শায়মা বিনতে আল হারিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শায়মা বিনতে আল হারিস আস সাদিয়া মুহাম্মাদ এর একজন নারী সাহাবা ছিলেন। ইনি মুহাম্মাদের দুধমাতা হালিমার কন্যা ছিলেন।[১] শায়মা বাল্যকালে মুহাম্মাদ এর সাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন ও দেখাশোনা করেছেন।[২]

নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

আশ শায়মা বিনতে আল হারিসের আসল নাম হুযাফা মতান্তরে জাযযামা। ডাকনাম আশ শায়মাআশ শাম্মা। শায়মা বনু সাদের একজন বেদুঈন মহিলা। তিনি গোত্রে ডাকনামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন।[৩] সম্ভবত তার দেহে অতিরিক্ত তিল থাকার কারণে তিনি এ নামে আখ্যায়িত হন।[৪][৫] উল্লেখ্য যে মহিলা সাহাবীদের মধ্যে আশ শায়মা নামে দ্বিতীয় কেউ নেই। তার পিতার নাম আল হারিস ইবনে আবদিল উযযা ইবনে রিফায়া আস সাদিয়া এবং মাতার নাম হালিমা বিনতে আবি যুয়ায়েব বা হালিমা সাদিয়া। তার আরো দুইজন ভাই বোন হল আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ও উনায়সা। তারা সবাই মুহাম্মাদ কে লালন পালনে তার মাকে সহযোগিতা করেন।

বাল্যকাল[সম্পাদনা]

শায়মা ও তার দুই ভাই ছোটবেলায় মুহাম্মাদ এর সাথে খেলা করতেন। তারা মাঝে মাঝে মুহাম্মাদ কে আশে পাশের চারণভূমিতে ছাগল-ভেড়া চরানোর জন্য নিয়ে যেত অন্য আরব বেদুইন ছেলে মেয়েদের মত।

এসব সময়ে শায়মা তাকে দেখাশুনা করতেন। পথ দীর্ঘ হলে বা রোদের তাপ বেশি হলে তাকে কোলে তুলে নিতেন। আবার কখনো তাকে নিয়ে ছায়ায় বসতেন এবং দুহাতে তুলে নাচাতেন। তারা সুর করে গান গাইতেন।[৬][৭] এই গানটি তারা মাঝে মাঝে গাইতেন।

হে আমাদের পরয়ারদিগার! আপনি আমাদের জন্য মুহাম্মাদকে বাঁচিয়ে রাখুন,

যাতে আমরা তাঁকে একজন যুবক হিসেবে দেখতে পাই।

অতঃপর আমরা তাঁকে এমন একজন সম্মানিত নেতা হিসেবে দেখতে পাই যে,

তাঁর প্রতি বিদ্বেষপোষণকারী শত্রুর মাথা নত হয়ে যাবে।

হে আল্লাহ! আপনি তাঁকে চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা দান করুন।’[৮]

শায়মা ও তার ভাই বোনেরা ছোটবেলাতেই মুহাম্মাদ এর মধ্যে আশ্চর্য গুণাবলী দেখেছে। একদিন তারা মুহাম্মাদকে নিয়ে রোদে খেলছে ও গাই গাইছে কিন্তু মুহাম্মাদ এর মাথার উপর সবসময় মেঘের ছায়া ছিলো,রোদ পরেনি কখনো।[৯]

শায়মা মুহাম্মাদকে কোলে নিয়ে একটি কবিতা বলতেনঃ

"এ আমার ভাই! আমার মা তাকে প্রসব করেনি।

সে আমার বাবা চাচার বংশেরও কেউ নয়।

হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে সমৃদ্ধি দাও।"

বাল্যকালে মুহাম্মাদ একবার শায়মাকে কামড় দিয়েছিলো। যার দাগ পরবর্তীতেও ছিলো।[১০]

ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]

হাওয়াযিন যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হলে বনু সাদ গোত্রের আরো অনেকের সাথে শায়মা বন্দী হন।[১১][১২] মুহাম্মাদ জানতে পেরে তাকে চাদর বিছিয়ে তার উপর বসতে দিলেন এবং মুক্ত করে দিলেন। এরপর শায়মা বিনতে আল হারিস ইসলাম গ্রহণ করে তার গোত্রে ফিরে যান।[১১][১৩] এরপর মুহাম্মাদ মাকহুল নামের একটি দাস দিয়ে তাদের গোত্রের জন্য বহু ছাগল,ভেড়া ও উট উপকৌঠন হিসাবে পাঠিয়েছিলেন।[১১][১৪][১৫][১৬][১৭]

হুনাইনের যুদ্ধের তাদের গোত্রের অনেকেই বন্ধী হয় এদের মধ্যে শায়মার চাচা,পিতা সহ অনেক আত্মীয় ছিলো। মুহাম্মাদ তার দুধ-পিতার সন্মানে সবাইকে ক্ষমা করে দেন।[১৮][১৯][২০][২১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আশ শায়মা বিনতে আল হারিস জীবনের আর কোন কথা জানা যায় না। তিনি মৃত্যুর করেছেন তথ্যও অজ্ঞাত। তবে আয যিরিকলী বলেছেন, শায়মা ৮ম হিজরির/৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের পর মৃত্যুবরণ করেন।[২২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Halima: The foster mother of Prophet Muhammad"Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৯ 
  2. Qutub, Muhammad Ali। "Shayma, the Prophet's Foster Sister"idealmuslimah.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৯ 
  3. [আল-বায়হাকী, দালায়িল আন-নুবুওয়াহ্-১/১৩২] 
  4. [নিসা‘ মিন ‘আসর আনু-নুবুওয়াহ্- ৩৩৭, টীকা-২] 
  5. [আল-ইসাবা-৪/৩৩৫ ] 
  6. [ প্রাগুক্ত, ৪/৩৩৬] 
  7. [আহমাদ যীনী দাহলান, আস-সীরাহ্ আন-নাবাবিয়্যাহ্-৪/৩৬৬] 
  8. [ নিসা’ মিন ‘আসর আন-নুবুওয়াহ্-৩৩৮ ] 
  9. [আস-সীরা্ আল-হালাবিয়্যাহ্-১/১৬৭, ১৬৮] 
  10. [ইবন হাযাম, জামহারাতু আনসাব আল-‘আরাব-১/২৬৫] 
  11. [আনসাব আল-আশরাফ-১/৯৩] 
  12. [আ‘লাম আন নিসা’-২/৩১৭] 
  13. [আল-ইসাবা-৩/৪৩৫] 
  14. (আল-বিদায়া ওয়অন নিহায়া-৪/৩৬৩) 
  15. [উসুদুল গাবা-৫/৪৮৯] 
  16. [তারীখ আত-তাবারী-২/১৭১] 
  17. [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া-৩/৩৬৩] 
  18. [উয়ূন আল-আছার-২/২২৩] 
  19. [তারীখ আত-তাবারী-২/১৭৩] 
  20. [আস-সীরাহ্ আল-হালাবিয়্যা-১/১৭০] 
  21. [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/৩৬৩, ৩৬৪] 
  22. [আল-আ‘লাম-৩/১৮৪]