ন করে তিনি ধরণীবাসীর ভরণ-পোষণ করেছিলেন, তাই তিনি ত্রিভুবনে শাকম্ভরী নামে বিখ্যাতা হন।[৪]

ধরণীবাসীর পরিত্রাণপ্রদায়িনী সেই দেবী পার্বতী সহিত যুদ্ধাভিলাষে দুর্গমাসুর রণক্ষেত্রে গমন করে। দেবীর সাহায্যার্থে দেবীর অন্যান্য অবতার কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা ও দেবীর অন্যান্য মহাবিদ্যা প্রভৃতি দেবীরা রণভূমিতে আগমন করেন। অসুর ও দেবতাদের পরস্পর নিক্ষিপ্ত অস্ত্র-শস্ত্রে সূর্য আচ্ছাদিত হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হল। ঘোরতর যুদ্ধের অস্ত্রাঘাতে উত্থিত অগ্নিতে রণভূমি পুনরায় আলোকিত হয় উঠল। দেবীর সহিত দুর্গমাসুরের প্রবল যুদ্ধে দেবী পার্বতী অস্ত্রাঘাতে দুর্গমাসুরকে বধ করেন। দেবী পার্বতী অভিহিত হইলেন দুর্গা বা দুর্গতিনাশিনী নামে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. SINHA, N. (1991). A STUDY OF THE ORIGIN MYTHS: SITUATING THE GUHILAS IN THE HISTORY OF MEWAR (A.D. SEVENTH TO THIRTEENTH CENTURIES). Proceedings of the Indian History Congress, 52, 63–71. http://www.jstor.org/stable/44142569
  2. Thirugnanam (2022-09-18)। Devi Mahatmyam English Transliteration  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |year= / |date= mismatch (সাহায্য)
  3. "शाकम्भरी माता की आरती"भजन सागर। ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  4. দেবীভাগবত পুরাণ